Ajker Patrika

মানিকগঞ্জে ভয়াল রূপে তিন নদীর ভাঙন, ঝুঁকিতে ৬৪ স্থাপনা

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)  
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামারা ইউনিয়নের ভারাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামারা ইউনিয়নের ভারাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মানিকগঞ্জে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নদী ভাঙনের রূপ আরও ভয়াল হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে যমুনা, কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদী আগ্রাসী রূপ নিয়েছে। ফলে জেলার ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার ও বসতবাড়ি নদীভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য নদীর ভাঙনের আশঙ্কায় দিন পার করছেন নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষজন।

পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, ইছামতী, গাজীখালীসহ ছোট-বড় মোট ১৪টি নদীবেষ্টিত মানিকগঞ্জ জেলা। প্রতিবছর বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকায় দেখা দেয় ভয়াবহ ভাঙন। এ বছর চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামারা ইউনিয়নের ভারাঙ্গা এলাকায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভারাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জেলার বাঘুটিয়া আলিম মাদ্রসা ও চরকাটারিয়া শুকুরিয়া দাখিল মাদ্রসাসহ নদীর তীরবর্তী হাট-বাজার, অন্তত ৬৪টি স্থান ও স্থাপনা সবচেয়ে বেশি ভাঙনে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ঝুঁকিপূর্ণ এসব স্থানে জরুরি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা না নিলে নদীর পেটে চলে যেতে পারে বসতভিটা, ফসলি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

নদীর তীরবর্তী এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন বলছেন, বর্ষা শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাড়াহুড়ো করে কিছু জিও ব্যাগ ফেলে কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু এসব অপরিকল্পিত জিও ব্যাগ ভাঙনরোধে তেমন কোনো কাজে আসে না।

জানা গেছে, ধলেম্বরী নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া, মির্জাপুর মাঝিপাড়া, নকিববাড়ি, বড়টিয়া ও পূর্ব ঘিওর। যমুনা ও পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর, কাঞ্চনপুর, সেলিমপুর, সুতালড়ি, হাতিঘাটা, মালুচি, গোপীনাথপুর উজানপাড়া ও আন্ধারমানিক এবং কালীগঙ্গা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে সিঙ্গাইর উপজেলার দক্ষিণ জামশা, বালুরচর জামশা, দক্ষিণ চারিগ্রাম, বার্তাবাজার। যমুনা নদীর তাণ্ডবে শিবালয় উপজেলার গঙ্গাপ্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তেওতা, তেওতা সমেজঘর, নেহালপুর, আরুয়া, আলোকদিয়া ভাঙনের ঝুঁকির মুখে আছে। যমুনা নদীবেষ্টিত দৌলতপুর উপজেলার চর কালিয়াপুর, বাঘুটিয়া, ভারাঙ্গা, রংদারপাড়া, বিষ্ণপুর, রামচন্দ্রপুর, আবুডাঙ্গা পূর্বপাড়া, চরকাটারি বোর্ডঘর বাজার, চরকাটারি সবুজসেনা হাই স্কুল, বাঁচামারা, সুবুদ্ধি পাচুরিয়া, বাঘুটিয়া বাজার, পারুরিয়া বাজার, রাহাতপুর, বৈন্যাঘাট, লাউতাড়া, লাউতাড়া আশ্রয়ণকেন্দ্র, চকবাড়াদিয়া, ভাঙা রামচন্দ্রপুর, রামচন্দ্রপুর নতুন পাড়া, চরমাস্তুল, হাতখোড়া, বিষ্ণপুর খাঁপাড়া, পাড় মাস্তুলসহ ২৮টি এলাকা; কালীগঙ্গা ও পুরোনো ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে সাটুরিয়া উপজেলার সনকা, পশ্চিম চর তিল্লী, আয়নাপুর, তিল্লী বাজার, পূর্ব সনকা, বরাইদ এলাকা ঝুঁকিতে রয়েছে। এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কালীগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকা সদর উপজেলার বালিরটেক, চর বালিয়াবিল, চৈল্লা, পুটাইল, গড়পাড়া এলাকায় ভাঙন বেড়ে যাবে।

বাঘুটিয়া গ্রামের করিম শেখ বলেন, ‘এর আগে আরও তিনবার নদীভাঙনের কবলে পড়েছি। যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করছে, লগে ভাঙন শুরু হইতাছে। নদীর পাড়ে বাড়ি থাকায় সব সময় ভয়ে থাকি, কখন যেন আবার বাড়িঘর নদীতে চলে যায়। মনে হয় এ বছরই বাঘুটিয়া আলিম মাদ্রাসা নদীভাঙনের কবলে পড়তে পারে।’

যমুনা নদীর ভাঙনের কবলে বাঘুটিয়া এলাকা। ছবি: আজকের পত্রিকা
যমুনা নদীর ভাঙনের কবলে বাঘুটিয়া এলাকা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘিওরের কুস্তা গ্রামের নাজমুল হোসেন বলেন, ‘পুরোনো ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনের মুখে পড়ে কুস্তা কবরস্থানের পূর্ব পাশে কয়েকটি কবর ভেঙে গেছে। এ ছাড়া দু শ বছরের ঐতিহাসিক ঘিওর পশুর হাটের একাংশ নদীতে চলে গেছে। হুমকিতে রয়েছে হাটের পশ্চিমাংশ। হাট রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

দৌলতপুরের বাঁচামারা গ্রামের মান্নান মৃধা বলেন, ‘ভারাঙ্গা এলাকায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভারাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবনটি গত সপ্তাহে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া অন্তত ১৫টি বসতবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে। চোখের নিমিষেই নদী সব কেড়ে নেয়। আমার তিন বিঘা আবাদি জমি ইতিমধ্যে নদী গ্রাস করেছে।’

বাঘুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর নদীভাঙনের কবলে বসতবাড়ি, আবাদি জমি হারিয়ে শত শত মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায়। এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে যমুনা নদী আগ্রাসী রূপ নিয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির ফলে এই ভাঙন আরও বাড়ছে। চলতি মৌসুমে আমার ইউনিয়নের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, রাস্তা ও আবাদি জমি ভাঙনের শিকার হয়েছে।’

মানিকগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘এরই মধ্যে নদীর তীরবর্তী এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর ভাঙন ঠেকাতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে চরাঞ্চল এলাকায় বালু বেশি হওয়ায় সামান্য পানির স্রোতেই ভাঙন দেখা দেয়। তাই এসব এলাকায় ভাঙনরোধে প্রতিবছরই কাজ করতে হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বুশেহর পারমাণবিক কেন্দ্রে আছেন রুশ বিশেষজ্ঞরা, ইসরায়েলকে রাশিয়ার হুঁশিয়ারি

ইরানকে ঘিরে ফেলছে একের পর এক মার্কিন রণতরি ও যুদ্ধবিমান

পর্যটনে সেরা ১০ মুসলিমবান্ধব অমুসলিম দেশ

ছেলের কাটা পা হাতে নিয়ে বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বাবা

পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে কেন যুক্তরাষ্ট্রে ডেকেছিলেন ট্রাম্প, ইরান-ইসরায়েল নিয়ে কী আলোচনা হলো

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত