Ajker Patrika

হাতকড়া পরিয়ে ট্রাইব্যুনালে, বিচারকের কাছে অভিযোগ দিলেন শাজাহান খান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ২১: ৫৪
প্রিজনভ্যান থেকে নামার পর হাতকড়া পরানো হলে ক্ষুব্ধ হন সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
প্রিজনভ্যান থেকে নামার পর হাতকড়া পরানো হলে ক্ষুব্ধ হন সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

হাতকড়া পরানোয় ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে। আজ রোববার (২০ এপ্রিল) শুনানির সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই অভিযোগ করেন পুলিশের দুই সদস্য।

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ রোববার আওয়ামী লীগের ১৭ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানির একপর্যায়ে ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের হাতকড়া পরানোর বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন।

হাতকড়া পরানোর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে আদালত দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ডাকেন। এ সময় এজলাসের দিকে এগিয়ে যান দুই পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁরা আদালতকে বলেন, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশ অনুযায়ী গাড়ি থেকে নামানোর সময় হাতকড়া পরানো হয়।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আসামিদের আনা-নেওয়া কারা কর্তৃপক্ষের বিষয়। তারা যেভাবে আনে। গাড়িতে তুলে হাতকড়া খোলা হয়। এটিই প্র্যাকটিস। আসামিকে হাতকড়া পরিয়ে তোলা হবে কি না, তা সিদ্ধান্ত দেয় জেল কর্তৃপক্ষ। আসামিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বা নিরাপত্তাঝুঁকি থাকলে হাতকড়া পরানো হয়। জিয়াউল আহসান হেলমেট ছুড়ে মেরেছেন। এটা দায়িত্বরত পুলিশদের প্রতি হুমকি।

এ সময় শাজাহান খান বলেন, ‘গাড়ি থেকে নামানোর আগে হাতকড়া ও হেলমেট পরানো হয়েছে। আমি মুক্তিযোদ্ধা। আমার পরিবারে ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা। এখানে আরও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র নেতা আছেন। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমাদের আগেও ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছিল। কিন্তু হাতকড়া পরানো হয়নি। আজ এজলাসেও হাতকড়া পরিয়ে আনা হয়। আমরা মর্যাদা পেতে চাই। আপনি বিষয়টি দেখবেন।’

এ সময় তাজুল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন। আসামিরা পুলিশ কর্মকর্তাদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেছেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়।

তখন চিৎকার করে প্রতিবাদ করেন কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এ রকম কোনো কথা হয়নি।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘আপনারা মন্ত্রী ছিলেন। আপনারা ব্যবহার জানেন। পুলিশ জেল কোড অনুযায়ী করবে। আপনাদের ব্যবহার ঠিক করতে হবে। পুলিশকে বলব, “শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নিবেন, বাড়াবাড়ি করবেন না।”’

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আসামি হিসেবে মামলার কাগজপত্র পাওয়ার অধিকার রাখি। আমাদের যাতে মামলার কাগজপত্র দেওয়া হয়।’

এ সময় চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘তিনি সাবেক আইনমন্ত্রী। এই ট্রাইব্যুনালের আইন তিনি ভালো করেই জানেন। অভিযোগের কপি আসামিদের আইনজীবীদের দেওয়া হয়েছে। আর সব কাগজপত্র পাবেন ফরমাল চার্জ দাখিলের পর। এভাবেই ২০১০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত হয়েছে।’ আদালত বলেন, ‘আমরা দেখব আইন অনুযায়ী যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

পরে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে সময় চান চিফ প্রসিকিউটর। ট্রাইব্যুনাল আগামী ২০ জুলাই দিন ধার্য করে দেন।

এই মামলার আসামিদের মধ্যে যাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় তাঁরা হলেন আমির হোসেন আমু, মো. আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুক খান, দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, শাজাহান খান, জুনাইদ আহমেদ পলক, কামাল আহমেদ মজুমদার, সালমান এফ রহমান ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিম, মো. জাহাংগীর আলম এবং এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

গাড়ি থেকে নামার পর হাতকড়া পরানো হলে ক্ষুব্ধ হন সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
গাড়ি থেকে নামার পর হাতকড়া পরানো হলে ক্ষুব্ধ হন সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

এদিকে জুলাই-আগস্টের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ২৪ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে এই মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করলে তা মঞ্জুর করেন আদালত।

এ ছাড়া গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মামলায় প্রতিবেদন দিতে আগামী ২৪ জুন দিন ধার্য করা হয়েছে। এই মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা আসামিদের মধ্যে কেবল সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল হাসান গ্রেপ্তার আছেন। তাঁকে রোববার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত