Ajker Patrika

আজ গোপালগঞ্জ মুক্ত দিবস

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ গোপালগঞ্জ মুক্ত দিবস

আজ সোমবার গোপালগঞ্জ মুক্ত দিবস। তৎকালীন মহকুমা গোপালগঞ্জ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে এই দিনে পাক হানাদারের হাত থেকে মুক্ত হয়। গোপালগঞ্জে পাক হানাদারদের হাত থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ থেকেই যুদ্ধ শুরু হয়। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল গোপালগঞ্জ।

জানা যায়, মুসলিম লীগ নেতাদের সহযোগিতায় ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল গোপালগঞ্জে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রবেশ করে মুক্তিকামী মানুষের ওপর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ শুরু করা হয়। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ (বর্তমানে) সংলগ্ন জয় বাংলা পুকুর পাড়ে গড়ে তোলে মিনি ক্যান্টনমেন্ট। পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাপ্টেন ফয়েজ সেখানে (বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাস ভবন) অবস্থান করতেন। তাঁরা প্রথমে শহরের ব্যাংক পাড়ায় বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়ি (বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়) পুড়িয়ে দেয়। এরপর পাকিস্তানি সৈন্যরা ১০ থেকে ১২টি দলে বিভক্ত হয়ে শহরের হিন্দু অধ্যুষিত স্বর্ণপট্টি, সাহাপাড়া, সিকদারপাড়া, চৌরঙ্গী এবং বাজার রোডে লুটপাট করে আগুন দেয়। এতে প্রায় এক হাজার ঘরবাড়ি পুড়ে যায়। পরে তাঁরা হত্যা আর নারী ধর্ষণ শুরু করে। 

পাকিস্তানি হানাদাররা মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী মানুষ ও সংগঠকদের উপজেলা পরিষদের মিনি ক্যান্টনমেন্টে ধরে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে গণকবর দেয়। এক সময় ৬ ডিসেম্বর সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে বিভক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করতে শুরু করে। চারিদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করতে করতে এগিয়ে আসে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পাক হানাদার বাহিনীর গোপালগঞ্জের মিনি ক্যান্টনমেন্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। 

গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করবে রাজাকারদের মাধ্যমে এমন সংবাদ জানতে পেরে পাক সেনারা ক্যাপ্টেন ফয়েজের নেতৃত্বে ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ (বর্তমানে) সংলগ্ন জয় বাংলা পুকুর পাড়ের মিনি ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালিয়ে যায়। মেজর সেলিমের অধীনে পাক হানাদার বাহিনীর একটি দল ঢাকায় চলে যায় ও ক্যাপ্টেন ফয়েজের নেতৃত্বে অন্য একটি দল চলে যায় বর্তমানের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়ার ওয়ারলেস ক্যাম্পে।

পরদিন ৭ ডিসেম্বর ভোরে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী মানুষ ও সর্বস্তরের জনগণ শহরে মিছিল বের করে বিজয়ের উল্লাসে মেতে ওঠেন। সেই সঙ্গে গোপালগঞ্জ শহর ও এর আশপাশের এলাকা পাক হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে গোপালগঞ্জ, মাঝিগাতী, দিগনগর সুকতাইল, ভাটিয়াপাড়া, ফুকরা, রাজাপুর, বৌলতলী, সাতপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হয়। 

আজ দিবসটি উপলক্ষে গোপালগঞ্জে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। শহরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অফিসের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মুক্তিযোদ্ধারা। সকালে ৭১ এর বধ্যভূমি (জয়বাংলা পুকুর পাড়) স্মৃতি সৌধ ও শহরের লঞ্চঘাটের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে জেলা প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। বিকেল ৩টায় শহরের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে আঞ্চলিক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

ডিটারজেন্ট, তেল ও সোডা দিয়ে ভেজাল দুধ তৈরি, সরবরাহ মিল্ক ভিটায়

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান—৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

১৫৮ বছর আগে হারানো আলাস্কাতেই কি ইউক্রেনের জমি লিখে নেবে রাশিয়া

জট খুলছে ব্ল্যাংক স্মার্ট কার্ড ক্রয়ের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত