Ajker Patrika

রাজধানীর মগবাজারে ভোরে অস্ত্রের মুখে ছিনতাই, যা জানালেন ভুক্তভোগী

মোদাব্বির হাশমী
আপডেট : ২৬ মে ২০২৫, ২১: ২৪
মগবাজারে ছিনতাইয়ের ভাইরাল ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
মগবাজারে ছিনতাইয়ের ভাইরাল ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

রাজধানীর মগবাজারে অস্ত্র ঠেকিয়ে এক তরুণের ব্যাগ ছিনতাইয়ের দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, টুইটারসহ ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবেও ছড়িয়েছে। ভিডিওটি দেখে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বলে মনে হয়। ফুটেজের টাইম স্ট্যাম্প অনুযায়ী, ঘটনা ১৮ মে বিকেল ৫টা ২২ নাগাদ ঘটেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, একটি সাদা টি-শার্ট পরিহিত তরুণ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। হঠাৎ মোটরসাইকেলে করে আসা তিন যুবক তাঁর পথ আটকান। তিনজনের দুজনের মাথায় হেলমেট ও একজন মাস্ক পরা। দুজনের হাতে চাপাতি। অস্ত্র ঠেকিয়ে তরুণটির ব্যাগ ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। চাপাতি দিয়ে তাঁকে কয়েকবার আঘাতও করা হয়। এরপর তিন যুবক ব্যাগ ও মোবাইল ফোন নিয়ে মোটরসাইকেলে করে চলে যেতে উদ্যত হন। ভুক্তভোগী তরুণটি তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করেন। এ সময় আবারও তাঁরা মোটরসাইকেল থেকে নেমে পায়ে, হাতে ও ঊরুতে এলোপাতাড়ি কোপ দিয়ে চলে যান।

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা এসব পোস্টের কমেন্টে ঘটনাটি মগবাজারের গ্রিনওয়ে গলিতে ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে এটি সাজানো ঘটনা বলেও মন্তব্য করেছেন। ভিডিওটির সত্যতা ও ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।

একাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারী তাঁদের পোস্টের ক্যাপশনে উল্লেখ করেছেন, ঘটনাটি মগবাজারের গ্রিনওয়ে গলিতে ঘটেছে। গুগল ম্যাপসে ‘মগবাজারের গ্রিনওয়ে গলি’ লিখে সার্চ করলে রাজধানীর মগবাজারের গ্রিনওয়ে রোড নামের একটি রাস্তার মানচিত্র প্রদর্শিত হয়।

এই রাস্তার জিও লোকেশনে যুক্ত ছবির সূত্রে অনুসন্ধানে ঘটনাস্থলটি চিহ্নিত করা হয়। ঘটনাস্থল মগবাজারের গ্রিনওয়ে রোডেই এবং গ্রিনওয়ে জামে মসজিদের পাশেই অবস্থিত।

ঘটনাস্থলের একটু সামনে ‘মেসার্স গোল্ডেন রেফ্রিজারেশন ওয়ার্কস’ নামের একটি ইলেকট্রনিক দোকান রয়েছে। দোকানের নামফলকে থাকা ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে অপর প্রান্ত থেকে শওকত হোসেন নামের একজন কথা বলেন। এই দোকানটি তাঁর বলে জানান।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছিনতাইয়ের ভিডিওটির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শওকত হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি সত্য। এই সম্পর্কে আমি শুনেছি। কয়েক দিন আগের ঘটনা। আসলে ঘটনাটি খুব সকালে ঘটেছে। যার কারণে আমি দোকানে ছিলাম না। ঘটনা যার সঙ্গে ঘটেছে, সে আমাদের কাছের মানুষ। তাদের থেকে আমি যতটুকু শুনেছি, ঘটনার আগের দিন রাতে ছেলেটি তার বোনের স্বামী সাজ্জাদ উজ্জ্বলের বাসায় ছিল। ঘটনার দিন খুব সকালে সে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে করে তিনজন এসে তাঁকে আহত করে ব্যাগ নিয়ে নেয়।’

শওকত হোসেনের কাছে ভুক্তভোগীর ফোন নম্বর চাইলে তিনি ভগ্নিপতি সাজ্জাদ উজ্জ্বলের ফোন নম্বর দেন।

সাজ্জাদ উজ্জ্বলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘটনাটি সত্য। ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওর নাম আব্দুল্লাহ। আমার স্ত্রীর মামাতো ভাই। সে পল্টনে চাকরি করে এবং আমতলায় থাকে। সে আমাদের গ্রিনওয়ে রোড দিয়েই অফিসে যেত। সে আমাদের এখানে তার বেতনের কিছু টাকা কলেজের ফি দেওয়ার জন্য জমিয়ে রেখেছিল। সেই টাকা নিয়ে গত সোমবার ভোরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। আমার বাসা পার হয়ে নুরজাহান ভিলার সামনে আসামাত্র মোটরসাইকেলে করে তিনজন এসে তাকে আহত করে তার ব্যাগসহ টাকা ও ফোন নিয়ে যায়।’

থানায় অভিযোগ দিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে সাজ্জাদ বলেন, ‘গতকাল রোববার রাতে আমি হাতিরঝিল থানায় অভিযোগ করে এসেছি। আজ সকালে পুলিশ তদন্তের জন্য এসেছিল।’

সাজ্জাদ উজ্জ্বলের কাছ থেকে ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহর ফোন নম্বর সংগ্রহ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। নম্বরে যোগাযোগ করা হলে অপর প্রান্ত থেকে আব্দুল্লাহ পরিচয়ে একজন কথা বলেন। ভিডিওতে ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তি তিনিই বলে জানান আব্দুল্লাহ।

ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘আমি ইন্টারমিডিয়েটে পড়াশোনা করেছি। এর পাশাপাশি পল্টনে একটি চাকরি করি। আমার পড়াশোনার ফি বাবদ কিছু টাকা আমি আমার বোনের বাসায় জমা রেখেছিলাম। গত সোমবার (১৯ মে) ভোরে আমার বোনের বাসা থেকে টাকাগুলো নিয়ে আমি আমার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে রওনা দিই। তখন গ্রিনওয়ে রোডের নুরজাহান ভিলার সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাইকে করে তিনজন এসে তাদের দুজন আমাকে ধরে ফেলে। আমি খুব আতঙ্কিত ছিলাম। আমি কাউকে চিনতে পারিনি। এই প্রথম আমি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছি।’

ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আব্দুল্লাহ বলেন, ‘মোটরসাইকেলে আসা তিনজন ব্যক্তির দুজন আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে আমার সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। ব্যাগে ১৪ হাজার টাকা, আমার কিছু কাপড়চোপড় ও কোম্পানির কার্ড ছিল। অস্ত্র দিয়ে আমার হাতে, পেটে ও পায়ের রানে, হাঁটুতে জখম করেছে।’

থানায় অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিনই আমি পুলিশকে অভিযোগ জানাতে থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার অভিযোগ না নিয়ে বলেছিল হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট নিয়ে আসতে। পরে স্থানীয় হাসপাতালে গেলে বলেছিল ঢাকা মেডিকেলে (ঢামেক) যেতে। তখন আমি শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করায় আর ঢাকা মেডিকেলে যাইনি। আর পরে পুলিশে অভিযোগও জানাইনি। পরে গতকাল ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ নিজেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং মামলা করে।’

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজু বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি নিয়ে কাজ করছি। এরই মধ্যে কিছু ক্লু পেয়েছি। পুরো তদন্ত শেষ হলে তা জানানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১৭ লাখ বিনিয়োগকারীর জন্য আসছে পাঁচ সুখবর

মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই এখন, সারজিসকে বললেন সেনা কর্মকর্তা

জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা: উত্তপ্ত রংপুর, সেনা জিজ্ঞাসাবাদে নেতারা

কক্সবাজারে ‘মিলিটারি অপারেশনস জোন’ নিয়ে নর্থইস্ট নিউজের সংবাদের প্রতিবাদ জানাল সেনাবাহিনী

আজহারুলের আপিলে তাজুলের প্রসিকিউশন টিম, স্বার্থের সংঘাত দেখছেন ডেভিড বার্গম্যানও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত