Ajker Patrika

গণপরিবহন বন্ধে ট্রেনে ভিড়, স্ট্যান্ডিং টিকিটও সোনার হরিণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ৩৫
গণপরিবহন বন্ধে ট্রেনে ভিড়, স্ট্যান্ডিং টিকিটও সোনার হরিণ

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে চলছে পরিবহন ধর্মঘট। ফলে নিরুপায় যাত্রীরা ভিড় করছে রেলস্টেশন ও বিআরটিসি বাস কাউন্টারে। চাহিদার তুলনায় বিআরটিসি বাস অপ্রতুল হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই চাপ বেড়েছে রেলে। আজ শুক্রবার সকাল থেকেই কমলাপুর স্টেশনের ভেতরে ও বাইরে কয়েক হাজার যাত্রীকে অপেক্ষমাণ দেখা গেছে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট মিলছে না। এ পরিস্থিতিতে স্টেশনের বাইরে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করছেন ট্রেনের টিকিট পরীক্ষকেরা (টিটিই)। যদিও স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির কোনো নিয়ম নেই। 

আজ দুপুরে সরেজিমনে দেখা গেছে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। অনেক অনুনয়-বিনয় করেও যাত্রীরা টিকিট পাচ্ছে না। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ঢাকা থেকে রাজশাহী যাবেন নিখিল পোদ্দার। টিটিইকে ভর্তি পরীক্ষার কথা বলে অনেক অনুরোধের পর একটি স্ট্যান্ডিং টিকিট সংগ্রহ করেছেন। তবে ৩৬০ টাকার টিকিটে তিনি যেতে পারবেন ঈশ্বরদী বাইপাস পর্যন্ত। তাতেই সই। নিখিল বলেন, `কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সবকিছু বদলে গেল। গাড়িতে রাজশাহী যাওয়ার কথা ছিল। এখন সময়মতো রাজশাহী পৌঁছানো নিয়ে সংশয়। সময়মতো পৌঁছাতে না পারলে পরীক্ষা ধরতে পারব না। পরীক্ষা দিতে না পারলে আমার এত দিনের পরিশ্রম সব বৃথা যাবে। রাজশাহীর পরীক্ষা শেষ করে আবার ঢাকায় ফিরে জাহাঙ্গীরনগরের পরীক্ষা ধরতে হবে। এই অবস্থায় কীভাবে কী হবে ভাবতে পারছি না।' 

চট্টগ্রাম থেকে রাশেদুজ্জামান ঢাকায় এসেছিলেন চাকরির পরীক্ষা দিতে। এখন চট্টগ্রামে ফিরবেন। সকাল ৯টা থেকে কোথাও টিকিট পাননি। দুপুরের পর থেকে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি শুরু হয়। সেখানেও ঘণ্টা দুয়েক লাইনে থেকেও টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদকের কাছে। তিনি বলেন, `সারা রাত জার্নি করে ঢাকায় এসে পরীক্ষা দিয়ে আবার চট্টগ্রামে ফেরার কথা। অথচ গাড়ি বন্ধ থাকায় অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে দিনটা পার করছি। ঘুম নাই, খাওয়া নাই, একটা মানুষ আর কতক্ষণ এভাবে অপেক্ষা কর‍তে পারে বলেন? টিটিইদের পায়ে ধরা বাদ রেখেছি! তারা মনে হয় আমাদের মানুষই ভাবে না।' 

যে পাঁচ থেকে সাতজনের টিটিইর দল দাঁড়িয়ে টিকিট বিক্রি করছেন, তাঁদের একজন কমল। নিজেকে সিল্কসিটির টিটিই এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের ফুটবল খেলোয়াড় দাবি করে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, `আমরা পরীক্ষার্থী ও ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে বিশেষ বিবেচনায় স্ট্যান্ডিং টিকিট দিচ্ছি। রেলওয়ের ন্যূনতম ভাড়া হিসাব করে এখানে ভাড়া নির্ধারণ করা হচ্ছে। মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ম না থাকলেও আজকে স্ট্যান্ডিং টিকিট ছাড়া হয়েছে।'

তবে আজকের জন্য কোনো বিশেষ রেলসেবা বা স্ট্যান্ডিং টিকিট ছাড়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, আজকের জন্য কোনো বিশেষ ট্রেন-সেবা নেই এবং কোনো ধরনের স্ট্যান্ডিং টিকিটও ছাড়া হয়নি। 

স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার আফছার উদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেসব ট্রেন চুক্তিভিত্তিক চলে সেগুলোর স্টাফরা এভাবে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করছেন। কোনো সরকারি ট্রেনের স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া হচ্ছে না বা হয় না। আমরা অনেক নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা এভাবে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করে প্রায় সময়।' 

এদিকে দুপুরের পর থেকে কাউন্টারগুলোতে কোনো টিকিট দেওয়া হয়নি। মাইকে ঘোষণা দিয়ে বারবার জানানো হয় আগামী ৭ নভেম্বর পর্যন্ত কোনো টিকিট নেই। আজকের জন্য লোকাল ও কমিউটার ট্রেনগুলোই শেষ ভরসা। এসব ট্রেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁদুরঝোলা হয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে যাত্রীদের। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত