Ajker Patrika

মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা বাতিলের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

দলীয় রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে তৈরি এবং অগণতান্ত্রিক উল্লেখ করে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার স্থানীয়করণ, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইনসহ কয়েকটি জাতীয় নীতি ও পরিকল্পনার সংস্কারের দাবি তুলেছে জলবায়ু নিয়ে কাজ করা ৩৯টি নাগরিক সংগঠনের জোট ‘জলবায়ু ন্যায্যতা জোট-বাংলাদেশ’। 

আজ শনিবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ‘জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা নীতি বা পরিকল্পনা প্রণয়নে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা এবং বাস্তবায়নে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিক সমাজের সংস্কার ভাবনা’-শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তোলা হয়। 

জোটের সমন্বয়কারী ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিপিআরডি) প্রধান নির্বাহী মো. শামছুদ্দোহা এসব দাবির পক্ষে যুক্তি ও তথ্য উপস্থাপন করেন। 

 ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার সরকার মন্ত্রিসভার বৈঠকে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জলবায়ুকে বিবেচনায় নিতে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার খসড়া অনুমোদন দেয়। 

মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা বাতিলের দাবি জানিয়ে মো. শামছুদ্দোহা বলেন, বিগত সরকার সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে এবং তাঁদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করেছিল। বিগত সরকারের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারীর একক তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণভাবে বিদেশি পরামর্শকদের দ্বারা এবং অংশীজনদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই এ পরিকল্পনাটি তৈরি করা হয়। 

তিনি যোগ করেন, ‘এটি দেশের অন্যান্য পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। সর্বতোভাবেই বিদেশি ঋণনির্ভর হয়ে উঠেছে। ফলে এটি সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক না হয়ে দেশকে আরও দেনাগ্রস্ত করবে। পরিকল্পনাটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বেশ কয়েকটি লক্ষ্যমাত্রার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। ফলে অগণতান্ত্রিক উপায়ে তৈরি ও বিদেশি ঋণ নির্ভর এ পরিকল্পনাটি বাতিল ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই।’ 

সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামছুদ্দোহা বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের জাতীয় তহবিল ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ) ও এর আইনি কাঠামো ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট অ্যাক্ট’ দলীয় সরকার, আমলাতন্ত্র ও পেশাজীবীদের আধিপত্য সর্বতোভাবে নিশ্চিত হয়েছে এবং এটি অবাধ দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করেছে। 

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অসংগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিসিসিটিএফ পরিচালনায় তৈরি ১৭ সদস্যবিশিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ডের ১৪ জনই মন্ত্রী, একজন সচিব এবং দুজন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি। দুজন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সরকার দলীয় মন্ত্রী বা ফান্ড বোর্ডের আমন্ত্রণে বোর্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন, যাঁরা প্রকারান্তরে দলীয় সরকারেরই অংশ। ফান্ডের অর্থ বরাদ্দে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে বিসিসিটিএফ ও এর আইনি কাঠামোর আমূল সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।’ 

জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে মো. শামছুদ্দোহা বলেন, ‘এটি দেশের ভৌগোলিক ভিন্নতাজনিত ঝুঁকি, বিভিন্ন পেশাজীবী সম্প্রদায় ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ঝুঁকিগ্রস্ত হওয়ার ভিন্নতা পর্যালোচনা করে তৈরি করা হয়নি। ফলে প্রান্তিক এসব জনগোষ্ঠীর বিশেষ অভিযোজন চাহিদা নিরূপণ ও অন্তর্ভুক্ত হয়নি।’ 

জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার স্থানীয়করণের এবং অঞ্চলভিত্তিক জলবায়ু ঝুঁকিগ্রস্ততা নিরূপণের মাধ্যমে স্থানীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি জানান। 

সংবাদ সম্মেলনে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, জনবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রণীত নীতি-পরিকল্পনা ও দুর্নীতির সুযোগ চলমান রেখে এবং গতানুগতিক ধারার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কোনোভাবেই সমতা ও ন্যায্যতাভিত্তিক জলবায়ু সহনীয়তা অর্জন করা যাবে না। 

তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দুর্যোগের আধিক্য ও তীব্রতা আগেই অনুমান করা গেলেও আমাদের প্রস্তুতি এখনো কাগুজে পরিকল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এমনকি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে বহুমাত্রিক ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।’ 

সুশীলনের উপ-নির্বাহী পরিচালক নাসির উদ্দিন ফারুক বলেন, গণতন্ত্রায়ণের অগ্রযাত্রায় সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে প্রণীত জলবায়ু নীতি-পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংস্কার প্রয়োজন। 

এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে নাগরিক উদ্যোগের গবেষক ফারহান হোসেন জয়, প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশনের ক্লাইমেট অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স বিষয়ক থিমেটিক লিড তামান্না রহমান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের উপ-ব্যবস্থাপক আহসানুল ওয়াহেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত