Ajker Patrika

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষয়ক্ষতি ৫ কোটি টাকার বেশি, সহিংসতায় বহিরাগতরা

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষয়ক্ষতি ৫ কোটি টাকার বেশি, সহিংসতায় বহিরাগতরা

দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগরের (জাবি) মুখরিত ক্যাম্পাসে এখন সুনসান নীরবতা। কোটা আন্দোলনে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত ও হল বন্ধ হলে চিরচেনা রূপ হারায় জাবি। তবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভাঙচুরের ক্ষতচিহ্ন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, সহিংসতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকারও বেশি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, জাবিতে সহিংসতা ও ভাঙচুরে জড়িত বহিরাগতরা। 

আজ বুধবার (৩১ জুলাই) সরেজমিনে রাজধানীর অদূরে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, হলগুলোতে ঝুলছে তালা। শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও সকল অফিস খোলা, তাই উপস্থিতি চোখে পড়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। হল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও হাতে গোনা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও প্রতিদিন তাঁদের কর্মসূচি শেষ করে ফিরে যান। 

প্রত্যয় স্কিমকে কেন্দ্র করে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের আগ থেকেই শিক্ষকদের আন্দোলনে বন্ধ ছিল ক্লাস। এর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে অনির্দিষ্টকালের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় এখন ধুধু মরু। 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোটা আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বাসভবন ও বিভিন্ন হলে ভাঙচুর করা হয়েছে। উপাচার্যের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সসহ ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি গাড়ি। এ ছাড়া নতুন প্রশাসনিক ভবনেও চোখে পড়েছে ভাঙচুরের চিহ্ন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বলছে, উপাচার্যের ১টি গাড়ি, ৩টি অ্যাম্বুলেন্স, ২টি মাইক্রোবাস ও ১টি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া সিসি ক্যামেরাগুলো ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি ২ লাখ টাকা। তবে এর পরিমাণ আরও বাড়তেও পারে। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার বলেন, ‘আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো ফাইনাল করতে পারিনি, তবে ৫ কোটির ওপরে। আমার হাতে সব হিসাব আসলে আমি সঠিক বলতে পারব। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বের করেছি। ব্যক্তিগত কারও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকলে আমরা তো সেগুলো হিসাব করতে পারব না। কার মোটরসাইকেল ভেঙেছে, কার রুমে কি হয়েছে, না হয়েছে— এগুলো আমাদের কিছু বলে নাই। সেগুলো বের করাও মুশকিল।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদের বাইরে ব্যক্তিগত সম্পদও ক্ষতির মুখে পড়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও শতাধিক। এ ছাড়া আহত হয়েছেন শিক্ষক ও সাংবাদিকরাও। 

এত কিছুর পরে সকলের প্রিয় ক্যাম্পাসে এখন রাজ্যের নীরবতা। যেন সবুজ প্রকৃতির কাছে ইট পাথরের দালানগুলো নিজেকে চুপ করে সঁপে দিয়েছে। ক্যাম্পাসের এই অচেনা রূপ নিয়ে কথা হয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সজীব আহমেদ বলেন, ‘এই পরিস্থিতি আমরা কখনই আশা করি না। ক্যাম্পাস সব সময় মুখর থাকবে ছাত্র-ছাত্রীদের আড্ডায়। ট্রান্সপোর্টে কোনো লোকজন নাই, বটতলায় সকল দোকান বন্ধ। আমাদের বাইরে থাকতে হচ্ছে। ক্যাম্পাসে যে মরুর মতো পরিস্থিতি, তা আমরা আসলে আদৌ দেখতে চাইনি। আমরা চাই দ্রুত ক্লাস শুরু হোক, ক্যাম্পাস খুলুক।’ 

ক্যাম্পাসে ভাঙচুর কারা করেছে জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে ছাত্রজনতা। গণআন্দোলন হওয়ায় এখানে নানা ধরনের নানা মোটিভের মানুষ যুক্ত হয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ওপর আঘাত কাম্য নয়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী হিসেবে তা আমরা কখনো প্রত্যাশাও করি না। তবে নানা ধরনের মানুষ থাকায় এর মধ্যে থেকে কেউ এমন করে থাকতে পারে। তাঁদের মধ্যে দুরভিসন্ধি থাকতে পারে আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য। এই দায়ভার কখনই ছাত্রসমাজ নেবে না। এটা যারা করেছে তাঁদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’ 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন শান্তিপূর্ণই ছিল। প্রথম থেকেই আমাদের কোনো কর্মসূচিতে কোনো সহিংসতা ছিল না। আন্দোলন বড় আকার ধারণ করলে ভিন্ন দলের ভিন্ন মতের মানুষ প্রবেশ করে। সেটা কিন্তু কন্ট্রোল করা সম্ভব হয় না। যখন আন্দোলন শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল তখন যদি আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হতো তাহলে কিন্তু দেশে এত সহিংসতা হতো না বলে আমি মনে করি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কোথাও কোনো ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও হয়নি। অনুপ্রবেশকারীরাই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এই কাজ করেছে।’  

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাসহ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ও ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান শিক্ষকদের। 

জাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. শাহেদ রানা বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যেই অরাজক পরিস্থিতি দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তাঁর অংশ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়েছে। এখানে বিভিন্ন হলে, প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুর হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-সাংবাদিক অনেকেই আহত হয়েছেন। আমাদের এক সহকর্মী ডান চোখে আঘাত পেয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। দেশের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনো স্বাভাবিক হয়নি। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হোক। শিক্ষার্থীদের হলগুলোতে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেগুলো আগে ঠিক করে, শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে আমার মনে হয় আগের পরিবেশ ফিরে আসতে পারে। এ ছাড়া সব পক্ষের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের আলোচনা করা প্রয়োজন যেন পরবর্তীতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হোক।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, অরাজকতা সৃষ্টিতে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল বহিরাগতরা। ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লাহহিল কাফি বলেন, ‘বহিরাগত ও নৈরাজ্যকারীরা প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে। জাহাঙ্গীরনগরে যে সহিংসতা ও ভাঙচুর হয়েছে এটা মূলত বহিরাগতরা সংঘটিত করেছে। শিক্ষার্থী ভাইবোনকে সতর্ক থাকতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেন বহিরাগতরা প্রবেশ করতে না পারে, যদি কেউ প্রবেশ করে তাকে যেন চিহ্নিত করতে পারে সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও এ ধরনের ব্যবস্থাপনা থাকা প্রয়োজন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধের দাবিতে রাজশাহীতে সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ০৫
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিধ্বংসী মাছ ধরার সরঞ্জাম বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনে জেলেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিধ্বংসী মাছ ধরার সরঞ্জাম বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনে জেলেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহার বন্ধের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে জেলেরা এই কর্মসূচির আয়োজন করেন।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, জলাভূমির দেশীয় মাছ ও জলজ প্রাণবৈচিত্র্যের ওপর চায়না দুয়ারি জালের ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে। দেশীয় মাছের প্রজনন, বৃদ্ধি এবং জেলে সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা রক্ষায় এই জালসহ সব ক্ষতিকর মাছ ধরার বিদেশি সরঞ্জাম দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০ এবং মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৮৫ অনুযায়ী চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ। তবু কিছু বাণিজ্যিক মৎস্যজীবী এই জাল ব্যবহার করে নদী, খালবিলের দেশীয় মাছ ধ্বংস করছেন এবং ঐতিহ্যবাহী জেলে সম্প্রদায়কে জীবিকার সংকটে ফেলছেন। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বক্তারা অভিযোগ করেন, এই জালের কারণে শুধু মাছ নয়, জলজ বাস্তুতন্ত্রের অন্যান্য প্রাণী; যেমন ব্যাঙ, কচ্ছপ, পাখি ও জলজ উদ্ভিদ হুমকির মুখে পড়েছে। রাসায়নিক ও কীটনাশকের অতি ব্যবহার এবং চায়না দুয়ারি জালের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে জলজ পরিবেশ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জেলেরা বলেন, চায়না দুয়ারি বা কারেন্ট জাল বন্ধ না করলে দেশীয় মাছ এবং জলজ প্রাণবৈচিত্র্য পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন গোকুল মথুরা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, গ্রিন কোয়ালিশনের রাজশাহীর আহ্বায়ক মাহবুব সিদ্দিকী, বারসিকের রাজশাহী আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, জুলাই-৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক মাহমুদ জামান কাদেরী, আদিবাসী যুব পরিষদের রাজশাহী জেলার সভাপতি উপেন রবিদাস, সমাজকর্মী সম্রাট রায়হান, আতিকুর রহমান আতিক প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আমির হামজা। ছবি: সংগৃহীত
আমির হামজা। ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ায় আসরের নামাজ শেষে একটি মসজিদে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজা। তখন রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় স্থানীয় বিএনপি নেতা শাজাহান আলী হান্নানকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল শনিবার বিকেলে সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের বরিয়া জামে মসজিদে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

শাজাহান আলী হান্নান বটতৈল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। এ ছাড়া বরিয়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতিও তিনি।

৩ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, বিকেল সাড়ে ৪টা। ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজা বক্তব্য দিচ্ছেলেন। হঠাৎ শাজাহান আলী হান্নান দাঁড়িয়ে আমির হামজাকে কিছু বলার অনুমতি চান। এ সময় হান্নানকে বলতে শোনা যায়, ‘হুজুর ধর্মীয় আলোচনা যত পারেন করেন, কিন্তু রাজনৈতিক কোনো আলোচনা করবেন না।’

এরপর মসজিদে থাকা মুসল্লিরা উত্তেজিত হন। তাঁরা হান্নানের দিকে তেড়ে যান এবং ধাক্কা দিয়ে মসজিদ থেকে বাইরে বের করে দেন। এ সময় কয়েকজনকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে দেখা যায়। এই ঘটনা নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

বরিয়া জামে মসজিদের সভাপতি ও বিএনপি নেতা শাজাহান আলী হান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মসজিদ কমিটির সভাপতি। মুফতি আমির হামজা মসজিদে আসবেন, সেটাও আমাকে কেউ জানায়নি। আসরের নামাজ শেষে আমির হামজা বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। সভাপতি হিসেবে আমি শুধু রাজনৈতিক আলোচনা বাদ দিয়ে ইসলামিক আলোচনা করতে বলেছিলাম। এতেই মসজিদের ভেতরে থাকা লোকজন আমার দিকে তেড়ে আসেন। আমাকে ধাক্কা দেন।’

শাজাহান আলী হান্নান বলেন, ‘স্থানীয় কয়েকজন ছাড়া মসজিদের ভেতর যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই অপরিচিত। জামায়াতে ইসলামীর লোকজন। যদিও এই ঘটনার পর আমির হামজা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি আমি জেলা বিএনপির সদস্যসচিবকে জানিয়েছি।’

ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘হান্নান ভাই নিজেই ওই মসজিদ কমিটির সভাপতি। তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ প্রতিহিংসামূলক। আর মসজিদে হবে ইসলামিক আলোচনা। সেখানে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হতে পারে না।’

মুফতি আমির হামজা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা গণসংযোগে ছিলাম। ওই মসজিদে নামাজ পড়ার পর ইমাম সাহেব সালাম দিতে বললেন। এক থেকে দেড় মিনিটের মাথায় উনি (শাজাহান আলী হান্নান) সামনের থেকে উঠে বললেন রাজনৈতিক কোনো কথা বইলেন না।’

আমির হামজা আরও বলেন, ‘আমি তো শুরুই করিনি। তারপর সাত-আটজন তাঁকে নিষেধ করতে গেলে হট্টগোল বেধে যায়। পরে বিষয়টি আমি ঠিক করে দিয়ে চলে আসছি।’

কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সুজা উদ্দিন জোয়ারদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানান।

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘ঘটনাটি জেনেছি। মসজিদে রাজনৈতিক আলোচনা নিষেধ করতে বলা দোষের কিছু নয়। দু-একটা মসজিদের ঘটনা নিয়ে এখনই দল থেকে কোনো বিবৃতি নিয়ে ভাবছি না। তবে অবজারভেশন করছি।’

প্রসঙ্গত, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজাকে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ০৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদভর্তি একটি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।

আজ রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ডগ স্কোয়াডসহ বিশেষ অভিযান চালিয়ে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলা রেলওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন। এই ঘটনায় রেলওয়ে থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সেনাবাহিনীর একটি দল আজ বনলতা এক্সপ্রেসে অভিযান চালায়। তবে ট্রেনটি থেকে কয়টি অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে, তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের জানানো হয়নি। তথ্য পাওয়া গেলে বিস্তারিত জানানো হবে।’

তবে রেলওয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ট্রলি ব্যাগে ৮টি পিস্তল, ১৪টি ম্যাগাজিন ও ২৬ রাউন্ড গুলি ছিল।

বনলতা এক্সপ্রেস আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি বিরতিহীন ট্রেন, যা শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচল করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মির্জাপুরে পূর্বশত্রুতার জেরে হামলা, নারীসহ আহত চার

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 
আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পূর্বশত্রুতার জেরে হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে দুই নারীসহ চারজনকে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের বড়চালা গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাকিব নামের একজনকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখান থেকে আজ সকালে তাঁকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।

আহত ব্যক্তিরা হলেন টাকিয়া কদমা গ্রামের হেলাল মিয়া, তাঁর স্ত্রী আখি আক্তার, ছেলে সাকিব ও তাঁর স্ত্রী সাদিয়া আক্তার। এই ঘটনায় হেলাল মিয়া বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন লতিফপুর ইউনিয়নের ছানোয়ার সিকদার, তাঁর ছেলে সিফাত সিকদার ও সিলু মিয়ার ছেলে আমজাদ মিয়া আঞ্জু।

টাঙাইল
টাঙাইল

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর আগে পরকীয়া করতে গিয়ে সিফাত সিকদার এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়েন। এই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে সামাজিক সালিসও হয়। এর পর থেকে সাকিব ও তাঁর পরিবারের ওপর ক্ষুব্ধ হন সিফাত সিকদার। শনিবার দুপুরে হেলাল তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লতিফপুর বড় চালায় জ্বালানির লাকড়ি সংগ্রহে যান।

আসামিরা পূর্বশত্রুতার জেরে হকিস্টিক ও লাঠি নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান। এ সময় এলোপাতাড়ি আঘাতে হেলাল, তাঁর ছেলে সাকিব ও স্ত্রীসহ অন্যরা আহত হন। তাঁদের মধ্যে ছেলে সাকিবের অবস্থা গুরুতর হলে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ রোববার সকালে সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে বলে হেলাল মিয়া জানিয়েছেন।

এই ঘটনায় অভিযুক্ত ছানোয়ার সিকদার ও ছেলে সিফাত সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁদের পাওয়া যায়নি।

মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সানাউল ইসলাম এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আহত সাকিবের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত