Ajker Patrika

ভ্যানের মায়ায় খুন হন ফরিদপুরের হারুন, দুই কিশোরসহ গ্রেপ্তার তিন

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৬: ১৫
ভ্যানের মায়ায় খুন হন ফরিদপুরের হারুন, দুই কিশোরসহ গ্রেপ্তার তিন

হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন হারুন অর রশিদ (৩৫)। ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালিয়ে চলত তাঁর সংসার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ছিনতাইকারীদের ফাঁদে পড়েন তিনি। কিন্তু ছাড়তে পারেননি ভ্যানের মায়া। আর এতেই ছিনতাইকারীরা তাঁকে নির্মমভাবে খুন করে। এ ঘটনায় দুই কিশোরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা-পুলিশ।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।

এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে জেলার চরভদ্রাসন উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো ওই উপজেলার মিশাই মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকার লিটন মণ্ডল ওরফে রুবেল (২৩), চরহোসনেপুর গ্রামের আমিন মণ্ডলের পুত্র ও নতুন ডাঙ্গী এলাকার শেখ হালিমের পুত্র। 

নিহত হারুন অর রশিদ নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের দুলারডাঙ্গী গ্রামে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ছিলেন। সেখানে স্ত্রী রহিমন বেগম ও আট বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে সাদিয়াকে নিয়ে বসবাস করতেন। ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালিয়ে চলত তাঁর সংসার। 

নিহতের পরিবার ও আসামিদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন হারুন অর রশিদ। ওই দিন রাত ৮টার সময় কোতোয়ালি থানার গজারিয়া বাজারের স্ট্যান্ড থেকে সাইনবোর্ড নামক এলাকায় যাওয়ার জন্য দেড় শ টাকায় হারুনকে ভাড়া করে রুবেল ও রুমান। এরপর পথিমধ্যে কলাইহাট এলাকা থেকে সাহিদুলকে ভ্যানে তুলে নেয়। যার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন রুবেল।

এরপর সাইনবোর্ড এলাকার পদ্মা নদীসংলগ্ন একটি মেহেগুনিবাগানে//////// নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ভ্যানচালক হারুনকে ধারালো চাকু দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো শুরু করে আসামিরা। তখন হারুন ভ্যানের জন্য অনুনয়-বিনয় করে। তখন আসামিরা বলে, ‘বেঁচে থাকলে ভ্যান কিনতে পারবেন, এখান থেকে চলে যান।’ আবারও সে ভ্যানের মায়ায় আসামিদের অনুনয়-বিনয় করে। এ সময় আসামি রুবেলের হাতে থাকা চাকু দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর আসামিরা তার মাথায় বারংবার আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে সে নিস্তেজ হয়ে পড়লে আসামিরা ভ্যান নিয়ে চলে যায়। এরপরের দিন ওই এলাকা থেকে অজ্ঞানামা হিসেবে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার স্ত্রী লাশটি শনাক্ত করে।

এ ঘটনার পর ১৮ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় ছিনতাইসহ হত্যা মামলা দায়ের করে নিহতের স্ত্রী রহিমন বেগম। এ মামলায় তদন্ত কার্যক্রম করেন থানার এসআই মো. মিজানুর রহমান।

দুই মাসের মধ্যে এ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ছিনতাই হওয়া ভ্যানটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপার বলেন, আসামিদের রিমান্ড চাওয়া হবে এবং ভ্যানটি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বিচ্ছিন্ন পরিবারে বেড়ে ওঠা রুবেল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী
ভ্যানচালক হারুন অর রশিদ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী লিটন মণ্ডল ওরফে রুবেল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। তাঁর এমন অপরাধকর্মের পেছনে রয়েছে বিচ্ছিন্ন পরিবারে বেড়ে ওঠা। এমনই তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ। চরভদ্রাসন উপজেলার মিশাই মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকার বাসিন্দা আনসার মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর মা ফরিদা বেগমের প্রথম বিয়ে হয়। এই দম্পত্তির ঘরেই জন্ম তাঁর। এরপর তার মা একই এলাকার মান্নান নামে অপর এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে। পরে ওই সৎ পিতার বাড়িতে বড় হতে শুরু করে। এরপর আবারও তার মা একই এলাকার করিম ঢালী নামে আরেক ব্যক্তিকে বিয়ে করে। এভাবেই বিচ্ছিন্ন পরিবারে বেড়ে উঠে। একপর্যায়ে ঢাকায় গিয়ে অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ সুপার জানান, আসামি রুবেল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। এর আগে সে ঢাকার সাভার এলাকায় একটি ব্যাটারি চালিত রিকশা ছিনতাই করে। এ সময় ওই রিকশা চালককে নির্মমভাবে মারধর করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করে রিকশা নিয়ে চলে যায় কিন্তু ভাগ্যক্রমে ওই রিকশা চালক বেঁচে যান। এ ঘটনায় সাভার থানায় একটি ছিনতাই মামলা হলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং গত জানুয়ারিতে ওই মামলায় জামিন পেয়ে জেল থেকে বের হয়ে আসে। এরপর আবারও ছিনতাই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইমদাদ হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সালাউদ্দিন, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান হাসান সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নেমেছেন জেলেরা, মাছঘাটে কর্মচাঞ্চল্য

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুরে মাছঘাটে মাছ দরদাম করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চাঁদপুরে মাছঘাটে মাছ দরদাম করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় পর আবারও নদীতে নেমেছেন চাঁদপুরের জেলেরা। আড়তগুলোয় শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। তবে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে অনেকেই হতাশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইলিশ কম পাওয়া গেলেও দাম বাড়েনি।

রোববার (২৬ অক্টোবর) ভোর থেকে সদর উপজেলার অন্যতম হরিণা মাছঘাট ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম হয়ে ওঠে। ঘাটসংলগ্ন এলাকা থেকে কয়েকজন জেলে নদীতে নামছেন। আবার কেউ ইলিশ ধরে ঘাটে নৌকা নিয়ে আসছেন। ঘাটে ইলিশ উঠানোর পরে হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

জেলেরা নদী থেকে সরাসরি এই ঘাটে ইলিশ নিয়ে আসেন। যে কারণে টাটকা ইলিশ কেনার জন্য এই ঘাটে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতা সব সময় বেশি থাকেন।

লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘পেশা ইলিশ ধরা। অন্য কাজ করি না। যে কারণে ধারদেনা করে হলেও নদীতে নামতে হয়। যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে খরচ বাদ দিয়ে তেমন আর থাকে না।’

হরিণা ফেরিঘাট এলাকার জেলে হুমায়ুন ঢালি বলেন, ‘পাঁচজনে মিলে মধ্যরাতে মেঘনায় ইলিশ ধরতে নেমেছি। যে পরিমাণ ইলিশ পেয়েছি, তাতে খরচ বাদে তেমন একটা থাকবে না। হয়তো জনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পাওয়া যাবে।’

হরিণা মাছঘাটে ইলিশ কিনতে এসেছেন ফরিদগঞ্জ থেকে সাইফুর রহমান ও হাবিবুল্লা। তাঁরা বলেন, ঘাটে মাছ থাকলেও দাম কমেনি। দাম আগের মতোই।

চাঁদপুরে মাছঘাটে মাছ দরদাম করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চাঁদপুরে মাছঘাটে মাছ দরদাম করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

এই ঘাট থেকে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ক্রয় করে চাঁদপুর শহরের বাজারগুলোয় বিক্রি করেন খুচরা মাছ ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান।

আব্দুর রহমান বলেন, মাছের দাম কমেনি বা বাড়েনি। ওজনে এক কেজিতে ৪টা, এমন প্রতি হালি ইলিশ কিনেছেন ৮০০ টাকা দরে। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। বড় সাইজের পাঙ্গাশ কিনেছেন প্রতি কেজি সাড়ে ৮০০ টাকা ধরে।

এই ঘাটের প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ী আবুল কাশেম কালু হাওলাদার বলেন, জেলেরা রাত থেকে নদীতে নামলেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছেন না। তবে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দাম বাড়েনি। আগের দামে বিক্রি করছেন তাঁরা। তবে কয়েক দিন অতিবাহিত হলে বোঝা যাবে নদীতে ইলিশ আছে কি না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

থানচির বলিবাজারে পুড়ল ১৩ দোকান

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি  
আগুনে পুড়ছে দোকান। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুনে পুড়ছে দোকান। ছবি: আজকের পত্রিকা

বান্দরবানের থানচি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের বলিবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দিবাগত গভীর রাতে হঠাৎ লাগা আগুনে বাজারের অন্তত ১৩টি দোকানঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দেড় বছরের ব্যবধানে এটি এলাকায় তৃতীয়বারের মতো বড় অগ্নিকাণ্ড।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বাজারের একটি খাবারের হোটেল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের দোকানগুলোতে।

বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি অংসিংম্যা মারমা বলেন, ‘তখন রাত গভীর হওয়ায় সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বাজারে দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত থেকে হইচই শুনে দোকান থেকে বের হয়ে দেখি আগুন জ্বলছে। টিটু দাশের রেস্টুরেন্ট ও জাফর আহম্মদের সারের দোকানের মাঝখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।’

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হ্লায়ইচিং মারমা নামের এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ‘খুব দুর্ভাগ্য আমার। মালপত্র সরানোর কোনো সুযোগ পেলাম না।’

বলিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা বলেন, ‘আগুনের ঘটনা জানার পরপরই বাজারে এসেছি। এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। আগুনে ১৩টি দোকান পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’

থানছি থানার ফায়ার স্টেশনের লিডার পিয়ার মোহাম্মদ বলেন, ‘শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে বলিপাড়া বাজারে আগুনের খবর পাই। দ্রুত দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভায়। তৎক্ষণিকভাবে মনে হচ্ছে, শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদুল্লাহ আল-ফয়সাল বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ট্রেনিংয়ের কাজে ঢাকায় আছি। বলিপাড়া বাজারে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুকনা খাবার, কম্বল দেওয়া হবে। এ ছাড়াও বান্দরবান জেলা প্রশাসককে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেরপুরে গণসংযোগে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশের ঘোষণা জামায়াতের

শেরপুর প্রতিনিধি
শনিবার বিকেলে ও শুক্রবার রাতে জামায়াত ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
শনিবার বিকেলে ও শুক্রবার রাতে জামায়াত ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলামের গণসংযোগে হামলার অভিযোগ এবং তা নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে স্থানীয় রাজনীতি। অন্যদিকে এই অবস্থায় পাল্টাপাল্টি হামলার আশঙ্কায় স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গতকাল শনিবার বিকেলে শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণসংযোগে হামলার প্রতিবাদে আজ রোববার বিকেল ৪টায় শহরের খোয়ারপাড় শাপলা চত্বর মোড় থেকে থানা মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, ২৪ অক্টোবর (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর শেরপুর-১ (সদর) আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ডাকপাড়া গ্রামে গণসংযোগে বের হলে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাধা দেন। ওই সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে বিএনপির সমর্থকেরা জামায়াত নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেন। সংঘর্ষে শেরপুর জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম স্বপন ও রাকিবুল হাসানসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনকে শেরপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এদিকে ওই ঘটনার পর শুক্রবার রাতে বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীরা এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান নেন। সন্ধ্যার পর থেকে শহরে পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ মিছিল হয়। হামলার অভিযোগে রাতে জামায়াত নেতা রাকিবুল হাসান বাদী হয়ে শেরপুর সদর থানায় চারজনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভোটের গণসংযোগে এমন ন্যক্কারজনক হামলায় শেরপুরবাসী উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। এতে আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’ তিনি ওই হামলার ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকলকে দ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনার জন্য ও নিবার্চনী কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

সেই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ ও সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। গণসচেতনতার অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে রোববার বিকেল ৪টায় শহরের খোয়ারপাড় মোড় থেকে থানা মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ঘোষণা করেন তিনি। ওই সময় গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন শেরপুর-১ (সদর) আসনে জামায়াতের সংসদ সদস্য প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও শেরপুর-২ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের এমপি প্রার্থী নুরুজ্জামান বাদল, জেলা প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি ও শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মু. গোলাম কিবরিয়া ভিপিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে এর আগে হামলার অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে শুক্রবার রাতে শেরপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘জামায়াতের লোকজন পূর্বপরিকল্পিতভাবে ডাকপাড়া গ্রামে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে গিয়েছিল। সেখানে কয়েকটি মসজিদে মিটিং-মিছিল করে গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে এলাকাবাসী এর তীব্র প্রতিবাদ করলে তারা এলাকা ছেড়ে চলে আসে। এরপর থানায় গিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। তারা মিথ্যা কথা বলছে এবং উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে।’ তিনি ‘মিথ্যা মামলা’র তীব্র নিন্দা জানিয়ে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপন, আক্রামুজ্জামান রাহাতসহ বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শৈলকুপায় শ্বশুরের বঁটির কোপে গৃহবধূর মৃত্যু

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে শ্বশুরের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে লিমা বেগম (২৮) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। নিহত লিমা ওই গ্রামের আব্দুর রবের স্ত্রী। রোববার (২৬ অক্টোবর) ভোর ৫টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, রোববার ভোরে গৃহবধূ লিমা বেগম নিজের ঘর থেকে বাড়ির উঠানে যান। তখন উঠানে দাঁড়িয়ে থাকা শ্বশুর মুকুল শেখ (৫০) হঠাৎ তাঁর হাতে থাকা বঁটি (ধারালো অস্ত্র) দিয়ে পুত্রবধূকে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। লিমার চিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্যরা ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।

শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আরিফুর রহমান বলেন, ‘ওই গৃহবধূকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তাঁর বুকের ওপরের অংশে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর ক্ষত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’

স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, অভিযুক্ত শ্বশুর মুকুল শেখ মানসিক ভারসাম্যহীন।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুম খান এই ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, ‘অভিযুক্ত মুকুল শেখকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, মুকুল শেখ মানসিক ভারসাম্যহীন। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত