Ajker Patrika

পরীমণি আটক, তারপর...

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

ধর্ষণচেষ্টার মামলার দেড় মাসের মাথায় গ্রেপ্তার হলেন আলোচিত চিত্রনায়িক পরীমণি। চার ঘণ্টা অভিযান শেষে গতকাল বুধবার রাত সোয়া আটটায় বনানীর বাসা থেকে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন–র‍্যাবের সদস্যরা তাঁকে গ্রেপ্তার করেন। এ সময় তাঁর বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয় বলে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নিশ্চিত করেন। পরীমণির বাসায় অভিযানের পর র‍্যাবের সদস্যরা রাজ মাল্টি মিডিয়ার মালিক নজরুল ইসলাম রাজের বনানীর বাসায় অভিযান শুরু করেন।

গতকাল বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে র‍্যাবের একটি দল পরীমণির বনানীর বাসার সামনে অবস্থান নেয়। র‍্যাব সদস্যরা তাঁর বাসার দরজায় এলে তিনি দরজা না খুলে ফেসবুক লাইভে আসেন। ফেসবুক লাইভে চিত্রনায়িকা বলেন, ‘কিছু লোক আমাকে ধরে নিতে এসেছে।’ ফেসবুক লাইভে থাকা অবস্থায় তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতেও দেখা যায়। বাঁচার জন্য পরিচিতজনদের কাছে আকুতিও জানান। বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ পরীমণি ফেসবুক লাইভে থাকা অবস্থাতেই দরজার কাছে যান। তখন উল্টো দিক থেকে র‍্যাব পরিচয় দিয়ে পরীমণিকে দরজা খোলার অনুরোধ করেন। এ সময় কয়েক মিনিট কথোপকথনের পর তিনি দরজা খুলে দেন, কিন্তু ফেসবুক লাইভে বাসায় কারা ঢুকেছে তা দেখা যায়নি। দরজা খোলার পর একজন পরীমণিকে বলেন যে তাঁরা আইনগতভাবে পরীমণির সঙ্গে কথা বলবেন। এক ব্যক্তি পরীমণিকে ফেসবুক লাইভ বন্ধ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন।

পরীমণিকে এ সময় বলতে শোনা যায়, আপনারা সবার মোবাইল নিয়ে নিচ্ছেন কেন? এ সময় একজন আবারও তাঁকে ফেসবুক লাইভ নিজের হাতে বন্ধ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন এবং একপর্যায়ে ফেসবুক লাইভ বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল চারটা থেকে প্রায় ৩১ মিনিট লাইভে ছিলেন পরীমণি। দুই ঘণ্টার মধ্যেই এই লাইভটি দেখা হয় ৪০ লাখ ৭০ হাজার বার। ৩১ হাজারজন সেটা শেয়ার করেন। আর কমেন্ট পড়ে ২ লাখ ৬৭ হাজার। ফেসবুক লাইভের সময় আশপাশের শত শত মানুষ পরীমণির বাসার সামনে ভিড় করেন। গণমাধ্যমকর্মীরাও সেখানে ছুটে যান।  

লাইভে পরীমণি অভিযোগ করেন, তাঁর বাসায় বেশ কয়েকজন লোক ফ্ল্যাটের দরজা ধাক্কাধাক্কি করছেন। কিন্তু তিনি দরজা খুলতে ভয় পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ওই ব্যক্তিরা বাসার গেট ভেঙে ওপরে এসে বারবার কলবেল বাজাচ্ছেন। পরিচয় জানতে চাইলে তাঁরা পুলিশের লোক বলে দাবি করছেন। যদিও তাঁদের গায়ে বিভিন্ন রঙের পোশাক থাকায় বিশ্বাস করতে পারছি না তারা পুলিশ।

এমন অবস্থায় পরীমণি বনানী থানায় যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, সেখান থেকে ফোর্স পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তারা এখনো এসে পৌঁছায়নি। পরে ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি ভাইকে ফোন করেছি। তিনি বলেছেন, তাঁর থানা থেকে কেউ যায়নি। তাহলে আমার বাসার সামনে কারা এসেছে? পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে আমি দরজা খুলব না।’

পরীমণি বলেন, ‘আমি মরব আর কেউ কিছু বলবে না? মরতে তো একদিন হবেই। আমি এই লাইভ কাটব না। যতক্ষণ না থানা থেকে পুলিশ আসবে, মিডিয়া আসবে ততক্ষণ লাইভ চলবে। ভাই, আপনারা কেউ বুঝতে পারছেন আমার অবস্থা? এইখানে কাছেই থানা। অথচ তারা আসছে না। আমার তো তাদের হেল্প লাগবে। তিন দিন ধরে আমি বিছানা থেকে উঠতে পারছি না। আমার পরিচিতরা কই? একটু আসবেন দেখবেন? এরা কারা? ভাঙচুর করছে। এসব আল্লাহ সহ্য করবে না। আপনারা কত মানুষ এই লাইভ দেখছেন। কেউ কিছু বলছেন না। আমার বাসায় আমার বুড়ো নানা এসেছেন। আপনারা মিডিয়ার কেউ আসবেন? আমি তো মরে যাচ্ছি।’

বিকেল চারটার দিকে র‍্যাবের কর্মকর্তারা পরীমণির বাসায় প্রবেশ করেন। রাত সোয়া আটটার দিকে তাঁরা পরীমণিকে নিয়ে বের হয়ে যান। অভিযানে অংশ নেওয়া এক র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, অভিযানে প্রথম দিকে পরীমণি তাঁদের সহযোগিতা করেননি। পরে তাঁর ঘর তল্লাশি করে ফ্ল্যাটের কেবিনেট থেকে বিদেশি মদ, লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড (এলএসডি) এবং মাদক আইস উদ্ধার করা হয়। তাঁর ড্রয়িং রুমের কাভার্ড, শোকেস, ডাইনিংরুম, বেডরুমের সাইড টেবিল এবং টয়লেট থেকে বিপুলসংখ্যক মদের বোতল উদ্ধার করা হয়। ওই কর্মকর্তা বলেন, পরীমণির বাসায় এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে মদ নেই। তাঁর কাছে দেশি-বিদেশি নামীদামি ব্র্যান্ডের বিপুল পরিমাণ মদ ছিল, যা বাংলাদেশে খুব কমই আমদানি হয়। তিনি বলেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

গত ৯ জুন সাভারের বিরুলিয়ায় ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেন পরীমণি নিজেই। পরে ১৪ জুন সাভার মডেল থানায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলার পর বোট ক্লাবের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। নাসির উদ্দিন মাহমুদ কিছুদিন আগে জামিনে বেরিয়ে আসেন। তবে শুরু থেকেই এ ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাতে বিতর্কিত ব্যবসায়ী নেতা হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করে র‍্যাব। তাঁর বাসা থেকে বিদেশি মদ, বিদেশি মুদ্রা, হরিণ ও ক্যাঙারুর চামড়া, ক্যাসিনোর সরঞ্জাম ও ওয়াকিটকি সেট উদ্ধার করা হয়। এরপর গত রোববার রাতে রাজধানীর বারিধারা ও মোহাম্মদপুর এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় ওই দুই মডেলের বাসা থেকেই বিপুল পরিমাণ মদ, ইয়াবা, সিসা উদ্ধার করা হয়। এদের প্রত্যেককেই আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পৃথক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত