Ajker Patrika

মনিরামপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বেরিয়ে এসেছে প্রাচীন স্থাপনার অংশ

আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর (যশোর) 
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩: ১১
মনিরামপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বেরিয়ে এসেছে প্রাচীন স্থাপনার অংশ

যশোরের মনিরামপুরের খেদাপাড়া অঞ্চলের ধনপোতা ঢিবিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলছে। ২০ দিনে আটটি বর্গের খনন কাজে পোড়া ইটের পাঁচ-ছয়টি চওড়া দেয়াল বেরিয়ে এসেছে। প্রাচীন স্থাপনার এই অংশগুলি ছাড়াও পাওয়া গেছে মৃৎপাত্র, পাথরের টুকরা, বাটি, পশুর হাড় ও লোহার পেরেক। 

ধনপোতা ঢিবির খনন কাজ দেখভাল করছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ধনপোতা ঢিবিতে পাওয়া ইটের সঙ্গে মনিরামপুরের দোনার অঞ্চলের দমদম পীরের ঢিবি ও কেশবপুরের ভরতভায়নার দেউল ঢিবির সামঞ্জস্য রয়েছে। তাঁদের ধারণা এখানকার স্থাপনাগুলো খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ থেকে দশম শতকের মধ্যকার নিদর্শন। তবে ঢিবিতে প্রাপ্ত স্থাপনা উপাসনালয় নাকি আবাসস্থল সেই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাননি তাঁরা। 

কর্মকর্তারা বলছেন, জানুয়ারি মাস জুড়ে খনন কাজ চলবে। অন্তত আরও আটটি বর্গে খোঁড়া হবে। কাজ শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। 

গতকাল রোববার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, ধনপোতা ঢিবিতে ৩৬ বর্গমিটারের ((৬×৬ মিটার) আটটি বর্গে খনন কাজ করছেন ১৭ জন শ্রমিক। ঢিবির একটি বর্গের খনন হয়েছে মাটির স্তর থেকে ২.৬১ মিটার। যার গভীরতা সমুদ্রের সমতল থেকে ৪.৯১ মিটার। বাকি বর্গগুলোর খনন কিছুটা কম হয়েছে। খনন কাজ দেখতে এসেছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন। আশপাশের এলাকার অনেক নারী-পুরুষ এসেছেন খুঁড়ে পাওয়া পুরোনো আমলের স্থাপনা দেখতে। 

ঢিবিতে চলছে খনন কাজ। ছবি: আজকের পত্রিকাপ্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সূত্র বলছে, ২০০৬ সালের দিকে মনিরামপুরে দমদম পীরের ঢিবিতে খনন কাজ চলেছিল। তখন একটি অনুসন্ধানে খেদাপাড়া অঞ্চলের ধনপোতা ঢিবির সন্ধান মেলে। এরপর গত ১০ ডিসেম্বর ধনপোতা ঢিবির আনুষ্ঠানিক খনন কাজ শুরু হয়েছে। শুরুতে ছয়জন শ্রমিক খাঁটিয়ে একটি বর্গে খনন কাজ শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় দিনেই খোঁড়াখুঁড়িতে একটি দেয়ালের সন্ধান মিলে। 
 
স্থানীয়রা বলছেন, সনাতন ধর্মে যে বিরাট রাজার ইতিহাস রচিত হয়েছে সেই বিরাট রাজার বসতি ছিল এখানে। বহু আগে এখানে স্বরূপ নামে একটি নদী ছিল। সে নদীতে এক সময় জাহাজ চলতো। নদীর তীরে ছিল বিরাট রাজার বসবাস। তিনি এখানে বসে বিচার কাজ চালাতেন। 

ধনপোতা ঢিবিটির মালিক বর্তমানে খেদাপাড়া অঞ্চলের পঙ্কজ বিশ্বাসসহ তাঁদের গোত্রের পাঁচ-ছয় জন ব্যক্তি।

পঙ্কজ বিশ্বাসের ছেলে প্রতাপ বিশ্বাস বলেন, ‘৫৭ শতক এলাকার ঢিবিটি আমাদের ঠাকুর দাদাদের পৈতৃক সম্পদ। আমাদের সাত পুরুষ এখানে কোনো বসতি দেখেননি।’ 

প্রতাপ বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা এখানে চাষাবাদ করি না। ঢিবি পরিত্যক্ত অবস্থায় ঝোপঝাড়ে ভরে আছে। আশপাশের শত শত বসতির গবাদিপশুর খাদ্য ও রান্নার জ্বালানির জোগান হয় এই বাগান থেকে।’ 

 ধনপোতা ঢিবিতে ৩৬ বর্গমিটারের ((৬×৬ মিটার) আটটি বর্গে খনন কাজ করছেন ১৭ জন শ্রমিক। সুকুমার সরকার নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘৩০-৪০ বছর আগে একবার ঢিবি খোঁড়াখুঁড়ি হইলো। সেবার পাথরের সিঁড়ি পাওয়া গিলো। আমি এক মণ ওজনের একটি পাথর কুড়িয়ে নিছিলাম। পরে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ হয়ে গিলো।’ 

ফিরোজ হোসেন নামে এক যুবক বলেন, এই ঢিবি নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। ঢিবি খোঁড়াখুঁড়ির কথা শুনে দেখতে আইছি। এখানকার বড় বড় গাছ কেউ কাটার সাহস করে না। এই ঢিবি নিয়ে অনেক ভয়ের গল্প আছে। 

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, ধনপোতা ঢিবি খননের ফলে এখন পর্যন্ত কয়েকটি চওড়া ইটের দেয়াল উন্মোচিত হয়েছে। দেওয়ালের ইটের মাপ ৩২×১৬×৫.৫ সেন্টিমিটার ও ৩৬×২২×৬ সেন্টিমিটার। ধনপোতা ঢিবিতে পাওয়া ইটের সঙ্গে মনিরামপুরের দোনার অঞ্চলের দমদম পীরের ঢিবি ও কেশবপুরের ভরতভায়নার দেউল ঢিবির সঙ্গে সামঞ্জস্য রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এখানকার স্থাপনাগুলো খ্রিষ্টীয় ৬-১০ শতকের মধ্যের। 

তিনি বলেন, ঢিবিতে প্রাপ্ত স্থাপনা দেখে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। খনন কাজ শেষ হলে নিশ্চিত হওয়া যাবে এখানে উপাসনালয় নাকি আবাসস্থল ছিল। কাজ শেষে বিস্তারিত জানানো যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

এনসিপির কর্মীদের ঢাকায় আনতে সরকারের বাস রিকুইজিশন, সমালোচনার ঝড়

নয়াদিল্লিতে নতুন হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ, ৩ মাস সময় নিল ভারত

চাপে পড়ে ৫টি বাস রিকুইজিশন দিয়েছেন পিরোজপুরের ডিসি, সরকারের হস্তক্ষেপ নেই: প্রেস সচিব

রাতে স্বামীর জন্মদিন উদ্‌যাপন, সকালে নদীতে মিলল নববধূর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত