Ajker Patrika

কুমারখালীতে ছাত্রলীগের দু-পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৪

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭: ৩০
কুমারখালীতে ছাত্রলীগের দু-পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৪

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে স্থানীয় ছাত্রলীগের দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এক পক্ষের অভিযোগ, দুই এসএসসি পরীক্ষার্থীর পথ অবরোধ করে উত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার সূত্রপাত।

আজ শনিবার দুপরে প্রথমে উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পূর্বাশা ক্লাব এলাকায় এবং পরে যদুবয়রা ইউনিয়নের জয়বাংলা বাজারে পৃথক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

হামলায় যদুবয়রা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সোহেল রানাসহ (২৮) উভয়পক্ষের চারজন আহত হয়েছেন। আহত হওয়া অন্যান্যরা হলেন, যদুবয়রা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল হোসেন (৩২), ৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনি আহমেদ (২৩) ও চর এতমামপুর গ্রামের মৃত সোনাউল্লাহের ছেলে মো. বাবলু শেখ (৪০)। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এদিকে খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত জয়বাংলা বাজারে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। বর্তমানে বাজার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে বাজারের দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও পরাজিত চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সাবুর মধ্যে বিরোধ চলছে। তারা উভয় আওয়ামী লীগ নেতা। তাঁদের বিরোধের জেরে ইউনিয়নে উত্তাপ বিরাজ করছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এসএসসি পরীক্ষা শেষে ছাত্রলীগ নেতা রনি আহমেদ তাঁর বোনসহ দুজনকে পান্টি কেন্দ্র থেকে যদুবয়রার দিকে আসছিলেন। বেলা ১ টা ১৫ মিনিটের দিকে পূর্বাশা ক্লাব এলাকায় হেলমেট ও মুখবাধা অবস্থায় ৫ থেকে ৬ জন হাতুরি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের পথরোধ ও উত্যক্ত করে। এ সময় রনি আহমেদকে হাতুরি পেটা করা হয়।

এরপর খবর পেয়ে শিক্ষার্থীর বাবা ও স্বজনেরা যদুবয়রা জয়বাংলা বাজারে অবস্থান নেন। বেলা দেড়টার দিকে জয়বাংলা বাজারে শিক্ষার্থীর বাবা, স্বজন ও স্থানীয় দুপক্ষের আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ,স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংঘর্ষ হয়। এতে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক গুরুতর জখম হন।

এ বিষয়ে পরাজিত চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সাবুর সমর্থক ও আহত ছাত্রলীগ নেতা রনি আহমেদ বলেন, ‘ছোট বোনকে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলাম। পথে পূর্বাশা ক্লাব এলাকায় পৌঁছালে হেলমেট ও মুখবাধা ৫ থেকে ৬ জন পথ অবরোধ করে বোনকে উত্যক্ত করতে থাকে। বাঁধা প্রদান করলে আমাকে হাতুরিপেটা করে গুরুতর আহত করে। এ সময় আমি কয়েকজনকে চিনে ফেলি। তাঁরা হলেন প্রতিপক্ষের বিল্লাল, সোহেল ও বায়োজিদ।’

কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আহত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও তাঁদের স্বজনেরারনি আহমেদ আরও বলেন, ‘আমরা এলাকায় রাজনীতি করি। পরে বুঝলাম প্রতিপক্ষরায় এ হামলা চালিয়েছে।’

ভুক্তভোগী এক পরিক্ষার্থীর বাবা শাজাহান আলী বলেন, ‘আমার মেয়ে পরীক্ষা শেষে বাড়ি আসছিল। পথে প্রতিপক্ষের লোকজন ইভটিজিং করেছিল। পরে বাজারে তাঁদের সাথে হাতাহাতি হয়েছে। এ নিয়ে থানায় মামলা করব।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান সাবু বলেন, ‘বিরোধী পক্ষের লোকজন আমাদের দুই ছাত্রীকে ইভটিজিং করেছে। প্রতিবাদ করায় একজনকে হাতুরি পিটা করেছে। পরে ওরাই আবার জয়বাংলা বাজারে আমাদের লোকজনের উপর হামলা চালিয়েছে।’

এদিকে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজানের সমর্থক ও আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের চেয়ারম্যানের ওপর হামলার খবর পেয়ে বাজারে ছুটে আসি। এ সময় প্রতিপক্ষের তুষার, বাসার, আনিস মাষ্টার, রিপন মন্ডল আমাদের উপর হামলা চালায়। তুষারের হাতে কুড়াল ছিল। কুড়াল দিয়ে মাথায় কোপ দিয়ে মারছে।’

আহ যদুবয়রা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ‘প্রতিপক্ষরা চেয়ারম্যানকে ঘিরে ফেলেছে এমন খবরে বাজারে ছুটে যাই। বাজারেরে পৌঁছানো মাত্রই আনিস মাস্টার পেছন থেকে কোপ মারলে আমি মাটিতে পরে যাই।’

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘প্রতিপক্ষের হামলায় আমার দুজন গ্রুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। যদুবয়রা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জের উসকানিতে এ হামলা হয়েছে। আমি এলাকার শান্তি রক্ষার্থে ইনচার্জের বদলি চাই এবং হামলাবারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের উত্যক্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুপক্ষের চারজন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত