Ajker Patrika

তাজউদ্দীন হাসপাতালের লিফটে আটকে মরার জন্য রোগীই দায়ী!

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ মে ২০২৪, ০১: ৪৮
তাজউদ্দীন হাসপাতালের লিফটে আটকে মরার জন্য রোগীই দায়ী!

গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটে আটকে পড়ে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে ‘লিফটে আটকে পড়া রোগীসহ লোকজন দরজা ধাক্কাধাক্কি করায় লিফটের দরজার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কাজ করেনি’ বলে দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া, লিফটে রোগীসহ অন্যরা ৪৫ মিনিট নয়, মাত্র ১০–১৫ মিনিট আটকে ছিলেন বলেও চিঠি উল্লেখ করা হয়েছে।

রোববার (১২ মে) বিকেলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে চিঠিটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম ও গণপূর্ত ই/এম বিভাগ–১০, ঢাকার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল হালিম।

রাত ১১টার দিকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চিঠিটি গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে যা বলা হয়েছে, এটি তাঁদের প্রাথমিক ধারণা।

চিঠিতে বলা হয়েছে, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোববার এম/এস রোসন এলিভেটরসের সরবরাহকৃত মভি ব্র্যান্ডের একটি লিফট আনুমানিক বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ৯ম ও ১০ তলার মাঝামাঝি রোগী ও রোগীর দর্শনার্থীরা হঠাৎ আটকে যায়।

প্রাথামিক ধারণা অনুযায়ী, লিফটটি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ৯ম ও ১০ তলার মাঝখানে আটকে গেলে এর এআরডি (স্বয়ংক্রিয় রেসকিউ ডিভাইস) কাজ করার জন্য এক মিনিট সময় লাগে। কিন্তু লিফটে আটকে পড়া রোগীসহ লোকজন দরজা ধাক্কাধাক্কি করায় লিফটের ডোর সেফটি কাজ করেনি।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, পরবর্তীতে লিফট অপারেটর লিফট মেশিন রুমে হাত দিয়ে ম্যানুয়ালি লিফটটি একটি ফ্লোরে আনার আগেই রোগীসহ লোকজন দরজা খুলে বের হয়ে আসেন। এসব কাজ সম্পন্ন হতে ১০–১৫ মিনিট অতিবাহিত হয়।

চিঠিতে রোগীর অসুস্থতার বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘হার্টের রোগী ছিলেন। তৎক্ষণাৎ রোগীকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবহিতকরণ চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীতউল্লেখ্য, ব্যবস্থাপত্রে রোগীকে সিসিইউ সাপোর্ট দেওয়ার জন্য রেফার করা হয়েছিল। জরুরি বিভাগে নেওয়ার পরপরই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাহলে ১০–১৫ মিনিট আগে সেই রোগী লিফটের দরজা ধাক্কাধাক্কি করলেন কীভাবে—সে প্রশ্ন উঠছে।

লিফটে কোনো ত্রুটি ছিল উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘লিফটটি নিয়মিত সার্ভিস ও মেইনটেন্যান্স করা হয় এবং বর্তমানে লিফটটি চালু আছে। আটকে পড়া রোগীসহ অন্যরা লোকজন দরজা ধাক্কাধাক্কি করায় লিফটটির সমস্যা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’

এ ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠিতে গণমাধ্যমকে ভুল তথ্য প্রচারের জন্য অভিযুক্ত করে বলা হয়েছে, পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে যে, রোগীটি ৪৫ মিনিট লিফটে আটকা পড়ে ছিল, তথ্যটি সঠিক নয়।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিফটে আটকে পড়ে এক রোগীর মৃত্যু হয়। রোববার সকাল পৌনে ১১টার দিকে মেডিসিন বিভাগ থেকে সিসিইউতে স্থানান্তরের সময় লিফটে ৪৫ মিনিট আটকে থাকেন ওই রোগী ও স্বজনেরা।

মারা যাওয়া রোগীর নাম মমতাজ (৫০)। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিগাও গ্রামের শরীফ উদ্দীনের স্ত্রী।

এর আগে গত ৪ মে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী হাসপাতালের ১২ তলা থেকে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারান। সে দিন রাত পৌনে ১১টার দিকে হাসপাতালের ১২ তলায় মেডিসিন বিভাগের পাশের বিদ্যুৎ রক্ষণাবেক্ষণ কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই লিফটে আটকে রোগী মৃত্যু হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত