Ajker Patrika

মিরপুর অগ্নিকাণ্ড: বিষাক্ত গ্যাসের কারণে ৩০০ মিটার দূরে থাকার পরামর্শ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ২৫
শতাধিক মানুষকে আজ বিকেলে গুদামের সামনে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
শতাধিক মানুষকে আজ বিকেলে গুদামের সামনে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগায় আশপাশের বাতাসে তীব্র বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে। এটি মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই লোকজনকে ওই গুদাম থেকে অন্তত ৩০০ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের অনুরোধ জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গুদামের ভেতরের পরিবেশ খুবই বিষাক্ত হওয়ায় সেখান থেকে রাসায়নিক দ্রব্য সরিয়ে নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস পয়োনিষ্কাশনের লাইন ব্যবহারসহ রাসায়নিক অপসারণের বিকল্প কৌশল নিয়ে ভাবছে।

আজ শুক্রবারও (১৭ অক্টোবর) দিনভর আলম ট্রেডার্স নামের রাসায়নিক দ্রব্যের গুদামটি থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। এর ভেতরে আজও সারি সারি বস্তায় ভরা টনকে টন রাসায়নিক দ্রব্য মজুত ছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে ক্রমাগত পানি দেওয়ার কারণে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মিশে গিয়ে বিক্রিয়া থেকে ধোঁয়া তৈরি হচ্ছে। এতে এলাকার বাতাসসহ পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। আজও স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে শ্বাসকষ্ট ও চোখে জ্বালাপোড়ার কথা বলেছেন।

আলতাফ নামের একজন স্থানীয় চা-দোকানি মুখে মাস্ক পরে কাজ করছেন। আলতাফ জানান, সারা দিন গুদামের পাশে থাকায় তাঁর মাথা ঘুরছিল, শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। তাই মাস্ক পরেছেন। রাসায়নিকের আগুনের কারণে আশপাশের গাছের পাতার রং হলদে হয়ে যাচ্ছে বলে এলাকার মানুষ জানিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার সকালে আবাসিক এলাকার মধ্যে গড়ে ওঠা ‘রূপনগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন’-এর গুদাম আলম ট্রেডার্স ও পাশের একটি পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে পোশাক কারখানাটির ১৬ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ওই কারখানার আগুন নেভানো সম্ভব হলেও গত চার দিন রাসায়নিক দ্রব্যের গুদামের আগুন পুরোপুরি নেভাতে বা জায়গাটি বিপদমুক্ত করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।

আজ বিকেলে বোম্ব ডিসপোজাল দলের বিশেষজ্ঞরা গুদামটির ভেতরে প্রবেশ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বিকেলে বোম্ব ডিসপোজাল দলের বিশেষজ্ঞরা গুদামটির ভেতরে প্রবেশ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিষাক্ত গ্যাস নিয়ে সতর্কবার্তা

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গুদামের বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য আগুন ও পানির সংস্পর্শ পেয়ে বিক্রিয়া করে বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস ছড়াচ্ছে।

আজ বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সন্ত্রাস মোকাবিলাবিষয়ক বিশেষ বিভাগের বোম্ব ডিসপোজাল দলের বিশেষজ্ঞরা গুদামটির ভেতরে প্রবেশ করেন। তাঁরা সেখানকার গ্যাসের মাত্রা পরীক্ষা করেন। বিশেষজ্ঞরা সেখানে হাইড্রোজেন সালফাইড ও কার্বন মনোঅক্সাইড—এ দুটি গ্যাসের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পেয়েছেন।

বিশেষজ্ঞ দলটির প্রধান সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. মাহমুদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ বিষাক্ত গ্যাস মানুষের স্বাস্থ্য তথা জীবনের জন্য হুমকি। গুদাম ও এর কাছাকাছি বাতাসে হাইড্রোজেন সালফাইডের মাত্রা ছিল ১৪৯ পিপিএম। এটি ১০০ পিপিএমের বেশি হলে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে।

এসি মো. মাহমুদুজ্জামান সবাইকে সতর্ক করে বলেন, ‘এই গ্যাস হয়তো খালি চোখে কেউ দেখছেন না। এমন অনেক গ্যাস আছে, যার ঘ্রাণও পাবেন না। কিন্তু এর কাছাকাছি গেলে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। গুদামটির চারপাশে দেড় শ থেকে তিন শ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। না হলে জীবন ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে।’

আজ বিকেলে বোম্ব ডিসপোজাল দলের বিশেষজ্ঞরা গুদামটির ভেতরে প্রবেশ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বিকেলে বোম্ব ডিসপোজাল দলের বিশেষজ্ঞরা গুদামটির ভেতরে প্রবেশ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘটনা তদন্তে কমিটি

ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সিনিয়র জিএম মনজুর রেজার নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আরও রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তা। আজও বিশেষজ্ঞ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

রাসায়নিক সরাতে আরও সময় লাগবে

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, সাধারণ কৌশলে বিপদ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কাজ চলছে। রাসায়নিক দ্রব্যগুলো পানি দিয়ে সুয়ারেজ লাইনে ফেলে ধীরে ধীরে সরানোর চেষ্টা চলছে।

গুদাম থেকে রাসায়নিক দ্রব্য সরাতে আরও চার দিন সময় লাগতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে স্থানীয় লোকজনের আশঙ্কা, সুয়ারেজ লাইনে রাসায়নিক দ্রব্য ফেলা হলে তা সরবরাহের খাবার পানিতে মিশে যেতে পারে। কারণ, অনেক জায়গায় সুয়ারেজ লাইনের কাছাকাছি ওয়াসার পানির পাইপ গেছে। পাইপে থাকা ছিদ্র দিয়ে বিষাক্ত দ্রব্য খাবার পানিতে মিশে যেতে পারে।

নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের বিক্ষোভ

আজ বিকেলে শতাধিক মানুষকে গুদামের সামনে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে দুটি পরিবার ছিল, যারা তাদের স্বজনকে খুঁজে পায়নি।

তারা বেগম নামের একজন নারী বিকেলে ঘটনাস্থলে এসে বলেন, তাঁর ১৪ বছরের ছেলে আব্দুল আলীম পোশাক কারখানায় সুতা কাটার কাজ করত। ঘটনার দিন থেকে তাকে পাচ্ছেন না। হাসপাতালের মর্গেও তাকে খুঁজে পাননি। তারা বেগম দৌড়ে পোশাক কারখানার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ সদস্যরা তাঁকে আটকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা বেগম। অনেকে সেখানে বিক্ষোভ করেন।

এদিকে লাশ শনাক্তের জন্য যাঁরা ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন, তাঁদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। আজ পর্যন্ত ডিএনএ নমুনার প্রতিবেদন দেয়নি সিআইডি। আগামী রোববার এই প্রতিবেদন দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত