Ajker Patrika

হঠাৎ লেন পরিবর্তন করায় ফরিদপুরে দুই বাসের সংঘর্ষ: পুলিশ 

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ২১: ২৭
হঠাৎ লেন পরিবর্তন করায় ফরিদপুরে দুই বাসের সংঘর্ষ: পুলিশ 

‘ভোররাত। সবার চোখেই ঘুম। হঠাৎ বিকট শব্দে চারদিকে চিৎকার। চেয়ে দেখি কেউ বাসের সিটের নিচে চাপা পড়ে আছে, কারও হাত-পা কেটে গেছে। কেউ বাসের ইঞ্জিনের ভেতরে ঢুকে গেছে। পরে শুনি আমাগো বাসের লাইনে এসে আরেকটি বাস এসে মেরে দিছে।’ 

এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেলেন ফরিদপুরে দুই যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত মারুফ হোসেন (৩৫)। তিনি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার তাড়াইন গ্রামের বাসিন্দা। ঢাকায় যাচ্ছিলেন ইটভাটায় কাজ করতে। এ ঘটনায় পা ভেঙে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

মারুফসহ আহত অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উল্টা লেনে বাস চলে আসায় ঘটে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এতে ঝড়ে যায় পাঁচজনের প্রাণ। হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তাও একই কথা জানিয়েছেন। 

এ ঘটনায় আরও ২৭ জন যাত্রী আহত হয়। আহতদের মধ্যে ১৭ জন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। 

আজ মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের মল্লিকপুরে ঢাকাগামী খাগড়াছড়ি পরিবহন ও সাতক্ষীরাগামী গ্রিন এক্সপ্রেসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। 

এ সময় ঘটনাস্থলে নিহত হয় ৫ জন। তাঁরা হলেন—সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার তাড়ানিপুর গ্রামের মৃত সাফাত গাজীর ছেলে বক্কার গাজী (৫০), শ্রীফলকাঠি গ্রামের ইছা মোড়লের ছেলে বাবু মোড়ল (৪০), আবাদচন্ডীপুর গ্রামের আনসার মোড়লের ছেলে মহাসিন মোড়ল (৩৫), কালীগঞ্জের বাজারগ্রামের মনিরুল হোসেনের ছেলে নাহিদ হোসেন (১৯) ও মাগুরা জেলা সদরের বড়পশ্চিমপাড়া এলাকার সিরাজ শেখের ছেলে পিকুল শেখ (২৬)। দুর্ঘটনাকবলিত দুই বাস। ছবি: আজকের পত্রিকানিহতদের মধ্যে পিকুল শেখ গ্রিন এক্সপ্রেস বাসের চালকের সহকারী ছিলেন এবং বাকিরা খাগড়াছরি পরিবহনের যাত্রী ছিলেন। এছাড়া আহতরা অধিকাংশ খাগড়াছড়ি পরিবহনের যাত্রী ছিলেন। আহতদের মধ্যে কেউ আশঙ্কাজনক নেই বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হাইকুল ইসলাম জানিয়েছেন। 

প্রত্যক্ষদর্শী, আহত ও হাইওয়ে পুলিশের ভাষ্যমতে, গ্রিন এক্সপ্রেস যাত্রীবাহী বাসটি তাঁর নির্ধারিত লেন ছেড়ে উল্টা লেনে চলে আসে। এতে দুটি বাসের সংঘর্ষ হয়ে সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, ভোর সাড়ে তিনটার দিকে দুর্ঘটনাটি হলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ জানানো হয়। এর প্রায় এক ঘণ্টা পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। এ সময় বাস কেটে অনেককেই বের করা হয় এবং পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৭ জনকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ১২ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে। 

শরিফুল হোসেন নামের আহত এক যুবক বলেন, ‘আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। চিৎকার দিয়ে দেখি ঢাকা থেকে আসা পরিবহন (গ্রিন এক্সপ্রেস) আমাদের পরিবহনের সামনে মেরে দিয়েছে। ওই পরিবহন আমাদের সাইডে চলে এসেছিল।’ একই কথা বলেন আহত অনেকে। 

বিষয়টি নিয়ে সকালে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, গ্রিন এক্সপ্রেসটি প্রায় ৭০ থেকে ৮০ গজ দূর থেকে তাঁর লেন পরিবর্তন করে। তাঁর যাওয়ার কথা বাম পাশে কিন্তু ডানপাশের লেনে চলে আসে। ওই সময় খাগড়াছড়ি পরিবহণ তাঁর লেনেই ছিল। তখনই দুই বাসের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ধারণা করা হচ্ছে, চালকের চোখে ঘুম ছিল। হাসপতালে আহতের দেখতে আসেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা সুচিকিৎসা পেতে ভোগান্তি

দুটি বাসের সংঘর্ষের ঘটনার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের ভর্তি করা হয়। সেখানে ১০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং বাকি ১৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদেরও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও বেলা একটা পর্যন্ত সুচিকিৎসা দেওয়া হয়নি বলে আহত অনেকেই অভিযোগ করেন। তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ও স্বজনেরা না আসায় এমন ভোগান্তির শিকার হন বলে জানিয়েছেন। 

আহতদের মধ্যে রয়েছেন খাগড়াছরি পরিবহনের যাত্রী আমজাদ হোসেন। তিনি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানাধীন তারানিপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি ইটভাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করার জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলেন। বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

দুপুর ১২টার দিকে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের এখানে আনায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরিক্ষার জন্য কাগজে লিখে দিয়ে যাচ্ছে নার্সরা। কিন্তু আমাদের কাছেতো টাকা নেই এবং আমাদের আত্মীয়স্বজন কেউ এখনও আসেনি। এখন ওষুধ না আনায় ও পরীক্ষা-নিরিক্ষা না করায় ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছি না।’ 

যা বলছে প্রশাসন
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা, পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল। এ সময় তাঁরা আহতদের খোঁজ খবর নেন এবং চিকিৎসায় বিঘ্ন না ঘটানোর নির্দেশ দেন। এছাড়া এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য সুনির্দিষ্ট কারণ বের করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক। 

এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, ‘নিহত পাঁচজনকে প্রাথমিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে এবং আহত ১৭ জনকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে তাঁদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য আর্থিক অনুদানও দেওয়া হবে।’ 

পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি এবং চালক বা সহকারী কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এছাড়া তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পরে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত