Ajker Patrika

‘এআই ও ডিজিটাল দক্ষতার সঙ্গে নৈতিকতার সম্মিলনে যুব ক্ষমতায়ন সম্ভব’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
‘এআই এবং ডিজিটাল দক্ষতার মাধ্যমে যুব ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘এআই এবং ডিজিটাল দক্ষতার মাধ্যমে যুব ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। ছবি: আজকের পত্রিকা

তরুণদের মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ও ডিজিটাল দক্ষতার সঙ্গে মানবিকতা ও নৈতিকতার সমন্বয় ঘটাতে পারলে দেশে যুব ক্ষমতায়ন সম্ভব। ইউসেপ বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘এআই এবং ডিজিটাল দক্ষতার মাধ্যমে যুব ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেছেন বক্তারা।

আজ সোমবার (১৪ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ইউসেপ বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারপারসন ড. ওবায়দুর রবের সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। বক্তব্য দেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব ফাতেমা জাহান, ইউসেপ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. আবদুল করিম, ইউসেপ বোর্ড অব গভর্নরসের ভাইস চেয়ারপারসন উজমা চৌধুরী, বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতালের মহাপরিচালক ফজলুর রহমান, ঢাকা টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ড. মো. সাকাওয়াৎ আলী প্রমুখ।

মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, ‘আমরা সব সময় বলি, দক্ষতা দরকার। দক্ষতা ছাড়া আপনি সমাজ বা ভাগ্য কোনো কিছুই বদলাতে পারবেন না। তাই আমাদের লক্ষ্য, কীভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও ডিজিটাল স্কিলের মাধ্যমে যুবসমাজকে ক্ষমতায়ন করা যায়। আমাদের দেশে প্রায় ৪.৭৫ কোটি তরুণ রয়েছে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে। যার মন তরুণ, সে-ই যুবক। শিখতে জানার আগ্রহটা মুখ্য। তবে শুধু দক্ষতা অর্জন বললে হবে না, সেটাকে ধরে রাখার জন্য মানসিকতা, মনিটরিং ও মেন্টরশিপ জরুরি।’

রেজাউল মাকছুদ আরও বলেন, ‘আজকাল আমাদের দেশের সবাই এআই বলতে শুধু ছবি বদলানো বোঝে; অথচ বিশ্বের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের এখনো সুশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় একটা বড় পরিবর্তনের দরকার, শুধু সিলেবাসে নয়, কারিকুলামে। শিশুদের মানবিক শিক্ষা দিতে হবে, আচরণ, পরিবেশ, শৃঙ্খলা; যেমন জাপানে ছোটবেলায় শেখানো হয় ময়লা রাস্তায় ফেলা যাবে না। আমাদের দেশেও এই মানসিকতা গড়তে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা যেন মানবিক, কর্মমুখী ও যুগোপযোগী হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘সত্যিই কষ্ট লাগে। কারণ, এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক যে ময়মনসিংহ থেকে আসা বহু নারী ঢাকায় খুবই কম মজুরিতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন এবং খুব কষ্ট করে জীবন যাপন করেন। যদি আমরা তাদের শুধু একটি ছোট কেয়ারগিভার ট্রেনিং দিই, একটু কষ্ট করে শিক্ষিত করে দিই, জাপানিজ, কোরিয়ান বা অন্তত কিছুটা ইংরেজি ভাষা শেখাই; তাহলে তাঁরা একটি মূল্যবান রিসোর্সে পরিণত হতে পারেন। তাঁরা বিদেশে গিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য খুব দরকার। এতে তাঁরা হয়ে উঠবেন একটি কোয়ালিফায়েড হিউম্যান রিসোর্স।’

ফাতেমা জাহান বলেন, ‘আমাদের পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে দেশে ৫০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত অল্প কিছু মাদ্রাসায় ভোকেশনাল ট্রেড চালু করতে পেরেছি। যদিও আমাদের লক্ষ্য রয়েছে ভবিষ্যতে আরও ১ হাজার মাদ্রাসায় এসব ট্রেড চালু করার। তবে সমস্যা হলো, মানসিকতা। আমাদের সমাজে একটি প্রবণতা রয়েছে যে সবকিছু সরকার করে দেবে বা অন্য কেউ এগিয়ে আসবে। কিন্তু আমরা কেউই নিজের দায়িত্বটা নিতে চাই না। আমরা সবাই তো এই দেশের নাগরিক। তাই ব্যক্তিগত, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সব জায়গা থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন।’

ফাতেমা জাহান আরও বলেন, ‘আমরা এখন ডিজিটাল যুগে আছি। আমাদের প্রায় প্রতিটি ছেলেমেয়ের হাতে এখন স্মার্টফোন রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তারা এর ভালো দিকের চেয়ে খারাপ দিকগুলোতে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। এটি একটি বড় সামাজিক চ্যালেঞ্জ। কাজেই নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজনটা এখানে বড় হয়ে উঠছে।’

অন্য বক্তারা বলেন, ভবিষ্যৎমুখী দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডিজিটাল লিটারেসি এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণেরা হতে পারেন সমাজে উন্নয়নের চালিকাশক্তি। টেকসই সমাজ গঠনের জন্য কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতায় যুবাদের প্রস্তুত করা বাংলাদেশের স্মার্ট উন্নয়ন অভিযাত্রার জন্য অত্যাবশ্যক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত