Ajker Patrika

বড়দিনে আনন্দ ও শান্তির বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪: ৫৪
বড়দিনে আনন্দ ও শান্তির বার্তা

শীতের আড়মোড়া ভেঙে কেবল উঁকি দিয়েছে রাজধানীর সকাল। কুয়াশার ফাঁক গলে বেরিয়ে পড়ছে সূর্যের আলোকছটা। কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রাল চার্চের সদর দরজার সামনে সড়কের মোড়ে ঢাউস সাইজের এক বেলুন উড়ছে। তাতে মিহি করে লাগছে ভোরের মিষ্টি আলো। বেলুনের গায়ে সেই আলোতে ফুটে উঠেছে একটি লেখা ‘শুভ বড়দিন’। 

ফিলিস্তিনের বেথলেহেম এই দিনে এসেছিলেন যিশু খ্রিষ্ট। তাঁর জন্মদিনে উদ্‌যাপনে মেতে ওঠেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। গত ২৪ ডিসেম্বর রাত থেকেই শুরু হয় উদযাপন আয়োজন। আজ সকাল থেকেই গির্জায় আসতে শুরু করেন পুণ্যার্থীরা। 

বড়দিন উপলক্ষে সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রাল মোড়ানো আলোকসজ্জায়। নানা রঙের বেলুন, নকশা করা কাগজ, ফুল ও জরি দিয়ে সাজানো গির্জা। প্রধান ফটক পেরিয়েই সামনে পড়বে গোশালা। পুণ্যার্থীরা সেখানে এসে ভক্তি প্রদর্শন করছেন। কেউ কেউ তুলছেন সেলফি। পাশেই দাঁড়িয়ে ক্রিসমাস ট্রি। গতকাল সেটি সেজেছিল বর্ণিল সাজে। 

গোশালার সামনে পাওয়া গেল লমিস চিড়াংকে। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী। তাঁর কোলে ফুটফুটে একটি বাচ্চা। বড়দিন উপলক্ষে নতুন সাজপোশাক চোখ এড়ায় না। জানালেন, বড়দিন উদযাপনের জন্য মুখিয়ে থাকেন। আজ তাই ভোর হতেই নতুন পোশাক পরে পরিবারে নিয়ে গির্জায় চলে এসেছেন। বললেন, ‘গির্জা থেকে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করব। তারপর বাইরে ঘুরতে যাব। বাচ্চাকে সময় দেব। আজকে কাজকে বিদায় জানিয়েছি। ফ্রি আছি। ঘুরব, খাব, আনন্দ করব।’ 

লমিস চিড়াংয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তাঁর বাচ্চা শিশুটি চিৎকার দিয়ে উঠল। আনন্দের দিনে ওর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা ভালো লাগছে না। তারা এগিয়ে গেল সামনের দিকে। 

গত ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকেই প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা। রাত ৯টায় ও ১১টায় হয়েছে দুটি প্রার্থনা। আর গতকাল সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে হয় আরেকটি প্রার্থনা। গির্জার ফাদার গ্যাব্রিয়েল কোরাইয়ার নেতৃত্বে শুরু হয় প্রার্থনা। আরতি, পত্র পাঠ, ইসায়া গ্রন্থ থেকে পাঠ, বন্দনাসহ প্রার্থনায় ছিল নানা কিছু। 

খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট এই দিনে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের বেথলেহেম শহরের এক গোয়ালঘরে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করার জন্য যিশুখ্রিষ্ট জন্ম নিয়েছিলেন। কিন্তু ফিলিস্তিন আজ সবচেয়ে বেশি অশান্ত। ইসরায়েলের হামলায় বিপর্যস্ত যিশুর মাতৃভূমি। প্রার্থনার মধ্যে বক্তব্যে ফাদার গ্যাব্রিয়েল কোরাইয়ার কণ্ঠে সেই প্রসঙ্গও উঠে আসে। আনন্দের সঙ্গে শান্তির বার্তাও পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের হৃদয় ও মনকে উদযাপনে রাখি, যেন তার দয়া ও ভালোবাসা আমাদের সকলের হৃদয়কে পরিপূর্ণ করেন। আমাদের দেশে এবং সারা পৃথিবীতে যেন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে যিশুর জন্মস্থানে এখনো অনেক নিরাপরাধ মানুষ মারা যাচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে। আমরা সে সমস্ত জায়গায় শান্তিরাজের কাছে শান্তি কামনা করি।’ 

হানাহানি নয়, শান্তি ও মানবিকতাই যে ধর্মের মূল লক্ষ্য তারই কথা শোনালেন ফজলুল হক। প্রার্থনা শেষে গির্জা চত্বরে দেখা হয় তাঁর সঙ্গে। ভিন্ন ধর্মের হওয়া সত্ত্বেও তিনি বড়দিনের উদযাপনে শরিক হয়েছেন। সঙ্গে আছে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা। বললেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে, মানুষে মানুষে সম্প্রীতি থাকা খুব প্রয়োজন। আন্তধর্ম এই যে সংঘাত, দেশে হানাহানি, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে হানাহানি, সারা পৃথিবীজুড়ে যে সন্ত্রাসবাদ এর কারণ ধর্ম থেকে তারা ক্ষুদ্র জিনিসগুলো নিয়েছে। ধর্ম একটি বৃহত্তর জিনিস। এটা মানুষকে উদার করে। আরেকজনকে ভালোবাসতে শেখায়। সেই জিনিসগুলোক মানুষ গ্রহণ না করে সংকীর্ণতাকে গ্রহণ করার কারণেই পৃথিবী আজকে এই সংঘাতের দিকে যাচ্ছে।’ 

ফজলুল হকের স্ত্রী জানান, সবাই যার যার ধর্ম পালন করবে। কিন্তু একে অপরের সঙ্গে আনন্দে শামিল হতে দোষ নেই। তারা সব ধর্মের উৎসবেই পরিবারসহ অংশগ্রহণ করে আসছেন। 

সারা দিন আনন্দ-উৎসব আর প্রার্থনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো দিনটি। তবে সবকিছুর মধ্য দিয়ে যে বার্তাটি এবারের পুণ্যার্থীদের মনে জায়গা করে নিল, সেটি হলো হানাহানি নয়, সারা বিশ্বময় যেন ছড়িয়ে পড়ে শান্তির বার্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত