Ajker Patrika

বরাদ্দ ছাড়াই আশ্রয়ণের ঘরে থেকে বালু ভরাট করছেন আরেক প্রকল্পের

আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯: ৩৯
বরাদ্দ ছাড়াই আশ্রয়ণের ঘরে থেকে বালু ভরাট করছেন আরেক প্রকল্পের

যশোরের মনিরামপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে থেকে পাশের মুক্তেশ্বরী নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলছেন ইদ্রিস আলী নামের এক ব্যক্তি। তিনি সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার বাসিন্দা। এক মাস আগে মনিরামপুরের হাজরাইল এলাকার আশ্রয়ণের বিপুল বিশ্বাসের ঘরে পরিবার নিয়ে উঠেছেন। বিপুল বিশ্বাস বরাদ্দের ঘর ছেড়ে পরিবার নিয়ে নেবুগাতী গ্রামে আগের ঠিকানায় আছেন। 

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিন হাজরাইলের আশ্রয়ণ প্রকল্পে গেলে দেখা যায়, কাঁচা রাস্তার পাশ দিয়ে গেছে প্লাস্টিকের পাইপ। কানে আসছে দূর থেকে ভটভট শব্দ। একটু এগোতে দেখা যায় শব্দটি আসছে মুক্তেশ্বরী নদীর মাঝখান থেকে। নদীতে ড্রাম দিয়ে করা হয়েছে ভাসমান মাচা। মাচার ওপরে তিনজন লোক ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলছেন। নদী থেকে তোলা এই বালু যাচ্ছে দুই কিলোমিটার দূরে ভোমরদহ গ্রামে। সেখানে একটি গর্ত ভরাট করা হচ্ছে। 

কথা হয় ইদ্রিস আলীর সঙ্গে। এ নিয়ে জানতে চাইলে ইদ্রিস বলেন, ‘উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল্লাহ বায়েজিদ আমাকে এখানে কাজে এনেছেন। এর আগেও মনিরামপুরে পিআইওর কাজ করেছি। এখন এক মাস ধরে মুক্তেশ্বরী থেকে বালু তুলছি। নিয়মিত ছয়জন শ্রমিক দুটি মেশিনে বালু তোলার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।’ 

অন্য জেলা থেকে এসে অন্যের নামে বরাদ্দ আশ্রয়ণের ঘরে থাকার অধিকার তাঁর আছে কি না জানতে চাইলে ইদ্রিস বলেন, ‘সেই অধিকার আমার নেই। পিআইও বালু তোলাচ্ছে বলে আমাকে এখানে থাকতি দেছে। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানে থাকতে বলেছে।’ 

এদিকে মুক্তেশ্বরী থেকে তোলা বালু নিয়ে ভোমরদহ এলাকায় যে গর্ত ভরাট করা হচ্ছে, সেখানে গিয়ে মিল্টন নামের একজনকে খাতা-কলম হাতে পাওয়া যায়। মিল্টন জানান, তাঁর বাড়ি ফরিদপুরে। তিনি পিআইও আব্দুল্লাহ বায়েজিদের ভাতিজা।

লম্বা পাইপ দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদী থেকে দুই কিলোমিটার দূরে নেওয়া হচ্ছে বালুমিল্টন বলেন, ‘এখানে (ভোমরদহে) রাস্তার পাশে তিন জায়গায় খাসজমি পাওয়া গেছে। জমিতে গর্ত। নদী থেকে বালু তুলে গর্ত ভরাটের কাজ করা হচ্ছে। একটা গর্ত ভরাট করে আরেকটি ভরাটের কাজ চলছে। এরপর আরও এক জায়গা ভরাট করতে হবে। বালু তোলার খরচের বিষয়ে পিআইও বলতে পারবেন।’ 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোমরদহ এলাকায় ভূমিহীনদের জন্য ১৮ থেকে ২০টি ঘর নির্মাণ করা হবে। যেখানে নদী থেকে বালু তুলে ফেলা হচ্ছে, সেখানে ঘর নির্মাণ হবে। 

এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ বায়েজিদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

মুক্তেশ্বরী থেকে বালু তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কবির হোসেন বলেন, ‘অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সরকারি কোনো উন্নয়নকাজে বালু উত্তোলনের সুযোগ আছে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ২০১০-এর ৭ ধারায় এ কথা বলা আছে।’

আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও কবির হোসেন বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসক। তিনি বিষয়টি জানেন। তাঁর পক্ষে উপজেলা প্রশাসন হিসেবে আমরা এখানে কাজ করি।’ 

নদীর বালুতে ভোমরদহ এলাকায় গর্ত ভরাটের কাজে নিয়োজিত এক শ্রমিকআশ্রয়ণের ঘর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘আশ্রয়ণে একজনের ঘরে অন্যজনের থাকার সুযোগ নেই। বিষয়টি দেখার জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী হাসান বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আজ শুক্রবার সকালে আমি ঘটনাস্থলে যাই। বিপুল বিশ্বাসের ঘরে ইদ্রিস নামের একজনের ওঠার সত্যতা পাইছি। তবে তাঁকে ঘরে পাওয়া যায়নি। ঘরটি তালাবন্ধ ছিল।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাবির সিন্ডিকেটে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের চূড়ান্ত অনুমোদন

শ্বশুরকে জামাতার ফোন: ‘আপনার মেয়েকে মাইরা ফেলছি, লাশ নিয়ে যান’

স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গেলেন ইমামতি করতে

ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি বাতিল করল পাকিস্তান, এর প্রভাব কী

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের জামাতাকে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত