Ajker Patrika

শ্রমিক আন্দোলনে উত্তপ্ত গাজীপুর, ২ কারখানায় ভাঙচুরসহ ১৭ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ২১: ৪৩
শ্রমিক আন্দোলনে উত্তপ্ত গাজীপুর, ২ কারখানায় ভাঙচুরসহ ১৭ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ

বেতন বাড়ানোর দাবিতে ৮ দিন ধরে চলছে পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলন। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে গাজীপুরের অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানা বন্ধ থাকলেও আজ মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকেরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এ কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সকাল থেকে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে বেলা ৩টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

আন্দোলন চলাকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২ কারখানায় হামলা, ভাঙচুর, ১৭টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ বক্সে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি ও ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

ফায়ার সার্ভিস ও কারখানা কর্তৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দুর্বৃত্তরা প্রথমে ফরটিস লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানার ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। পরে কারখানার কাছেই থাকা ৪টি মোটরসাইকেল, তিনটি ব্যক্তিগত গাড়ি, একটি মাইক্রোবাসে অগ্নিসংযোগ করে। পরে দুর্বৃত্তরা একই এলাকার লিডা টেক্সটাইল লিমিটেড নামের আরেকটি কারখানায় প্রবেশ করে। সেখানেও তারা ২টি কনটেইনার, একটি মিনিবাস ও ৪টি প্রাইভেট কারে অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর দমকল বাহিনীর একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় বেলা আড়াইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

লিডা টেক্সটাইলের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে। আমাদের ধারণা এটা শ্রমিকদের কাজ নয়। বহিরাগতরা কোনো উদ্দেশ্যে কারখানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে।’ 

কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা ইফতেখার রায়হান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের সময় দুর্বৃত্তরা কারখানায় হামলা চালিয়ে ভেতরে থাকা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে এবং ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। 

এদিকে, কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রার পল্লিবিদ্যুৎ এলাকায় দুপুর দেড়টার দিকে একটি মালবাহী ট্রাক ও পিকআপে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অন্যান্য দিনের মতো মঙ্গলবার সকাল থেকে পোশাক শ্রমিকেরা বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হয়ে মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। আন্দোলনকারীরা দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রার পল্লিবিদ্যুৎ এলাকায় একটি মালবাহী ট্রাক ও পিকআপে আগুন দেয়। আগুনে ট্রাকের সামনে অংশ পুড়ে গিয়ে মালামালে আগুন লাগে। এর কিছুক্ষণ পরই অপর একটি পিকআপে আগুন দেয় উত্তেজিত তারা। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিলে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে মহাসড়ক থেকে সরে যায়। এরপর পুলিশ শ্রমিকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। 

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পোশাক শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শ্রমিকদের ভাঙচুর না করে শান্ত থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে।’ 

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক বাজার এলাকায় অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়িতে মঙ্গলবার সকালে হামলা করা হয়েছে। উত্তেজিত শ্রমিকেরা ফাঁড়ির ফটক, কার্যালয়ের কাচ ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর করেছে বলেছে জানা গেছে। তবে জেলা পুলিশ ভাঙচুর ও আগুনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। 
 
এসব বিষয়ে গাজীপুর জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা এখন সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করছি। সকল ঘটনার অনুসন্ধান চলছে। যারা এসব অপরাধে জড়িত বলে শনাক্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

অপরদিকে, মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নেয় শ্রমিকেরা। গাজীপুর মহানগর নলজানী, চান্দ্না চৌরাস্তা, ভোগড়া, বাসন সড়ক এলাকায় শ্রমিকেরা অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শিল্প পুলিশ, মহানগর পুলিশ ও জেলা পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি র‍্যাবও টহল দেয়। 

গাজীপুর মহানগর পুলিশের বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু সিদ্দিক জানান, শ্রমিকেরা চন্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া বাইপাস এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করছে। তবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তেমন যানবাহন নেই। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। 

এদিকে, বেতন বাড়ানোর চলমান আন্দোলন বন্ধ করে আজ (বুধবার) থেকে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গাছা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনে জেলা ও মহানগরীর ৪৩টি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ আহ্বান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত