Ajker Patrika

হালনাগাদ হবে ১০-১৫ দিনে

নতুন নকশার টাকা চিনছে না মেশিন

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঈদুল আজহার আগে নতুন নকশার নোট ইস্যু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারে ছাড়া নতুন নকশার ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোটের বৈশিষ্ট্য হালনাগাদ না করায় ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন), সিআরএম (ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন) ও মেট্রোরেলের ভেন্ডিং মেশিনে নতুন নোট জমা বা ব্যবহার করতে পারছেন না গ্রাহকেরা। কোনো কোনো ব্যাংক সমস্যাটির সমাধান করতে পারলেও অধিকাংশ ব্যাংক তা পারছে না। নতুন নোট নিয়ে এ ভোগান্তি পুরোপুরি কাটতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সিআরএম ও অন্যান্য স্বয়ংক্রিয় মেশিনে নতুন নোট শনাক্ত করার জন্য সফটওয়্যার আপডেট প্রয়োজন। ইতিমধ্যে মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ শুরু হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হবে বলে জানানো হয়েছে।

রাজধানীর গোপীবাগে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের গ্রাহক প্রশান্ত কুমার বলেন, ‘আমার কাছে ১২ হাজার টাকার নতুন নোট, আর ৩ হাজার টাকার পুরোনো নোট আছে। একজনকে এই টাকা পাঠাতে সিআরএম মেশিনের কাছে যাই। বারবার চেষ্টা করি। কিন্তু নতুন নোট গ্রহণ করছে না। ফলে টাকা শোধ করতে পারলাম না। ব্যাংকের নির্ধারিত হটলাইনে ফোন দিলে সেখান থেকে জানানো হয় যে সিআরএম বিদেশ থেকে আনা। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে টাকার বৈশিষ্ট্য হালনাগাদ না করায় এ সমস্যা হচ্ছে।’

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কার্ড বিভাগের প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো নতুন নোটের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য ব্যাংকগুলোকে দেয়নি। কিছু ব্যাংক এক মাস আগেই পরীক্ষামূলকভাবে ৫ বান্ডিল (২,০০০টি)

৫০০ বা ১,০০০ টাকার নতুন নোট চেয়েছিল। কারণ নকশা, আকার, সিকিউরিটি থ্রেড ও রং পরিবর্তনের কারণে এসব নোট বর্তমানে জাপানে সিমুলেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, যা ২-৩ মাস সময় নিতে পারে। এটিএম বা সিআরএম মেশিনে স্ক্যান ও স্কোরিং সিস্টেমে–নোটটির নির্ধারিত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ১০০% মিললে তবেই মেশিন সেটিকে গ্রহণ করে। এই টেমপ্লেট তৈরি করে জাপানি বহুজাতিক কোম্পানি হিটাচি বা মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এনসিআর-এর মতো কোম্পানিগুলো। এসব কোম্পানির কাছে নোটের নমুনা পাঠাতে হয় বা তাদের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসে সরাসরি পরীক্ষা করেন। আর সব এটিএমে একযোগে টেমপ্লেট আপডেট করা সম্ভব নয়।’

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ‘আমি রেলের ভেন্ডিং মেশিনে ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোট দিয়ে টিকিট কাটতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হই। যেখানে পাশের কাউন্টারে গিয়ে হাতে হাতে টিকিট করি। লাইনে দাঁড়িয়ে সময় অপচয় হয়েছে। কবে সমাধান হবে তা জানেন না কর্তব্যরত টিকিট বিক্রেতা।’

অপর এক যাত্রী শাহনাজ চৌধুরী বলেন, ‘আমি অগ্রণী ব্যাংকে আছি। র‍্যাপিড পাস ভুল করে বাসায় ছেড়ে এসেছি। ফার্মগেটে নতুন টাকা দিয়ে টিকিট করতে পারিনি।’

কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, এটিএমে বুথে এখনো নতুন নোট দেওয়া হয়নি বললেই চলে। সে জন্য সমস্যা খুব হচ্ছে না। অভিযোগও কম। কিন্তু সিআরএম মেশিনে সফটওয়্যার আপডেট না হওয়ায় মেশিন নতুন নোটকে শনাক্ত করতে পারছে না। ফলে নতুন টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন হাজার হাজার গ্রাহক।

যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সিআরএমে সমস্যাটা হচ্ছে। টাকা যখন জমা দেবেন, তখন মেশিন নতুন নোট চিনতে পারতেছে না। আমরা অনেকে ভেন্ডরকে বলেছি, ১০-১৫ দিন সময় লাগবে হয়তো।’

ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিআরএমের ক্ষেত্রে যে সমস্যা হচ্ছে সে জন্য আমরা আমাদের ভেন্ডরকেও যুক্ত করেছি। আশা করতেছি, এক সপ্তাহের ভেতরে এটা হয়তো সমাধান হয়ে যাবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটিএম বা সিআরআম মেশিনের যে সফটওয়্যার তাতে কিন্তু নোটটাকে চেনাতে হয়। অন্যথায় সফটওয়্যার এটাকে শুধু কাগজ হিসেবে গণনা করবে এবং কাগজ সেখানে ইনসার্ট করার কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে সে এটাকে বাতিল করবে। মূলত নতুন নকশার নোটের বৈশিষ্ট্য সিস্টেমে হালনাগাদ করা জরুরি। ব্যাংকগুলো নিজেদের গরজে দ্রুত সমাধান করবে বলে আশা করা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত