Ajker Patrika

মুন্না এখন মাস্ক বিক্রি করেন নীলক্ষেতে

ফজলুল কবির, ঢাকা
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২১, ২২: ১১
মুন্না এখন মাস্ক বিক্রি করেন নীলক্ষেতে

ঝাঁজালো রোদ। সূর্যের দাপটে সবারই নাভিশ্বাস উঠছে। শরতের স্বচ্ছ আকাশ একদিকে স্বস্তি দিচ্ছে, মন ভালো করে দিচ্ছে। অন্যদিকে ঝাঁজালো রোদের কারণে গরমে নাকাল হতে হচ্ছে কর্মব্যস্ত মানুষদের। বিশেষত রাস্তাতেই যাদের কাজ, তাদের অবস্থা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার দরুন গোটা শহরে গিট্টু জ্যাম। পরীক্ষার্থী আর অভিভাবকদের ভিড় বহুদিন পর চোখে পড়ল রাস্তার এখানে-সেখানে। 

এবার অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য ঢাকার বাইরে শিক্ষার্থীদের কষ্ট করে রাজধানীতে আসতে হয়নি। নিজ নিজ বিভাগীয় শহরেই তাঁদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে আগের মতো ভিড় নেই। দীর্ঘ লকডাউনের কারণে যানজটের সঙ্গে চলার যে অভ্যস্ততা, তাতেও বোধ হয় ছেদ পড়েছে। নাকি যানজটই বেড়েছে আগের চেয়ে, কে জানে। শহরবাসী শুধু জানে, রাজধানীজুড়ে বিস্তর খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এসব দেখে পথে যেতে যেতে একে অন্যকে বলতে শোনা যাচ্ছে—আর কয়টা ফ্লাইওভার হইব? 

সে যাক, বহুদিন নীলক্ষেত যাওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় তো খুলছে। ভর্তি পরীক্ষাও হয়ে গেল প্রথম কিস্তি। এদিকে অমর একুশে ও শহীদুল্লাহ হলে কিছুটা জোর করেই ঢুকে গেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অদ্ভুত নির্দেশনা মানতে পারছেন না। নীলক্ষেতকে সজীব করে তোলার সব উপাদান তো হাজির। তাহলে একেবারে সুনসান হয়ে পড়া নীলক্ষেতও কি জেগে উঠল পুরোনো মহিমায়। দেখতেই যাওয়া। 

নীলক্ষেত মোড় থেকে নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার পথে ফুটপাতেই মিলত নানা পুরোনো বইয়ের পসরা। কিন্তু এবার গিয়ে দেখা গেল অন্তত আট-দশটি দোকানে এখন আর নতুন বা পুরোনো কোনো বই-ই নেই। এই দোকানিদের কেউ সেলফি স্টিক, কেউ হেডফোন, কেউ মোবাইল স্ট্যান্ড (অনলাইন ক্লাস ও নানা আলোচনা ও সভার জন্য এটি এখন বেশ জনপ্রিয়), কেউ আবার মাস্ক, গ্লাভস ইত্যাদি বিক্রি করছেন। 

ফুটপাতের বাইরের অংশে থাকা দোকানগুলোর অধিকাংশই খালি; মানে পণ্য থাকলেও বিক্রেতা নেই। বোঝা গেল প্রখর রোদ থেকে বাঁচতেই তাঁরা বিপরীত দিকের দোকান বা মার্কেটের ভেতরে দাঁড়িয়ে দোকানের দিকে কড়া নজর রাখছেন। কড়া নজর যে, তা যে কেউ এসব দোকানের একটি পণ্য ছুঁয়ে দেখলেই বুঝবেন। সঙ্গে সঙ্গে একজন হাজির হয়ে বলবেন—এটাও দেখতে পারেন কিংবা আরও রং আছে। অথবা নিতান্ত স্বল্পভাষী হলে চুপচাপ দাঁড়াবে পাশ ঘেঁষে। 

নানা রকম মাস্কসহ একটি দোকান দেখে দাঁড়াতে হলো। যথারীতি দোকানি নেই। একটি তুলে হাতে নিতেই হাজির হলেন—নাম, মুন্না। ‘আর কিছু নাই? শুধু মুন্না?’ ‘নাহ, শুধু মুন্না’, বলেই হাসলেন। প্রচণ্ড গরমে ঘামছেন রীতিমতো। মাথায় একটি রুমাল বাঁধা। দোকানের সঙ্গেই একটা লাঠিতে বড় একটা ছাতা বাঁধা। তারপরও ওপারেই দাঁড়িয়েছিলেন। আলাপে আলাপে বললেন, দুটি দোকান তাঁর। ছিলেন বিদেশেও। মূলত বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের নানা ক্লাস অ্যাসাইনমেন্টের জন্য অর্ডারি মডেল বানিয়ে দেন। আরেকটি কম্পিউটারের দোকান। কিন্তু করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে এখন ফুটপাতেই মাস্ক বিক্রি করছেন। দোকান দুটি ছাড়েননি। আছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি না খুললে সেগুলোয় তেমন ব্যবসা হবে না বলে এই ব্যবস্থা। বললেন, ‘কাজ তো কাজই। এর আবার ছোট-বড় কী? বিদেশে ছিলাম। তারা সব কাজকেই দাম দেয়। আমাদের মতো না।’ বেশ সুখী মনে হলো মুন্নাকে। জানালেন, ক্যাম্পাসগুলো খুললেই নিজের পুরোনো ব্যবসা পুরোপুরি চালু করবেন। তত দিন অপেক্ষা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত