Ajker Patrika

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ

শিশুটির অবস্থার উন্নতি চার আসামি রিমান্ডে

  • চিকিৎসকেরা বলছেন, শিশুটি শঙ্কামুক্ত নয়।
  • মূল অভিযুক্ত শিশুটির বড় বোনের শ্বশুর সাত দিনের রিমান্ডে।
  • আইনজীবী সমিতির ঘোষণা, আসামিদের পক্ষে কেউ দাঁড়াবেন না।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকামাগুরা প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ‘ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার’ শিশুটির শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসকেরা আশা করছেন, দু-এক দিনের মধ্যে তার অবস্থার আরও কিছুটা উন্নতি হবে। তবে এখনো শঙ্কামুক্ত নয় সে। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে শিশুটির মা ও সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার এসব কথা জানানো হয়েছে।

এদিকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার চার আসামিকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আদালত প্রাঙ্গণে গত রোববার দিনের বেলায় জনতার বিক্ষোভের কারণে আসামিদের হাজির করা সম্ভব না হওয়ায় ওই দিন গভীর রাতে শুনানি শেষে রিমান্ড মঞ্জুর করেন মাগুরার আদালত।

গত বুধবার রাতে বোনের শ্বশুরবাড়িতে ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। এরপর সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় মাগুরা ও ফরিদপুরের হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল হয়ে তাকে এখন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) রাখা হয়েছে তাকে।

গতকাল সোমবার বেলা পৌনে ১টার দিকে সিএমএইচে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বললেও হাসপাতালের ভেতরে যাওয়ার কোনো অনুমতি পাওয়া যায়নি। পরে ফোনে শিশুটির মায়ের সঙ্গে কথা হয়।

ফোনে শিশুটির মা বলেন, ‘মেয়ের হাত-পায়ে চাবি দিয়ে আঁচড় দিলে একটু নড়ে। কিন্তু মাথাটা এখনো নড়াচাড়া করে না। ডাক্তার আমার সামনেই চাবি দিয়ে আঁচড় দেওয়ার সময় আমি ছিলাম। তখন দেখলাম। ডাক্তাররা বলেছেন, ভালো হয়ে যাবে। তবে সময় লাগবে।’ তিনি বলেন, আগে তো এই নড়াচাড়াও করেনি।

শিশুটির শারীরিক অবস্থার বিষয়ে গতকাল দুপুরে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, শিশুটি গতকাল সকালে প্রথমবারের মতো চোখের পাতা নেড়েছে। তবে তার শারীরিক অবস্থার খুব সামান্যই উন্নতি হয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, শিশুটির স্বাস্থ্যের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। আজকেও তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। চিকিৎসকেরা তাঁকে জানিয়েছেন, শিশুটির শারীরিক অবস্থার খুব সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে শ্বাসনালির সমস্যার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। শিশুটির মস্তিষ্কে পানি জমে গিয়েছিল। সেটি এখনো অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে বুকের মধ্যে যে বাতাস জমে ছিল, সেটি দূর করা গেছে। চিকিৎসকেরা আশাবাদী, দু-এক দিনের মধ্যে তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে।

এর মধ্যে গত রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুটির মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পরে মধ্যরাতে এক খুদে বার্তায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি-উদ-দৌলা চৌধুরী জানান, শিশুটি বেঁচে আছে। তার অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।

গতকাল বিকেলে শিশুটির শারীরিক অবস্থার বিষয়ে আইএসপিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গভীর রাতে শুনানি, ৪ আসামি রিমান্ডে

আদালত সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তার স্বার্থে রোববার গভীর রাতে আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদনের শুনানি করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক চার আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর মধ্যে মূল অভিযুক্ত শিশুটির বড় বোনের শ্বশুরকে সাত দিন এবং স্বামী, ভাশুর ও শাশুড়িকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন গতকাল জানান, মাগুরার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন তিনি। কিন্তু আসামিদের দ্রুত বিচারের দাবিতে দিনভর আদালত প্রাঙ্গণে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলায় আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে গভীর রাতে আদালতে রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

আসামিদের সহায়তা দেবেন না কোনো আইনজীবী

মামলার আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী আইনি সহায়তা দেবেন না বলে মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতি ঘোষণা করেছে। গতকাল সমিতির আয়োজনে এক মানববন্ধনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ হাসান টগর এ তথ্য জানান। সকালে জেলা জজ আদালতের সামনে মানববন্ধনে সমিতির শতাধিক সদস্য অংশ নেন।

মানববন্ধনে আইনজীবীরা জানান, এমন ঘটনা যেন সমাজে আর না ঘটে, সে জন্য দোষীদের কঠিন শাস্তি দিতে তাঁরা আদালতের কাছে দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে পুরো বিচারপ্রক্রিয়ায় জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সব ধরনের আইনি সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কর্মীরা কয়েক দলে বিভক্ত হয়ে কলেজ থেকে আদালত ফটক পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁরা বেলা দেড়টা পর্যন্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। তবে এসব কর্মসূচির ফলে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোনো বাধা সৃষ্টি হয়নি।

পুলিশ ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রাতে মাগুরায় শিশুটি বড় বোনের বাড়িতে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়। পরে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢামেক হাসপাতালে। শুক্রবার রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। পরদিন শনিবার বিকেলে শিশুটিকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

ঝালকাঠিতে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সভা: দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি বাড়ছে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পিরোজপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

পিরোজপুর প্রতিনিধি
পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত। ছবি: আজকের পত্রিকা
পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত। ছবি: আজকের পত্রিকা

পিরোজপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে মো. ফিরোজ আলম নামের এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পিরোজপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. মজিবুর রহমান আসামির উপস্থিতিতে এ রায় দেন। একই সঙ্গে তাঁকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও আট মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।  

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার ভোরা গ্রামের মৃত মোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে মো. ফিরোজ আলম।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, দণ্ডপ্রাপ্ত ফিরোজ আলমের সঙ্গে ১৯৯৭ সালে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পৈকখালী গ্রামের মৃত আমীর মল্লিকের মেয়ে বিউটি বেগমের বিয়ে হয়। এ দম্পতির মধ্যে পারিবারিক কলহের জেরে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর রাতে ফিরোজ আলম তাঁর স্ত্রী ছয় সন্তানের জননী বিউটিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার দায় থেকে নিজে বাঁচতে জমিজমা নিয়ে বিরোধ থাকা প্রতিবেশীদের ফাঁসানোর চেষ্টা করেন ফিরোজ।

হত্যার ঘটনায় বিউটির ভাই মো. ইউনুস মল্লিক বাদী হয়ে ফিরোজকে নামীয় এবং কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ভান্ডারিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। পুলিশ তদন্ত করে ফিরোজের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়। সাক্ষ্য-প্রমাণে সে দোষী সাব্যস্ত হলে আদালত এ রায় দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পাবলিক প্রসিকিউটর) আবুল কালাম আকন বলেন, ‘আমরা এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

ঝালকাঠিতে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সভা: দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি বাড়ছে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাইবার অপরাধ মামলায় সাবেক সমন্বয়ক গ্রেপ্তার

বগুড়া প্রতিনিধি
সাবেক সমন্বয়ক সাকিব খান। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক সমন্বয়ক সাকিব খান। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সাকিব খানকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার ভোরে ঢাকার শাহবাগ থানা-পুলিশ বগুড়া শহরের নারুলী এলাকায় তাঁর বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় নিয়ে যায়।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান বাসির এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ওসি বলেন, ঢাকার শাহবাগ থানায় দায়ের করা সাইবার অপরাধ মামলায় সাকিব খানকে গ্রেপ্তারের জন্য শাহবাগ থানা-পুলিশ বগুড়ায় আসে। পরে সদর থানা-পুলিশকে মামলার বিষয় জানিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করার অভিযোগে ২০ অক্টোবর শাহবাগ থানা-পুলিশ বাদী হয়ে সাকিব খানসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের নামে থানায় মামলা করে। সেই মামলায় সাকিব খানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

ঝালকাঠিতে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সভা: দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি বাড়ছে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ৯ কোটি টাকার ১৮টি ডিজিটাল ল্যাব এখন ই-বর্জ্য

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা
নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজের ডিজিটাল ল্যাবের ৩০টি ডেস্কটপ কম্পিউটারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সম্পূর্ণ অচল। ছবি: আজকের পত্রিকা
নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজের ডিজিটাল ল্যাবের ৩০টি ডেস্কটপ কম্পিউটারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সম্পূর্ণ অচল। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের আওতায় ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয় স্কুল অব ফিউচার ও শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব (বর্তমান নাম আইসিটিডি)। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প থেকে আরও পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

শিক্ষার্থীদের তথ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষতা, সক্ষমতা বাড়ানো ও স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলেও বাস্তবে তা এখন গলার কাঁটা হয়েছে। নিম্নমানের উপকরণ সরবরাহের ফলে শুরুতেই এসব ডিজিটাল ল্যাব মুখ থুবড়ে পড়েছে। পরিণত হয়েছে ই-বর্জ্যে। অথচ এসব ল্যাব পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন করে ল্যাব সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সরকারিভাবে নিয়মিত মাসিক বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। ল্যাবে কাজ না থাকায় তাঁরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পিয়নের দায়িত্ব পালন করছেন। এসব ল্যাব স্থাপনে এই উপজেলায় সরকারের প্রায় ৯ কোটি টাকা জলে গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একটি সিন্ডিকেট পুরোনো সংস্করণের ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ওয়েবক্যাম, এলিইডি টিভি, হোয়াইটবোর্ড, রাউটার, ইন্টারনেট, ট্যাব, সার্ভার সিস্টেমসহ যাবতীয় হার্ডওয়ার ও ফার্নিচার সরবরাহ করায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তারা মানহীন পণ্য সরবরাহ করে এসব ল্যাব থেকে দুই থেকে তিন কোটি টাকা সুকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রকল্পের আওতায় তাড়াশ উপজেলায় ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে পৌর সদরের তাড়াশ ইসলামিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয় স্কুল অব ফিউচার। অবশিষ্ট সাতটি স্কুল, চারটি কলেজ ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং একটি মাদ্রাসায় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া আরও পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প থেকে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়। সরেজমিনে অধিকাংশ ডিজিটাল ল্যাবের করুণ দশা দেখা গেছে।

তাড়াশ ইসলামিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এখানে স্থাপিত ‘স্কুল অব ফিউচার’ কার্যত বন্ধ। প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সালাম জানান, অপারেটর না থাকায় কার্যক্রম বন্ধ। টেকনিশিয়ান চেয়ে বারবার আইসিটি অধিদপ্তরে আবেদন করেও সাড়া মেলেনি।

নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজের ডিজিটাল ল্যাবের ৩০টি ডেস্কটপ কম্পিউটারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সম্পূর্ণ অচল। ছবি: আজকের পত্রিকা
নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজের ডিজিটাল ল্যাবের ৩০টি ডেস্কটপ কম্পিউটারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সম্পূর্ণ অচল। ছবি: আজকের পত্রিকা

নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজের ডিজিটাল ল্যাবের ৩০টি ডেস্কটপ কম্পিউটারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সম্পূর্ণ অচল এবং ল্যাবটি এখন ই-বর্জ্য ছাড়া আর কিছুই নয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. বেলাল হোসেন আনছারী বলেন, নিম্নমানের সরঞ্জামের কারণে ল্যাবটি অচল হয়ে পড়েছে।

গুল্টা বাজার শহীদ এম মনসুর আলী ডিগ্রি কলেজে ল্যাপটপ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পাঁচ থেকে সাতটি কম্পিউটার উধাও। অভিযোগ উঠেছে, কলেজের অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান ও তাঁর নিকটজনেরা এসব ল্যাপটপ ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করছেন।

অন্যান্য ল্যাবের অবস্থাও এই তিন ল্যাবের মতো। তবে তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে কয়েকটি কম্পিউটার এখনো সচল রয়েছে। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর ল্যাবের কক্ষটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ল্যাব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ১৪টি শর্ত প্রযোজ্য থাকলেও বাস্তবে তা মানা হয়নি। মূলত সংশ্লিষ্ট আসনের সংসদ সদস্যরা নিয়মকানুন অমান্য করে তাঁদের পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিও লেটার দিয়েছেন এবং সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এসব ল্যাব প্রতিষ্ঠায় ঠিক কত টাকা ব্যয় করা হয়েছে, তার সঠিক হিসাব তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আইটি বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রতিটি ল্যাব স্থাপনে গড়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সেই হিসাবে তাড়াশের ১৮টি ল্যাবে ৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা এখন ব্যর্থতায় পর্যবসিত।

সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা অভিযোগ করেন, ল্যাবগুলোর সমস্যার বিষয়ে বারবার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তরে আবেদন করেও কোনো সাড়া মেলেনি। উপজেলা আইসিটি অফিসারের কার্যালয় থেকে সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হলেও তা শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে।

তাড়াশ উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা মো. আবু রায়হান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ল্যাব পরিদর্শনের প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ল্যাব প্রতিষ্ঠার সময় বরাদ্দ বা সরঞ্জামের মান সম্পর্কে তাঁদের অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা এগুলো ফেলে রাখেন। যার ফলে তা একদিন অচল হয়ে যায়। তাঁর মতে, দ্রুত অর্থ বরাদ্দ করে বিশেষজ্ঞ দ্বারা ল্যাবগুলো নিয়মিত সার্ভিস করা না গেলে সরকারের আইসিটি শিক্ষা প্রদান কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের বর্তমান প্রকল্প পরিচালক এ এস এম লোকমান কোনো তথ্য দিতে পারেননি এবং আগের প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

ঝালকাঠিতে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সভা: দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি বাড়ছে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কদমতলীতে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন থেকে পড়ে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির মৃত্যু

ঢামেক প্রতিবেদক
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানীর কদমতলীতে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন থেকে নিচে পড়ে সিদ্দিকুর রহমান (৪৫) নামে এক ইলেকট্রিক মিস্ত্রির মৃত্যু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে কদমতলী জনতাবাগ পুলিশ ফাঁড়ির পাশে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু অবস্থায় স্বজনরা সিদ্দিকুর রহমানকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে বেলা পৌনে ১টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সিদ্দিকুরের ছোট ভাই মো. ওয়াহিদ জানান, সিদ্দিকুর পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবনটির পঞ্চম তলায় ইলেকট্রিকের কাজ করছিলেন। কাজ করার সময় নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। সহকর্মীরা স্থানীয় ইসলামিয়া হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ভবন থেকে কীভাবে পড়ে গেছেন সিদ্দিকুর, তা জানেন না ওয়াহিদ।

সিদ্দিকুর রহমানের বাড়ি শরিয়তপুর জেলার সখীপুর থানার কালিকাকন্দি গ্রামে। তাঁর বাবা আব্দুস সাত্তার। সিদ্দিকুর স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে কদমতলীর জনতাবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

ঝালকাঠিতে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সভা: দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি বাড়ছে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত