Ajker Patrika

সংক্রমণ ছড়াচ্ছে করোনার বর্জ্য

জিয়াউল হক, যশোর
সংক্রমণ ছড়াচ্ছে করোনার বর্জ্য

যশোর সদর হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটের নিচে খোলা জায়গায় কাজ করছেন কয়েকজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তাঁদের মধ্যে দুজন সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করলেও বাকি দুজন অসচেতন। মাস্ক থাকা সত্ত্বেও তা ঝুলিয়ে রেখেছেন থুতনিতে। অথচ সেখানে করোনা রোগীদের ব্যবহৃত বর্জ্য পরিষ্কার করছিলেন তাঁরা। এই পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা আবার থাকেন ঋষি পল্লিতে। যেখানে ছোট ছোট ঝুপড়িতে পরিবারের ৫-৬ জন সদস্যর বসবাস।

যশোর সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যানুযায়ী জেলায় পর্যন্ত ১৬ হাজার ৯৯৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে জুন মাসে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৪৩৫ জনের। আর জুলাই মাসের গত ১৫ দিনে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫২৬ জনে। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে জেলায় ২৬৯ জন মারা গেছেন। গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত মারা গেছেন ৮১ জন। জুন মাসে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৬৪ জন এবং জুলাই মাসে এ সংখ্যা সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে ১২৪ জনে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা রোগীর বর্জ্যের মাধ্যমেই সংক্রমণের শঙ্কাকে প্রতিনিয়তই বাড়িয়ে তুলছে। আক্রান্ত করছে নতুন নতুন মানুষকে। যদি সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করা হয় তাহলে অচিরেই এটি পরিবেশ ও মানুষের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, করোনা সংক্রমণের জন্য শুধু আক্রান্ত ব্যক্তিই দায়ী তা কিন্তু নয়। করোনা রোগীদের বর্জ্যও এ জন্য দায়ী হতে পারে। সুস্থ কোন মানুষ এর সংস্পর্শে আসলে তিনিও আক্রান্ত হতে পারেন। কাপড়, প্লাস্টিক ইত্যাদি নানা ধরনের সামগ্রীর ওপর করোনাভাইরাস বিভিন্ন মেয়াদে বেঁচে থাকতে পারে। বিশেষ করে প্লাস্টিকের স্থায়িত্বকাল ২৪ ঘণ্টা বা তারও বেশি। যদিও এই মেয়াদ নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তা ছাড়া বাতাসের মাধ্যমেও এ ভাইরাস অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে। ভারতের ক্ষেত্রে আমরা শুনেছি ডেলটা ধরনটি পানির মাধ্যমেও ছড়িয়েছে।

একই মন্তব্য করে যশোর সিটি হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক আহসান কবির বাপ্পি বলেন, করোনা সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের প্রতি আমরা এখনো সচেতন নই। অনুরূপ করোনা রোগীর ব্যবহার্য জিনিসের ক্ষেত্রেও। শহরের রাস্তাঘাট, ডাস্টবিন কিংবা খোলা জায়গায় অহরহ দেখা যায় মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড কভার, সু-কভার পড়ে আছে। কোথাও কোথাও ফেইস শিল্ড বা গাউনও রয়েছে। যত্রতত্র এসব সামগ্রী ফেলে যাচ্ছেন অসচেতন মানুষ। যার মাশুল গুনতে হতে পারে গোটা কমিউনিটিকে।

যশোর সরকারি এমএম কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোলজার রহমান বলেন মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড কভার, সু-কভার, গাউন এগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যায়। তারপরও মাটির উর্বরা শক্তিকে নষ্ট করে। আর প্লাস্টিকের পণ্যগুলো আরও ভয়াবহ। মূলত এসব পণ্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাটি, পানি, বাতাসসহ গোটা পরিবেশটাকেই দূষিত করে তোলে। তা ছাড়া এগুলো ড্রেনে ফেললে সেখানে পানি জমে ডেঙ্গুসহ নানা রোগও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

যশোর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আরিফ আহমেদ বলেন, হাসপাতালের করোনা বর্জ্যের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরও অসচেতন রোগী ও তাদের স্বজনরা এসব সামগ্রী যত্রতত্র ফেলছে। আমরা হাসপাতাল কর্মচারীদের এ ব্যাপারে আরও সচেতন থাকার নির্দেশ দিয়েছি।

যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দার গনি খান বলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের এ ব্যাপারে আরও সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন থাকতে হবে। যত্রতত্র এসব সামগ্রী না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার অভ্যাস করতে হবে।

মেয়র আরও জানান, গত মাসের বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল। আমরা যখন ড্রেনের লাইনগুলো পরিষ্কার করছিলাম তখন বিপুল পরিমাণ সুরক্ষা সামগ্রী সেখানে পাওয়া যায়। সুতরাং এগুলো যেমন সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তেমনি পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জলাবদ্ধতাও সৃষ্টি করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষার্থীদের ‘কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে’ সপরিবারে পালিয়েছেন বিএসবির বাশার

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ২৬, ভারতে ১০

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

কাশ্মীরে বিধ্বস্ত বিমানের অংশবিশেষ ফরাসি কোম্পানির তৈরি, হতে পারে রাফাল

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত