Ajker Patrika

গ্রেপ্তার এড়াতে কোনো ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতেন না রজব আলী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২২, ১৫: ০৬
গ্রেপ্তার এড়াতে কোনো ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতেন না রজব আলী

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি কে এম আমিনুল হক ওরফে রজব আলীকে রাজধানীর কলাবাগান থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে শুক্রবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-২। 

র‍্যাব বলছে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে জেল থেকে বেরিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন রজব আলি। এমনকি গ্রেপ্তার এড়াতে এবং নিজের পরিচয় যাতে প্রকাশ না হয়ে যায় সে জন্য কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতেন না তিনি।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

কমান্ডার মঈন বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ এলাকায় এ দেশের মুক্তিকামী মানুষকে হত্যাসহ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে গণহত্যা, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন রজব আলী। তিনি ভৈরবে একটি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় পাকিস্তানি ইসলামি ছাত্রসংঘের কলেজ শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য এলাকায় ‘আলবদর’ বাহিনী গঠন করেন এবং কিশোরগঞ্জ জেলার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার কৃষ্ণপুর, গদাইনগর ও চণ্ডীপুর গ্রামে এবং কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার সদানগর ও সাবিয়ানগর গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক এলাকায় গণহত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুণ্ঠন ও নির্যাতন করেন। এ ছাড়া স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের অপহরণ এবং রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন। 

আল মঈন আরও বলেন, আমিনুল ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৭২ সালে তাঁর বিরুদ্ধে অষ্টগ্রাম থানায় দালাল আইনে তিনটি মামলা হয়। মামলাসমূহে তাঁর ৪০ বছর সাজা হয়, কিন্তু রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় ১৯৮১ সালে মাত্র ১০ বছর সাজা ভোগ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান রজব। ১৯৮২ সালে জেল থেকে বের হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ও বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকবার পাকিস্তানে যান। ১৯৯৭ সালে তিনি নিজ এলাকা ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসেন। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর ধানমন্ডি ও কলাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করে বসবাস করছিলেন। আত্মগোপনে থাকার সময় জনসমাগম, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলতেন।

র‍্যাবের মুখপাত্র মঈন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর রজবের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর এই অভিযোগের তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ২০১৬ সালের ১৮ মে ট্রাইব্যুনাল আমিনুল হক ওরফে রজবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর রজব আলীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। পরে তাঁকে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর কলাবাগান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

খন্দকার মঈন বলেন, রজব আলী ‘আমি আলবদর বলছি’ ও ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ নামে দুটি বই প্রকাশ করেন। এই বইতে সে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের শোকাবহ ১৫ আগস্টের দিনসহ সামগ্রিক বিষয়গুলো অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আত্মস্বীকৃতি হিসেবে নিজেকে ‘আলবদর কমান্ডার’ দাবি করতেন। ২০১৪ সালে তাঁর প্রকাশিত ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ বইটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় সরকার বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ ঘটনায় রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা রুজু হয়। 

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, স্ত্রীকে নিয়ে গত আট বছর ধরে ধানমন্ডি, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান এলাকার বিভিন্ন স্থানে বাসা বদল করে থাকতেন রজব। তাঁর দুই মেয়ে। তাঁরা দুজনেই প্রবাসী। বিদেশ থেকে তাঁর থাকা-খাওয়া ও সব খরচ বহন করত। এই দুই মেয়ে ছাড়া আর কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করতেন না তিনি। 

রাজনৈতিক বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার মঈন বলেন, রাজনৈতিক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মানবতাবিরোধী যেসব দল রয়েছে, সেগুলোতে তাঁর কোনো পদ নেই। তাঁর কোনো যোগাযোগ পাওয়া যায়নি। পাকিস্তান ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তখন যাঁদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটেছিল তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে বেশ কয়েকবার পাকিস্তান গিয়েছেন। পাকিস্তান গিয়ে দেড় থেকে তিন মাস অবস্থান করেছেন। তিনি নিজেকে আলবদর হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত