Ajker Patrika

ভৈরব সেতু নির্মাণ: নকশা জটিলতা ও জমি বুঝে না পাওয়ায় কাজে ধীরগতি

  • সাড়ে চার বছরেও রেলওয়ের অধিগ্রহণ করা জমি বুঝে পায়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান
  • ২০২৪ সালের ১৪ মে নকশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়
  • নকশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত জানাবে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল
খুলনা প্রতিনিধি
চলতি বছর ভৈরব সেতু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র ১৬ শতাংশ। তিন মাস বন্ধ থাকার পর সেতুর শহরাংশের নির্মাণ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
চলতি বছর ভৈরব সেতু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র ১৬ শতাংশ। তিন মাস বন্ধ থাকার পর সেতুর শহরাংশের নির্মাণ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির প্রাণের দাবি ছিল ভৈরব নদের ওপর সেতু নির্মাণ। খুলনাবাসীর আন্দোলনের মুখে ২০২১ সালে সেতু নির্মাণ শুরু করা হয়। এ প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র ১৬ শতাংশ। নকশা জটিলতা এবং রেলওয়ের অধিগ্রহণ করা জমি বুঝে না পাওয়ায় অনেকটা থমকে রয়েছে কাজ। সে সঙ্গে দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন খুলনাবাসী।

খুলনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর খুলনা মহানগরী ও দিঘলিয়া উপজেলার মধ্যে প্রবাহিত ভৈরব নদের ওপর ভৈরব সেতু নামে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড (করিম গ্রুপ) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুর নির্মাণকাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ২৪ মে।

কিন্তু দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর পরও সেতুর শহরাংশে রেলওয়ের অধিগ্রহণ করা ২ দশমিক ৫৮৬ একর জমি এখনো বুঝে পায়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এদিকে সেতু নির্মাণ শুরুর তিন বছর পর ২০২৪ সালের ১৪ মে নকশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ৯ আগস্ট বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য প্রফেসর এ এফ এম সাইফুল আমিন সেতুর নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করেন। তবে এই বিশেষজ্ঞ টিমের সিদ্ধান্ত এখনো জানা যায়নি।

সেতুর সাইট ইঞ্জিনিয়ার আজিজুল হাসান আকাশ জানান, সেতুর রেলগেট অংশের ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১, ২, ৪, ৯-১২ নম্বর অর্থাৎ মোট ৭টি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ৮ নম্বর পিলারের পাইলিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। অন্যদিকে, সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ১৪টি পিলারের মধ্যে ইতিমধ্যে ১৩টির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

দীর্ঘসূত্রতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) প্রকৌশলী এস এম নাজমুল হক বলেন, কাজের শুরুতে সেতু নির্মাণে অধিগ্রহণ করা জমি বুঝে না পাওয়ায় শুরু থেকেই কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এবং শ্রমিক সংকটের কারণেও কাজে ব্যাঘাত ঘটে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজের মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে—এমন প্রত্যাশা সেতু নির্মাণকাজের বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ)। অন্যদিকে টানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর সেতুর শহরাংশের নির্মাণকাজ আবারও শুরু হয়েছে।

সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তানিমুল হক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সেতুর ১৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে। স্টিল সেতুর দৈর্ঘ্য ১০০ মিটারের পরিবর্তে ১৬০ এবং প্রশস্ত ৩ মিটার বৃদ্ধি করে নকশা পরিবর্তনের অনুমোদন বুয়েট বিশেষজ্ঞ দলের কাছ থেকে এখনো পাওয়া যায়নি। আশা করি, চলতি মাসেই (সেপ্টেম্বর) একটা রেজাল্ট পাব। রেলওয়ের জমি হস্তান্তরের কাজ প্রক্রিয়াধীন।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘খুলনাবাসীর ধারাবাহিক বঞ্চনার প্রতিফলন হলো ভৈরব সেতু। শুরুতে ভৈরব সেতু নিয়ে আমরা যে আশা দেখেছিলাম, ক্রমান্বয়ে সেটি নিরাশায় পরিণত হয়। তারপরও বলব, দ্রুত সময়ের মধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে খুলনাসহ নড়াইল জেলার মানুষও বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।’

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সহসভাপতি মিজানুর রহমান বাবু বলেন, ‘শুধু ভৈরব সেতু নয়, গল্লামারী সেতুর কাজও বন্ধ রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে খুলনার মেগা প্রজেক্টগুলো ছিল শেখ বাড়ির নিয়ন্ত্রণে। কাজেই তাদের অনুসারী এসব মেগা প্রজেক্টের ঠিকাদারদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রূপের ঈর্ষায় ৩ মেয়েশিশুকে চুবিয়ে হত্যা, দেখে ফেলায় রেহাই পায়নি নিজের ছেলে

সিসিইউতে নিবিড় তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া, আশাবাদী চিকিৎসকেরা

ইউরোপ চাইলে রাশিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত—পুতিনের এই মন্তব্যে ব্রিটেনের তীব্র প্রতিক্রিয়া

কে এই কৃষ্ণ নন্দী, তাঁকে জামায়াত প্রার্থী করল কেন

জামায়াতে ইসলামীর প্রথম হিন্দু প্রার্থী খুলনার কৃষ্ণ নন্দী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে যুবকের লাশ হাসপাতালে রেখে পলায়ন, শরীরে পোড়া দাগ, গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বরিশালে যুবকের লাশ হাসপাতালে রেখে পলায়ন, শরীরে পোড়া দাগ, গ্রেপ্তার ৩

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম) কলেজ হাসপাতালে যুবকের মরদেহ রেখে পালিয়ে যান চার তরুণ-তরুণী। বুধবার কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এর আগে নগরীর ভাটারখাল এলাকার জেলা পরিষদ মার্কেটের একটি কক্ষে মো. বেল্লাল (২৮) নামের ওই যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ জানায়, নিহত বেল্লাল বরিশাল সদর উপজেলার পশ্চিম চর আইচা গ্রামের শাহ আলমের ছেলে। তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন। নিহত বেল্লালের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বেল্লালের বাবা শাহ আলম পাঁচজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চরমোনাই ইউনিয়নের গিলাতলী গ্রামের সিরাজ হাওলাদারের ছেলে রনি হাওলাদার (২৮), মায়া চৌধুরী (২৬) ও সাদিয়া (২৪)। পলাতক দুজন হলেন পলাশপুর বস্তির রিপন রানা এবং চরবাড়িয়া ইউনিয়নের সবুজ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মার্কেটের তৃতীয় তলা থেকে বেল্লালের লাশ সিঁড়ি বেয়ে নামাচ্ছিলেন এক যুবকসহ চার তরুণ-তরুণী। পরে তাঁরা লাশ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখে সরে পড়েন। ঘটনাটি জানাজানি হলে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

ভাটারখাল এলাকার বাসিন্দা মো. টিপু বলেন, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আলোর ভাড়া করা একটি রুমে প্রতিদিন কয়েকজন মদ্যপান করতেন। মঙ্গলবার রাতে মদ্যপানের একপর্যায়ে বেল্লালকে বেধড়ক মারধর করা হয়। মারধরে তাঁর মৃত্যু হলে লাশ সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান তাঁরা।

নিহত ব্যক্তির বাবা শাহ আলম বলেন, ‘আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া হোক।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। বেল্লালের শরীরে মারধর ও পোড়ার স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। তদন্ত চলছে।’

শেবাচিম হাসপাতালের মর্গ-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বেল্লালের শরীরে পোড়া দাগ আছে। মনে হচ্ছে, তাঁকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রূপের ঈর্ষায় ৩ মেয়েশিশুকে চুবিয়ে হত্যা, দেখে ফেলায় রেহাই পায়নি নিজের ছেলে

সিসিইউতে নিবিড় তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া, আশাবাদী চিকিৎসকেরা

ইউরোপ চাইলে রাশিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত—পুতিনের এই মন্তব্যে ব্রিটেনের তীব্র প্রতিক্রিয়া

কে এই কৃষ্ণ নন্দী, তাঁকে জামায়াত প্রার্থী করল কেন

জামায়াতে ইসলামীর প্রথম হিন্দু প্রার্থী খুলনার কৃষ্ণ নন্দী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে অর্থ দাবি: রাজনগরে দুজন ভুয়া সাংবাদিক আটক

রাজনগর (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
আটক দুই ভুয়া সাংবাদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
আটক দুই ভুয়া সাংবাদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে স্থানীয় লোকজন। বুধবার সন্ধ্যায় মনসুরনগর ইউনিয়ন থেকে তাঁদের আটক করে পরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

সূত্র জানায়, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রাজনগর গ্রামের মিরাজ উদ্দিনের ছেলে আরিফুর রহমান (২৮) এবং গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দক্ষিণ কোটালীপাড়া গ্রামের রুকন উদ্দীনের ছেলে তরিকুল ইসলাম (৩৬) নিজেদের একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে দেখা করে খোঁজখবর নেওয়ার নাম করে তাঁরা আর্থিক সুবিধা চাইছিলেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চেয়ারম্যানদের সন্দেহ হলে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখা হয়। পরে মনসুরনগর ইউনিয়নে সুযোগ পেয়ে স্থানীয় লোকজন দুজনকে আটক করে।

খবর পেয়ে রাজনগর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের থানায় নিয়ে যায়।

রাজনগর থানার এএসআই হৃদয় বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। দোষী প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রূপের ঈর্ষায় ৩ মেয়েশিশুকে চুবিয়ে হত্যা, দেখে ফেলায় রেহাই পায়নি নিজের ছেলে

সিসিইউতে নিবিড় তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া, আশাবাদী চিকিৎসকেরা

ইউরোপ চাইলে রাশিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত—পুতিনের এই মন্তব্যে ব্রিটেনের তীব্র প্রতিক্রিয়া

কে এই কৃষ্ণ নন্দী, তাঁকে জামায়াত প্রার্থী করল কেন

জামায়াতে ইসলামীর প্রথম হিন্দু প্রার্থী খুলনার কৃষ্ণ নন্দী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝিনাইদহে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
নিহত শিশু সাইমা আক্তার ছাবা। ছবি: সংগৃহীত
নিহত শিশু সাইমা আক্তার ছাবা। ছবি: সংগৃহীত

ঝিনাইদহে পবাহাটি গ্রামে প্রতিবেশীর খাটের নিচ থেকে সাইমা আক্তার ছাবা (৪) নামের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার রাত ১০টার দিকে পবাহাটি গ্রামের ঈদগাহ পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু ওই গ্রামের ভ্যানচালক মো. সাইদুল ইসলামের মেয়ে। এই ঘটনায় সাইদুল ইসলামের প্রতিবেশী আক্তারুজ্জামান মাসুদের স্ত্রী সান্ত্বনা খাতুনকে (৩২) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সায়মা আক্তার ছাবা সকাল থেকে নিখোঁজ ছিল। আশপাশের পুকুর, বাড়িসহ সব জায়গায় খুঁজে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। সারা দিন মাইকিং করা হয়েছে। পরে রাতে সাইদুল ইসলামের প্রতিবেশী সান্ত্বনা খাতুনের বাড়ি থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

নিহত শিশুর বাবা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে মেয়ে ঘুম থেকে তুলে আমার মুখে চুমু দেয়। আর বলে আব্বু কাজে যাবা না? আমার জন্য মিষ্টি কিনে আনতে হবে না। তার কথা শুনে আমি দ্রুত উঠে পড়ি। পরে ভ্যান নিয়ে কাজে বের হওয়ার সময় মেয়েকে ভ্যানে চড়িয়ে একটু ঘুরিয়ে নামিয়ে দিই। পরে আমার স্ত্রী ফাতেমাকে বলেছে, আম্মু তুমি ভাত রান্না করো। রান্না শেষে আমাকে ডাক দিয়ো, আমি বাইরে খেলছি। পরে আমার স্ত্রী মেয়েকে ডাক দিয়ে আর পায় না; তখন আমার ছেলে আমাকে জানায় ছাবাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি বাড়িতে এসে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বাড়ির পাশের বিভিন্ন পুকুরসহ আশপাশের সব জায়গায় খুঁজে কোথাও পাইনি। পরে থানায় জিডি করি, মাইকিং করি। তবু মেয়েকে পাই না। পরে আমি প্রতিবেশী আখতারুজ্জামান মাসুদের বাড়িতে মেয়েকে খুঁজতে গিয়েছিলাম। তখন মাসুদের স্ত্রী আমাকে জানায়, আমার মেয়ে তাদের বাড়িতে যায়নি। আমার সন্দেহ হলো। পাড়ার সবাই আমার মেয়েকে খুঁজছে, কিন্তু মাসুদের স্ত্রী আসছে না, কোনো খোঁজও করছে না। পরে রাতে পুকুরপাড়ে আবারও যাই, সে সময় দেখি মাসুদের স্ত্রী একটি বস্তা নিয়ে কোথায় যাচ্ছে; তখন আমি চিৎকার দিলে সে আবার ঘরে দৌড়ে চলে যায়। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তার ঘরের খাটের নিচ থেকে আমার মেয়ের লাশ উদ্ধার করে।’

ঝিনাইদহ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ হোসেন বলেন, ‘বাচ্চাটা সকাল থেকে নিখোঁজ ছিল। রাতে আমরা খবর পাই সাইদুল ইসলামের প্রতিবেশীর বাড়িতে মরদেহ পাওয়া গেছে। ঘটনা কী ঘটেছে এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। খোঁজখবর নিচ্ছি, তদন্ত চলছে। সম্ভাব্য আসামিকে আমরা হেফাজতে নিয়েছি। মরদেহ পোস্টমর্টেমের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রূপের ঈর্ষায় ৩ মেয়েশিশুকে চুবিয়ে হত্যা, দেখে ফেলায় রেহাই পায়নি নিজের ছেলে

সিসিইউতে নিবিড় তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া, আশাবাদী চিকিৎসকেরা

ইউরোপ চাইলে রাশিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত—পুতিনের এই মন্তব্যে ব্রিটেনের তীব্র প্রতিক্রিয়া

কে এই কৃষ্ণ নন্দী, তাঁকে জামায়াত প্রার্থী করল কেন

জামায়াতে ইসলামীর প্রথম হিন্দু প্রার্থী খুলনার কৃষ্ণ নন্দী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মজুতের লোভে থমকে গেল চার দশকের ব্যবসা

ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম
মজুতের লোভে থমকে গেল চার দশকের ব্যবসা

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্য আড়ত। এখানেই চার দশক ধরে গম, ডাল, চাল, ভোজ্যতেলসহ নানা পণ্যের ব্যবসা করে নিজের অবস্থান শক্ত করেছিলেন আবুল বশর চৌধুরী। পাঁচ বস্তা জিরা, পাঁচ বান্ডেল দারুচিনি এবং এক কার্টন এলাচি দিয়ে শুরু করা তাঁর ব্যবসা পরে বাল্ক আমদানিতে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে ভোগ্যপণ্য আমদানির অন্যতম বড় খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু সেই ব্যবসাই এখন তাঁর প্রতিষ্ঠান রুবি ফুডস ও মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিভিন্ন ব্যাংকের তথ্যমতে, ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান হলেও ব্যবসায়ী আবুল বশর চৌধুরীর এই রুবি ফুডস ও মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের নামে ১৩ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকায়। অথচ দুই বছর ধরে কোনো ভোগ্যপণ্যই আমদানি করছে না প্রতিষ্ঠান দুটি। তবু এসব প্রতিষ্ঠানের নামে গুদামে মজুত রয়েছে তিন বছরের বেশি পুরোনো আমদানি হওয়া পণ্য; যার বড় অংশই এখন অবিক্রীত।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এই দুই ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পণ্যের অতিরিক্ত মজুত রাখার প্রবণতা। আবুল বশর বড় ভলিউমে পণ্য আমদানি করতেন। বাজারে আশানুরূপ দাম না পেলে তা মজুত করে ভবিষ্যতের লাভের আশা করতেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো, বহুবার দাম বাড়ার বদলে কমেছে। এমনকি মানুষের খাদ্য হিসেবে আমদানি করা ডাল, গম, তেলসহ কিছু পণ্য নষ্ট হওয়ার কারণে পরে সেগুলো পশুখাদ্য হিসেবে বিক্রি করতে বাধ্য হন তিনি। এভাবে মজুতের লোভে বারবার লোকসান জমতে জমতে একসময় থমকে দাঁড়ায় আবুল বশর চৌধুরীর চার দশকের গড়া দাপুটে ট্রেডিং ব্যবসা।

ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। ঋণখেলাপিতে নাম উঠে যায় রুবি ফুডস ও মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের। জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে অবস্থিত মামিয়া নামের একটি গ্রুপের কারখানায় সংরক্ষিত শত শত বস্তা পণ্য এখনো অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। ব্যাংকের তথ্যমতে এগুলো কমপক্ষে তিন বছর আগের আমদানি। অথচ দুই বছর ধরে রুবি কিংবা মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্স কোনো নতুন পণ্যই আমদানি করেনি।

এদিকে ঋণখেলাপির তালিকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। শুধু রুবি ফুড প্রোডাক্টসের কাছেই তাদের পাওনা ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা; অথচ এত বড় ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে রাখা হয়েছে মাত্র ৪০ কোটি টাকার এফডিআর আর ৩ কোটি টাকার জমি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ শাখা ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ হক আজকের পত্রিকাকে জানান, ঋণটি গত মার্চে শ্রেণীকৃত হয়েছে এবং ব্যাংক এরই মধ্যে অর্থঋণ মামলা করেছে। ব্যাংকের অন্য এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পূর্ববর্তী সরকারের সময় ইউসিবির পরিচালনা পর্ষদে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পরিবারের প্রভাব ছিল প্রবল। তাদের সঙ্গে কমিশন ভাগাভাগির মাধ্যমে রুবি এত বড় ঋণ তুলেছে বলে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে উঠে এসেছে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাওনাদার ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে আবুল বশরের দেনা ৩৯৯ কোটি টাকা—মেসার্স মাসুদ ব্রাদার্সের নামে ২৪৭ কোটি এবং রুবি ফুডসের নামে ১৫২ কোটি। এই ঋণের বিপরীতে ৪০০ শতক জমি জামানত থাকলেও এর বাজারমূল্য মাত্র ১৯১ কোটি টাকা। এই ব্যাংকের ঋণের একটি আলোচিত দিক হলো, ২০২৩ সালে রোজার আগে ২০ হাজার টন ছোলা আমদানির জন্য ঋণপত্র খুললেও ব্যাংক সরবরাহকারীকে ডলার পরিশোধ করতে না পারায় জাহাজ বন্দর থেকে ফেরত যায়। এতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে এক মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে।

এর বাইরে আল-আরাফাহ্‌ ব্যাংকের কাছে ১৯২ কোটি, এনসিসি ব্যাংকের কাছে ১৮৬ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংকের কাছে ১৮৯ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে ৩২৩ কোটি, পূবালী ব্যাংকের কাছে ৩১২ কোটি ৬৪ লাখ, ট্রাস্ট ব্যাংকের কাছে ২৭৯ কোটি ৬৯ লাখ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের কাছে ১৫৯ কোটি ৫৫ লাখ, মেঘনা ব্যাংকের কাছে ৩৬ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের কাছে ৩০ কোটি ৬৯ লাখ, এনআরবি ব্যাংকের কাছে ২২ কোটি এবং মাইডাস ফাইন্যান্সের কাছে ১৪ কোটি টাকা আটকে আছে। প্রতিটি ব্যাংকেই জামানত ঋণের তুলনায় খুবই কম।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় ভালো ব্যবসা করায় প্রতিষ্ঠানটি কম জামানতে বড় অঙ্কের ঋণ সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু হঠাৎ ব্যবসা সংকটে পড়তেই সব ব্যাংকের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম মনে করেন, ব্যাংকের সংখ্যা বেশি এবং প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ঋণ দেওয়ার প্রবণতাই এমন বিপর্যয়ের প্রধান কারণ। এর দায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট তদারকি কর্মকর্তাদেরও বহন করতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএসএম গ্রুপের নামে আবুল বশরের বিনিয়োগ রয়েছে আরও কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে—মডার্ন পলি ইন্ডাস্ট্রিজ, মডার্ন ফাইবার লিমিটেড, মডার্ন হ্যাচারি, বিসমিল্লাহ ফ্যাব্রিকস, মুকবুলুর রহমান জুট মিল, বি কে ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। তবে ঋণ নেওয়া হয়েছে কেবল রুবি ফুডস ও মাসুদ ব্রাদার্সের নামে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ভোগ্যপণ্য আমদানির নামে নেওয়া ওই ঋণের বড় অংশই সরানো হয়েছে অন্য খাতে।

মজুত পণ্য নষ্ট হওয়া, দাম পড়ে যাওয়া, ব্যাংকের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ও তদারকির দুর্বলতা—সব মিলিয়ে রুবি ফুডসের চার দশকের সাম্রাজ্য এখন ভেঙে পড়ছে। মজুত প্রবণতা ও ঋণ শোধে কোনো উদ্যোগ আছে কি না জানতে চাইলে আবুল বশর চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটু ঝামেলায় আছি, পরে জানাব।’ দুই সপ্তাহ পরও তাঁর জবাব একই থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রূপের ঈর্ষায় ৩ মেয়েশিশুকে চুবিয়ে হত্যা, দেখে ফেলায় রেহাই পায়নি নিজের ছেলে

সিসিইউতে নিবিড় তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া, আশাবাদী চিকিৎসকেরা

ইউরোপ চাইলে রাশিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত—পুতিনের এই মন্তব্যে ব্রিটেনের তীব্র প্রতিক্রিয়া

কে এই কৃষ্ণ নন্দী, তাঁকে জামায়াত প্রার্থী করল কেন

জামায়াতে ইসলামীর প্রথম হিন্দু প্রার্থী খুলনার কৃষ্ণ নন্দী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত