Ajker Patrika

কেয়া গ্রুপের দুই কারখানার ২২০০ শ্রমিক ছাঁটাই, প্রতিবাদে বিক্ষোভ

গাজীপুর প্রতিনিধি
কেয়া গ্রুপের বন্ধ ঘোষণা করা দুই কারখানা থেকে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ। আজ সোমবার গাজীপুরের কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
কেয়া গ্রুপের বন্ধ ঘোষণা করা দুই কারখানা থেকে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ। আজ সোমবার গাজীপুরের কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরে কেয়া গ্রুপের বন্ধ ঘোষিত নিট কম্পোজিট ডিভিশন ও এমপি সোয়েটারস লিমিটেডের কারখানার ২ হাজার ২০৩ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। আগামী ১ মে থেকে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত তারিখের দুই মাস আগে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে আজ সোমবার সকালে মহানগরীর কোনাবাড়ী থানার জরুন এলাকায় কর্মীরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন।

গত ২ জানুয়ারি কেয়া গ্রুপের মালিকপক্ষ এক নোটিশের মাধ্যমে চারটি কারখানা আগামী ১ মে থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করে। বন্ধের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাজার অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকের সঙ্গে হিসাবের অমিল, কাঁচামাল অপর্যাপ্ততা ও কারখানার উৎপাদন কার্যক্রমের অপ্রতুলতার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব কারখানায় পাঁচ-ছয় হাজার শ্রমিক রয়েছেন। বন্ধের নোটিশে শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের সব পাওনা আগামী মে মাসে পরিশোধ করার কথা বলা হয়েছে।

এই অবস্থায় আজ সকালে কারখানার চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ দিয়ে ২ হাজার ২০৩ জন শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়।

নোটিশে বলা হয়, ‘এতদ্দ্বরা কেয়া কসমেটিকস্ লিমিটেড (নিট কম্পোজিট ডিভিশন), এমপি সোয়েটারস লিমিটেড, জরুন, কোনাবাড়ী, গাজীপুরের সব শ্রমিক ও কর্মচারীকে অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে ১২০ দিনের নোটিশ প্রদান করে আগামী ১ মে ২০২৫ তারিখ থেকে কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যাংকিং জটিলতা নিরসন না হওয়ায় নিম্নে উল্লেখিত শ্রমিক ও কর্মচারীগণকে পূর্বঘোষিত (৩১ ডিসেম্বর ২০২৪) তারিখের নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে দুই মাস আগে ১ মার্চ ২০২৫ তারিখ থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়া হলো।’

নোটিশে আরও বলা হয়, ‘অব্যাহতি পাওয়া শ্রমিক ও কর্মচারীদের শ্রম আইন অনুযায়ী সব পাওনা পরবর্তী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে দেওয়া হবে। জটিলতার সমাধান হলে অব্যাহতি পাওয়া শ্রমিক ও কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অন্তঃসত্ত্বা নারীরা এই নোটিশের বাইরে থাকবেন।’

কেয়া গ্রুপের বন্ধ ঘোষণা করা দুই কারখানা থেকে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ। আজ সোমবার গাজীপুরের কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
কেয়া গ্রুপের বন্ধ ঘোষণা করা দুই কারখানা থেকে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ। আজ সোমবার গাজীপুরের কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

শ্রমিকেরা আজ সকালে কাজে যোগ দিতে এসে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দেখতে পান। পরে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শ্রমিকেরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা কেয়া কসমেটিকস্ কারখানার প্রধান ফটকে গিয়েও বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও কোনাবাড়ী থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করে।

শ্রমিকেরা জানান, আগে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ করে এতগুলো শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। মালিকপক্ষ ছাঁটাই করা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করেনি। এ কারণে শ্রমিকেরা পাওনা আদায়ের জন্য বিক্ষোভ করছেন।

এ বিষয়ে কেয়া গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক সাবিনা ইয়াসমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শ্রম আইন অনুযায়ী ছাঁটাই করা সব শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করা হবে। আইনে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ আগামী ২৪ মার্চ পাওনা পরিশোধ করবে।’

সাবিনা ইয়াসমিন আরও বলেন, ‘ব্যাংকিং জটিলতার কারণে আমরা অনেক দিন থেকেই নানা সমস্যায় আছি। ব্যাংক আমাদের সঙ্গে হিসাব নিয়ে কথা বলছে না। তারপর কারখানার মালিক এখন জেলে। কারখানার মালিকের মেয়ে জানিয়েছেন, সময়মতো সব পাওনা পরিশোধ করা হবে।’

কেয়া গ্রুপের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এত দিন শ্রমিকেরা কাজ করলেও এখন কারখানার সব শ্রমিকের দাবি, কারখানা চালু থাকলে সবাই কাজ করবেন, নাহলে কেউ কাজ করবেন না। এখন ম্যানেজমেন্ট কী করবে? শ্রমিকেরা এই মুহূর্তে বেতন চান, এটা কীভাবে সম্ভব?’

গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপির) কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে কাজ করছি। শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত