Ajker Patrika

সাভারে নাশকতার মামলায় আসামি হকার্স লীগের নেতা, তাঁকে চেনেন না বাদী

অরূপ রায়, সাভার
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৪, ১৯: ১৮
Thumbnail image

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে করা দুটি মামলায় আসামি সাভার পৌর হকার্স লীগের সভাপতি কবির হোসেন! মামলার এজাহারে তাঁকে হকার্স দলের সাবেক সভাপতি দেখানো হয়েছে।

পূর্বশত্রুতার জের ধরে দলের লোকজনই পুলিশের সহায়তায় মামলায় নাম দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কবির হোসেন।

অন্যদিকে সহিংসতার ঘটনায় আটক সাভারের বনগাঁও ইউনিয়ন যুবদল নেতা জাকির হোসেনকে এক দিন পর ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে সাভার থানায় দুটি মামলা চলমান।

কবির হোসেনের বিরুদ্ধে হওয়া একটি মামলার বাদী পুড়ে যাওয়া বাসের মালিক বলেছেন, তিনি মামলায় আসামি করেছেন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের। কবির হোসেন নামে কাউকে তিনি চেনেন না।

অপর মামলার বাদী পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে মামলা হয়েছে।

আর জাকির হোসেনকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে পুলিশ বলছে, জাকিরের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা চলাকালে ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীরা সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চারটি বাস ও একটি ট্রাকে আগুন দেয়। ওই ঘটনায় সাভার পরিবহনের পুড়ে যাওয়া একটি বাসের মালিক গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বনগ্রাম গ্রামের ছাকিব হোসেন মৃধা ২৪ জুলাই সাভার থানায় মামলা করেন।

এদিকে একই দিন (১৮ জুলাই) একই স্থান ও সময়ে সোনার তরী পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগের মামলা এবং সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার ট্রাফিক বক্সে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মামলায় আসামি করা হয়েছে সাভার পরিবহনের আরেক মালিক ও পরিবহনটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহরাব হোসেনকে।

ছাকিব হোসেনের মামলায় ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলার এজাহারে সাধারণ মানুষসহ বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর সঙ্গে সাভার পৌর হকার্স লীগের সভাপতি কবির হোসেনের নামও রয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় দেখানো হয়েছে হকার্স দলের সাবেক সভাপতি।

২৬ জুলাই সাভার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তানিম হোসেনের করা মামলায়ও কবির হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলার এজাহারেও কবির হোসেনকে হকার্স দলের সাবেক সভাপতি বলা হয়েছে।

হকার্স লীগ নেতা কবির হোসেনকে হকার্স দলের নেতা দেখিয়ে আসামি করার বিষয়ে মামলার বাদী এসআই তানিম হোসেন বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে মামলা হয়েছে। এখানে আমার কিছু করার ছিল না।’

আরেক মামলার বাদী ছাকিব হোসেন মৃধা বলেন, ‘যাঁরা আমার বাস পুড়িয়েছে তাঁদের আমি চিনি না। তাই অজ্ঞাতনামা লোকজনকে আসামি করে মামলা করেছি। সেই মামলায় আসামির নাম কী করে এল তা পুলিশই ভালো বলতে পারবে।’

কবির হোসেনের বিষয়ে ছাকিব হোসেন মৃধা বলেন, ‘আমি তাঁকে চিনিও না, কোনো দিন দেখিও নাই। তিনি কোন দল করেন, কী করেন না করেন না তাও আমার জানা নেই।’

জানতে চাইলে কবির হোসেন বলেন, ‘আমি দলের একজন নেতা হিসেবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা ঠেকাতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কাজ করেছি। আর আমাকেই আন্দোলনকারী হিসেবে মামলার আসামি করা হয়েছে। আমাকে দল থেকে বহিষ্কারের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দলের লোকজনই পুলিশের সহায়তায় এসব করেছে।’

কবির হোসেন আরও বলেন, ‘আমি পৌর হকার্স লীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি। আমার কাছে অনুমোদিত কমিটির পেপারসও আছে। এরপরেও মামলায় আমাকে হকার্স দলের নেতা দেখানো হয়েছে। এটা ভাবা যায় না!’

এদিকে সাভারের বনগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ আহম্মেদ বলেন, ‘২৩ জুলাই সাভার থানার এসআই সাব্বির আহাম্মেদ বনগাঁও ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় জড়িত ছিলেন। তার প্রমাণও আমরা থানায় দিয়েছি। এর পরেও এক দিন পর ২৫ জুলাই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

একই রকম অভিযোগ করেন বনগাঁও ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই সাব্বির আহাম্মেদ বলেন, ‘জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আর তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না তাও আমার জানা নেই।’

কিন্তু সাভার থানার নথি ঘেঁটে দেখা যায়, জাকির হোসেনের নামে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা হয়, যার নম্বর ৯৬। একই আইনে অপর মামলাটি হয় ২০২৩ সালের ৩০ জুলাই। দুটি মামলা এখনো চলমান।

জাকির হোসেনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ্ জামান বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম। জাকিরের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখি। আপনাকে পরে জানানো হবে।’

কবির হোসেনের বিষয়ে ওসি মোহাম্মদ শাহ্ জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। এ রকম হয়ে থাকলে পরবর্তীতে আমি ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত