Ajker Patrika

সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে এবার মহিষের মৃত্যু

শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে এবার মহিষের মৃত্যু

১১ দিনের ব্যবধানে পূর্ব সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে এবার মহিষের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে ধানসাগর স্টেশনের মূর্তির খাল এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। বনে মহিষ খুঁজতে গিয়ে আংশিক খাওয়া অবস্থায় মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন মহিষের মালিক। বাঘের আক্রমণে মৃত মহিষটি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের বনসংলগ্ন পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের শামছু হাওলাদারের।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এসব তথ্য জানান ধানসাগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. কামাল হোসেন তালুকদার। এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে ধানসাগর স্টেশনের তুলাতলা খালে বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মারা যান একই গ্রামের জেলে শিপার হাওলাদার (২২)।

এর মাসখানেক আগে ওই গ্রামের সোবাহান পহলানের একটি মহিষ বনে ঘাস খাওয়ার সময় বাঘের আক্রমণে মারা যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বেশ কিছুদিন ধরে লোকালয় সংলগ্ন বনে এভাবে বাঘের আনাগোনা বৃদ্ধি ও পর পর বাঘের আক্রমণে মানুষ ও গবাদিপশু মারা যাওয়ার ঘটনায় পশ্চিম রাজাপুর গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে।

সন্ধ্যার পর বনের পাশের রাস্তাঘাট ও দোকানপাটে লোক সমাগমও কমে গেছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। এ ছাড়া সুন্দরবনকে লোকালয় থেকে বিভক্ত করে রাখা ভোলা নদী ভরাট হওয়ায় বাঘ সহজেই গ্রামে চলে আসছে। আগেও বিভিন্ন সময় ধানসাগর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজাপুর, উত্তর রাজাপুরসহ বনের পাশের গ্রামগুলোতে বাঘ প্রবেশ করে গবাদিপশুর ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।

বন লাগোয়া ভোলা নদীর চরে বসবাসকারী আলম হাওলাদার (৫৫), নজরুল হাওলাদার (৫০) ও লাইলী বেগম (৩৫) বলেন, ‘আমরা জঙ্গলে (বনের) পাশেই বাস করি। বাঘ আতঙ্কে আমাদের রাতে ঘুম হয় না। কোনো  সময় জানি বাঘ ঘরে ঢুইকা পড়ে। গত বছর মরাভোলা নদী পার হইয়া কয়েকবার আমাদের গ্রামে বাঘ আসছে। মহিষের কারণে বাঘের আনাগোনা বাড়ছে। মহিষ জঙ্গলে যাওয়া বন্ধ না করলে বাঘ আসা কমানো যাবে না।’

বাগেরহাট জেলা পরিষদের সদস্য রাজাপুর এলাকার বাসিন্দা মো. হুমায়ুন করিম সুমন বলেন, ‘প্রতিদিন সামছু হাওলাদারসহ বনের পাশের বসবাসকারী কিছু পরিবার নিজেদের মহিষগুলো সকালে বনে ছেড়ে দেন। আবার বিকেলে ফিরিয়ে আনেন। প্রতিদিনের মতো সোমবার বিকেলে সামছু হাওলাদার মহিষ খুঁজতে গিয়ে বনের মধ্যে বাঘে খাওয়া মহিষের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।’

ধান সাগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য জাহাঙ্গীর তালুকদার বলেন, ‘বন বিভাগকে আরও নজরদারি বাড়াতে হবে। বনে নজরদারি কম থাকায় অবাধে মহিষ-গরু চরানোর সুযোগ পাচ্ছেন বনের পাশের বাসিন্দারা। বছরের পর বছর ধরে এই অবৈধ কাজটি করছেন তাঁরা। এর ফলে বনের ক্ষুধার্ত বাঘ মহিষের লোভে বার বার লোকালয়ে চলে আসছে। আক্রমণ চালাচ্ছে মানুষ ও গবাদিপশুর ওপর। সম্প্রতি বাঘের আক্রমণে দুটি মহিষ ও এক জেলের মৃত্যুই এটি প্রমাণ করে। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই বন বিভাগকে।’

বাঘের আক্রমণে মহিষের মৃত্যুর বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান পূর্ব সুন্দরবনের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গত ১ অক্টোবর বন থেকে বাঘের আক্রমণে নিহত জেলে শিপার হাওলাদারের মাথা উদ্ধারের পর সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। অবৈধভাবে বনে প্রবেশ এবং গবাদিপশু বনে না পাঠানোর জন্য পরদিন ২ অক্টোবর বনের পাশের প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে উল্লেখিত সময়ের পর কেউ এ ধরনের কাজ করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গত শনিবার রাতে অফিসের সামনে দুটি বাঘ আসার খবর নিশ্চিত করেন এসও রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের অফিসের কাছাকাছি ও পুকুরপাড়ে প্রায়ই বাঘ চলে আসে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টেকনাফে পাহাড় থেকে ৬ জিম্মিকে উদ্ধার, অস্ত্রসহ মানব পাচারকারী আটক

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
টেকনাফে পাহাড় থেকে ৬ জিম্মিকে উদ্ধার। ছবি: আজকের পত্রিকা
টেকনাফে পাহাড় থেকে ৬ জিম্মিকে উদ্ধার। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড় থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-গুলিসহ মানব পাচারকারী চক্রের এক সদস্যকে আটক করেছে বিজিবি। এ সময় চক্রের হাতে আটক ছয় ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন রোহিঙ্গা নাগরিক।

আজ মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার রাজারছড়া পাহাড়ে টেকনাফ ২ বিজিবির একটি দল এই অভিযান পরিচালনা করে।

আটক ব্যক্তির নাম মো. রুবেল (২০), তিনি টেকনাফ রাজারছড়া ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মো. হোছনের ছেলে।

উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা হলো টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপের মাঝেরপাড়া এলাকার জিয়াবুল হোসেনের ছেলে রাসেল (১৭), রামু খুনিয়াপালং এলাকার মো. সুলতানের ছেলে শাহরিয়াজ ইমন (১৯), উখিয়া জালিয়াপালং মনখালি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রফিকের ছেলে মো. ফয়সাল (১৭) ও উখিয়া মনখালির মো. ইলিয়াসের ছেলে মো. এহসান (১৬)।

রোহিঙ্গা দুজন হলো উখিয়া বালুখালি ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাসিম উল্লাহর ছেলে নজিম উল্লাহ (১২) এবং একই ক্যাম্পের জাফর আলমের ছেলে শহিদুল আমিন (১৫)।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজারছড়া পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালায় বিজিবি। এ সময় অস্ত্রধারী মানব পাচার চক্রের এক সদস্যকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে চারটি দেশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে চক্রের অন্য সদস্যরা পালিয়ে যায়।

টেকনাফে পাহাড় থেকে ৬ জিম্মিকে উদ্ধার বিজিবি। ছবি: আজকের পত্রিকা
টেকনাফে পাহাড় থেকে ৬ জিম্মিকে উদ্ধার বিজিবি। ছবি: আজকের পত্রিকা

অভিযান চলাকালে মানব পাচার চক্রের হাতে বন্দী ছয় ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন রোহিঙ্গা ও চারজন বাংলাদেশি নাগরিক।

ভিকটিমরা জানায়, রাজমিস্ত্রির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের পাহাড়ে ডেকে নিয়ে আটক করা হয়। পরে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে তিন দিন ধরে তাদের বন্দী করে রাখা হয়। এ সময় বিজিবির সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কাফনের কাপড় পরে কাল পদযাত্রা করবেন ইবতেদায়ি শিক্ষকেরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাশিক্ষক ঐক্যজোট আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নবম দিনের মতো অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। এ সময় তাঁরা জানান, দাবি মানা না হলে আগামীকাল কাফনের কাপড় পরে পদযাত্রা করবেন তাঁরা।

ধর্মঘট পালনকালে সমাবেশে ঐক্যজোটের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা শামসুল হক আনছারী বলেন, ‘১০৮৯টি স্বতন্ত্র মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অনুদানবিহীন সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার এমপিও আবেদনের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় আমরা আগামীকাল বুধবার কাফনের কাপড় পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদযাত্রা করব।’

মানিকপুর মোহাম্মাদিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মো. মুহিব বুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘দাবি পূরণ না হলে আগামীতে আমরা লংমার্চ টু যমুনা যেতে বাধ্য হব।’

সমাবেশে বক্তব্য দেন আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মো. সামসুল আলম, সদস্যসচিব মোহাম্মদ আল-আমিন, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাশিক্ষক ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান কাজী মোখলেছুর রহমান, উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন জিহাদি, মহাসচিব মো. সামছুল আলম প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পদ্মায় দেখা মিলল বিলুপ্তপ্রায় কুমিরের, নদীতে গোসল না করতে মাইকিং

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহীর পদ্মায় বিলুপ্তপ্রায় কুমিরের দেখা মিলল। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীর পদ্মায় বিলুপ্তপ্রায় কুমিরের দেখা মিলল। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর পদ্মায় ছোট-বড় একাধিক কুমিরের দেখা মিলেছে। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক একটি কুমিরের ছবি তুলেছেন এক দম্পতি। আর ছোট এক বা একাধিক কুমির দেখেছেন নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা। তাঁরা অবশ্য ছবি তুলতে পারেননি। এই অবস্থায় নদীতে গোসল করা থেকে বিরত থাকতে এলাকায় মাইকিং করেছে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার চরে পাখির ছবি তুলতে যান ইমরুল কায়েস ও উম্মে খাদিজা ইভা দম্পতি। তাঁরা পাখির বদলে কুমিরের ছবি নিয়ে বাড়ি ফেরেন। ষাটবিঘা চরের রাজু আহাম্মেদ গরু চরাতে গিয়ে প্রথম কুমিরটি দেখতে পান। ওই দম্পতি যে কুমিরের ছবি তোলেন, সেটি প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএন বাংলাদেশে বিলুপ্ত শ্রেণির হিসেবে ঘোষণা করেছে। নতুন করে এ কুমিরের দেখা পাওয়া গেছে।

ইমরুল কায়েস-উম্মে খাদিজা দুজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পেশায় তাঁরা আলোকচিত্রী। তাঁরা সেদিন পদ্মার চরে লাল মুনিয়া পাখির ছবি তুলতে যান। সেখানে যাওয়ার পর রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির মোবাইল ফোনে কল করেন ইমরুল কায়েসকে। তিনি জানান, চরে গরু চরাতে গিয়ে একটি ছেলে কুমির দেখতে পেয়েছেন। তারপরই শুরু হয় নদীতে কুমির খোঁজার অভিযান। একপর্যায়ে দেখা মেলে।

খাদিজার ভাষায়, ‘যদি কুমিরটা পানিতে থাকে, তাহলে ড্রোন দিয়ে দেখা যেতে পারে। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর কায়েস ড্রোন ওড়ান। কায়েস প্রথমে ড্রোনটা আমাদের ডান দিকে পাঠালেন। কিন্তু কুমিরের দেখা নেই। একটু পর কায়েস হুট করে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, ‘‘পাগলি কুমির!’’ আমি খুশিতে এক লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।

‘কায়েসকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন দিকে কুমির? কায়েস বললেন, ডান দিকে সামনে। আমি আর কায়েস ড্রোন চালু রাখা অবস্থায় দুজন কুমিরের দিকে হাঁটা ধরলাম। কিছু দূর হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে জীবনে প্রথম সামনাসামনি ওয়াইল্ডে কুমিরের দেখা পেলাম। কায়েস ড্রোন দিয়ে কিছু ভিডিও ও ছবি নিলেন, আমি ক্যামেরায় কিছু ভিডিও করলাম। আমরা খুশিতে আত্মহারা।’

আইইউসিএনের মুখ্য গবেষক এ বি এম সারোয়ার আলম (সীমান্ত দীপু) জানান, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে মিঠাপানির কুমিরকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর পাবনা জেলায় একটি কুমিরের সন্ধান মেলে, পরে দেশের আরও দুটি স্থানে দেখা যায় একই প্রজাতির কুমির। বর্তমানে এ দুটি কুমিরকে সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

সারোয়ার আলম মনে করেন, এগুলো বাংলাদেশের প্রকৃতিতে জন্ম নেওয়া কুমির নয়। এরা বয়স্ক এবং সম্ভবত ভারতের চাম্বুল নদ এলাকা থেকে এসেছে।

এদিকে পদ্মায় প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরটিকে বিরক্ত না করতে আজ মঙ্গলবার রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় জেলেদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ সময় জেলেরা জানান, কয়েক দিনের মধ্যে তাঁরাও ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া চরমাজারদিয়া এলাকায় পদ্মা নদীতে কুমির দেখেছেন। তবে তাঁদের দেখা কুমির ছবিতে আসা কুমিরটির মতো বড় নয়, সেটি ছোট।

জানতে চাইলে রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘জেলেরা ছোট কুমির দেখেছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তবে ইমরুল কায়েস ও উম্মে খাদিজা দম্পতি প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরের ছবি তুলেছেন। এখন স্থানীয়রা নাকি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছেন কুমিরটি ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমার কাছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ জন্য ফোন এসেছিল। এই অবস্থায় স্থানীয়দের সচেতন করতে আমরা আজ লিফলেট বিতরণ করেছি।’

জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরটির সঙ্গী থাকতে পারে। আবার জেলেরা ছোট কুমির দেখার দাবি করছেন। তাহলে বোঝা যায় যে, কুমির আছে। এখন আমাদেরই সচেতন থাকতে হবে। জলজ প্রাণী জলেই থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তাদের বিরক্ত করা যাবে না।’

তবে কুমিরের ছবি তোলা আলোকচিত্রী ইমরুল কায়েস আশঙ্কা করছেন, কুমিরটি খুঁজে ধরে নিয়ে যেতে পারে আইইউসিএন। কিন্তু তিনি চান, কুমিরটি উন্মুক্তভাবেই নদীতে থাকুক। তাহলে এর প্রজনন হবে।

ইমরুল কায়েস বলেন, ‘এর আগে আমরা দেখেছি, কোথাও কুমির পেলে আইইউসিএন সেটাকে ধরে নিয়ে গেছে। প্রজননের জন্য সেটিকে সুন্দরবনে ব্রিডিং সেন্টারে রেখেছে। সেটা তো খাঁচার মতো। আমরা চাই, এই কুমিরকে যেন সেখানে না নেওয়া হয়। তা না হলে আমাদেরই অপরাধী মনে হবে যে, আমরা ছবিটা তুলেছি বলে কুমিরটাকে খাঁচায় বন্দী হতে হলো।’

পদ্মা নদীতে গোসল না করতে প্রচারপত্র বিতরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা
পদ্মা নদীতে গোসল না করতে প্রচারপত্র বিতরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লিফলেট

এতে বলা হয়েছে, কুমির হলো জলচর সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। এরা হিংস্র স্বভাবের। কুমিরের মাথা সরু ও দীর্ঘ আকারের হয়। কুমিরের মুখটি ইংরেজি ‘ভি’ আকৃতিবিশিষ্ট হয়। সব কুমিরই অর্ধ-জলচর প্রাণী। এরা মূলত নদী, হ্রদ ও জলাভূমির মিষ্টি জলেই বাস করে। কোনো কোনো প্রজাতির কুমির অর্ধ-লবণাক্ত বা লবণাক্ত জলে বাস করে। রোদ পোহানোর জন্য এরা ডাঙ্গায় চলে আসে। এরা মাংসাশী প্রাণী। প্রধানত মাছ, জলাশয়ে বসবাসকারী পাখি ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।

কুমিরের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য কুমিরের দেখা পেলে অতি উৎসাহী হয়ে বিরক্ত না করা, বাচ্চাদের নদীর কিনারায় যেতে না দেওয়া, দিনে ও রাতের বেলায় মাছ আহরণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা, নদীতে গোসল করা থেকে বিরত থাকা, ছোট ছোট নৌযান চলাচলে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা, কুমিরের রোদ পোহানোর সময় ঢিল না ছোড়া এবং তাড়ানোর চেষ্টা না করা, রাতের বেলায় নদী ও নদীপাড়ের সব কাজ থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে।

জলজ পরিবেশে কুমিরের গুরুত্বও তুলে ধরা হয় এ লিফলেটে। বলা হয়, কুমির জলজ খাদ্যশৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কুমির মরা, পচা মাছ ও অন্যান্য জলজ মৃত প্রাণী ভক্ষণ করে জলজ পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখে। সর্বোপরি কুমির জলজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

এ ছাড়া আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী, কুমিরকে বিরক্ত করা, রোদ পোহানোর সময় ঢিল ছোড়া, তাড়ানোর চেষ্টা করা, ধরা, মারা, ক্রয়-বিক্রয়, পাচার করা, পরিবহন করা, হত্যা ইত্যাদি শাস্তিযোগ্য অপরাধ; যার সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর কারাদণ্ড অথবা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিলেটে দুই ট্রাক সাদাপাথর জব্দ, দেড় লাখ টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট  
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে ট্রাকে করে পাথর নেওয়ার সময় দুই চালককে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাঁরা হলেন বগুড়ার নরুইল গ্রামের রেজওয়ান (২৭) ও কালিবালা গ্রামের আরিফুল (৩৫)। মঙ্গলবার সকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই ট্রাকচালককে জরিমানা করা হয়।

এর আগে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ মহাসড়কে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে ট্রাক দুটি আটক করা হয়।

পুলিশ জানায়, সোমবার দিবাগত রাতে ওই ট্রাক দুটি ভোলাগঞ্জ থেকে পাথর নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় তাদের তল্লাশিচৌকিতে আটক করা হয়। পরে পাথরবিষয়ক কাগজপত্র দেখাতে পারেননি চালকেরা। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলে পাথর পরিবহন করা ট্রাক দুটিসহ দুজনকে আটক করা হয়।

আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন কোম্পানীগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আবুল হাছনাত। তিনি বলেন, আটক দুজনকে সতর্ক করা হয়েছে। জব্দ করা পাথর উপজেলা প্রশাসনের জিম্মায় রয়েছে। এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত