Ajker Patrika

সেই রবিজুলের এখন ৬ স্ত্রী, দুজনকে তালাক দিতে ২২ গ্রামপ্রধানের চাপ

দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া
আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪, ১৬: ২৮
সেই রবিজুলের এখন ৬ স্ত্রী, দুজনকে তালাক দিতে ২২ গ্রামপ্রধানের চাপ

সাত বিয়ে করা কুষ্টিয়ার রবিজুলকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই তাঁর সংসারে নেমে এসেছে সমাজপ্রধানদের চাপ। মাস চারেক আগে ষষ্ঠ স্ত্রী নিজ থেকেই তালাক দিয়ে চলে গেছেন তাঁর বাবার বাড়ি। এখন ছয় স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে তাঁর সংসার। এদিকে গ্রামের ২২ প্রধান একসঙ্গে হয়ে ইসলামি শরিয়ত মানাতে দুজন স্ত্রীকে তালাক দিতে তাঁকে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। 

আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ি বাজারে ২২ গ্রামপ্রধানের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার সকালে গ্রামের ২২ প্রধান এক হয়ে পাটিকাবাড়ি বাজারে বৈঠক ডাকেন। সেখানে পাটিকাবাড়ি গ্রামের মিয়াপাড়ার আয়নাল মণ্ডলের ছেলে রবিজুল ইসলামকে (৪০) ডেকে আনেন তাঁরা। বৈঠকে প্রধানের ভূমিকা পালন করেন স্থানীয় মাতবর নাজিম মণ্ডল। এ সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফর উদ্দিনসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে শরিয়ত মোতাবেক চারের অধিক স্ত্রী রাখার বিধান না থাকার ইসলামি ব্যাখ্যা দেন মুহতামিম হাফেজ ম. মুফতি আলমগীর হোসাইন। এ সময় রবিজুলের পঞ্চম ও সপ্তম স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। 

রবিজুল ইসলাম আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘গ্রামের ২২ প্রধান নিজেরাই এক হয়ে সামাজিক বৈঠক ডেকে আমাকে উপস্থিত হতে বলে। আমি তাঁদের বলেছিলাম, এ জন্য আমার সময় প্রয়োজন। কারণ, আমি যাদের বিয়ে করেছি, তারা সবাই গরিব ঘরের সন্তান। তাদের চলার মতো একটা অবস্থান তৈরি করে পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। কিন্তু তারা আমার কথা না মেনে তাদের নিজেদের মতো করে আমার দুই স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার জন্য জোর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয়। আমি তাদের তালাক দিতে চাই না। সালিসের পর তারা আমার দুই স্ত্রীকে গ্রাম থেকে বের করে দিয়েছে। আমাকে এবং আমার মামাকে লাঞ্ছিত করেছে। আমি এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ 

অভিযোগের বিষয়ে বৈঠকের প্রধান নাজিম মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক চার স্ত্রীর বেশি রাখার বিধান নেই। সামাজিকভাবে বসে আমরা তাকে সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম।’ 

স্ত্রীদের তালাক দিতে বাধ্য করতে পারেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রবিজুল তাঁর দুই স্ত্রীকে তালাক দেবেন বলে নিজেই অঙ্গীকার করেছেন। আমরা তাকে বাধ্য করিনি, তাকে মারধরও করিনি।’ 

সামাজিক বৈঠকে উপস্থিত আরেক গ্রামপ্রধান পাটিকাবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন বলেন, ‘এটা অবৈধ বিয়ে। আমরা তাকে বাধ্য করিনি। তার দুই বউ মেনে নিয়েছে। তাদের কাবিন ও খোরপোশ বাবদ দুই লাখ টাকাও দেওয়া হয়েছে।’ 

এ বিষয়ে পাটিকাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রেজভি উজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি বিভিন্ন মাধ্যমে সামাজিক বৈঠকের বিষয়টি জেনেছি। যেহেতু আমাকে প্রধানেরা বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলেনি, তাই আমি এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানি না।’ 

তবে এ ব্যাপারে বৈঠকে উপস্থিত থাকা রবিজুলের দুই স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। 

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র পরিবারের সন্তান রবিজুল মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিয়ে করেন জেলার মিরপুর উপজেলার বালুচর গ্রামের কিশোরী রুবিনা খাতুনকে। বিয়ের দুই বছরের মাথায় এই দম্পতির এক ছেলেসন্তান হয়। পরে বউ ও সন্তান বাড়ি রেখে লিবিয়া পাড়ি জমান রবিজুল। সেখানে টাইলসের কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। 

পরে লিবিয়াতে পরিচয় হয় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার হেলেনা খাতুনের সঙ্গে। পরে তাঁরা বিয়ে করেন। তাৎক্ষণিক প্রথম স্ত্রীকে বিষয়টি না জানালেও পরে জানার পর তিনি এ বিয়ে মেনে নেন। এরপর প্রথম স্ত্রী রুবিনাকেও লিবিয়া নিয়ে যান রবিজুল। সেখানে দুই স্ত্রী এবং সন্তান নিয়ে ১২ বছর বাস করেন তিনি। এরপর দেশে ফিরে বাবার ভিটায় দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। এর কিছুদিন পরেই মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের নুরুন্নাহারের সঙ্গে। পরে নুরুন্নাহারকে বিয়ে করেন রবিজুল। তবে নুরুন্নাহারের অভিযোগ সম্পর্কের শুরুতে তিনি জানতেন রবিজুলের একজন স্ত্রী আছেন। 

রবিজুলের চতুর্থ স্ত্রীর নাম স্বপ্না খাতুন। বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে। এরপর তিন মাসে পরপর তিনটি বিয়ে করেন রবিজুল। 

রবিজুলের দাবি, বিধিসম্মত না হলেও তাঁর স্ত্রীদের কারও কোনো অভিযোগ নেই। একসঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবেই তাঁরা সংসার করছেন। 

একাধিক বিয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মো. হেলাল উজ জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শরিয়া অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ চারটি বিয়ে করতে পারেন বৈধভাবে। এ জন্য আগের সব স্ত্রীর অনুমতি থাকতে হবে। দাম্পত্য জীবনে সব স্ত্রীর সম–অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো স্ত্রী গ্রহণের বিধান নেই।’

সামাজিক বৈঠকে জোরপূর্বক তালাক দিতে বাধ্য করা যায় কি না, প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী আজকের পত্রিকাকে বলেন, সামাজিক বৈঠকে চাপ দিয়ে কাউকে তালাক দিতে বাধ্য করানো আইনের চোখে অপরাধ। 

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পার্থ প্রতিম শীল আজকের পত্রিকাকে জানান, দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে সেটা ভিন্ন। কিন্তু জোর–জবরদস্তির কোনো সুযোগ নেই।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে গুরুত্ব পাবে শিক্ষা খাত: তারেক রহমান

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় এক অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় এক অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিএনপি ক্ষমতায় এলে শিক্ষা খাতকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষকদের পেশার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। সব স্কুলে বাংলা-ইংরেজির পাশাপাশি অন্যান্য ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হবে।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে শনিবার ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ৩১ দফা’ বিষয়ে খন্দকার শামসুল আলম ফাউন্ডেশন আয়োজিত মেধাবৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তারেক রহমান।

অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের বনিয়াদটাকে শক্তিশালী করতে পারলে তাদের ভবিষ্যতটা শক্ত, সুন্দর হবে বলে জানান বিএনপির নেতা। তিনি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় এলে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হবে। শিক্ষকদের এমন সাপোর্ট দেওয়া হবে, যাতে তাঁরা পাঠদানে পুরো মনোযোগ দিতে পারেন।

তারেক রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় আরও বেশি করে গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অষ্টম শ্রেণি থেকে কারিগরি শিক্ষা, বাংলা-ইংরেজির পাশাপাশি বিদেশি বিভিন্ন ভাষা, খেলাধুলা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে—যাতে ছেলেমেয়েরা দক্ষতা অর্জন করে বিদেশে গিয়েও যেকোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীসহ অন্যরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীসহ অন্যরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গত ১৫-১৬ বছর দেশ থেকে বহু অর্থ-সম্পদ পাচার হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘ফলে সার্বিকভাবে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। যেহেতু আমরা অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে আছি, আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে অল্প অর্থটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার।’

অনুষ্ঠানস্থল থেকে ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দেন।

তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার ওপর গত ১৬ আগস্ট উপজেলার ৮৪টি বিদ্যালয়ের ১০ হাজারের

বেশি শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হয়। পুরস্কার দেওয়া হয় ৬০ জনকে। এর মধ্যে প্রথম পুরস্কার ২৫ হাজার, দ্বিতীয় পুরস্কার ১৫ হাজার, তৃতীয় পুরস্কার ১০ হাজার এবং চতুর্থ পুরস্কার ৫ হাজার টাকা। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত তিনটি স্কুলকে ১ লাখ করে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্বামীর সহযোগিতায় স্ত্রীকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৫

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে স্বামীর সহযোগিতায় এক নারীকে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করেছেন স্বামীর পরিচিত তিন ব্যক্তি। এ ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই নারী একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের মিরশানী ইসলামিয়া ইটভাটায়। শনিবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন নারীর স্বামী নোয়াখালীর সুধারাম থানার রামহরিতালুক গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে রাজু আহাম্মেদ (২৬), ধর্ষণকারী একই এলাকার সিরাজ মাঝির ছেলে বেলাল হোসেন (৩৫), আবুল কাশেমের ছেলে হৃদয় (২৫), চান মিয়া মাঝির ছেলে মহিন (২৬), একই উপজেলার মুন্সিতালুক গ্রামের শাহ আলমের ছেলে আবুল কালাম (৪৫)।

এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার নারী মামলায় উল্লেখ করেন, স্বামী রাজুর সঙ্গে তাঁর ২০২৩ সালে বিয়ে হয়। বিয়ের পর জানতে পারেন রাজু একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি। এই নিয়ে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। চলতি মাসের প্রথম দিকে রাজু পরিবারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সালিসে আর নেশা করবে না বলে স্ত্রীকে কথা দেন। আগামী দিনে তাঁরা মিলেমিশে সংসার করবেন বলেও জানান।

১৫ অক্টোবর স্বামী রাজু তাঁর স্ত্রীকে কুমিল্লা শহরে থাকার কথা বলে উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের মিরশানী ইসলামিয়া ইটভাটায় নিয়ে আসেন। সেখানে তাঁরা শ্রমিক হিসেবে কাজ নেন। এই সময় তাঁদের থাকার জন্য অভিযুক্ত বেলালের সহযোগিতায় একটি ঘর ভাড়া নেন। ১৬ অক্টোবর রাত ১০টায় অভিযুক্ত বেলাল ও আবুল কাশেম তাঁদের ঘরে প্রবেশ করেন। এই সময় তাঁর স্বামী ঘরে ছিলেন। বেলাল ও কালাম রুমে প্রবেশের কিছুক্ষণ পর তাঁর স্বামীর সহায়তায় বেলাল তাঁকে ধর্ষণ করেন।

অভিযোগে ওই নারী আরও উল্লেখ করেন, লজ্জার কারণে তিনি বিষয়টি কাউকে জানাননি। ১৮ অক্টোবর অপর অভিযুক্ত হৃদয় ও মহিন উদ্দিন তাঁদের ঘরে প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁর স্বামী উপস্থিত ছিলেন। আগের একই কায়দায় হৃদয় ও মহিন উদ্দিন তাঁকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। ২০ অক্টোবর রাতে একই কায়দায় অভিযুক্ত হৃদয় আবারও তাঁর ঘরে প্রবেশ করেন এবং তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তখন তাঁর চিৎকার চেঁচামেচি শুনে হৃদয় পালিয়ে যান।

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভুক্তভোগী নারী শুক্রবার রাতে থানায় মামলা দায়ের করেন। আমরা আজ শনিবার ভোরে ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগীর নারীর স্বামী রাজুসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করি। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ওই নারীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর অভিযুক্তদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাত দিয়ে টানতেই উঠে আসছে রাস্তার কার্পেটিং, এলাকাবাসীর বাধার মুখে কাজ বন্ধ

দেবহাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি 
হাত দিয়ে টানতেই কার্পেটিং উঠে আসছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাত দিয়ে টানতেই কার্পেটিং উঠে আসছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটায় বিনোদনস্পট রূপসী ম্যানগ্রোভে (মিনি সুন্দরবন) যাওয়ার সড়কটি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সংস্কারকাজ করছিলেন ঠিকাদার। আর সেখানে উপস্থিত থাকা এলজিইডির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বসে বসে কাজ তদারকি করছিলেন। অনিয়ম দেখে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তা সংস্কারে বাধা দিলে সটকে পড়েন ঠিকারদার ও এলজিইডির কর্মকর্তা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও। অনিয়ম দেখে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন তিনি। আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, দেবহাটা উপজেলার সুশীলগাতী থেকে শীবনগরগামী রাস্তার কার্পেটিং কাজের টেন্ডার পায় ফয়সাল হোসেনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১৫০০ মিটার রাস্তার কাজের শুরু থেকে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। গত ঈদুল আজহার আগে ঠিকাদার রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করলে একপর্যায়ে স্থানীয়দের অভিযোগের মুখে তৎকালীন ইউএনও কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এরপর বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি আবার রাস্তায় কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করে।

আজ শনিবার কাপেটিংয়ের কাজ শুরু করে ঠিকাদারের লোকজন। একপর্যায়ে এলাকাবাসী রাস্তায় নিম্নমানের পিচ উচ্চ তাপমাত্রায় গলিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। এলাকাবাসীর দাবি, রাস্তার কার্পেটিং ঠিকমতো রুলার না করায় পায়ের জুতা ও গাড়ির চাকার সঙ্গে পিচ উঠে আসছে। এ ছাড়া ওই রাস্তার বেডে ব্যবহৃত এজিং নিজে নিজে ধসে পড়ছে। রাস্তার ওপরে ময়লা-আবর্জনা রেখে নামমাত্র ট্যাগকোড দিয়ে কার্পেটিংৎয়ের কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে স্থানীয়রা জানতে চাইলে এলজিইডির কর্মকর্তা ও ঠিকাদার ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে বিষয়টি ইউএনও মিলন সাহাকে অবহিত করা হলে সেখানে হাজির হন তিনি। রাস্তা নির্মাণকাজে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা আয়ুব হোসেন, আব্দুল মজিদ, শফিকুল ইসলাম, হাবিবুর রহমানসহ অনেকে বলেন, ঠিকাদারের লোকজন রাতের আঁধারে নষ্ট ও নিম্নমানের পিচ তরল করে ভালো পিচের ড্রামে ভর্তি করে। রাস্তায় ব্যবহৃত পাথরগুলোর নির্দিষ্ট কোনো সাইজ নেই। উচ্চতাপে ময়লা, মাটি, বালু মিশিয়ে পাথর ও পিচ কম দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছে, যা বেশি দিন স্থায়ী হবে না। তাঁরা আরও দাবি করেন, ওই ঠিকাদার এত নিম্নমানের কাজে করছে যে, ১৫ দিন আগে দেওয়া কার্পেটিং হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে।

অভিযোগের ব্যাপারে সহকারী ঠিকাদার আলমগীর হোসেন আলম বলেন, ‘ভুল হয়েছে। যেভাবে কাজ করা যায় তার একটা ব্যবস্থা করেন, আপনাদের সঙ্গে আলাদা দেখা করে নেব।’ অন্যদিকে কাজের তদারকিতে থাকা উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সংযোগ পাওয়া যায়নি।

দেবহাটা উপজেলার ইউএনও বলেন, ‘মৌখিক অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বেশ কিছু সমস্যা লক্ষ করা গেছে। যেহেতু এটি অত্যন্ত জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। বিশেষ করে এই উপজেলার অন্যতম বিনোদনকেন্দ্রে যাওয়ার একমাত্র কার্পেটিংয়ের রাস্তা—তাই কার্যপত্রের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করার জন্য প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো রকম অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাউজানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে যুবদলের কর্মী নিহত

রাউজান প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ৫১
সন্ত্রাসীদের গুলিতে মো. আলমগীর  খুন হয়েছেন
সন্ত্রাসীদের গুলিতে মো. আলমগীর খুন হয়েছেন

চট্টগ্রামের রাউজানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মো. আলমগীর ওরফে আলম (৫৫) নামের যুবদলের এক কর্মী খুন হয়েছেন। আজ শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল এলাকার রশিদরপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া।

নিহত আলমগীর ওই এলাকার চৌধুরীবাড়ির আব্দুস সাত্তারের ছেলে। তিনি যুবদলের কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে। আলমগীর বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী বলে জানা গেছে। গোলাম আকবর খোন্দকারের পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

আফগান সিরিজ দিয়ে সাত বছর পর ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত