Ajker Patrika

বন দখল করে ব্যক্তিগত রাস্তা

  • বন দখল ও আরেকটি রাস্তার মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে রাস্তা।
  • পুরোনো রাস্তা কাটায় ইউপি সদস্য অভিযোগ করেছেন উপজেলায়।
  • বন বিভাগ ও প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও তৎপর নয়।
রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর
Thumbnail image
ফাইল ছবি

গাজীপুরের শ্রীপুরে দুপাশে ঘন গজারি বন। গাছপালা কেটে বনভূমি উজাড় ও জবরদখল করে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও বন বিভাগের সংশ্লিষ্টদের তোয়াক্কা না করে রাস্তা নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এক প্রভাবশালী। উপজেলা প্রশাসন এই কাজ দ্রুত বন্ধের কথা জানালেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ এখনো চোখে পড়েনি। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

গত রোববার দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিংদিঘী গ্রামের নিরঞ্জনের চালা এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রাস্তা নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। রাস্তার দক্ষিণ অংশে বসতবাড়ি থাকলেও উত্তর পাশে ঘন বনাঞ্চল। অর্ধশতাধিক শ্রমিক এই কাজ করছেন। আর এ জন্য তিন যুগের পুরোনো চলাচলের রাস্তার মাটি কেটে নিয়ে নতুন রাস্তা নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। কেটে ফেলা হয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বেশ কিছু গাছ। বেশ কয়েকটি কাটা গজারিগাছ পড়ে রয়েছে জঙ্গলের ভেতর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল এই কাজ করাচ্ছেন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় ঢাকার এই ব্যবসায়ী এ কাজ করছেন। আওয়ালের মালিকানাধীন জমির পাশ দিয়ে একটি সরকারি রাস্তা গেছে। সেই রাস্তার বেশ কিছু অংশ কেটে ফেলা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন সরকার বলেন, ‘আব্দুল আওয়াল আমাদের এলাকায় ২৫ বিঘা জমি কেনেন। সেখানে বিভিন্ন ফলদ ও বনজ বাগান করেন। আওয়ালের জমির পাশ দিয়ে একটি সরকারি চলাচলের রাস্তা ছিল। সেটিও তিনি কেটে নিচ্ছেন। আমরা গ্রামবাসী রাস্তা কাটতে বাধা দিলেও কাজ হচ্ছে না। এ ছাড়া সংরক্ষিত বনের জায়গায়ও দখল করে রাস্তা করছেন। রাস্তার উত্তর পাশে কোনো বসতবাড়ি নেই। যত দূর চোখ যায় শুধু বন আর বন। তাহলে কার লাভের জন্য তিনি রাস্তা করছেন? আসল উদ্দেশ্য শুধু বনভূমি দখল করা।’

সিংদিঘী গ্রামের নিরঞ্জনের চালা এলাকার সোহেল রানা বলেন, ‘এই ব্যবসায়ী জোর করে আমাদের চলাচলের রাস্তা কেটে নিচ্ছেন। রাস্তার উত্তর পাশে বসতবাড়ি তো দূরের কথা, সন্ধ্যার পর কোনো মানুষ বনের ভেতর যেতে ভয় পায়। তাহলে কার জন্য এই রাস্তা?’

এদিকে রাস্তা তৈরি করার বিষয়ে মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আলমাস মিয়াও বাধা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নিরঞ্জনের চালা এলাকার মানুষের চলাচলের জন্য প্রায় ৫০ বছর আগে রাস্তা নির্মাণ করে ইউনিয়ন পরিষদ। সেখানে ইটের সলিং করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে ১০ বছর আগে। সেই রাস্তা কেটে নিচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।’

তবে এই রাস্তা নির্মাণ বন্ধে এখনো বন বিভাগ বা প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, যে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে, এর উত্তর অংশে ঘন শাল ও গজারির বনাঞ্চল। সেটি শ্রীপুর রেঞ্জের শিমলাপাড় বিট অফিসের অধীনে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সহকারী কমিশনার ভূমি ও সংশ্লিষ্ট বন বিভাগকে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সরকারি রাস্তা কাটার কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে বনের ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে কথা বলার জন্য আব্দুল আওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। একাধিকবার তাঁর মোবাইলে কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে সিংদিঘী গ্রামে গিয়ে তাঁর বাগানের ব্যবস্থাপক শরীফ আহমেদের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়। তিনি বলেন, নতুন একটি রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে। তবে সরকারি চলাচলের রাস্তা কেটে নতুন রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি জানা নেই।

ওই এলাকায় কোনো ঘরবাড়ি নেই, তারপরও কেন রাস্তা করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে বাগানের ব্যবস্থাপক বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। এ বিষয়ে আমি বলতে পারব না। আপনার সঙ্গে সাক্ষাতে বিস্তারিত বলব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত