Ajker Patrika

সাঁওতালদের ওপর অন্যায় না করে গোপালগঞ্জে ইপিজেড বানান: জাফরুল্লাহ

প্রতিনিধি, ঢাবি
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ৪৭
সাঁওতালদের ওপর অন্যায় না করে গোপালগঞ্জে ইপিজেড বানান: জাফরুল্লাহ

গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্মে সাঁওতালদের নিজস্ব জমিতে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড) তৈরি না করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এলাকা গোপালগঞ্জে স্থাপন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

গোবিন্দগঞ্জে এই বেপজা স্থাপন করা হলে স্থানীয় গরিব সাঁওতালদের ওপর অন্যায় করা হবে বলে মন্তব্য করেন জাফরুল্লাহ। 

আজ শনিবার বেলা ১১টায় সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটি ঢাকার পক্ষ থেকে সাঁওতাল হত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ সমাবেশ হয়। 

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, গতকাল থেকে কী শুরু হলো! আমরা যাঁরা সুখে ছিলাম, তাঁদের জন্য গাড়িঘোড়া বন্ধ হয়ে গেছে। তেলের দাম বেড়েছে, খাবারের দাম বেড়েছে। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আন্দোলন শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন-ধর্মঘট চলছে। এই আন্দোলন সহজে থামবে না। 

ডা. জাফরুল্লাহ  আরও বলেন, `আপনি (প্রধানমন্ত্রী) বিলেতে গিয়ে ভিক্ষা না চেয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুর এলাকা গোপালগঞ্জে একটা বেপজা স্থাপন করেন। তাহলে বঙ্গবন্ধু কবরে বসে আমাদের জন্য দোয়া করবেন। ওই এলাকায় বেপজা করলে আর আদিবাসীদের অসুবিধা হবে না।' 

‘সাঁওতাল হত্যা দিবস’ উপলক্ষে মিছিল ও সমাবেশআজকে যে সমস্ত জমিন চার ফসলি, তা দখল করে বেপজা করার দরকার নেই। ডাকাতি করবেন না। বঙ্গবন্ধু তো ডাকাতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। আদিবাসীদের ওপর এরই মধ্যে যে অন্যায় করা হয়েছে, ২০১৬ সালে যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের পরিবার এবং যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁদের ক্ষতিপূরণ ও সাহায্য করার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান জাফরুল্লাহ। 

একই সঙ্গে দেশের স্বার্থে, গরিব মানুষের জন্য বিচারপতিদের কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। 

প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ মোড়ে শেষ হয়। 

প্রতিবাদ সমাবেশে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটির পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলো—

১) চুক্তির শর্তানুযায়ী জমির মালিকদের এই জমি ফিরিয়ে দেওয়া। 
২) শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডুর প্রকৃত খুনিদের বিচার। 
৩) চরণ সরেন, বিমল কিন্তু, দ্বিজেন টুডুসহ আহত ও গুলিবিদ্ধ সবার ক্ষতিপূরণ। 
৪) পুড়িয়ে দেওয়া ঘরবাড়ি, মন্দির ও স্কুলঘর পুনর্নির্মাণ এবং
৫) আন্দোলনকারী নিপীড়িত আদিবাসী ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার। 

সমাবেশে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নুসহ সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটির বিভিন্ন স্তরের নেতা–কর্মীরা। 

প্রসঙ্গত, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁওতাল হত্যা দিবস পালন করছেন সাঁওতাল-বাঙালিরা। ২০১৬ সালের এই দিনে মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের জমিতে হামলা করে সাঁওতালদের উচ্ছেদের ঘটনায় তিন সাঁওতাল নিহত হন। এরপর থেকে সাঁওতালরা দিনটিকে ‘সাঁওতাল হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। কিন্তু ঘটনার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও সাঁওতালদের করা মামলার বিচার হয়নি। 

সাঁওতালদের দাবি, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের যে জমিতে ইপিজেড হবে, সেগুলো তাঁদের বাপ-দাদার জমি। ইপিজেড হলে তাঁরা জমি থেকে উচ্ছেদ হবেন। তাই ইপিজেড না করার দাবিতে আন্দোলন করছেন তাঁরা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত