Ajker Patrika

আনোয়ারুল হত্যা: ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা কামালের স্বীকারোক্তি 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৪, ২১: ১৫
আনোয়ারুল হত্যা: ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা কামালের স্বীকারোক্তি 

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় খুনিদের টাকা দিয়েছিলেন ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু। আজ শুক্রবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

দুপুরের দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান গ্যাস বাবুকে আদালতে হাজির করেন। তিনি এক আবেদনে উল্লেখ করেন, আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি এমপি আনারকে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেন। তিনি আদালতেও দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক।

পরে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুর আইনজীবী আমিনুল ইসলাম হিরু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে এই মামলায় আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তাঁর ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। 

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস বাবু আদালতকে বলেছেন, এই মামলার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন। ব্যবসা–সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের কারণে এই খুনের পরিকল্পনা হয়। তবে আক্তারুজ্জামান শাহীন এমপি আনারকে খুনের পরিকল্পনা করলেও তিনি স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সহযোগিতা চান। আর এতে সাড়া পান তিনি।

বারবার এলাকায় আনোয়ারুল আজিম আনার এমপি হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা বিশেষ করে ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু মনে মনে ক্ষিপ্ত ছিলেন। তাই তিনি গ্যাস বাবুকে নিয়ে আক্তারুজ্জামান শাহীনের ডাকে সাড়া দেন। এমপি আনারকে যদি আক্তারুজ্জামান শাহীন শেষ করে দিতে পারে, তাহলে সেখানে মিন্টুর এমপি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।

গ্যাস বাবু জবানবন্দিতে আরও বলেন, মিন্টু ও গ্যাস বাবু দুজনই খুনের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতেন এবং তাঁরা টাকাপয়সা ব্যয় করেছেন। এমনকি হত্যার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং গোপনের জন্য টাকাপয়সা দেওয়ার কথা ছিল গ্যাস বাবুর। তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, এমপি আনারকে নির্মমভাবে খুনের পরিকল্পনা করেছেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। আর বাস্তবায়ন করেছেন শিমুল ভূঁইয়া। 

এমপি আনারকে খুনের পর গত ১৫ মে শিমুল ভূঁইয়া দেশে ফেরেন। ১৬ মে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে গ্যাস বাবুর হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। এরপর কথা অনুযায়ী ১৭ মে রাতে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়ের পাশে শিমুলের গাড়িতে বসে গ্যাস বাবু মিটিং করেন। ঘটনা–পরবর্তী উদ্ভূত প্রস্তুতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যে টাকাপয়সা প্রয়োজন হয়, তা নিয়ে কথা হয় ওই মিটিংয়ে। গ্যাস বাবু বেশ কিছু টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন শিমুল ভূঁইয়াকে। ২৩ মে ওই টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগে শিমুল ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হওয়ায় আর টাকা দিতে হয়নি।

গ্যাস বাবু আদালতকে আরও জানিয়েছেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এমপি আনারকে হত্যার আগে তাঁকে আটক করে রাখার সময় খুনিরা যে ছবি ধারণ করেছিল, সেগুলো বাংলাদেশে বেশ কয়েকজনের কাছে পাঠানো হয়েছে। যাঁদের কাছে পাঠানো হয়েছে, তাঁরা হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

আনোয়ারুল আজীম ভারতে খুন হওয়ার ঘটনায় গত ২২ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণের পর গুমের মামলা করেন তাঁর (আজীম) মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

মামলার এজাহারে এমপির মেয়ে উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে তাঁর বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন। ১১ মে ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে তাঁর বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্নতা মনে হয়। এরপর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে বন্ধ পান।

গত ১৩ মে আনারের ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেব।’ এ ছাড়া আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। মেসেজগুলো মুনতারিনের বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে বলে এজাহারে বলা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়, বাদীর বাবা ভারতে খুন হয়েছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তবে এখনো বাবার লাশ পাননি তাঁর পরিবার। তাঁর বাবাকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
আনোয়ারুল আজিম গত ১২ মে দর্শনা–গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। বরাহনগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু ১৬ মে থেকে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে না পারায় নিখোঁজ জানিয়ে ১৮ মে বরাহনগর থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। 

গত ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আনোয়ারুল আজীম খুন হওয়ার খবর আসে। এরপর তাঁর মেয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণের পর গুম করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

জানা গেছে, এই মামলায় গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু আট দিনের রিমান্ডে আছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত