Ajker Patrika

আশুলিয়ার ২২ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫: ০৬
আশুলিয়ার ২২ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

চলমান ধর্মঘট, বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় গতকাল মঙ্গলবার ২২টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ২০০৬ সালের শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় কারখানাগুলো বন্ধ করা হয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী কারখানা যত দিন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকেরা তত দিনের মজুরি পাবেন না।

আজ বুধবার সকালে ঢাকার আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত কারখানাগুলোর সামনে অনির্দিষ্টকালের বন্ধের নোটিশ দেখতে পাওয়া যায়। তবে গতকাল মঙ্গলবার এ নোটিশ টানিয়েছে। 

মঙ্গলবার শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য আশুলিয়ার যেসব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে সেগুলো হলো—অরুনিমা গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান অরুনিমা স্পোর্টস ওয়্যার ও ডিএমসি এ্যাপারেলস; এনভয় গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান মানতা এ্যাপারেলস, এনভয় ফ্যাশন্স ও এনভয় ডিজাইন; ফ্লোরেন্স গ্রুপের সিগমা ফ্যাশন্স লি.; শারমিন গ্রুপের ইশায়াত এ্যাপারেলস লি.; হামীম গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠান দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার, এ্যাপারেলস গ্যালারি লি., রিফাত গার্মেন্টস, এক্সপ্রেস ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং, আর্টিস্টিক ডিজাইন, নেক্সট কালেকশন্স; ডেকো গ্রুপের একটি কারখানা; হলিউড গার্মেন্টস (প্রা.) লি.; ডেবোনেয়ার লি.; ক্রসওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ; স্টারলিং স্টাইলস; বান্দো ডিজাইন; মণ্ডল নিটওয়্যারস লি.; এআর জিন্স প্রডিউসার ও সাদ ফ্যাশন্স।

এ ছাড়া জামগড়া এলাকার এনআরএন নিটিং অ্যান্ড গার্মেন্টস লি. গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকেই ১৩(১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। একই ধারায় টঙ্গিবাড়ী এলাকার ওয়াশ অ্যান্ড ওয়্যার লি. বন্ধ রয়েছে গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে। 

শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় উল্লেখ আছে, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো শাখা বা বিভাগে বেআইনি ধর্মঘটের কারণে মালিক উক্ত শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করিয়া দিতে পারিবেন এবং এরূপ বন্ধের ক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকগণ কোনা মজুরি পাইবেন না।’

গতকাল মঙ্গলবার আশুলিয়ার বেশির ভাগ কারখানাতেই শ্রমিকেরা কাজে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু দুপুরের দিকে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার এনভয় কমপ্লেক্স, নরসিংহপুর এলাকার শারমিন ও হামীম গ্রুপে অসন্তোষ শুরু হলে কারখানা ছুটি দেয় কর্তৃপক্ষ।

এনভয় কমপ্লেক্সের প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপকের স্বাক্ষরকৃত বন্ধের নোটিশে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখা, কারখানার কক্ষ ভাঙচুরসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বলা হয়, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী আগামী ১১-০৯-২০২৪ ইং তারিখ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করছে। পরবর্তীতে কাজের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে কারখানা খোলার তারিখ নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে।’

মঙ্গলবার শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য আশুলিয়ার অনেক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকাএমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মঙ্গলবার আরও কিছু কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করলে আশপাশের কারখানাগুলোও নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ ঘোষণা করে। আবার কিছু কারখানায় সাধারণ ছুটি ছিল। সেগুলো পরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘কয়েক দিন ধরেই বিজিএমইএর সঙ্গে মিটিং করে আমরা শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা কিছুতেই বুঝতে চাইছে না। তাদের হাজিরা বোনাস বাড়ানো হয়েছে, টিফিন বিল বাড়ানো হয়েছে, তাও তারা কারখানায় গিয়ে কাজ না করে কার্ড পাঞ্চ করে বের হয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা থাকায় কারখানার মালিকেরাও চাপে আছেন, তাঁদের বায়ার ছুটে যাচ্ছে। এ অবস্থায় দেয়ালে পিঠ লেগে যাওয়াতেই তাঁরা ১৩(১) ধারায় ছুটি দিয়েছেন। এতে কিন্তু শ্রমিকদেরই ক্ষতি, তারা কাজ না করলে বেতন পাবে না।’

ডিইপিজেডসহ আশুলিয়ার অন্যান্য কারখানায় স্বাভাবিকভাবেই কাজ চলছে বলে খবর মিলেছে। বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আশুলিয়ার সড়ক-মহাসড়কে শ্রমিকদের কোনো বিক্ষোভ কিংবা আন্দোলনের খবর পাওয়া যায়নি।

আশুলিয়া ও গাজীপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের চক্রবর্তী ও মোজারমিল বাসস্ট্যান্ড এলাকার আশপাশের আরও কিছু কারখানা আজ ছুটি দেওয়া হয়েছে। এর আগে সকাল ৮টায় গাজীপুর জেলার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের চক্রবর্তী এলাকায় সড়ক অবরোধ করে। এতে গোলযোগের আশঙ্কায় ওই এলাকার জিন্স প্লাস, শমসের নিট, ইয়ং সক্স লেবেল, কুশিয়ারা ফ্যাশন, ইউরো আর্তে ও সিনহা ডেনিম কারখানা সকাল ১০টার দিকে ছুটি দিয়ে দেয়।

শিল্প পুলিশ-১ (আশুলিয়া) জানিয়েছে, ১৩(১) ধারায় প্রায় ২২টি কারখানা ও বিভিন্ন কারণে আরও প্রায় ৮টি কারখানা ছুটি দেওয়া হয়েছে।

শিল্প পুলিশ-১-এর (আশুলিয়া) পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানিয়েছেন, ১৩ (১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ২২টি কারখানা ও বিভিন্ন কারণে আরও প্রায় ৮টি কারখানা সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থেমে গেল কালামের ছুটে চলা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিশরীয়তপুর প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

একসময় প্রবাস জীবনযাপন করেছেন, এরপর দেশে ফিরে ঘর বেঁধেছেন বছর পাঁচেক আগে। ঘরে আছে দুই সন্তান ও স্ত্রী। নিজে ভালো থাকা, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা আবুল কালাম চোকদারের জীবন থেমে গেল। গতকাল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে যে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে, সেটির আঘাতে মৃত্যু হয় তাঁর।

শরীয়তপুরের আবুল কালাম চোকদার পাঁচ বছর আগে ঘর বেঁধেছিলেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায়, প্রিয়ার সঙ্গে। ঘরে আছে দুই সন্তান আবদুল্লাহ ও ফারিয়া। বয়স যথাক্রমে ৪ ও ২ বছর। তাদের নিয়ে পাঠানটুলী এলাকায় মনোয়ার ভিলায় থাকতেন।

গতকাল সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, আবুল কালামের শাশুড়ি রিনা আক্তার বিলাপ করছেন। আর স্বামীর লাশের পাশে আর্তনাদ করছেন প্রিয়া।

প্রিয়ার বোন নুসরাত বলেন, ‘কালাম ভাই ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করতেন। এখন আমার বড় বোন অসহায় হয়ে গেল। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কীভাবে থাকবে? আমার বাবা ইতালি থাকেন। আমাদের কোনো ভাই নেই। উনিই আমাদের ভাইয়ের অভাব পূরণ করেছিলেন।’

নিহত কালামের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের জলিল চোকদার ও হনুফা বেগম দম্পতির ছেলে আবুল কালাম চোকদার। চার ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে কালাম ভাইদের মধ্যে ছোট। প্রায় ১৫ বছর আগে তাঁর বাবা ও মা মারা যান।

কালামের চার ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই ইলিয়াস চোকদার চাঁদপুরে সিলভারের ব্যবসা করেন এবং পরিবার নিয়ে সেখানেই থাকেন। বাড়িতে তাঁর একটি ঘর রয়েছে এবং মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়ি আসেন।

মেজ ভাই খোকন চোকদার বাড়িতেই থাকেন এবং কৃষিকাজ করে সংসার চালান। তাঁকে মাঝেমধ্যে আর্থিক সহযোগিতা করতেন আবুল কালাম।

আবুল কালাম ছয়-সাত বছর আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসেন। এরপর তিনি আর বিদেশে যাননি। ঢাকাতেই জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ফার্মগেট এলাকায় তিনি একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করতেন। স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে বসবাস করতেন নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায়। গ্রামে থাকা মেজ ভাইয়ের সংসারের জন্যও নিয়মিত টাকা পাঠাতেন তিনি।

কালামের ভাবি আসমা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকালে ফোনে কথা হইছিল। আমি বলছিলাম, ভাইয়ের সাথে কথা বলো, বাড়িতে চলে আসো। সে বলেছিল, কয়েক দিনের মধ্যেই আসব। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর শুনি—মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে মারা গেছে।’

সরকারের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আসমা বলেন, ‘আমাদের সংসারের হাল ও-ই ধরেছিল। এখন ওর সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।’

ছোটবেলা থেকে কালাম পরিশ্রমী ছিলেন বলে জানান তাঁর চাচাতো ভাই আব্দুল গণি মিয়া চোকদার। তিনি বলেন, ‘সংসারের বোঝা একা কাঁধে নিয়েছিল সে। হঠাৎ এমন মৃত্যুকে মেনে নেওয়া কঠিন।’

গতকাল রাত ১০টায় পাঠানটুলীর বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদে কালামের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর তাঁর মরদেহ শরীয়তপুরে নিজ গ্রামে নেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আজ সোমবার সকাল ৯টায় নড়িয়া পৌর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নেত্রকোনার বারহাট্টা: নদের তীর দখল করে কারখানা নির্মাণ

  • উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদের তীর দখল।
  • নিজের জায়গার পাশে নদের ৫৫ শতাংশ জায়গা দখল করে দেয়াল নির্মাণ।
সাইফুল আরিফ জুয়েল, নেত্রকোনা 
নেত্রকোনার বারহাট্টায় কারখানা নির্মাণের জন্য কংস নদ দখল করে প্রাচীর নির্মাণ। ছবি: আজকের পত্রিকা
নেত্রকোনার বারহাট্টায় কারখানা নির্মাণের জন্য কংস নদ দখল করে প্রাচীর নির্মাণ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদের তীর দখল করে কারখানা গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ কবির মোস্তাক আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গ্রামটির সেতুর পাশে কংস নদের জায়গায় মাটি ভরাট, দেয়াল ও পিলার স্থাপন করে শিল্পকারখানা নির্মাণ করছেন তিনি। এতে নদের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোস্তাক আহম্মেদ একজন শিল্পপতি। তিনি মল্লিকপুর গ্রামের মৃত রেহান উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। বর্তমানে সপরিবারে ঢাকায় থাকেন।

সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের (দক্ষিণ পাড়া) সেতুর পাশে নদের পাড়ঘেঁষে প্রায় দুই একরের বেশি জায়গাজুড়ে কারখানা স্থাপন করছেন কবির মোস্তাক আহমেদ। কয়েক মাস আগে নিজের জায়গার পাশে নদের ৫৫ শতাংশ জায়গা দখল করে দেয়াল তোলেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ জানালেও মোস্তাকের অনুসারীরা তাদের হুমকিধমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, এ নদী শুধু কৃষির জন্যই নয়, বরং হাজারো মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কেউ মাছ ধরে, কেউ গোসল বা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করে নদের পানি। পানির এই প্রবাহ রুদ্ধ হলে কংস একদিন মরে যাবে—এমন আশঙ্কা স্থানীয়দের।

স্থানীয় বাসিন্দা রিপন মিয়া বলেন, ‘এ নদ ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনা করা যায় না। এখন দেয়াল তুলছে, পিলার (প্রাচীর) বসাচ্ছে; আমরা ভয় পাচ্ছি, আর কিছুদিন পর হয়তো নদটাই থাকবে না। বিষয়টি নিয়ে কথা বললেও কবির মোস্তাকের অনুসারীরা হুমকিধমকি দেন। আমরা চাই প্রশাসন যেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়।’ আরেক বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, কারখানা করবে ভালো কথা, সেটা নিজের জায়গায় করুক। নদের অর্ধেক অংশ দখল করে দেয়াল তোলা হয়েছে। এতে চিরকালের জন্য কংস নদ হারিয়ে যাবে।

শফিক মিয়া বলেন, ‘দখল বন্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে কংস নদ হারিয়ে যাবে’এ বিষয়ে কথা বলতে পরপর তিন দিন একাধিকবার কল করা হলেও মোস্তাক আহম্মেদ রিসিভ করেননি।

অভিযোগ রয়েছে, চার মাস আগে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীমা আফরোজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এত দিনেও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।

সিংধা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা উজ্জ্বল দত্ত বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীমা আফরোজ মহোদয়। সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যাচাই করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই জায়গার নকশাসহ প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জায়গাটি পরিমাপ করে নিশ্চিত হতে হবে। পরে উচ্ছেদ নোটিশ পাঠানো হবে। কাগজপত্র দেখে যতটুকু জেনেছি নদের বেশ অনেকটা অংশ ওই দেয়ালের ভেতর পড়েছে। ওখানে ৫৫ শতক জায়গা রয়েছে। সম্প্রতি সহকারী কমিশনার (ভূমি) বদলি হয়েছেন। নতুন একজন যোগদান করলে আবার এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে।’

বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খবিরুল আহসান বলেন, কংস নদের জায়গা দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ নথি তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। যেকোনো সময় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: স্ত্রীরোগের চিকিৎসক নেই সেবাবঞ্চিত রোগীরা

  • চিকিৎসক ও জনবলসংকটে চিকিৎসা দিতে হিমশিম।
  • ২৫ চিকিৎসকের জায়গায় আছেন মাত্র তিনজন।
মো. মাহমুদুল হক মানিক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভার এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাত্র তিনজন চিকিৎসকের ওপর। চিকিৎসক ও জনবল স্বল্পতায় বেহাল অবস্থায় চলছে ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

জানা গেছে, জেলার বিরামপুর উপজেলাটি পার্শ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলার কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিবেচিত। ভালো যোগাযোগব্যবস্থার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিরামপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ ও হাকিমপুর উপজেলার অসংখ্য রোগী প্রতিনিয়ত চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক ও জনবলসংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে, ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে মেডিকেল কর্মকর্তা, কনসালট্যান্ট, সহকারী সার্জনসহ মোট ২৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়া মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোরে প্রতিদিন রোগীদের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম কর্তব্যরতরা।

এ দিকে গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে সিজারিয়ান অপারেশন। এ ছাড়া হাসপাতালের নার্স, ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কয়েকটি পদও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।

চিকিৎসা নিতে আসা আতিকুর রহমানসহ কয়েকজন রোগী বলেন, সামর্থ্যবানরা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা করালেও গরিব রোগীদের ভরসা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় ৫৬ কিলোমিটার দূরে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের পাঠানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) শাহরিয়ার পারভেজ বলেন, ‘চিকিৎসক ও জনবলসংকটে দিনরাত রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিরামপুর উপজেলার একটি পৌরসভা, সাতটি ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার ৫০০-৬০০ রোগীকে প্রতিদিন আউটডোরে এবং প্রায় ৬০ জন ভর্তি রোগীকে ইনডোরে চিকিৎসা দিতে হয়। মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে এত রোগীকে সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

মেডিকেল কর্মকর্তা আরও বলেন, চিকিৎসক ও জনবলসংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল সংযুক্ত করা হলে রোগীরা ভোগান্তিহীনভাবে চিকিৎসাসেবা পাবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাণ ফিরছে ঘাটের

নিষেধাজ্ঞা শেষে জাল-নৌকা নিয়ে নদীতে জেলেরা

  • পর্যাপ্ত মাছ পেয়ে খুশি হাতিয়ার জেলেরা।
  • কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মেলেনি চাঁদপুরে।
  • লক্ষ্মীপুরে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০০-১,৬০০ টাকায়।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিচাঁদপুর প্রতিনিধিহাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০২: ৪৮
ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে ঘাটগুলোতে। শ্রমিকেরা টুকরিভর্তি মাছ মাথায় করে তুলছেন বাজারে, পাইকারেরা হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করছেন। গতকাল বরিশালের পোর্ট রোড মোকামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে ঘাটগুলোতে। শ্রমিকেরা টুকরিভর্তি মাছ মাথায় করে তুলছেন বাজারে, পাইকারেরা হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করছেন। গতকাল বরিশালের পোর্ট রোড মোকামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও ইলিশ শিকারে নেমেছেন জেলেরা। গত শনিবার রাত থেকে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও হাতিয়ার ঘাটগুলোতে শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। দীর্ঘ বিরতির পর নদীতে নেমে আশানুরূপ মাছ পেয়ে খুশি অনেকে। আবার কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ কেউ কেউ। দাম কোথাও আগের মতোই, আবার কোথাও কিছুটা কমেছে।

নোয়াখালীর হাতিয়ায় মধ্যরাতেই সাগরে নেমে পড়েন জেলেরা। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় অনেক মাছ পেয়েছেন কেউ কেউ। বুড়িরচর সূর্যমুখী ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ঘাটজুড়ে তীব্র ব্যস্ততা। শ্রমিকেরা টুকরিভর্তি মাছ মাথায় করে তুলছেন বাজারে, আর পাইকারেরা হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করছেন। মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন বলেন, ‘খুব ভোর থেকে বাজারে মাছ বেচাকেনা শুরু হয়েছে। জেলেরা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নদী থেকে আশানুরূপ মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরছেন। তাঁদের জালে ভালো মাছ ধরা পড়ছে।’

জেলে আবদুল কাদের বলেন, রাত ১২টার পর নদীতে গিয়ে সকালে ৩ মণ ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরেছেন। আকারে ছোট হলেও দাম ভালো। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ যদি এমন মাছ পাই, আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।’

চাঁদপুর সদরের হরিণা মাছঘাটে গতকাল সকাল থেকে শুরু হয় হাঁকডাক। কেউ নদী থেকে সদ্য ধরা ইলিশ নিয়ে ফিরছেন, কেউ আবার টাটকা মাছ কেনার অপেক্ষায়। ঘাটজুড়ে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়। জেলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘পেশা ইলিশ ধরা। ধার করে হলেও নদীতে নামতে হয়। কিন্তু যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে, তাতে খরচ বাদে তেমন থাকে না।’ একই ঘাটের জেলে হুমায়ুন ঢালি জানান, রাতভর জাল ফেলেও তেমন মাছ মেলেনি।

ঘাট থেকে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ কিনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন খুচরা মাছ ব্যবসায়ী আবদুর রহমান। তিনি বলেন, মাছের দাম কমেনি বা বাড়েনি। ওজনে এক কেজিতে ৪টা, এমন প্রতি হালি কিনেছেন ৮০০ টাকা দরে। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। বড় সাইজের পাঙাশ কিনেছেন প্রতি কেজি সাড়ে ৮০০ টাকা দরে।

মাছ ব্যবসায়ী আবুল কাশেম কালু হাওলাদার বলেন, ‘জেলেরা রাত থেকে নদীতে নামলেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মেলেনি। কয়েক দিন পর বোঝা যাবে নদীতে মাছ আছে কি না।’

লক্ষ্মীপুরে গতকাল সকাল থেকেই সরগরম ছিল মজু চৌধুরীর হাট, মতিরহাট, লুধুয়া ও চর আলেকজান্ডার ঘাট। আকারের ওপর নির্ভর করে কেজিপ্রতি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। গড়পড়তা দাম নিষেধাজ্ঞার আগের সময়ের তুলনায় কিছুটা কম।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এবার অভিযান সফল হয়েছে। মা ইলিশ নির্ভয়ে ডিম ছাড়তে পেরেছে, ফলে উৎপাদন বাড়ার আশা করা হচ্ছে। জেলার নিবন্ধিত জেলেদের প্রত্যেকে ভিজিএফের চাল পেয়েছেন। অভিযানকালে দুই শতাধিক মোবাইল কোর্টে অর্ধশতাধিক জেলেকে জেল-জরিমানা করেছে। এ ছাড়া ১৬ লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত