Ajker Patrika

পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতিতে ঢাবি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, ক্লাস বন্ধের ঘোষণা

ঢাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৪, ১৪: ০৩
পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতিতে ঢাবি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, ক্লাস বন্ধের ঘোষণা

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকেরা। একই দাবিতে কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি, প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এ ছাড়া, আগামীকাল সোমবার তথা ১ জুলাই থেকে কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সব ধরনের ক্লাস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। 

আজ রোববার সকালে শুরু হয় শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি। এর অংশ হিসেবে আজ বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্লাস ও একাডেমিক কাজে অংশ নেবেন না তাঁরা। তবে পরীক্ষা ও পরীক্ষাসংক্রান্ত কার্যক্রম এর বাইরে থাকবে। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলছে। তবে পরীক্ষাসমূহ আওতামুক্ত রয়েছে। আগামীকাল (১ জুলাই) থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে।’ 

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান গ্রহণ করে, পরে বেলা ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশ করে। কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে কর্মসূচি শুরু করেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যাব।’ 

শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। রেজিস্ট্রার ভবনে স্নাতকোত্তরের এক শিক্ষার্থী এসেছেন সনদ তুলতে। কর্মবিরতি থাকায় তাঁর কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন না। জামিল মোহাম্মদ নামে সেই শিক্ষার্থী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কর্মবিরতির কারণে আমার সার্টিফিকেট তোলার কাজ সম্পন্ন করতে পারিনি। আমার জরুরি দরকার ছিল।’ 

অন্যদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম-সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আগামীকাল ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সর্বাত্মক এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস বন্ধ থাকবে বলে এক চিঠিতে জানানো হয়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এই চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক বরাবর পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘বৈষম্যমূলক ও মর্যাদাহানিকর প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।’ 

চিঠিতে বলা হয়, সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি হলো—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের সব ক্লাস বন্ধ থাকবে, সব পরীক্ষা বর্জন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার কিশোরের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
নিহত মো. শিহাব। ছবি: সংগৃহীত
নিহত মো. শিহাব। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার এক কিশোর ১২ দিন পর মারা গেছে। নিহত কিশোরের নাম মো. শিহাব (১৭)। সে উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের মিজানুর রহমান রিপনের ছেলে। রিপনের এক ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে শিহাব ছিল সবার বড়। চলতি বছর এসএসসি পাস করে সে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে ছিল শিহাব। শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে সে মারা যায়। এর আগে গত ২০ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। প্রচণ্ড মারধরের পর থেকে সে অচেতন অবস্থায় ছিল।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিহাব ২০ অক্টোবর পার্শ্ববর্তী বান্দুড়িয়া এলাকায় তার প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে যায়। সে তেঁতুলতলা বাঁকের কাছে গেলে তার প্রেমিকার আত্মীয়স্বজন তাকে তাড়া দেয়। শিহাব নিজেকে রক্ষা করতে রাতের আঁধারে মাঠের মধ্যে দৌড় দেয়। একপর্যায়ে শিহাব দিক হারিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দেয়। এ সময় তাকে পুকুর থেকে তুলে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়।

একপর্যায়ে শিহাব জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে। পরে তাকে ফেলে রেখে চলে যায় তারা। তারপর স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। মাথায় গুরুতর আঘাত থাকায় তার জ্ঞান ফেরেনি। তাই তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। সেখানেই সে মারা যায়।

শিহাবকে নির্যাতনের ঘটনায় তার বাবা রিপন ২৪ অক্টোবর রাতে রতন আলী (৩২), মো. কানন (২২), সুজন আলী (৩২), ইয়ার উদ্দীন (৩২), মো. শরীফ (৩৫), মো. রাব্বি (২৫), মো. হালিম (৩০) এবং মো. কলিমের (৩২) নাম উল্লেখসহ এবং আরও ৮-৯ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে গোদাগাড়ী থানায় মামলা করেন। তবে শনিবার দুপুর পর্যন্ত তাঁদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি থানা-পুলিশ।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে শিহাব হামলার শিকার হয়েছিল। তিনি তার মৃত্যুর খবর শুনেছেন। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর হামলার ঘটনায় আগেই করা মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তর হবে বলে জানান ওসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৮ দফা দাবিতে সিলেট বিভাগে রেলপথ অবরোধ, আটকা পড়েছে পারাবত ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ৩৬
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে পারাবত এক্সপ্রেস আটকে দেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে পারাবত এক্সপ্রেস আটকে দেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

আখাউড়া-সিলেট রেল সেকশনে বন্ধ থাকা সব রেলস্টেশন পুনরায় চালু করাসহ ৮ দফা দাবিতে আজ শনিবার (১ নভেম্বর) সিলেট বিভাগের রেলপথ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এই অবরোধের কারণে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পারাবত এক্সপ্রেস এবং সিলেট থেকে ছেড়ে আসা পাহাড়িকা এক্সপ্রেস আটকা পড়েছে।

কুলাউড়া স্টেশনমাস্টার মো. রোমান আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন’ আন্দোলনের ব্যানারে সিলেট বিভাগে রেলপথ অবরোধ করা হয়েছে। অবরোধকারীদের বাধার মুখে সিলেটগামী পারাবত ও চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস আটকা পড়েছে।

কুলাউড়া রেলস্টেশন অবরোধ করছেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুলাউড়া রেলস্টেশন অবরোধ করছেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সকাল থেকে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন রেলস্টেশন অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারীরা। এর ফলে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পারাবত এক্সপ্রেস প্রথমে শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন ও পরে কুলাউড়া স্টেশনে আটকে দেওয়া হয়।

একই সঙ্গে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা পাহাড়িকা এক্সপ্রেস মাইজগাঁও রেলস্টেশনে আটকে দেওয়া হয়েছে।

শ্রীমঙ্গল স্টেশনমাস্টার শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা কিছু সময় পারাবত এক্সপ্রেস আটকে রেখেছিল, পরে ছেড়ে দিয়েছে।’

দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে ‘৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন কমিটি’ সিলেট-আখাউড়া রেলপথের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ রেলপথ অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। তাদের প্রধান দাবিগুলো হলো: সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-কক্সবাজার রেলপথে দুটি নতুন আন্তনগর ট্রেন চালু করা। সিলেট-আখাউড়া সেকশনের রেলপথ সংস্কার করে ডুয়েলগেজে উন্নীত করা। সিলেট অঞ্চলে বন্ধ হয়ে যাওয়া রেলস্টেশনগুলো এবং সিলেট-আখাউড়া লোকাল ট্রেন পুনরায় চালু করা। কুলাউড়া স্টেশনে টিকিটের বরাদ্দ বাড়ানো ও কালোবাজারি বন্ধ করা।

সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর কালনী ও পারাবত এক্সপ্রেসের আজমপুর স্টেশন-পরবর্তী যাত্রাবিরতি বন্ধ করা। সব ট্রেনে নতুন ইঞ্জিন ও যাত্রী অনুপাতে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা।অবরোধকারীরা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছি। আমাদের দাবিগুলো যুক্তিসংগত, কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ তা মানছে না। তাই বাধ্য হয়ে আজ আমরা সিলেট বিভাগের রেলপথ অবরোধের ডাক দিয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রেললাইনে হাঁটুপানি, ২ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ল বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও রেললাইনে পানি জমে থাকায় ৮টা ১৫ মিনিটে ছেড়েছে বনলতা এক্সপ্রেস। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও রেললাইনে পানি জমে থাকায় ৮টা ১৫ মিনিটে ছেড়েছে বনলতা এক্সপ্রেস। ছবি: আজকের পত্রিকা

অতিরিক্ত বৃষ্টিতে রেললাইনে পানি জমে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন। আজ শনিবার (১ নভেম্বর) বনলতা এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টিতে রেললাইনে পানি জমে থাকায় ৮টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে গেছে।

জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্টেশনমাস্টার শহিদুল আলম বলেন, শনিবার সারা রাত ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এতে স্টেশনের রেললাইনে হাঁটুসমান পানি জমে যায়। এমনকি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে ছিল। তাই বনলতা এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পরে ছেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অবশেষে নতুন ঠিকানায় ১০০ সাজাপ্রাপ্ত বন্দী

খুলনা প্রতিনিধি
নতুন কারাগারে কয়েদিদের রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুল দিয়ে বন্দীদের বরণ করেন কারা উপমহাপরিদর্শক মনির আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
নতুন কারাগারে কয়েদিদের রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুল দিয়ে বন্দীদের বরণ করেন কারা উপমহাপরিদর্শক মনির আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

খুলনার পুরোনো কারাগার থেকে নতুন ঠিকানায় গেলেন ১০০ বন্দী। আজ শনিবার বেলা ১১টায় তিনটি প্রিজন ভ্যানে করে ১০০ জন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিকে (পুরুষ) খুলনার আধুনিক কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। নতুন কারাগারে গেলে রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুল দিয়ে বন্দীদের বরণ করেন কারা উপমহাপরিদর্শক মনির আহমেদ। এ সময় খুলনা জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান, জেলার মুনীর হোসাইনসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে বন্দীদের নতুন ঠিকানায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল গত শনিবার (২৫ অক্টোবর)। কিন্তু খুলনার নতুন জেলা কারাগার নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় এই কার্যক্রম এক সপ্তাহ পিছিয়ে যায়। এরই মধ্যে মাটি ভরাটের কিছু কাজ হলেও পুরোপুরি কাজ শেষ হয়নি।

খুলনা জেলা কারাগারের জেলার মুনীর হোসাইন বলেন, ‘আজ শনিবার নতুন কারাগারে ১০০ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দীকে স্থানান্তর করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও বন্দী সেখানে নেওয়া হবে। এ ছাড়া যশোর জেল থেকেও কিছু সাজাপ্রাপ্ত বন্দী নতুন কারাগারে আনা হবে। ফলে খুলনা ও যশোরের কারাগার কিছুটা চাপমুক্ত হবে।’

কারা সূত্র জানায়, নতুন কারাগারের কার্যক্রম শুরু হলেও পুরোনো (বর্তমান) কারাগারেও কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে নতুন কারাগারটি জেলার কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া বর্তমান জেলখানা ঘাট এলাকায় থাকা কারাগারটি মেট্রোপলিটন কারাগার হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।

খুলনায় দুটি কারাগার চলমান রাখার বিষয়ে সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগির এটি গেজেট হিসেবে প্রকাশ করা হলে পৃথক নামে দুটি কারাগার আলাদাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

ওই সূত্র আরও জানায়, কার্যক্রম শুরু হলে দুই কারাগারে জেল সুপার ও জেলার আলাদাভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে এখন বর্তমান কর্মকর্তারা দুটি কারাগারের দায়িত্ব পালন করবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ভৈরব নদের তীরে ১১৩ বছরের পুরোনো খুলনা কারাগারে বর্তমানে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দী আছেন। সেখানে জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে বন্দীদের। তাই খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে নতুন কারাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ হাজার বন্দী থাকতে পারবেন। তবে আপাতত ২ হাজার বন্দী রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।

আজ বেলা ১১টায় তিনটি প্রিজন ভ্যানে করে ১০০ জন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিকে (পুরুষ) খুলনার আধুনিক কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বেলা ১১টায় তিনটি প্রিজন ভ্যানে করে ১০০ জন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিকে (পুরুষ) খুলনার আধুনিক কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

এই নতুন কারাগার নির্মাণের প্রকল্প ২০১১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় ১৪৪ কোটি টাকা। স্থান নির্ধারণ, জমি অধিগ্রহণসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুনে। এরপর ২০১৭ সালে প্রকল্প সংশোধন করলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা এবং কাজ শেষের লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুন। কিন্তু তা আর হয়নি। ২০২৩ সালে ফের প্রকল্প সংশোধন করলে ব্যয় বেড়ে হয় ২৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সময় বাড়ানো হয় আটবার।

প্রকল্প অফিস থেকে জানা গেছে, নতুন এই কারাগার নির্মাণ করা হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দীদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্ক শেড থাকছে। একইভাবে বন্দীদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে। আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল গ্রন্থাগার, খাবারের কক্ষ, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দীদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এই ওয়ার্ডে সাধারণ নারী বন্দী থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতিচর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দীদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্ক শেড, বিনোদনকেন্দ্র ও নামাজের ঘর থাকবে।

কারা সূত্র জানায়, বন্দীদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানা প্রাচীর রয়েছে। একশ্রেণির বন্দীদের অন্য শ্রেণির বন্দীর সঙ্গে মেশার সুযোগ নেই। ভেতরে শুধু প্রাচীর রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার। এ ছাড়া ড্রেন, ফুটপাত, পয়োবর্জ্য শোধনকেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা, দুটি পুকুর ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে মাটি ভরাটের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এ ছাড়াও কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত