Ajker Patrika

দুর্গাপুরে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি 
ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করছেন দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের বাদাম বাড়ি গ্রামের লেমিতা তাজেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করছেন দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের বাদাম বাড়ি গ্রামের লেমিতা তাজেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুর। এ সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে দুর্গাপুর সদর ও কুল্লাগড়া ইউনিয়নের প্রায় ১০ থেকে ১২টি গ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ বাঙালি জনগোষ্ঠীর বসবাস। বছরের পর পার হলেও আজও সুপেয় পানির সংকট কাটেনি এ দুই ইউনিয়নের।

উপজেলার সীমান্ত এলাকার গোপালপুর, ভবানীপুর, ফান্দা, লক্ষ্মীপুর ভরতপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে পাহাড়ি অঞ্চলে শুকনো মৌসুমে সাধারণ নলকূপ দিয়ে পানি আসে না। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে মাটির গভীরে ২০ থেকে ৫০ ফুট নিচে পাথর থাকায় নলকূপ বা বৈদ্যুতিক পাম্প স্থাপন বেশ ব্যয়বহুল। স্থানীয়ভাবে রিং টিউবওয়েল বসানো হলেও শুকনো মৌসুমে আয়রনের কারণে তাও পানের অযোগ্য হয়ে যায়। তখন তাদের ভরসা হয়ে দাঁড়ায় ঝরনা, ছড়া ও খাল-বিলের পানি।

স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও অনেকটা বাধ্য হয়ে ছড়া, খাল, ঝিরি ও কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে কোনো রকম জীবন যাপন করছে এ পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দারা। নারীরা কাঁধে কিংবা মাথায় কলসি নিয়ে টিলা থেকে নেমে পানি সংগ্রহ করেন। এ পানি দিয়ে করতে হচ্ছে তাঁদের রান্না, গোসলসহ সব ধরনের কাজ। খেতেও হচ্ছে সেই পানি। বর্তমানে ওই সব গ্রামের মানুষের কষ্ট এখন চরম আকার ধারণ করেছে।  

গ্রামগুলোতে গিয়ে বিশুদ্ধ পানির অভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবারগুলো জানায়, দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের পানির জন্য কষ্ট করতে হচ্ছে। পাহাড়ি ছড়ার পানি আর গর্তে জমা ঘোলা পানিই খাবার ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে পেটের অসুখ, চর্মরোগসহ নানান রোগে আক্রান্ত হতে হয় তাঁদের। সরকারিভাবে গ্রামগুলোতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার দাবি জানান তাঁরা।

দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের বাদাম বাড়ি গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী লেমিতা তাজেল বলেন, পানি সংগ্রহের কষ্ট তাঁর প্রায় ৪৮ বছরের। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে কয়েকবার পাহাড়ের নিচে থাকা গর্ত থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। বয়সের ভারে শরীর সায় না দিলেও দিনে কয়েকবার পাহাড় বেয়ে ওঠানামা করতে হয়।

গর্তে জমে থাকা পানি সংগ্রহ করছেন লক্ষ্মীপুর গ্রামের জিবলিং সাংমা। ছবি: আজকের
গর্তে জমে থাকা পানি সংগ্রহ করছেন লক্ষ্মীপুর গ্রামের জিবলিং সাংমা। ছবি: আজকের

লক্ষ্মীপুর গ্রামের জিবলিং সাংমা বলেন, ‘আমার দাদা-দাদিরা পানির কষ্ট করে গেছে। আমিও করছি এখন। পাহাড়ি ছড়া থেকে থেকে পানি সংগ্রহ করে ওই পানি ছাঁকন করে তা দিয়েই রান্নাবান্না, খাবারসহ সব কাজ করতে হয়। আমরা পাহাড়ি এলাকার মানুষ হিসেবে সরকারের কাছে দাবি জানাই আমাদের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।’

লক্ষ্মীপুর গ্রামের ৮০ বছর বয়সী সারথি হাজং বলেন, ‘ভালা পানি কই পাব, কুয়ার পানিই খাই। অসুখ আর বিসুখ হলেই কী হবে। পানির জন্য অনেক কষ্ট, আমার সরকার যদি একটা ব্যবস্থা করাই দিই তাহলে কামই হতো।’

পানি সংগ্রহে লেমিতা তাজেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
পানি সংগ্রহে লেমিতা তাজেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠনের সভাপতি পল্টন হাজং আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাহাড়ি অঞ্চলে পানির সংকট দীর্ঘদিনের। সুপেয় পানির সংকটের কারণে নানান অসুখ হয়ে থাকে পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দাদের ৷ সরকারের কাছে দাবি অতি দ্রুত ওই সব অঞ্চলে একটি বড় প্রকল্পের মাধ্যমে পাইপলাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দারা রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং করে; যাতে পানির চাহিদা মিটাতে পারে। এ জন্য একটি প্রস্তাবনা জেলার মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত