Ajker Patrika

আমি বুঝতে পারছি না, আমার অপরাধটা কী: কুয়েট উপ-উপাচার্য

খুলনা প্রতিনিধি
উপ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলম। ছবি: সংগৃহীত
উপ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলম। ছবি: সংগৃহীত

নিজের পদত্যাগের বিষয়ে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলম বলেছেন, ‘আমি গতকাল বুধবার রাত ১০টায় ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়েছি। তবে কোনো কাগজে স্বাক্ষর করিনি। এটা অব্যাহতি হতে পারে। কিন্তু আমি পদত্যাগ করিনি বা আমাকে পদত্যাগ করতে বলাও হয়নি।

‘আমাদের যদি বলত, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আপনাদের পদত্যাগ করতেই হবে, এটাই একমাত্র সমাধান। তাহলে আমরা পদত্যাগ করতাম। আমি কোনো পদত্যাগপত্র পাঠায়নি।’

আজ বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগের সংবাদ গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর অধ্যাপক শেখ শরীফুল আলম এসব কথা বলেন। এ ছাড়া অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত থেকে বিরত এবং অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দিয়েছেন এই উপ-উপাচার্য।

অধ্যাপক শেখ শরীফুল আলম বলেন, ‘ইউজিসির টিম বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করেছেন। বেশির ভাগ সময় ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমার সঙ্গে কথা বলেছেন, বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত।

‘১৮ ও ১৯ তারিখের ঘটনা বিষয়ে কথা হয়েছে। তাদের কোনো প্রশ্নই আমার কাছে মনে হয়নি যে আমার কোনো একটা জায়গা থেকে ত্রুটি বা স্বচ্ছতা, নিষ্ঠার অভাব আছে। প্রতিষ্ঠান বা ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করছি। তবে আমি বুঝতেই পারছি না যে আসলে আমার অপরাধটা কী?’

এর আগে গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে কুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল ইসলামকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে। অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে।

শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে পাঠানো চিঠিতে অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলম লিখেছেন, ‘জুলাই ২০২৪ অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখি। পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর আমাকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন।

‘উপ-উপাচার্য পদে যোগদানের পর বিভিন্ন দাপ্তরিক সভা ও সিন্ডিকেটে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমাকে কোনো প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজে সহযোগিতা করেননি।’

চিঠিতে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক উপ-উপাচার্যের সীমিত আকারে প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজ করার যে নীতিমালা ছিল, তা গত ১১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৭তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে বাতিল করে দেওয়া হয়।

‘ফলশ্রুতিতে গত চার মাসে প্রশাসনিক কার্যাদি এবং আর্থিক বিলে স্বাক্ষর করতে না দিয়ে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদটি একটি আলংকারিক পদে পরিণত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে আমি শুধু লাইব্রেরি কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করি।’

তিনি লিখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে সর্বদা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কাজ করেছি। এ অবস্থায় গত রাতে প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক মিডিয়া মারফত জানতে পারি, আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

‘বাস্তবতা হলো, আমি নিজে এখনো আমার অপরাধ সম্পর্কে জানি না এবং আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি; যা খুবই দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।

‘গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত ন্যক্কারজনক হামলার সময়ে ছাত্র ও বহিরাগত সন্ত্রাসী উভয় পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি এবং আমার শরীরে দুটি ঢিল-পাটকেল লাগে এবং ছাত্রদের সঙ্গে আমি নিজেও আহত হই। এ ব্যাপারে সাধারণ ছাত্রদের বক্তব্য নেওয়া যেতে পারে ও ঘটনার ফুটেজ দেখা যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেওয়া এবং কোনো অপরাধ-অপকর্ম না করে অব্যাহতি দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুল বার্তা যাবে বলে মনে করি।

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ার মতো পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি বা অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত