Ajker Patrika

রানা প্লাজা ধসে পা হারিয়েও সুখী সুমি আক্তার

অরূপ রায়, সাভার
Thumbnail image

জীবিকার তাগিদে ২৪ এপ্রিল সকাল ৮টার মধ্যেই ওরা কারখানায় যান। সকাল ৯টার ঠিক মিনিট দশেক আগে সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে হঠাৎ বিকট শব্দে আছড়ে পড়ে রানা প্লাজার আটতলা ভবন। মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ভবনটি। নিশ্বাস নিয়ে ফেরা শ্রমিকদের ভর্তি করা হয় স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে।

তাঁদেরই একজন আরতী বালা দাস। আরতী বালা সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে। দুঃসহ সেই স্মৃতি তাঁকে নাড়া দিলেও স্বামী আর সন্তান নিয়ে সংসার জীবনে তিনি সুখী।

রানা প্লাজায় কর্মরত অবস্থায় আরতীর সঙ্গে সম্পর্ক হয় মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার ফোর্ডনগর গ্রামের মোখলেছ মিয়ার ছেলে মামুন মিয়ার। মামুন স্থানীয় একটি কারখানায় চাকরি করতেন। তাঁদের সেই সম্পর্ক আড়ও গাড়ো হয় রানা প্লাজায় আরতীর পা হারানোর পর। একপর্যায়ে তাঁরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। মামুনের পরিবারের সম্মতিতে আট বছর আগে তাঁরা বিয়ে করেন। বিয়ের আগে আরতী ধর্মান্তরিত হয়ে নাম রাখেন সুমি আক্তার। ফোর্ডনগরে শ্বশুরবাড়ির পাশে শনিবার সকালে কথা হয় সুমি আক্তারের সঙ্গে। কৃত্রিম পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ছেলে সিয়াম ইসলামকে (৭) নিয়ে দোকানে যাচ্ছিলেন তিনি।

সুমি জানান, তিনি আর তাঁর মা রানা প্লাজার সাত তলার একটি কারখানায় কাজ করতেন। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল কর্মস্থলে গিয়ে কাজ শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে বিকট শব্দে ভবন ধসে পড়ে। তিনি দৌড়ে বেড় হতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কয়েক ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরে দেখেন তাঁর ডান পায়ের উপড়ে দুইটি লাশ আর লাশের উপড়ে ভবনের বিম। অনেক চেষ্টা করেও তিনি পা নাড়াতে পারছিলেন না। বেঁচে ফেরার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। এভাবে দুই দিন কেটে যায় তাঁর। ঘটনার তৃতীয় দিনে উদ্ধার কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে সাভারের একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে দেন।

কথা বলার একপর্যায়ে সুমির চোখে পানি চলে আসে। তিনি জানান, সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা তিনি কোনো দিন ভুলতে পারবেন না। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর মা ভবনের নিচে চাপা পরে মারা যান। তাঁর (সুমি) ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ কেটে ফেলতে হয়। পরবর্তীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাঁকে কৃত্রিম পা সংযোজন করে দেওয়া হয়। সেই পা দিয়েই তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেন।

সুমি বলেন, ‘পা আর মাকে হারালেও আমি অনেক সুখী। পায়ের জন্য মামুন আমাকে দূরে ঠেলে না দিয়ে কাছে টেনে নিয়েছে। আমার স্বামী ও সন্তান আছে, আছে গোছানো সংসার। একটা নারীর জীবনে এর চেয়ে আর বেশি চাওয়া-পাওয়ার কী থাকতে পারে?’

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক নিহত হন। পঙ্গুত্ব বরণ করেন ১ হাজার ১৬৯ জন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত