Ajker Patrika

‘জঙ্গি আস্তানায়’ আটক নটর ডেমের ছাত্র হতাশ ও বিষণ্ন ছিল, স্বজনদের দাবি

জাহিদ হাসান, যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ২০: ৫২
‘জঙ্গি আস্তানায়’ আটক নটর ডেমের ছাত্র হতাশ ও বিষণ্ন ছিল, স্বজনদের দাবি

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য সন্দেহে মৌলভীবাজারে কুলাউড়ায় পাহাড় থেকে গ্রেপ্তারদের একজন ঢাকায় নটর ডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী (১৭)। কয়েক মাস ধরেই তার মধ্যে বিষণ্নতা ও একা থাকার প্রবণতা ছিল বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। 

চরমপন্থী মতাদর্শে দীক্ষিত হওয়ার কোনো আলামত ধরা না পড়লেও ওই তরুণের আচরণে হঠাৎ বেশ পরিবর্তন দেখেছেন স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনেরা। ধর্মচর্চার পাশাপাশি তার বেশভূষায়ও পরিবর্তন আসে। আগে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডায় উৎফুল্ল থাকলেও সর্বশেষ বাড়ি গিয়ে কারও সঙ্গে তেমন দেখা করত না সে। বাড়িতেই পুরো সময়জুড়ে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকত। 

পরিবার বলছে, পড়াশোনার সুবাদে ঢাকায় কলেজের হোস্টেলেই থাকত। গত কোরবানি ঈদের দুই দিন আগে ছুটিতে যশোরে বাড়ি যায়। এক মাস সে বাড়িতে ছিল। গত ২৮ জুলাই বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি সে। 

যশোর ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মফিজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিখোঁজ ওই শিক্ষার্থীর বাবা থানায় জিডি করে আমাদের সঙ্গে শরণাপন্ন হন। এরপর তার মোবাইল ট্র্যাকিং করে জানতে পারি, পাবনার একটি যাত্রীবাহী বাসে করে সে যশোর ছেড়েছে। এরপর পরিবার ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, গত পাঁচ-ছয় মাস তার গতিবিধি পরিবর্তন হয়েছে। ধর্মীয়ভাবে মুখে দাড়ি রেখেছে, বাসায় একা একা থাকে। মোবাইলে ভাই ভাই বলে কথা বলত। এসব বিশেষ লক্ষণ দেখে আমরা বুঝতে পারি ধর্মীয় কোনো সংগঠনে জড়িত হয়ে আত্মগোপনে রয়েছে সে। এরপর আমরা বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। পরবর্তী সময় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট তদন্ত করে ফাহিমের সূত্র ধরেই পাবনা এবং পরবর্তীকালে কুলাউড়াতে অভিযান পরিচালনা করে। এতে দুই দফায় ২৬ জনকে আটক করে তারা।’ 

সে অনুযায়ী ওই শিক্ষার্থী কাউকে না জানিয়ে সোজা পাবনা চলে যায়। এরপর সিরাজগঞ্জে জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র অন্যতম সদস্য চিকিৎসক সোহেল তানজিমের কাছে। এরপর সোহেল তানজিমের সঙ্গে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকার জঙ্গি আস্তানায় চলে যায় বলেও জানান এ কর্মকর্তা। 

গত শনিবার সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট ৬ নারীসহ ১০ জনকে আটক করে। তাঁদের সঙ্গে তিন শিশুও রয়েছে। তাঁরা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে জানিয়েছে সিটিটিসি। ওই বাড়ি থেকে জিহাদি বই ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয় বলেও জানা গেছে। এ ঘটনার পর গত সোমবার একই এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে আরও ১৭ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয় জনতা।

বর্তমানে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় শিশু শোধনাগার টঙ্গীতে রয়েছে ওই তরুণ। তার বাড়ি যশোর জেলা সদরে। তার বাবা পেশায় একজন আইনজীবী। তিনি আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য ও অতিরিক্ত জেলা রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলি (পিপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দুই স্ত্রীর পরিবারে চার সন্তানের মধ্যে ওই তরুণ সবার বড়। ছোটবেলায় তার মা মারা যান। 

জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে আটকের ঘটনায় হতবাক তাদের পরিবারসহ স্থানীয়রা। সহজ-সরল ও মেধাবী ছাত্র হিসেবে এলাকায় পরিচিত ওই শিক্ষার্থীর জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি মেলাতে পারছেন না স্বজন ও এলাকাবাসী। 

এলাকায় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থীর বাবা এলাকায় পরিচিত আইনজীবী ও গণ্যমান্য ব্যক্তি। বাবার মতো এলাকায় মেধাবী ছাত্র হিসেবেই সুনাম রয়েছে তার। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতাও কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছে। বেশির ভাগ সময় বাড়িতে ও অদূরেই তার নানাবাড়িতে সময় কাটাত। রাতে মাঝেমধ্যে শহরে বিভিন্ন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিত। তবে আগে ধর্মীয় লাইনে না থাকলেও সম্প্রতি দাড়ি রেখেছে এবং নামাজ পড়া শুরু করেছে সে। 

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার খবর শুনে ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। বাড়ি থেকে তেমন বের হচ্ছেন না কেউই। নিকট স্বজনেরা ছাড়া কেউ তাদের বাড়িতেও আসছেন না। 

বাড়িতে ওই কলেজছাত্রের ছোট মায়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সে যখন নার্সারিতে পড়ত তখন ওর মা মারা যায়। আমি যে ওর সৎমা, কখনো তাকে বুঝতে দিইনি। ছোটবেলা থেকেই সে ভালো ছাত্র। তাই এই শহরের ভালো স্কুল-কোচিংয়ে পড়িয়েছি। গত ২৮ জুলাই সকালে সে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ি থেকে বের হয়। দুপুরে খাবার সময় হলে বাড়িতে না আসায় ফোন দিই। তখন ওর ফোন বন্ধ পাওয়া গেলে বিভিন্ন স্বজন ও বন্ধুদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও পাওয়া যায়নি। পরে ২৯ তারিখ থানায় জিডি করে ওর বাবা। এরপর গত মঙ্গলবার টিভির সংবাদে দেখতে পাই মৌলভীবাজার থেকে ১৬ জন কিশোর-যুবক আটক হয়েছে। পরে নিউজে ছবি ও নাম-পরিচয় দেখে জানতে পারি, সেখানে সেও আছে।’ 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আসফাকুন্নাহার আরও বলেন, ‘২০২১ সালে যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেয়। জিপিএ-৫ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যশোর বোর্ডে মেধাতালিকায় স্থান করে নেয়। ছোটবেলা থেকে সে লেখাপাড়ায় খুব ভালো। পরে ঢাকার নটর ডেম কলেজে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অসুস্থায় সে বেশি দিন ক্লাস করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী শিক্ষাবর্ষের ৮০ ভাগ উপস্থিতি না থাকলে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে দেওয়া হয় না। ফলে সে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিতে না পারায় চরম হতাশায় ভুগছিল। ঘরে একা একা বসে থাকত। কিন্তু তার মধ্যে জঙ্গি ধরনের কিছু পায়নি।’ 

ওই শিক্ষার্থীর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছোটবেলায় ওর মা মারা যাওয়ায় মনের ভেতরে যন্ত্রণা ছিল। আবার নানা রোগেও ভুগছিল সে। এর মধ্যে বাসায় থাকার সময় মোবাইল নিয়ে থাকত। কিন্তু কোনো আড্ডাবাজি, দলাদলিতে ছিল না। জঙ্গিবাদে জড়ানোর মতো কোনো বিষয় পরিবারের চোখে পড়েনি। সন্দেহজনক কোনো লোকজনকেও আসা-যাওয়া করতে দেখিনি। ছেলের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টা কিছুতেই মেলাতে পারছি না। আমার ছেলে অল্প বয়সী, খুব সহজ-সরল। কেউ হয়তো ফাঁসিয়ে দিয়ে থাকতে পারে।’ 

ওই বাড়ির কয়েক অদূরেই তার নানাবাড়ি। মা হারা নাতিকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে এই খবরে কাতর ষাটোর্ধ্ব নানি। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার নাতি অনেক সহজ-সরল। ও কোনো অপরাধ করতে পারে না।’ 

দুজন প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, ওই তরুণেরা দুই ভাই। ওরা যখন অনেক ছোট, তখন ওর বাবা আরেকটা বিয়ে করে। সেই বিয়েটা মেনে নিতে পারে না ওর মা। তাই ওদের মা আত্মহত্যা করেন। দ্বিতীয় পক্ষের ঘরে তার দুই বোন আছে। সৎমাকে নিয়ে তেমন কোনো ঝামেলা ছিল না বলেই জানেন তাঁরা। 

তাঁরা আরও জানান, সে ভদ্র-নম্র ও মেধাবী ছেলে। তার এ ঘটনায় জড়িত বিষয়টি তাঁরাও বিশ্বাস করতে পারছেন না। তার সম্পর্কে এলাকায় ওই ধরনের কোনো অভিযোগ কোনো দিন শোনেননি তাঁরা। 

ওই তরুণের এক বন্ধু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল ওর। কিন্তু অসুস্থতার কারণে নিয়মিত কলেজে যেতে পারেনি। এ কারণে নিয়ম অনুযায়ী এইচএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে দেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে অনেক হতাশায় ভুগছিল সে। তবে জঙ্গি বা ধার্মিক বিষয়ের কোনো কথাবার্তা তার মুখে শুনিনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাইবান্ধায় স্বামীর ছুরিকাঘাতে আহত স্ত্রীর মৃত্যু

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে স্বামীর ছুরিকাঘাতে আহত আজেদা বেগম (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শনিবার দিবাগত রাতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এর আগে গত মঙ্গলবার গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের এমপি পাড়ায় ছুরিকাঘাতের এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত স্বামী শামীম মিয়া (৪২) গোবিন্দগঞ্জের কামারদহ ইউনিয়নের বেতগারড়া গ্রামের মাফু মিয়ার ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি হোটেলে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি ঘটনার পর থেকে পলাতক।

নিহত আজেদা বেগম উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের রাজা মিয়ার মেয়ে। আট বছর বয়সী ছেলে আতিক ও ১৬ বছর বয়সী মেয়ে সোনিয়াকে নিয়ে তাঁরা কোনোমতে জীবন যাপন করতেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অভাবের সংসারে আজেদা অন্যের বাসায় কাজ করতেন। শামীম হোটেলে কাজ করলেও নেশাজাতীয় দ্রব্যে আসক্তি ও মোবাইল ফোনে জুয়া খেলায় জড়িয়ে পড়েন। এসব নিয়ে দাম্পত্য জীবনে প্রায়ই কলহ লেগে থাকত।

গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি বুলবুল ইসলাম বলেন, ‘স্বামীর ছুরিকাঘাতে আহত নারীর মৃত্যুর খবর স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাংনীতে কারেন্ট পোকার আক্রমণে কৃষকের সর্বনাশ: ভেজাল কীটনাশকের অভিযোগ

রাকিবুল ইসলাম, গাংনী (মেহেরপুর) 
উপজেলার তেরাইল-দেবীপুর মাঠের কৃষক মিরাজুল ইসলামের ক্ষতিগ্রস্ত জমি থেকে গতকাল সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলার তেরাইল-দেবীপুর মাঠের কৃষক মিরাজুল ইসলামের ক্ষতিগ্রস্ত জমি থেকে গতকাল সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কার্তিকের এই সময়ে যখন কৃষকের মাঠভরা ধান দেখে আনন্দের নিশ্বাস ফেলার কথা, তখন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার দেবীপুর-তেরাইল মাঠের রোপা আমনচাষি মিরাজুল ইসলামকে হতাশা নিয়েই ছুটতে হচ্ছে মাঠে। কারেন্ট পোকার (ঘাসফড়িং) আক্রমণে তাঁর দেড় বিঘা জমির ধান একেবারে শেষ হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এত কষ্টের সব ধান আমার নষ্ট হয়ে গেল। মাঠে আমার ধান ছিল সেরা, এখন একেবারে জিরো। কীটনাশক প্রয়োগ করে অনেকের সেরে গেছে, কিন্তু আমি সব ধরনের বিষ ব্যবহার করেও কোনো সুফল পাইনি। আমার এতটাই ক্ষতি হয়েছে, যা কল্পনা করা যায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে তেমন সঠিক কোনো দিকনির্দেশনাও পাইনি। কৃষি অফিস থেকে যদি সঠিক নির্দেশনা পাওয়া যেত কোন কীটনাশক ব্যবহার করলে ভালো হবে, তাহলে আমাদের অনেক উপকার হতো।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মজুরি খরচ, সার ও কীটনাশকের বাড়তি দামে কৃষকের নাভিশ্বাস উঠেছে। এর মধ্যেই আমনে কারেন্ট পোকার আক্রমণ মারাত্মক রূপ নিয়েছে। পোকার আক্রমণে কৃষক মিরাজুল ইসলামের ধানের গাছ শুকিয়ে সাদা হয়ে শুধু খড় দেখা যাচ্ছে। যেটুকু আছে, তা-ও দিন দিন নষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয় চাষি আব্দুল মজিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আগে থাইডন, বাসোডিনের মতো বিষ ছিল, যা প্রয়োগ করলে সঙ্গে সঙ্গে কাজ হতো। কিন্তু এখনকার বিষে কোনো কাজ হয় না, এগুলো ভেজালে পরিপূর্ণ। বিষ কোম্পানিগুলো আসলে কী বিষ দেয়? এভাবে চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোথায় যাবে?’

আরেক ধানচাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মিরাজ নামের এই চাষির ধান কারেন্ট পোকার আক্রমণে এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে বিচালি (খড়) করাও সম্ভব না। ধানের জমি খড়ের মতো হয়ে গেছে। এই মাঠে তার ধান অত্যন্ত সুন্দর হয়েছিল এবং সে তার ধানের প্রতি খুবই যত্নবান ছিল। সে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

গাংনী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আরাফাত মিয়া বলেন, ‘রোপা আমন মৌসুমে স্বাভাবিকভাবে এই ধরনের রোগ দেখা দেয়। আমরা অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণে এনেছি পুরোপুরি। বাজারে বিভিন্ন ভেজাল কীটনাশক রয়েছে। এর মধ্য থেকে আসলটা বাছাই করে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব উপসহকারী রয়েছে, তাদের বলা আছে কৃষকদের সঙ্গে সার্বিক যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডাব চুরি করতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে প্রাণ গেল যুবকের

বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় ডাব চুরি করতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ওই ব্যক্তির নাম আসলাম হোসেন (৪৫)। তিনি উপজেলার কোলা ইউনিয়নের পারিচা গ্রামের মোলায়েমের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার ভোরের দিকে বদলগাছী উপজেলার আক্কেলপুর মধ্যপাড়া (মণ্ডলপাড়া) গ্রামে মুসা নামের এক ব্যক্তির নারকেলগাছে উঠেছিলেন আসলাম। ধারণা করা হচ্ছে, ডাব চুরি করার সময় তিনি গাছ থেকে নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা গাছের নিচে ডাবসহ লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে বদলগাছী থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে।

বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ডাব পাড়তে গিয়ে পা ফসকে পড়ে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নারায়ণগঞ্জে কারখানায় বিস্ফোরণে ৬ শ্রমিক দগ্ধ, অবস্থা গুরুতর

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ২৯
এম এস ডাইং প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং কারখানা। ছবি: সংগৃহীত
এম এস ডাইং প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং কারখানা। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বিসিক শিল্পনগরীতে এমএস ডাইং প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং নামে একটি কারখানায় বিস্ফোরণে ৬ শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় তাঁদের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দগ্ধরা হলেন— কারখানাটির শ্রমিক আল আমিন (৩০), আজিজুল্লাহ (৩২), মো. সেলিম (৩৫), মো. জালাল মোল্লা (৪০), মো. নাজমুল হুদা (৩৫) এবং সিকিউরিটি গার্ড সুপারভাইজার নুর মোহাম্মদ (৩৫)।

দগ্ধরা জানান, সকালে কারখানার নিচতলায় বয়লার রুমে কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। মুহূর্তেই সেই কক্ষে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এতে ৬ জনের শরীর ঝলসে যায়। সহকর্মীরা দগ্ধদের উদ্ধার করে ঢাকায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসেন।

বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, দগ্ধদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের সবার অবস্থাই গুরুতর। কার শরীরে কত শতাংশ পুড়েছে তা পরবর্তীতে বলা যাবে।

ফতুল্লা ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার খায়রুল ইসলাম আজকের পত্রিকা বলেন, সকালে এসএম ডাইং স্টেশনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে কারাখানা থেকে কোনো তাদের (ফায়ার সার্ভিস) বিস্ফোরণের সংবাদ জানানো হয়নি। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত করছেন। বিস্ফোরণের কারণ তদন্তের পর জানা যাবে। তবে এ ঘটনায় কারখানাটির বেশ কয়েক শ্রমিক-কর্মচারী আহত হয়েছেন।

ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগুনে দগ্ধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে। অফিশিয়ালি আমাদের এই বিষয়ে কেউ তথ্য দেয়নি। গণমাধ্যমে সংবাদ পেয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত