Ajker Patrika

লিবিয়ায় জিম্মিদশা থেকে ফেরা শাকিলের লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১৮: ৪৭
লিবিয়ায় জিম্মিদশা থেকে ফেরা শাকিলের লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা

ফরিদপুরে দালালদের প্রলোভনে পড়ে অবৈধপথে ইতালি যাত্রা বেড়েছে। তবে ভাগ্য সহায় না হলে জীবন ও তাঁর পরিবারে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। কেউ মাফিয়া চক্রের হাতে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়, কেউ বা উত্তাল ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা যান। কেউ মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে মাফিয়াদের হাত থেকে বেঁচে ফেরেন।

লিবিয়ায় মাফিয়া চক্রের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের টিটুল মিয়ার ছেলে শাকিল মিয়া (২৪)। ওই চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। দেশে ফিরে জানিয়েছেন সেই নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনা। 

শাকিল মিয়া বলেন, একই এলাকার মুকবুল ঠাকুর ওরফে মুকুল ঠাকুর ও জেলা সদরের চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের নুরু উদ্দিনের ফাঁদে পড়ে গত জানুয়ারিতে ইতালির উদ্দেশে রওনা হন তিনি। যাত্রাপথে লিবিয়ায় কুমিল্লার বাসিন্দা শরিফ হোসেনের হাতে বন্দী হয়ে দুই মাস ১৭ দিন ধরে নির্যাতনের শিকার হন। পরে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে মুক্তি পান তিনি।

তাঁর ভাষ্যমতে, ওই চক্রের মূল হোতা কুমিল্লার শরিফুল হোসেন। যিনি মাফিয়া শরিফ নামে পরিচিত। লিবিয়ার ত্রিপোলির জোয়াইন নামক এলাকায় তাঁর রয়েছে বিশাল ‘গেম ঘর’। যেখানে বন্দী রেখে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। শরিফের দলে রয়েছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ইমন (২৮), মাদারীপুরের রাজৈরের বিজয় তালুকদার (যিনি খান নামে পরিচিত), সিলেটের সোহাগ, ভৈরবের ইমন মোল্লা ও মুন্সি মো. কুদরতল্লাহ। এর মধ্যে বিজয় তালুকদার মুক্তিপণের টাকা ওঠানোর দায়িত্বে রয়েছেন।

শাকিল মিয়া আরও বলেন, যাত্রাপথে তাঁকে দুবাই নিয়ে ২৫ দিন রাখা হয়। সেখান থেকে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন সকালে দুই দিনের যাত্রা শেষে নেওয়া হয় ত্রিপোলি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ছোট্ট একটি রুমে প্রায় অর্ধশত লোককে রাখা হয়। সেখানে দুই দিন থাকার পর মুকুল ঠাকুরকে ফোনে বিষয়গুলো জানান। তিনি তাঁকে সেখানেই থাকতে বলেন পরিবারের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়ে নেয় চক্রটি। এরপর সেখানে প্রায় এক মাস পর্যন্ত আটকে রাখা হয়।

শাকিল মিয়া। ছবি: সংগৃহীতনির্যাতনের শিকার শাকিল মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ একদিন ফোন করে মুকুল ঠাকুর আমাদের ইতালি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। পরদিন সকালে চারজনকে গোপনে একটি গাড়িতে করে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে জোয়ারা নামক এলাকায় নিয়ে যায়। ওই এলাকায় গেম ঘর নামক জায়গায় আমাদের ৪০ দিন রাখা হয়। এই ৪০ দিন আমাদের সকালে একটি করে রুটি দেওয়া হতো এবং রাতে খিচুড়ির মতো কিছু খাবার দেওয়া হতো। জীবন বাঁচানোর তাগিদে সেগুলো খাইতাম।’

তিনি বলেন, ‘আবারও এক ব্যক্তি এসে আমাদের প্রস্তুত হতে বলে। প্রায় ৪০ দিন পর আমাদের সাগরপারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৫২ জনকে একটি নৌকায় ওঠানো হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তিউনিসিয়ায় সাগরপারে গিয়ে বলে এটা ইতালি এবং নামতে বলা হয়। তখন দালালকে ফোন দিলে আমাদের ওপরে উঠতে বলে। ওপরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তিউনিসিয়ার পুলিশ আমাদের গ্রেপ্তার করে। সেখানে এক দিন আটকে রেখে পরদিন লিবিয়া পুলিশের (মিলিশিয়া) হাতে তুলে দেয়। সেখানে পাঁচ দিন একটি রুমে আটকে রাখা হয়। ঠিকমতো খাবার দিত না, নোংরা পানি খেতে দিত। ক্ষুধার যন্ত্রণায় কান্না করতাম।’

দালাল চক্র ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে আটজনকে: শাকিলের ভাষ্যমতে, ‘সেখান থেকে চার-পাঁচজনকে আলাদা করে নিয়ে যাওয়া হয়। পাঁচ দিন পর আমিসহ আটজনকে পুলিশের একটি গাড়িতে তোলা হয়। রাত ১টার দিকে একটি ক্যাম্পে পৌঁছে দেয় পুলিশ। তখন এক মাফিয়া এসে জানতে চায় আমরা কার লোক। তখন আমি বলি নুরু ও মুকুলের লোক। তখন মাফিয়া জানায়, সবাইকে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে নুরু ও মুকুল।’

নিয়ম করে দুই বেলা নির্যাতন করা হতো: শাকিল বলেন, ‘মাফিয়ারা আমাদের বাড়িতে ফোন দিতে বলে। তখন বাড়িতে জানাই, দালালেরা আমারে বিক্রি করে দিছে। দুই দিনের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা না দিলে আমাকে মাইরা ফেলবে। ওই মুহূর্তে আমার বাবার ফোন কেটে গেলে তারা আমাকে প্রচণ্ড মারধর করে। একজন চেয়ারে বসে থাকে এবং আটজন দাঁড়িয়ে থেকে বাড়িতে ফোনে কথা বলতে বলে। তাদের শেখানো কথা না বললে লোহার পাইপ দিয়ে পেটাতে থাকে। এভাবে অন্ধকার একটি রুমে প্রতিদিন দুই বেলা করে ১৭ দিন নির্যাতন করে আমাকে। এরপর আমার বাড়ি থেকে টাকা পাঠালে ওই অন্ধকার রুম থেকে আমাকে বের করে। তখন আমি সূর্যের আলোর দিকে তাকাতে পারতাম না।’

টাকা না দিলে কিডনি কেটে বিক্রি করা হতো: শাকিলের ভাষ্যমতে, ‘ওই গেম ঘরে তিন-চার শ জনকে আটকে রাখা হয়। আমার কক্ষে ২৫ জনকে আটকে নির্যাতন করা হয়। কারও বাড়ি থেকে টাকা না দিলে খাবারের সঙ্গে কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করা হতো। এরপর তাদের কিডনি কেটে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হতো। এসব কিডনি স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাচার করে মাফিয়ারা। তাতে অনেকে মারা যান।’

মুক্তিপণের টাকা নেওয়া হয় মাদারীপুর থেকে: শাকিলের মুক্তিপণের ১৫ লাখ টাকা দেওয়া হয় মাদারীপুরের রাজৈর থানার কলাগাছিয়া নামক এলাকার একটি ফাঁকা মাঠ থেকে। টাকা আদায়ের সময় শাকিলের পাশে বসে তাঁর বাবাকে ভিডিও কল দিয়ে নির্দেশনা দেন বিজয় তালুকদার। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শাকিলের বাবা টিটুল মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে জমিজমা বিক্রি করে, ধারদেনা করে একাই একটি ব্যাগে ভরে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে যাই। প্রথমে আমাকে ভাঙ্গার গোলচত্বরে যেতে বলে। সেখান থেকে ফোনে মাদারীপুরের দিকে যেতে বলে। এরপর কলাগাছিয়া কলেজের পাশ দিয়ে ফাঁকা মাঠের মধ্য দিয়ে হাঁটতে বলে। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখি এক লোক মাঠের মধ্যে খেত কোপাচ্ছে। তার কিছু দূরে বোরকা পরা এক নারীকে দেখা যায়। এ সময় একটি তালগাছের নিচে টাকার ব্যাগ রাখতে বলে এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী সেখানে টাকা রেখে চলে আসি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সহপাঠীর পিটুনিতে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
নিহত স্কুলছাত্র মো. তানভীর। ছবি: সংগৃহীত
নিহত স্কুলছাত্র মো. তানভীর। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে উচ্ছৃঙ্খল সহপাঠীদের পিটুনিতে মো. তানভীর (১৬) নামের এক স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বেলা দেড়টার দিকে হাটহাজারী পৌরসভার পুরোনো অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত তানভীর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড মুন্সিপাড়া সুলতান আহম্মদ বাড়ির প্রবাসী আব্দুল বারেকের ছেলে। সে ওই এলাকার আলীপুর রহমানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

তানভীরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান। তিনি জানান, মঙ্গলবার স্কুলে কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে সৃষ্ট বিবাদ মেটানোর কারণে একপক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে দুপুরে তানভীরের ওপর হামলা করে।

সন্ধ্যায় হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুর কাদের ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। হত্যাকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখছি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টেকনাফে পাহাড় থেকে ৬ জিম্মিকে উদ্ধার, অস্ত্রসহ মানব পাচারকারী আটক

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
টেকনাফে পাহাড় থেকে ৬ জিম্মিকে উদ্ধার। ছবি: আজকের পত্রিকা
টেকনাফে পাহাড় থেকে ৬ জিম্মিকে উদ্ধার। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড় থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-গুলিসহ মানব পাচারকারী চক্রের এক সদস্যকে আটক করেছে বিজিবি। এ সময় চক্রের হাতে আটক ছয় ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন রোহিঙ্গা নাগরিক।

আজ মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার রাজারছড়া পাহাড়ে টেকনাফ ২ বিজিবির একটি দল এই অভিযান পরিচালনা করে।

আটক ব্যক্তির নাম মো. রুবেল (২০), তিনি টেকনাফ রাজারছড়া ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মো. হোছনের ছেলে।

উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা হলো টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপের মাঝেরপাড়া এলাকার জিয়াবুল হোসেনের ছেলে রাসেল (১৭), রামু খুনিয়াপালং এলাকার মো. সুলতানের ছেলে শাহরিয়াজ ইমন (১৯), উখিয়া জালিয়াপালং মনখালি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রফিকের ছেলে মো. ফয়সাল (১৭) ও উখিয়া মনখালির মো. ইলিয়াসের ছেলে মো. এহসান (১৬)।

রোহিঙ্গা দুজন হলো উখিয়া বালুখালি ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাসিম উল্লাহর ছেলে নজিম উল্লাহ (১২) এবং একই ক্যাম্পের জাফর আলমের ছেলে শহিদুল আমিন (১৫)।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজারছড়া পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালায় বিজিবি। এ সময় অস্ত্রধারী মানব পাচার চক্রের এক সদস্যকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে চারটি দেশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে চক্রের অন্য সদস্যরা পালিয়ে যায়।

টেকনাফে পাহাড় থেকে ৬ জিম্মিকে উদ্ধার বিজিবি। ছবি: আজকের পত্রিকা
টেকনাফে পাহাড় থেকে ৬ জিম্মিকে উদ্ধার বিজিবি। ছবি: আজকের পত্রিকা

অভিযান চলাকালে মানব পাচার চক্রের হাতে বন্দী ছয় ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন রোহিঙ্গা ও চারজন বাংলাদেশি নাগরিক।

ভিকটিমরা জানায়, রাজমিস্ত্রির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের পাহাড়ে ডেকে নিয়ে আটক করা হয়। পরে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে তিন দিন ধরে তাদের বন্দী করে রাখা হয়। এ সময় বিজিবির সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কাফনের কাপড় পরে কাল পদযাত্রা করবেন ইবতেদায়ি শিক্ষকেরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাশিক্ষক ঐক্যজোট আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নবম দিনের মতো অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। এ সময় তাঁরা জানান, দাবি মানা না হলে আগামীকাল কাফনের কাপড় পরে পদযাত্রা করবেন তাঁরা।

ধর্মঘট পালনকালে সমাবেশে ঐক্যজোটের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা শামসুল হক আনছারী বলেন, ‘১০৮৯টি স্বতন্ত্র মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অনুদানবিহীন সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার এমপিও আবেদনের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় আমরা আগামীকাল বুধবার কাফনের কাপড় পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদযাত্রা করব।’

মানিকপুর মোহাম্মাদিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মো. মুহিব বুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘দাবি পূরণ না হলে আগামীতে আমরা লংমার্চ টু যমুনা যেতে বাধ্য হব।’

সমাবেশে বক্তব্য দেন আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মো. সামসুল আলম, সদস্যসচিব মোহাম্মদ আল-আমিন, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাশিক্ষক ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান কাজী মোখলেছুর রহমান, উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন জিহাদি, মহাসচিব মো. সামছুল আলম প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পদ্মায় দেখা মিলল বিলুপ্তপ্রায় কুমিরের, নদীতে গোসল না করতে মাইকিং

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহীর পদ্মায় বিলুপ্তপ্রায় কুমিরের দেখা মিলল। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীর পদ্মায় বিলুপ্তপ্রায় কুমিরের দেখা মিলল। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর পদ্মায় ছোট-বড় একাধিক কুমিরের দেখা মিলেছে। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক একটি কুমিরের ছবি তুলেছেন এক দম্পতি। আর ছোট এক বা একাধিক কুমির দেখেছেন নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা। তাঁরা অবশ্য ছবি তুলতে পারেননি। এই অবস্থায় নদীতে গোসল করা থেকে বিরত থাকতে এলাকায় মাইকিং করেছে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার চরে পাখির ছবি তুলতে যান ইমরুল কায়েস ও উম্মে খাদিজা ইভা দম্পতি। তাঁরা পাখির বদলে কুমিরের ছবি নিয়ে বাড়ি ফেরেন। ষাটবিঘা চরের রাজু আহাম্মেদ গরু চরাতে গিয়ে প্রথম কুমিরটি দেখতে পান। ওই দম্পতি যে কুমিরের ছবি তোলেন, সেটি প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএন বাংলাদেশে বিলুপ্ত শ্রেণির হিসেবে ঘোষণা করেছে। নতুন করে এ কুমিরের দেখা পাওয়া গেছে।

ইমরুল কায়েস-উম্মে খাদিজা দুজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পেশায় তাঁরা আলোকচিত্রী। তাঁরা সেদিন পদ্মার চরে লাল মুনিয়া পাখির ছবি তুলতে যান। সেখানে যাওয়ার পর রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির মোবাইল ফোনে কল করেন ইমরুল কায়েসকে। তিনি জানান, চরে গরু চরাতে গিয়ে একটি ছেলে কুমির দেখতে পেয়েছেন। তারপরই শুরু হয় নদীতে কুমির খোঁজার অভিযান। একপর্যায়ে দেখা মেলে।

খাদিজার ভাষায়, ‘যদি কুমিরটা পানিতে থাকে, তাহলে ড্রোন দিয়ে দেখা যেতে পারে। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর কায়েস ড্রোন ওড়ান। কায়েস প্রথমে ড্রোনটা আমাদের ডান দিকে পাঠালেন। কিন্তু কুমিরের দেখা নেই। একটু পর কায়েস হুট করে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, ‘‘পাগলি কুমির!’’ আমি খুশিতে এক লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।

‘কায়েসকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন দিকে কুমির? কায়েস বললেন, ডান দিকে সামনে। আমি আর কায়েস ড্রোন চালু রাখা অবস্থায় দুজন কুমিরের দিকে হাঁটা ধরলাম। কিছু দূর হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে জীবনে প্রথম সামনাসামনি ওয়াইল্ডে কুমিরের দেখা পেলাম। কায়েস ড্রোন দিয়ে কিছু ভিডিও ও ছবি নিলেন, আমি ক্যামেরায় কিছু ভিডিও করলাম। আমরা খুশিতে আত্মহারা।’

আইইউসিএনের মুখ্য গবেষক এ বি এম সারোয়ার আলম (সীমান্ত দীপু) জানান, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে মিঠাপানির কুমিরকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর পাবনা জেলায় একটি কুমিরের সন্ধান মেলে, পরে দেশের আরও দুটি স্থানে দেখা যায় একই প্রজাতির কুমির। বর্তমানে এ দুটি কুমিরকে সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

সারোয়ার আলম মনে করেন, এগুলো বাংলাদেশের প্রকৃতিতে জন্ম নেওয়া কুমির নয়। এরা বয়স্ক এবং সম্ভবত ভারতের চাম্বুল নদ এলাকা থেকে এসেছে।

এদিকে পদ্মায় প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরটিকে বিরক্ত না করতে আজ মঙ্গলবার রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় জেলেদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ সময় জেলেরা জানান, কয়েক দিনের মধ্যে তাঁরাও ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া চরমাজারদিয়া এলাকায় পদ্মা নদীতে কুমির দেখেছেন। তবে তাঁদের দেখা কুমির ছবিতে আসা কুমিরটির মতো বড় নয়, সেটি ছোট।

জানতে চাইলে রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘জেলেরা ছোট কুমির দেখেছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তবে ইমরুল কায়েস ও উম্মে খাদিজা দম্পতি প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরের ছবি তুলেছেন। এখন স্থানীয়রা নাকি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছেন কুমিরটি ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমার কাছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ জন্য ফোন এসেছিল। এই অবস্থায় স্থানীয়দের সচেতন করতে আমরা আজ লিফলেট বিতরণ করেছি।’

জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরটির সঙ্গী থাকতে পারে। আবার জেলেরা ছোট কুমির দেখার দাবি করছেন। তাহলে বোঝা যায় যে, কুমির আছে। এখন আমাদেরই সচেতন থাকতে হবে। জলজ প্রাণী জলেই থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তাদের বিরক্ত করা যাবে না।’

তবে কুমিরের ছবি তোলা আলোকচিত্রী ইমরুল কায়েস আশঙ্কা করছেন, কুমিরটি খুঁজে ধরে নিয়ে যেতে পারে আইইউসিএন। কিন্তু তিনি চান, কুমিরটি উন্মুক্তভাবেই নদীতে থাকুক। তাহলে এর প্রজনন হবে।

ইমরুল কায়েস বলেন, ‘এর আগে আমরা দেখেছি, কোথাও কুমির পেলে আইইউসিএন সেটাকে ধরে নিয়ে গেছে। প্রজননের জন্য সেটিকে সুন্দরবনে ব্রিডিং সেন্টারে রেখেছে। সেটা তো খাঁচার মতো। আমরা চাই, এই কুমিরকে যেন সেখানে না নেওয়া হয়। তা না হলে আমাদেরই অপরাধী মনে হবে যে, আমরা ছবিটা তুলেছি বলে কুমিরটাকে খাঁচায় বন্দী হতে হলো।’

পদ্মা নদীতে গোসল না করতে প্রচারপত্র বিতরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা
পদ্মা নদীতে গোসল না করতে প্রচারপত্র বিতরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লিফলেট

এতে বলা হয়েছে, কুমির হলো জলচর সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। এরা হিংস্র স্বভাবের। কুমিরের মাথা সরু ও দীর্ঘ আকারের হয়। কুমিরের মুখটি ইংরেজি ‘ভি’ আকৃতিবিশিষ্ট হয়। সব কুমিরই অর্ধ-জলচর প্রাণী। এরা মূলত নদী, হ্রদ ও জলাভূমির মিষ্টি জলেই বাস করে। কোনো কোনো প্রজাতির কুমির অর্ধ-লবণাক্ত বা লবণাক্ত জলে বাস করে। রোদ পোহানোর জন্য এরা ডাঙ্গায় চলে আসে। এরা মাংসাশী প্রাণী। প্রধানত মাছ, জলাশয়ে বসবাসকারী পাখি ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।

কুমিরের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য কুমিরের দেখা পেলে অতি উৎসাহী হয়ে বিরক্ত না করা, বাচ্চাদের নদীর কিনারায় যেতে না দেওয়া, দিনে ও রাতের বেলায় মাছ আহরণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা, নদীতে গোসল করা থেকে বিরত থাকা, ছোট ছোট নৌযান চলাচলে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা, কুমিরের রোদ পোহানোর সময় ঢিল না ছোড়া এবং তাড়ানোর চেষ্টা না করা, রাতের বেলায় নদী ও নদীপাড়ের সব কাজ থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে।

জলজ পরিবেশে কুমিরের গুরুত্বও তুলে ধরা হয় এ লিফলেটে। বলা হয়, কুমির জলজ খাদ্যশৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কুমির মরা, পচা মাছ ও অন্যান্য জলজ মৃত প্রাণী ভক্ষণ করে জলজ পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখে। সর্বোপরি কুমির জলজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

এ ছাড়া আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী, কুমিরকে বিরক্ত করা, রোদ পোহানোর সময় ঢিল ছোড়া, তাড়ানোর চেষ্টা করা, ধরা, মারা, ক্রয়-বিক্রয়, পাচার করা, পরিবহন করা, হত্যা ইত্যাদি শাস্তিযোগ্য অপরাধ; যার সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর কারাদণ্ড অথবা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

‘জনতার জন্য হিজাব আইন, খামেনির উপদেষ্টার মেয়ের জন্য ডানাকাটা জামা’

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত