Ajker Patrika

নাতনিকে কাছে রাখা হলো না গরিব দাদার, শিশুটির ঠাঁই হলো ছোটমণি নিবাসে

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২২, ২৩: ৫৭
নাতনিকে কাছে রাখা হলো না গরিব দাদার, শিশুটির ঠাঁই হলো ছোটমণি নিবাসে

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় মায়ের পেট ফেটে বেরিয়ে আসা সেই শিশুটির স্থান হলো রাজধানীর আজিমপুরে অবস্থিত ‘ছোটমণি নিবাসে’। 

শুক্রবার (২৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে শিশুটিকে সেখানে পাঠায় জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড। 

সমাজসেবা অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক আবু আব্দুল্লাহ মো. ওয়ালী উল্লাহ বলেন, ‘বাবা-মা না থাকায় ও পরিবারের অন্য অভিভাবকদের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় শিশুটি সেখানেই সবচেয়ে ভালো থাকবে। ওই নিবাসে সর্বোচ্চ যত্ন সহকারে শিশুদের লালন-পালন করা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত ওই নিবাসে থাকলে আগামী ছয় বছর শিশুটির থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসা নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। শিশুটিকে কেউ দত্তক নিতে চাইলে আদালতের মাধ্যমে নিতে হবে। তবে, যখন ইচ্ছে শিশুর দাদা-দাদি তাকে দেখে আসতে পারবেন।’ 

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিশুর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যসচিব ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুটি জন্ডিস থেকে সেরে উঠেছে। শ্বাসকষ্ট, বুক ও ডান হাতের ফ্র্যাকচার পুরোপুরি ভালো হয়ে গেছে।’ 

শিশুটিকে ছোটমণি নিবাসে পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠায় তার অভিভাবকের হাতে তুলে দিতে গত দুই দিন একাধিক সভা করা হয়। দাদা-দাদির সংসারে শিশুটিকে লালনপালনের উপযুক্ত কোনো লোক নেই। এ ছাড়া বাড়ির উপযুক্ত পরিবেশও নেই। এ জন্য শিশুর অভিভাবকসহ বোর্ডের মতামতের ভিত্তিতে শিশুকে ঢাকার ছোটমণি নিবাসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।’ 

ত্রিশাল উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আজ শুক্রবার বিকেল আড়াইটার দিকে আমি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে রিসিভ করে এখানের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজনের কাছে হস্তান্তর করি। আমার সঙ্গে আমাদের জেলা অফিসের লোকজনও ছিল। আশা করছি, শিশুটি এখানে সর্বোচ্চ যত্নে ও সুযোগ-সুবিধায় বেড়ে উঠবে।’ 

অবশেষে সরকারি ছোটমণি নিবাসে ঠাঁই হলো শিশুটির। ছবি: আজকের পত্রিকাএদিকে শিশুটির নাম রেখেছেন অভিভাবকেরা। নাতনিকে নিজের কাছ রাখার আশা পূরণ না হলেও সরকারি শিশুনিবাসে ভালো থাকবে সেই আশ্বাসেই কিছু সন্তুষ্ট দাদা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু। তিনি বলেন, ‘নাতনির নাম রাখা হয়েছে ফাতেমা। ফাতেমাকে প্রথমে আমাদের কাছে রাখার জন্য বোর্ডে জানিয়েছিলাম। পরে সবাই বুঝিয়ে বলেছে, ওইখানে থাকলে আমার নাতনি বেশি ভালো থাকবে, এ জন্য রাজি হয়েছি। মাঝেমধ্যে নাতনিকে গিয়ে দেখে আসব। আমার নাতনি ভালো থাকুক সেটাই চাই।’ 

গত ১৬ জুলাই বিকেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান উপজেলার রায়মনি এলাকার জাহাঙ্গীর আলম (৪২), তাঁর স্ত্রী রত্না বেগম (৩২) ও তাঁদের ছয় বছর বয়সী মেয়ে সানজিদা আক্তার। দ্রুত গতির একটি ট্রাক ওই দম্পতিসহ তাঁদের কন্যাশিশুকে চাপা দেয়। রত্না অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ট্রাক চাপায় তাঁর পেট ফেটে বেরিয়ে আসে গর্ভের সন্তান। 

স্থানীয়রা আহত সানজিদা ও সদ্যোজাতকে উদ্ধার করে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই সানজিদার মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় সদ্যোজাত শিশুটির ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙে যায়। এ ছাড়া সে সুস্থই ছিল। 

এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল অজ্ঞাতদের নামে একটি মামলা করেছেন। গত ১৮ জুলাই রাতে ওই ট্রাকের চালক রাজু আহমেদ শিপনকে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে আটক করে ত্রিশাল থানায় হস্তান্তর করে র‍্যাব। পরদিন বিকেলে ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক আদালতে তাঁর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। রিমান্ড শেষে বর্তমানে কারাগারে আছেন শিপন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত