Ajker Patrika

লোকসানের মুখে ব্যবসা গোটাচ্ছেন মহম্মদপুরের পোলট্রি খামারিরা

মোহাম্মদ উজ্জ্বল, মহম্মদপুর (মাগুরা)
আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ০৮
লোকসানের মুখে ব্যবসা গোটাচ্ছেন মহম্মদপুরের পোলট্রি খামারিরা

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মুরগির খামার। ব্যাপক লোকসানের মুখে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন খামারিরা। খাদ্য, ওষুধ, বাচ্চা ও পোলট্রি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় পোলট্রি ব্যবসায় ধস নেমেছে। এরই মধ্যে উপজেলার প্রায় ৫০ শতাংশ পোলট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। ব্রয়লার-লেয়ার মুরগির ছোট বাচ্চা ও পোলট্রি ফিডের হঠাৎ চড়া দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা। ফলে ব্যাহত হচ্ছে মাংস ও ডিম উৎপাদন। 

মহম্মদপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ব্যাংক ঋণ পেতে জামানতের ঝামেলা থাকায় খামারিরা এ ব্যবসায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। সম্প্রতি খাবার ও বাচ্চার দাম দফায় দফায় লাগামহীনভাবে বাড়ার কারণে মহম্মদপুর উপজেলা পোলট্রি খামারিরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। একই সঙ্গে সিন্ডিকেট করে মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন খামারিরা। 

এখন পর্যন্ত উপজেলার প্রায় ৫০ শতাংশ পোলট্রি খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খামারের প্রায় আড়াই শতাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এতে বেড়েছে বেকারত্ব। প্রতিদিনের ডিমের চাহিদা অনুযায়ী দেখা দিয়েছে ঘাটতি। 

স্থানীয় খামারিরা অভিযোগ করে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দর বাড়ার অজুহাতে দেশীয় বাজারে অযৌক্তিকভাবে কাঁচামালের দর বাড়ানো হচ্ছে। সংকট আরও ঘনীভূত হলে এখানকার পোলট্রি শিল্পের প্রান্তিক খামারিদের জীবন ও জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সরকারের সহায়তার জন্য মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়েছে। 

উপজেলার দীঘা ইউনিয়নের খামারিরা বলেন, লেয়ার মুরগির বাচ্চা, মুরগির খাবারসহ অন্যান্য উপকরণের মূল্য বাড়ায় উপজেলার সম্ভাবনাময় এ ব্যবসা লোকসানে ভরে গেছে। কিছুদিন আগেও একটি লেয়ার মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ২০ টাকা। বর্তমানে সেই বাচ্চার দাম ৪০ টাকা। একইভাবে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দামের একটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ৭০-৭৫ টাকা ও সোনালি জাতের বাচ্চা ৩০ থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা হয়েছে। তা ছাড়া পোলট্রি মুরগির খাবার রেডি ফিড প্রতি বস্তা ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ৬০০ টাকা বস্তা হয়েছে। 

দীঘা ইউনিয়নের খামারি হাবিব মিয়া বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে একটি ডিম ৬ থেকে ৭ টাকায় বিক্রি হতো। এখনো খামারিরা সেই আগের দামে ডিম বিক্রি করছেন। আমার খামারের অর্ধেক মুরগি বিক্রি করে দিয়েছি। ঈদের আগে বাকি অর্ধেক মুরগি বিক্রি করে খামার বন্ধ করে দেব।’

উপজেলার নাগড়া গ্রামের খামারি মো. রকিব বলেন, ‘লোকসান করতে করতে আমরা ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছি। দামটাও আমরা নির্ধারণ করতে পারছি না। নির্ধারণ করছে অন্য একটি সিন্ডিকেট। পোলট্রি খামার করে বছরের পর বছর লোকসান গুনছি। মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।’ 

মো. রকিব আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনের সময় চাহিদা কম থাকায় এমনিতেই মুরগি ও ডিম উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করতে হয়েছে। এতে প্রান্তিক খামারিরা লোকসান গুনতে গুনতে দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এরই মধ্যে এখন ফিড ও বাচ্চার যে দাম, তা দিয়ে খামার পরিচালনা করতেই হিমশিম খাচ্ছি। 

মাগুরা জেলা খামার মালিক সমিতির সভাপতি এমএইস রহমান শিবলু বলেন, উপজেলার প্রায় ৫০ ভাগ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ২০ ভাগ বন্ধ হওয়ার পথে। বেকার যুবকেরা ঋণ নিয়ে যে খামার করেছিলেন, এখন হঠাৎ করে মুরগির খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ায় তা বন্ধ হয়ে গেছে। 

সভাপতি আরও বলেন, আমার নিজের খামারে প্রায় ৯ হাজার লেয়ার মুরগি রয়েছে। এখন সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। 

এ বিষয়ে মহম্মদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, খাদ্য ও ওষুধের মূল্য বাড়ায় ক্ষুদ্র খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। ফলে এ উপজেলার অনেকেই খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মচারীরা মাঠপর্যায়ে তদারকি চালিয়ে ও পরামর্শ দিয়ে খামারিদের ব্যবসা ধরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত