Ajker Patrika

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: পঙ্গু হাসপাতালে এখনো ভর্তি আহত ৮৩ জন

  • পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন সহস্রাধিক আহত ব্যক্তি
  • ভর্তি হন ৪২৫ জন, ১৭ জনের পা ও চারজনের হাত কাটতে হয়েছে
  • চিকিৎসকেরা বলছেন, চিকিৎসাধীন রোগীদের সুস্থ হতে এক বছরের বেশি লাগবে
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮: ৪৫
পঙ্গু হাসপাতাল পরির্দশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম । ছবি: পিআইডি
পঙ্গু হাসপাতাল পরির্দশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম । ছবি: পিআইডি

গোলাম মোস্তফা। বয়স ৩৫ বছর। পঙ্গু হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসাধীন। গুলিতে তাঁর ডান হাতের কবজি থেকে কনুই পর্যন্ত হাড় ভেঙে কয়েক টুকরা হয়েছিল। গত ২৩ জুলাই ভর্তি হওয়ার পর থেকে হাতে ১০ বার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। পেশায় নিরাপত্তাকর্মী মোস্তফা গুলিবিদ্ধ হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরায়। অ্যালুমিনিয়ামের খাঁচা পরানো হাত দেখিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, চিকিৎসকেরা বলেছেন হাড় জোড়া লাগতে কমপক্ষে এক বছর লাগবে। এরপরও না লাগলে শরীরের অন্য জায়গা থেকে হাড় এনে লাগানো হবে।

শুধু মোস্তফা নন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত আরও ৮২ জন এখনো শেরেবাংলা নগরের বিশেষায়িত এ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ওপর এসব রোগীর সুস্থ হওয়া নির্ভর করছে। কাউকে কাউকে আরও কয়েক মাস হাসপাতালে থাকতে হবে।

বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সারা দেশে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। তাঁদের অনেকে এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত সহস্রাধিক মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন এবং এখনো নিচ্ছেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান বলেছে, ১৭ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আহত ৭৬৯ জন এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন। তাঁদের মধ্যে ৪০৯ জন ছিল‍েন গুলিবিদ্ধ। ভর্তি হয়েছেন মোট ৪২৫ জন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জনের পা ও চারজনের হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। আন্দোলনে আহতদের ৮৩ জন এখনো চিকিৎসাধীন। তাঁদের প্রায় সবারই হাত বা পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাকিরা চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন বা পরবর্তী চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে গেছেন। তবে সবাইকে নিয়মিতভাবে হাসপাতালে আসতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ওপর নির্ভর করছে তাঁদের সুস্থতা।

চিকিৎসকেরা জানান, এখনো ভর্তি থাকা ব্যক্তিদের সুস্থ হতে আরও এক বছরের বেশি লাগবে। কারও কারও লেগে যাবে দুই বছর।

চিকিৎসার খোঁজখবর না নেওয়া, আর্থিক সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ এনে গত বুধবার দুপুরে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আহত হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরা অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে ঘেরাওয়ের পর হুইলচেয়ারসহ এসে সড়ক অবরোধ করেন। তাঁদের দাবি অনুযায়ী তিন উপদেষ্টা সেখানে যাওয়ার পর রাত ৩টার দিকে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন।

গতকাল সরেজমিনে ওই হাসপাতালে দেখা যায়, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ‘এ’ ও ‘বি’ ওয়ার্ডে। তাঁরা জুলাইয়ের শেষার্ধ থেকে আগস্টের শুরুতে ভর্তি হয়েছেন। গোলাম মোস্তফা হাতে অ্যালুমিনিয়ামের খাঁচা নিয়ে চিন্তাক্লিষ্ট মুখে শুয়ে আছেন ‘বি’ ওয়ার্ডে। তাঁর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে, বাড্ডায় ভাড়া বাসায় থাকেন সপরিবারে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ১৯ জুলাই রামপুরায় পুলিশ তাঁর ডান হাতে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। ২৩ জুলাই তাঁকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গুলিতে তাঁর ওই হাতের কবজি থেকে কনুই পর্যন্ত ৫ ইঞ্চি হাড় ভেঙে কয়েক টুকরা হয়ে গেছে। চিকিৎসকেরা তাঁকে জানিয়েছেন, খাঁচা আরও এক বছর রাখতে হবে। এর মধ্যে হাড় জোড়া না লাগলে শরীরের অন্য স্থান থেকে হাড় এনে এখানে লাগানো হবে।

মোস্তফা বলেন, স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে বাড্ডায় ভাড়া বাসায় থাকেন। আহত হওয়ার পর থেকে আয় বন্ধ। বকেয়া পড়েছে বাড়িভাড়া। বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া অনুদানে চলছে চিকিৎসাখরচ। সেই টাকাও ফুরিয়ে এসেছে। বড় চিন্তা, পরিবারের খরচ জোগাবেন কীভাবে। শরীরের যে অবস্থা তাতে কাজে ফিরতে কত বছর লাগবে, তা জানেন না তিনি। গ্রামেও কোনো সম্পদ নেই।

একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আহমদ। ৪ আগস্ট আন্দোলনকালে পুলিশের পিকআপের চাপায় তাঁর কোমর থেকে ডান পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ভেঙে গেছে। চারবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। কোমরের হাড়ের কিছু অংশ এনে পায়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। কোমর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত অ্যালুমিনিয়ামের খাঁচা দিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, ধাওয়া খেয়ে পুলিশ পিছু হটার সময় পিকআপ ভ্যান দ্রুতগতিতে পিছিয়ে এলে তিনি চাকার নিচে পড়ে যান। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন উন্নতি হচ্ছে। তবে সুস্থ হতে সময় লাগবে। পায়ে খাঁচা রাখতে হবে দেড় বছরের মতো।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের উপপরিচালক বদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত যেসব রোগী আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছিলেন বা এখনো ভর্তি রয়েছেন, তাঁদের সরকারের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বিনা খরচে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার জন্য আমাদের চিকিৎসকেরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’

আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা বাবদ ৮৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে নিটোর হাসপাতালের সমাজসেবা কার্যালয়। নিটোরের সমাজসেবা কর্মকর্তা মোসা. রওশনারা খাতুন বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সব ব্যয় সরকার ও বিভিন্ন দাতা প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়ার পর হাসপাতালের সমাজসেবা কার্যালয় থেকে খরচ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘গরু চুরি করতে এসে’ গণপিটুনিতে একজন নিহত, ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক

বাগেরহাট প্রতিনিধি
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে গণপিটুনির শিকার চোর চক্রের সদস্যদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে গণপিটুনির শিকার চোর চক্রের সদস্যদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ‘গরু চুরি করতে এসে’ গণপিটুনির শিকার হয়েছে চোর চক্রের চার সদস্য। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে উপজেলার বলভদ্রপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে চক্রের সদস্য মো. মতিয়ার রহমান (৪৫) নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত মতিয়ার রহমান বাগেরহাটের চরগ্রাম এলাকার মৃত রশিদ শেখের ছেলে। আহত ব্যক্তিরা হলেন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার ভাগাবাজার এলাকার মো. বজলু হাওলাদারের ছেলে মো. রমন হাওলাদার (৩৮), ফকিরহাটের চাকুলি গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ শেখের ছেলে মো. আসাদুল শেখ (৪০) ও ফকিরহাটের আরপাড়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদের ছেলে মো. জনি (৩৮)।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে মহিশপুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. তালেবুল্লাহ জানান, ভোররাতে একটি মিনি ট্রাক নিয়ে চোর চক্রের সদস্যরা বলভদ্রপুর গ্রামে গরু চুরি করতে আসে। বিষয়টি টের পেয়ে এলাকাবাসী ধাওয়া দিলে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। পরে চারজনকে আটক করে গণপিটুনি দেওয়া হয়।

একপর্যায়ে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মতিয়ার রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুফতি কামাল হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই মতিয়ার রহমানের মৃত্যু হয়েছে। বাকি তিনজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।’

এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ থানার পরিদর্শক ভবতোশ চন্দ্র বলেন, গণপিটুনিতে একজন নিহত হয়েছেন এবং তিনজন আহত রয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আহত ব্যক্তিদের পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সালিসের মধ্যে ১ জনকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা, প্রতিপক্ষের বাড়িতে আগুন

মাগুরা প্রতিনিধি 
সালিস চলাকালে প্রতিপক্ষের হাতুড়িপেটায় আহত ব্যক্তিকে আজ শুক্রবার দুপুরে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেন স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সালিস চলাকালে প্রতিপক্ষের হাতুড়িপেটায় আহত ব্যক্তিকে আজ শুক্রবার দুপুরে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেন স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাগুরা সদর উপজেলায় সালিস চলাকালে প্রতিপক্ষের হাতুড়িপেটায় বাদশা মোল্যা (৬০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা প্রতিপক্ষের বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেন।

আজ শুক্রবার দুপুরে উপজেলার কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের বলুকগ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খেতের ধান কাটা নিয়ে বিরোধ মীমাংসার জন্য ওই সালিসের আয়োজন করা হয়েছিল।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার জমির ধান কাটাকে কেন্দ্র করে বর্গাচাষি আনোয়ার হোসেন ও শিউলি খাতুনের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। তাঁদের সে বিরোধ মীমাংসার জন্য আজ দুপুরে সালিসের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সালিসের মধ্যে আনোয়ার হোসেনের ছেলে আবির (২২) উত্তেজিত হয়ে শিউলি খাতুনের মামা বাদশা মোল্যাকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে মাগুরা সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক জানান, বাদশা মারা গেছেন।

ঘটনার পর প্রতিপক্ষের লোকজন আনোয়ারের বাড়িতে আগুন দেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, সালিস বৈঠকে কথা-কাটাকাটির জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অবৈধভাবে সার বিক্রির দায়ে ডিলারকে জরিমানা, ৩৬০ বস্তা সার জব্দ

পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি 
পাটগ্রামে অবৈধভাবে আনা সার ট্রাক থেকে ভ্যানে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাটগ্রামে অবৈধভাবে আনা সার ট্রাক থেকে ভ্যানে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে অবৈধভাবে রাসায়নিক সার বিক্রির সময় অভিযান চালিয়ে ৩৬০ বস্তা সার জব্দ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আইন লঙ্ঘন করে বরাদ্দের বাইরে সার কিনে খুচরা বিক্রির অপরাধে ডিলারকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১০টায় উপজেলার বাইপাস মোড়ের করিম ট্রেডার্সের পাশে এই অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের সহযোগিতায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স অগ্রণী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ফারুক আহম্মেদ লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগর সরকারি গোডাউন থেকে একটি ট্রাকে ইউরিয়া, ডিএপি, পটাশসহ মোট ৭০০ বস্তা সার কিনে আনেন। তিনি সেই সার বাইপাস মোড়ে আনলোড করে বিভিন্ন ইউনিয়নের খুচরা বিক্রেতা বা ভ্যান গাড়ি দিয়ে বিক্রি করতে শুরু করেন।

খবর পেয়ে পৌর বিএনপির সভাপতি মোস্তফা সালাউজ্জামান ওপেল উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানান। এরপর স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন ট্রাকটি জব্দ করে। ঘটনাস্থলেই পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উত্তম কুমার দাশ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।

আইন লঙ্ঘন করে বরাদ্দের বাইরে লালমনিরহাট থেকে সার কিনে এনে খুচরা বিক্রির অপরাধে ডিলার ফারুক আহম্মেদকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং ৩৬০ বস্তা সার জব্দ করেন।

পৌর বিএনপির সভাপতি মোস্তফা সালাউজ্জামান ওপেল বলেন, ‘আমরা গোপন সংবাদ পেয়েছিলাম যে, করিম ট্রেডার্সের সামনে সারের একটি ট্রাক খালাস করা হচ্ছে এবং ভ্যানে বিভিন্ন ইউনিয়নের খুচরা দোকানদারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। খবর পেয়ে ইউএনওকে জানাই। কর্তৃপক্ষ এসে কোনো বৈধতা না পাওয়ায় ডিলারকে জরিমানা ও সার জব্দ করে। কৃষকেরা যেন ন্যায্য মূল্যে সার পান, সে ব্যাপারে প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উত্তম কুমার দাশ বলেন, অবৈধভাবে সার এনে মজুত ও খুচরা বিক্রির অপরাধে সার ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৬ অনুযায়ী ডিলার ফারুক আহম্মেদকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ করা সারগুলো পরে শ্রীরামপুর ইউনিয়নের কৃষকদের মধ্যে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করা হবে। সারের কৃত্রিম সংকট নিরসনে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাবনায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু, গ্রেপ্তার ২

পাবনা প্রতিনিধি
নিহত গাজ্জালী মুন্সীর বাড়িতে প্রতিবেশীর ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিহত গাজ্জালী মুন্সীর বাড়িতে প্রতিবেশীর ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঈদগাহ মাঠের দ্বন্দ্ব নিয়ে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার মধ্য পুংগলী গ্রামে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে আহত একজন মারা গেছেন। শুক্রবার (২৪ অক্টেবর) ভোরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আহত গাজ্জালী মুন্সীকে (৫০) সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত গাজ্জালী মুন্সী মধ্য পুংগলী গ্রামের মৃত রমজান মুন্সীর ছেলে। তিনি হাজী গোষ্ঠীর লোক।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে মধ্য পুংগলী গ্রামের হাজী গোষ্ঠী ও বাদশাহ গোষ্ঠীর মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, গত বছর ঈদগাহ মাঠে নামাজ পড়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। সেই পুরোনো বিরোধের জেরে বৃহস্পতিবার সকালে হাজী গোষ্ঠী ও বাদশাহ গোষ্ঠীর মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয় এবং সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

সংঘর্ষে আহত ২০ জনকে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে গুরুতর কয়েকজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় গাজ্জালী মুন্সী নামের একজনকে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।

পাবনা-২
পাবনা-২

খবর পেয়ে ফরিদপুর থানা-পুলিশ শুক্রবার সকালে নিহত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠিয়েছে।

ফরিদপুর থানার ওসি শাকিউল আজম বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় শুক্রবার রাতে উভয় পক্ষ দুটি মামলা করেছে। পরে কুদরত এ খুদা (৪৫) ও ধলা (২৫) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত