Ajker Patrika

‘গিভ অ্যান্ড টেকের লন্ডন মিটিং নিয়েও সংকট দেখা দেবে’

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ জুন ২০২৫, ২১: ২৪
কিশোরগঞ্জে সিপিবির সাধারণ সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা
কিশোরগঞ্জে সিপিবির সাধারণ সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা

তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর বিএনপির সুর বদলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘তারেক জিয়ার সঙ্গে লন্ডন বৈঠকের পর বিএনপির সুর কিছুটা বদলেছে, তারা বলছে সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিতে চায়—এতে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু এই তারিখ নিয়েও সরকার “ইফ” এবং “বাটস” দিয়ে রেখেছে। খোলাসা করে এখন পর্যন্ত কিছু বলেনি। আমরা মনে করি, এই গিভ অ্যান্ড টেকের লন্ডন মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েও সংকট দেখা দেবে।’

আজ শনিবার সিপিবির কিশোরগঞ্জে জেলা কমিটির সাধারণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শাহ আলম এসব কথা বলেন। শহরের একরামপুরে একটি কনভেনশন সেন্টারে দলটির এ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন শতাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন।

শাহ আলম বলেন, ‘দেশকে বিপন্মুক্ত করতে হলে, আর মানুষকে ভীতিমুক্ত করতে হলে নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী। জাতি দ্রুত দেশে নির্বাচন চায়। এটা না হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। জানমালের নিরাপত্তা আসবে না। অর্থনীতিতে বিনিয়োগ হবে না। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলতে থাকবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে; যা এখনই আমরা দেখতে পাচ্ছি।’

সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই সরকারের একটাই দায়িত্ব। সেটা হলো নির্বাচন দেওয়া। ন্যূনতম নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার সংস্কার দিয়ে অবিলম্বে নির্বাচনের আয়োজন করা। কিন্তু তারা টার্মিনাল-বন্দর-করিডরের মতো সংবেদনশীল অ্যাজেন্ডা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের অ্যাজেন্ডা দেখে সন্দেহ বাড়ছে। নতুন নতুন অ্যাজেন্ডা নিয়ে আসছে তারা। এগুলো চলতে থাকলে দেশের সার্বভৌমত্ব শেষ হয়ে যাবে। দেশটাও শেষ করে দেবে। আর আমাদের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনটাও হবে না। এসব নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।’

জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছে, এটি বিপ্লব, দ্বিতীয় স্বাধীনতা। যে যেভাবে পারছে নানা বিশ্লেষণ করছে, বিভিন্ন নামে ডাকছে। আমরা মনে করি, এটি বিপ্লবও না, দ্বিতীয় স্বাধীনতাও না। এটি স্বৈরাচারবিরোধী একটা লড়াই হয়েছে। যার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

‘গণতন্ত্রবিরোধী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশে যে স্বৈরাচারী সরকারব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছিল, ছাত্র-শ্রমিক-জনতা সেই লুটপাট, গুম, খুন, হামলা, মামলা, দুর্নীতি, গণতন্ত্রহীনতার বিরুদ্ধে লড়াই করে একটি নতুন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন তৈরি করেছে—কেবল নির্বাচনের মাধ্যমেই সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন সম্ভব।’

বর্তমান সরকারের বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম বলেন, ‘তারা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। মব সন্ত্রাস চলছে। শুধু চলছে না, এগুলো চালাতে দেওয়া হচ্ছে। সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখছে না। এসব কারণে দেশে বিনিয়োগ আসছে না। বারবার নানা বিষয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে। মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া হচ্ছে; যা কোনোভাবে কাম্য নয়।’

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যারা অপরাধী, তাদের বিচার হওয়া উচিত। যারা এসব অপরাধে জড়িত, তাদের ন্যায়সংগত বিচার করা দরকার। তবে দল নিষিদ্ধের পক্ষে আমরা নই। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকেও নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। কিন্তু তাদের তো সরকার নানাভাবে সুযোগ ও অগ্রাধিকার দিচ্ছে; যা সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করছে।’

এর আগে আবদুর রহমান রুমীর সভাপতিত্বে সাধারণ সভায় বক্তব্য দেন জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি এনামুল হক ইদ্রিস, জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ সরকার, সিপিবি নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এনামুল হক, আবুল হাশেম, মোস্তফা কামাল নান্দু, সেলিম উদ্দিন খান, ফরিদ আহমেদ প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত