Ajker Patrika

কেঁচো সার ব্যবহারে সফল ঈশ্বরগঞ্জের কৃষকেরা

প্রতিনিধি
Thumbnail image

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছেড়ে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) সারের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। রাসায়নিক সারের ক্ষতিকারক দিক বিবেচনা করে উপজেলার কৃষকেরা এখন ব্যাপক হারে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার শুরু করেছেন। ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও শুরু হয়েছে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারের উৎপাদন।

জানা গেছে, জমিতে অতিমাত্রায় বালাইনাশক, আগাছা নাশক, কৃত্রিম রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় দিন দিন মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে ভূমিকা রাখছে কেঁচো সার। বালাই নাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারে বিনষ্ট মাটির উর্বরতা শক্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম এই ভার্মি কম্পোস্ট। এরই মধ্যে ঈশ্বরগঞ্জের ছয়জন কৃষক কৃষি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শক্রমে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেছেন। তাঁরা এসব উৎপাদিত সার নিজেদের জমিতে ব্যবহার করে ধান, পাট ও শাকসবজির প্রচুর ফলন পেয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার শিমরাইল গ্রামের ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো) সার তৈরির উদ্যোক্তা কৃষক মো. মনির উদ্দিন নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় ছায়াযুক্ত স্থানে ৬০টি রিং স্থাপন করেছে। এতে পুরোনো গোবর আর রেড বেঙ্গল কেঁচো দিয়ে রিংগুলো ঢেকে রেখেছেন। প্রতিটি রিংয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার কেঁচো রয়েছে। কেঁচো গুলো রিংয়ের গোবর খেয়ে মলত্যাগ করে। এই মল চা পাতার মতো হালকা আর ঝুর ঝুর হয়ে রিংয়ের ওপর দিকে উঠতে থাকে। প্রথম একমাস পর রিংগুলো থেকে ১০০০ -১২০০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি হয়। পরে প্রতি এক সপ্তাহ পর পর ৩০০- ৩৫০ কেজি সার উত্তোলন করা যায়।

কৃষক মো. মনির উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে জানান, এরই মধ্যে তাঁর ৬০টি রিং আছে। আরও ১০০টি রিং প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যেগুলো বর্ষা মৌসুমের কারণে কার্যক্রম শুরু করতে পারছেনা। তার উৎপাদিত কম্পোস্ট সার ১২-১৪ টাকা দরে নিজের চাহিদা মিটিয়ে উপজেলার বিভিন্ন কৃষকদের কাছে বিক্রি করে। এতে আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। তাই এই কেঁচো সার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করেছেন তিনি।

ঈশ্বরগঞ্জ ইউনিয়ন কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের জানান, কেঁচো সার ব্যবহারে মাটির জৈবশক্তি বৃদ্ধি পায় ও পিএইচ মান সঠিক মাত্রায় থাকে। এ ছাড়াও মাটির প্রকৃত গুণ রক্ষা করে, মাটির পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ফসলে পানি সেচ কম লাগে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, মাটিকে ঝরঝরে করে ও বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করে, উদ্ভিদেও শেকড়ের মাধ্যমে শোষণক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে, বীজের অঙ্করোধগম শক্তি বৃদ্ধি করে ও গাছকে সুস্থ-সবল রাখে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে এতে কৃষকের চাষ খরচ অনেক কম হয়, ফসলের ফলন বৃদ্ধি ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, 'মাটির ভৌত এবং জৈব গুণাবলি উন্নতিকরণের জন্য ভার্মি কম্পোস্ট সারের গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে এরই মধ্যে উপজেলার ছয়জন কৃষক ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরিতে উদ্যোক্তা হয়েছেন। তাদের এমন সফলতা দেখে আরও অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।'

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত