Ajker Patrika

২০০ বছরের ঐতিহ্য ঘিওরের থাপড়ানো রুটি এখনো গর্বের স্বাদ

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)  
ঘিওর হাট বসে সপ্তাহের প্রতি বুধবার। ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাটের এখন প্রধান গর্ব থাপড়ানো রুটি। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘিওর হাট বসে সপ্তাহের প্রতি বুধবার। ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাটের এখন প্রধান গর্ব থাপড়ানো রুটি। ছবি: আজকের পত্রিকা

মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাট বসে সপ্তাহের প্রতি বুধবার। একসময় দেশের অন্যতম বৃহৎ হাট হিসেবে খ্যাতি থাকলেও সময়ের বিবর্তনে এখন সেই খ্যাতির প্রধান উপাদান হয়ে উঠেছে ‘থাপড়ানো রুটি’।

বড় আকারের থাপড়ানো রুটি আর রসে ভেজা রসগোল্লার স্বাদ যে একবার নিয়েছেন, তিনি তা আজীবন মনে রাখবেন—এমনটাই দাবি করছেন প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন ঘিওর হাটের এই রুটি ব্যবসায়ীরা।

হাটের কেনাকাটা শেষে ফেরার পথে অনেকেই ঢুঁ মারেন থাপড়ানো রুটির গলিতে। একসময় এই গলিতে ১০০টির বেশি রুটির দোকান থাকলেও এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ২৫টিতে। যদিও দোকানের সংখ্যা কমেছে, তবুও রুটির চাহিদা বা খ্যাতিতে ভাটা পড়েনি। ঘিওর হাটে যে দিন পরিবারের কর্তা আসেন, সেদিন পরিবারের বাকি সদস্যরা অপেক্ষায় থাকেন এই বিশেষ রুটি ও মিষ্টির জন্য।

গত বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, কেউ দোকানে বসে রুটি খাচ্ছেন, কেউ কিনে নিচ্ছেন বাড়ির জন্য। থাপড়ানো রুটি আর সাদা রসগোল্লা নিয়ে চলছে ক্রেতাদের ভিড় ও বেচাকেনা।

এই ব্যবসা অনেকেই চালিয়ে যাচ্ছেন বংশ পরম্পরায়। লাভ আগের মতো না হলেও ঐতিহ্য ধরে রাখাই যেন তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য।

হাটের দিন সকাল থেকেই রুটি তৈরিতে লেগে পড়েন কারিগরেরা। দোকানের কর্মীরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী রুটি দিচ্ছেন। কেউ কেউ কেজি দরে কিনে নিচ্ছেন পরিবারের জন্য। একই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে জিলাপিও। প্রতি হাটে প্রতিটি দোকান থেকে ১০০-১৫০ কেজি রুটি বিক্রি হয়, কেউ কেউ ২০০ কেজিও বিক্রি করেন।

দৌলতপুর উপজেলার ধামশ্বর গ্রামের ভুট্টা ব্যবসায়ী লাল মিয়া বলেন, ‘প্রতি বুধবার ঘিওরের হাটে আসি। বেচাকেনা শেষে বাড়ি ফেরার পথে থাপড়ানো রুটি কিনে নিই। আমার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা খুব খুশি হয়। আজ ২০০ টাকার রুটি আর এক কেজি রসগোল্লা কিনলাম।’

হাটের কেনাকাটা শেষে ফেরার পথে অনেকেই ঢুঁ মারেন থাপড়ানো রুটির গলিতে। একসময় এই গলিতে ১০০টির বেশি রুটির দোকান থাকলেও এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ২৫টিতে।
হাটের কেনাকাটা শেষে ফেরার পথে অনেকেই ঢুঁ মারেন থাপড়ানো রুটির গলিতে। একসময় এই গলিতে ১০০টির বেশি রুটির দোকান থাকলেও এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ২৫টিতে।

রুটির দোকানি জিতেন দাস বলেন, ‘বাবা-দাদার আমল থেকে এই ব্যবসা করছি। আমি নিজেও ২২ বছর ধরে করছি। এখন আগের মতো লাভ হয় না, তবুও এই কাজ আমাদের বংশের ঐতিহ্য।’

হাটের বড় রুটির দোকানি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খুবই সুস্বাদু এই রুটি। কেজি দরে বিক্রি করি। রুটির আকার অনুযায়ী দাম ৯০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি হাটে ২০০-২৫০ কেজি রুটি এবং প্রায় ২ মণ মিষ্টি বিক্রি করি।’

‘বিজয় রুটি-মিষ্টান্ন ভান্ডারে’ স্ত্রীকে নিয়ে বসে রুটি ও রসগোল্লা খাচ্ছিলেন প্রবীণ মুনছের মিয়া (৬৫)। তিনি বলেন, ‘স্ত্রীর আবদারে এই বয়সেও হাটে এসে রুটি-রসগোল্লা খাচ্ছি।’

হাটের ব্যবসায়ী রাম প্রসাদ সরকার বলেন, ‘দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ঘিওর হাটে ধান, পাট, সরিষা বিক্রি করতে আসে। হাটের দিন রুটি-মিষ্টি খাওয়ার জন্য অনেকে ছেলেমেয়েকেও সঙ্গে নিয়ে আসে। রুটি যেন হাটের এক আবশ্যিক অংশ।’

থাপড়ানো রুটির কারিগর রিপন মিয়া বলেন, ‘৩৭ বছর ধরে রুটি বানাচ্ছি। এই রুটির স্বাদ আর মান ভালো বলেই চাহিদাও বেশি। রোজ হিসেবে কাজ করি। এই আয় দিয়েই পরিবার চালাই, মেয়েকে কলেজে পড়াই, ছোট মেয়েটা হাইস্কুলে পড়ে। আগে ৩০০ টাকা মজুরি পেতাম, এখন ৬৫০ টাকা পাই।’

ঘিওর হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশ খান পাষাণ বলেন, ‘২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাটের এখন প্রধান গর্ব থাপড়ানো রুটি। আগে গরুর হাট, ধান-পাট—সবই ছিল। এখন নদীগর্ভে গরুর হাট বিলীন, আগের মতো ফসলও আসে না। কিন্তু রুটি আর রসগোল্লার স্বাদ নিতে এখনো দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাড়ি থেকে ভিজিএফের চাল উদ্ধার দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার

অপমানিত সহকর্মীর ছাদ থেকে লাফ, শ্রমিক বিক্ষোভে রণক্ষেত্র শ্রীপুর, আহত শতাধিক

সরকারি কর্মচারীদের ১০–১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

জি-৭ সম্মেলন: টানা ৫ বছর বিশেষ অতিথি, এবার আমন্ত্রণ পেলেন না মোদি

শাহরাস্তিতে মৃত্যুর ১০ মাস পর আওয়ামী লীগ নেতার লাশ উত্তোলন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত