Ajker Patrika

৬টি হলের তালা ভাঙলেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা, আইনভঙ্গ বললেন ভিসি

খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) আজ মঙ্গলবার আবাসিক হলের তালা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) আজ মঙ্গলবার আবাসিক হলের তালা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ৬টি হলের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকলেও কোনো ধরনের আলোচনায় বসেনি কর্তৃপক্ষ। রাত পৌনে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর আগে টানা দুই রাত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থানের পর আজ মঙ্গলবার তালা ভেঙে হলে ঢোকেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, আজ (মঙ্গলবার) বেলা ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং আবাসিক হল খুলে দিয়ে ক্লাস শুরু করার দাবি জানান। এতে শিক্ষকেরা সাড়া দেননি।

ফলে শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধভাবে ৭টি হলের মধ্যে ৬টি হলের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। হলগুলো হলো খাজা খানজাহান আলী হল, ড. এম এ রশিদ হল, শহীদ স্মৃতি হল, ফজলুল হক হল, অমর একুশে হল ও লালন শাহ হল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সভায় আবাসিক হল বন্ধের সিদ্ধান্ত আসে। এটি তাঁর একক সিদ্ধান্ত নয়। এখন আবাসিক হলের তালা ভাঙা মানে শিক্ষার্থীরা কুয়েটের আইন ভঙ্গ করল।’

এদিকে গতকাল সোমবার সিন্ডিকেট সভায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসের বাইরে ছাত্রদল ও বহিরাগতদের সংঘর্ষে ৩৭ শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাঁদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া আগামী ২ মে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া এবং ৪ মে ক্লাস শুরু নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভা সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৯৮তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় সভায় উপস্থাপন করা হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেট কর্তৃক গ্রহণ করা হয়। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়।

পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম আগামী ৪ মে শুরু হবে এবং সব আবাসিক হল আগামী ২ মে থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

রাতেই এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাস ও বাইরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদল ও বহিরাগতদের সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির কেউই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এমনকি আহত ছাত্রদের সঙ্গেও কথা বলতে চাননি। তাই তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত একপেশে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত হঠকারী। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পুনরায় তাঁর দায়িত্বজ্ঞানহীন পরিচয় দিয়েছেন।

তাঁরা বলেন, যে ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাঁরা কারা? সেটি প্রশাসন না জানিয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। শতাধিক শিক্ষার্থীকে আহত করেছে যারা, তাদের সংখ্যা কোনোমতেই ৩৭ হতে পারে না।

শিক্ষার্থীরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ৩৭ জনের মধ্যে আহত ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আছে কি না, সেটা প্রশাসনই ভালো জানে। শিক্ষার্থীরা সিন্ডিকেটের এমন সিদ্ধান্তকে হঠকারী আখ্যা দিয়ে উপাচার্যের সমালোচনা করেন।

উল্লেখ্য, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে শতাধিক আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

আরও পড়ুন—

কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার, প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

তালা ভেঙে হলে কুয়েট শিক্ষার্থীরা, ভিসির পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত