Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা হস্তক্ষেপ নয়, সুষ্ঠু নির্বাচনের বার্তা: ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা হস্তক্ষেপ নয়, সুষ্ঠু নির্বাচনের বার্তা: ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের তৎপরতা কোনো হস্তক্ষেপ নয়, বরং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্যই বার্তা দেওয়া হচ্ছে দেশগুলোর পক্ষ থেকে। শুধু তাই নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের কিছু না বলাও এক ধরনের বার্তা। আজ রোববার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের এক অনলাইন আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। 

সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আজ রোববার সকালে ‘বাংলাদেশের নির্বাচনে বিদেশি শক্তির প্রভাব’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ। মূল আলোচনায় ১৯৯০ পরবর্তী সব নির্বাচনে বিদেশিদের ভূমিকার বিষয়গুলো তুলে ধরেন তিনি। তার বক্তব্যে সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিদেশিরা কি কি ভূমিকা রেখেছে সেসব ইতিহাস উঠে আসে। 

আলী রীয়াজের মতে, নির্বাচনে দুটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের বনিবনা না হওয়ায় বিদেশিরা সংলাপ বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে মধ্যস্থতার জন্য দুদল কখনোই আপত্তি করে না। কিন্তু এ বছরের পরিস্থিতিতে তারা সেটি না করে ভিসানীতি আরোপের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বার্তা দেওয়া হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। 

আলী রীয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাইরের প্রভাবের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো ভারত। এবার নির্বাচন নিয়ে ভারত যে কিছু বলছে না—এটাও একটা বার্তা। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো শুভেচ্ছাবার্তা আসেনি, এমনকি তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনও পাঠায়নি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র যত সংকুচিত হবে, ততই এখানে চীনের প্রভাব বিস্তারের পরিধি বাড়বে।’ 

ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের নন-রেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো ড. শ্রীরাধা দত্ত প্রফেসর আলী রীয়াজের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, নির্বাচন নিয়ে ভারতের কথা না বলাটাও একটা অবস্থান। নিজেরা ঠিক না থাকলে বাইরের লোক কথা বলার সুযোগ পায়, দিল্লিতে যে সরকারই থাকুক না কেন, তারা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে একইভাবে কাজ করে। আওয়ামী লীগ যা কিছুই করুক না কেন, ভারত তা সামাল দেবে বলে বাংলাদেশে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। 

 ২০১৮ সালের নির্বাচনে কেউ ভোট দিতে পারেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর কারণ আগেই সেখানে বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছিল। ভারত-চীন ওই নির্বাচন মেনে নিলেও যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই ওই নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছিল। যে সরকারই আসুক বাংলাদেশ-ভারত একসঙ্গে কাজ করতে পারবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভারত চাইবে ২০২৪ সালে এই সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। অন্যদিকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে ক্ষমতার পালাবাদল হয়েছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অসাংবিধানিকভাবে পাশ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্যই ছিল ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা। সম্পূর্ণ বিতর্কিত এবং অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার টিকে আছে। প্রধানমন্ত্রী চাইলেও দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’ 

ভোটাধিকার হরণের অর্থ মানবাধিকার হরণ উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘মানবাধিকার কারও অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির স্পন্দনই হলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। তারা বাংলাদেশ বিষয়ে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এগুলো হস্তক্ষেপ নয়। এগুলো তাদের মূল্যবোধভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিরই অংশ। কিন্তু, তাদের কথা না শুনে আমরা অনেককে শত্রু বানিয়েছি। জনগণ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি, কারণ জনগণও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।’ 
 
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বাংলাদেশকে বিশ্বের মানুষ গণতান্ত্রিকই দেখতে চায়। আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘাটতিগুলোর কারণে বাইরের কথা শুনতে পাই। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সংকুচিত হয়ে যাবে—এমনটাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনানিবাস ঘিরে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’, বরখাস্ত সৈনিকসহ গ্রেপ্তার ৩

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

থাইল্যান্ডে পর্যটন ভিসা পেতে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে

দক্ষিণপন্থীদের কবজায় বাংলাদেশের রাজনীতি: বদরুদ্দীন উমর

বন্দর-করিডর আপনার এখতিয়ারে নেই, বিদেশি উপদেষ্টাকে বিদায় করুন: ইউনূসকে সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত