Ajker Patrika

১৬০ বছরেও তুলনাহীন সাবিত্রী-রসকদম্ব

মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেরপুর
১৬০ বছরেও তুলনাহীন  সাবিত্রী-রসকদম্ব

বাদল দিনের কদম ফুল কে না ভালোবাসে। হলুদের মাঝে সাদার খেলা বর্ষার আগমনী বার্তা দিয়ে যায়। কিন্তু এখন বর্ষা চলে গেছে। দেখা যায় না এ ফুলের বাহার। তবে মেহেরপুরের একটি দোকানে গেলে কদম ফুলের ভ্রম তৈরি হবে। মরীচিকার মতো কাছে গিয়ে আর ফুল পাওয়া যাবে না। এগুলো আসলে একধরনের মিষ্টি।

দেখতে ঠিক আষাঢ়ের রসকদম্ব ফুলের মতো এ মিষ্টির নাম রসকদম্ব। তিন স্তরবিশিষ্ট এই মিষ্টির উপরিভাগ শুকনো হলেও শেষ স্তরটি রসে ভরা। আরও দেখা যাবে রসহীন মিষ্টি সাবিত্রী। স্বাদে, গুণে অতুলনীয় হওয়ায় অনেকেই ভালোবেসে ডেকে থাকেন ‘স্বামী-স্ত্রী’। মিষ্টিটি শুকনোজাতীয়। দীর্ঘ ১৬০ বছর ধরে মানুষের মুখে রসনা দিয়ে যাচ্ছে মেহেরপুরের ‘বাসু দেব গ্র্যান্ড সন্সের’ এই মিষ্টি দুটি।

ব্রিটিশ ও জমিদার রাজবংশ থেকে যাত্রা শুরু। মিষ্টিপ্রিয় সবার কাছেই নাম দুটি খুবই পরিচিত। মজার ব্যাপার হলো, এগুলো যতই পুরোনো হয় কিন্তু নষ্ট হয় না। বরং স্বাদ বাড়ে। ঠান্ডায় ৬ মাস রাখলেও কোনো ক্ষতি হয় না। দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়। তাই তো এ মিষ্টি কিনতে প্রতিদিন স্থানীয় ক্রেতার চেয়ে অতিথি বেশি হয়।

জানা যায়, ১৮৫৭ সালে মেহেরপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠার পর ১৮৬১ সালে ব্রিটিশ রাজত্বকালে বাসুকুরী দেব এ মিষ্টি উদ্ভাবন করেন। অল্প সময়ে ইংরেজ বাবুদের কাছে এবং জমিদার রাজবংশসহ অবিভক্ত নদীয়ায় ভিন্নধর্মী ও ব্যতিক্রমী এ মিষ্টির পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। ইতিহাস ও স্মৃতির সুতো ধরে বাসুকুরী দেবের নাতি ৪৫ বছর বয়সী বিকাশ কুমার সাহা বলেন, ‘ঠাকুরদাদা তখন জমিদার সুরেন কুমার বোস বাড়ির সিংহ ফটকের সামনে সড়কের পাশে প্রথম দোকানটি গড়ে তোলেন। তখন থেকেই ব্রিটিশ ও জমিদার রাজবংশের সবাই এ মিষ্টির ভক্ত হন। এমনকি মেহমানেরাও এ মিষ্টি খেতে প্রায়ই আসতেন।’

বিকাশ কুমার সাহা জানান, মূলত দুধ ও চিনি এ মিষ্টি তৈরির প্রধান উপকরণ। প্রথমে দুধ কাঠের চুলায় নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় জ্বাল দেওয়া হয়। দুধ ঘন হয়ে এলে নির্দিষ্ট সময়ে ও তাপমাত্রায় পরিমাণমতো চিনি দিতে হয়। খেয়াল রাখতে হয় মিষ্টি যেন অসহনীয় মাত্রার না হয়। আবার নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় জ্বাল দিয়ে শুকিয়ে চাঁছি তৈরি করতে হয়। এক কেজি দুধের চাঁছিতে ৮-১০টি সাবিত্রী হয়। ঐতিহ্য ও মানের স্বার্থে পুরো কাজটি শেষ করতে হয় অত্যন্ত সুচারুরূপে। প্রতি কেজি মিষ্টির দাম ৩২০ টাকা।

বাসু দেবের আরেক নাতি অনন্ত কুমার সাহা বলেন, ‘প্রতিদিন এক মণের বেশি মিষ্টি তৈরি করতে হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় দোকান খুললে বেলা দুইটার মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে যায়। মান ধরে রাখতে বেশি বায়না পেলেও অতিরিক্ত মিষ্টি তৈরি করি না।’ শহরের বোসপাড়ার বাসিন্দা হাসিব উদ্দিন বলেন, ‘ছোট থেকে এখনো প্রতিদিন বাসু দেবের মিষ্টি খাই। অথচ মিষ্টির মান এখনো বদলায়নি।’  

দেশ-বিদেশের মন্ত্রী, কূটনীতিক, সচিব, আমলা, সামরিক-বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, লেখক, সাংবাদিক, বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিসহ গুণী ব্যক্তিরা মেহেরপুর এলে এ মিষ্টি কিনতে ভোলেন না। তাঁদের মাধ্যমে হাতবদল হয়ে এই মিষ্টি এখন চলে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, মধ্যপ্রাচ্যসহ বহু দেশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাবেক কেরানির ২৪টি আলিশান বাড়ি ও ৩০ হাজার কোটির সম্পদ

সব কমিটি থেকে নারীদের সিস্টেমেটিক্যালি সাইড করা হয়েছে: সামান্তা শারমিন

অবরোধকারীদের ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়ে ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধাদের’ হামলা, পুলিশের লাঠিপেটায় শাহবাগ ফাঁকা

ব্যবসায়ীকে বালুতে পুঁতে রেখে ‘৪ কোটি টাকা আদায়’

আরও বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত