Ajker Patrika

পাকুন্দিয়ায় উপবৃত্তি পায়নি প্রাথমিকের ৫ হাজার শিক্ষার্থী, কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার একটি প্রাথমিক স্কুল। ছবি: আজকের পত্রিকা
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার একটি প্রাথমিক স্কুল। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের গাফিলতিতে উপজেলার পৌর সদরসহ তিনটি ইউনিয়নের ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন স্কুলের অফিসকক্ষে ভিড় করছেন তাঁরা। এদিকে শিক্ষা কর্মকর্তার দাবি, নতুন সফটওয়্যার ধীরগতিতে কাজ করায় আইপিএমআইএস থেকে বাদ পড়েছে শিক্ষার্থীদের নাম।

জানা গেছে, সরকারের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করা হয়। দুটি ক্যাটাগরিতে সরকার ছয় মাস পরপর ৯০০ এবং ১ হাজার ৮০০ টাকা করে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেয়। সাধারণত শিক্ষার্থীদের মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধিত মোবাইল ব্যাংকিং ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে এই উপবৃত্তির টাকা পাঠানো হয়।

গত ১৫ জুন থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত সারা দেশে উপবৃত্তির কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য নতুন সফটওয়্যারে শিক্ষার্থীদের ছবিসহ তালিকা হালনাগাদ করার কাজ শেষ হয়। এতে পাকুন্দিয়া পৌর সদরসহ মির্জাপুর ও হোসেন্দী—তিনটি ক্লাস্টারের ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার ২৬০ শিক্ষার্থীর নাম আইপিআইএমএসের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। এই তিনটি ক্লাস্টারের দায়িত্বে ছিলেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল।

মির্জাপুর ক্লাস্টারের অধীনে মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর। তাঁর ছেলে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তিনি জানান, সরকার উপবৃত্তির মাধ্যমে যে টাকা দেয়, তা দিয়েই ছেলের পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে থাকেন। এ বছর উপবৃত্তির টাকা না পাওয়ায় তাঁর ওপর আর্থিক চাপ বাড়বে। মির্জাপুর ক্লাস্টারের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীর বাবা সোলাইমান বলেন, ‘আমি একজন দিনমজুর। অন্যের জমিতে খেটে যা পাই তা দিয়ে সংসার চালাই। আমার ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাতে এমনিতেই কষ্ট হয়। সরকার থেকে যে উপবৃত্তি পাই, তাতে আমার অনেক উপকার হয়। এ বছর উপবৃত্তির টাকা না পেয়ে আমি হতাশ।’

উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের ঝাউগারচর গ্রামের চরকুর্শা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেছে, ‘আমার বাবা নাই। আমার মা আমাকে পড়াশোনা করান। স্কুল থেকে যে টাকা বৃত্তি পাই, তা দিয়েই আমার লেখাপড়ার খরচ চালাই।’

এই তিন ক্লাস্টারের কয়েকজন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক দাবি করেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নির্দেশ মোতাবেক তাঁরা তাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির চাহিদার তালিকা সময়মতো অনলাইনে পূরণ করে সব কাজ সম্পন্ন করে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের মেইলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা যাচাই করে শিক্ষা কর্মকর্তার মেইলে পাঠানোর কথা থাকলেও তিনি তা করেননি। সামনের কিস্তিতে উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীরা পাবে, এটা শুধুই আশ্বাস।

সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘উপবৃত্তির তালিকা প্রেরণের শেষ সময়টাতে আমি ট্রেনিংয়ে ছিলাম। তা ছাড়া, সার্ভার জটিলতার দরুন আমার মোবাইলে কাজ করতে পারছিলাম না। আইডি, পাসওয়ার্ড, ক্যাপচা এবং ওটিপি জটিলতার কারণে এমনটা হয়েছে। আমি ইচ্ছা করে বা অবহেলায় করেছি, এমন বিষয় না। অনেক উপজেলায় এমন হইছে। আপনি খোঁজ নেন।’

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ দৌলত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা আমার আইডিতে উপবৃত্তির চাহিদা পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই আমি অ্যাপ্রুভ করে দেই। কিন্তু এই তিনটি ক্লাস্টারের চাহিদা আমার আইডিতে আসেনি। চাহিদা জমাদানের শেষ সময় রাত ১১.৫৯ মিনিট পর্যন্ত ছিল। আমি শেষ সময় পর্যন্ত চেক করে সব চাহিদা অ্যাপ্রুভ করে দিয়েছি। কিন্তু পরে জানতে পারি, তিনটি ক্লাস্টারের চাহিদা জমা হয়নি।’

মোহাম্মদ দৌলত হোসেন ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাকে কেউ অবগত করেনি। তবে কেন এমনটা হলো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সারা দেশে এমন ১৭ লাখ শিক্ষার্থী এ বছর উপবৃত্তি-সংক্রান্ত জটিলতায় পড়েছে। আমরা উপবৃত্তি শাখায় কথা বলেছি, তারা আশ্বস্ত করেছে যে বাদপড়া শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা সেপ্টেম্বরে দেওয়া হতে পারে।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিব আলম বলেন, ‘বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হইছে। আমরা জানতে পেরেছি, সারা দেশেই এমন হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা মামলার আসামি দুই ভাই নেত্রকোনায় গ্রেপ্তার

‘নৌকা আউট, শাপলা ইন’, সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির চাওয়া

জরুরি অবস্থা ঘোষণায় লাগবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন, প্রস্তাবে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

বৈষম্যহীন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে গেছে

পাওনা টাকা চাওয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধরের পর বললেন, ‘আমি যুবদলের সভাপতি, জানস?’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত