মন্টি বৈষ্ণব, ঢাকা

ফেসবুক মেসেঞ্জারের ইনবক্সে একের পর এক কুরুচিকর এসএমএস, ফোন নম্বর চেয়ে বার্তা, জবাব না দিলে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা ছবিগুলো এডিট করে বাজে ছবি বানিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি—এমন সব ঘটনায় ভয় পেয়ে নিজের পুরোনো অ্যাকাউন্টটি ডি-অ্যাকটিভ করেন বর্ণালি (ছদ্মনাম)। এমন ঘটনার শিকার বর্ণালি একা নন। প্রায় সব নারীকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন হেনস্তার শিকার হতে হয় কম-বেশি। এ কারণে অনেক নারীর কাছেই ইনবক্স এক আতঙ্কের নাম।
তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের জীবনে এসেছে যুগান্তকারী কিছু পরিবর্তন। বিশেষত যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে নিমেষেই অন্য প্রান্তের মানুষের সঙ্গে যেকোনো সময় যোগাযোগ করা যাচ্ছে। ছোট একটি ডিভাইসের মাধ্যমে ঘরে বসে অনায়াসেই পাওয়া যাচ্ছে গোটা বিশ্বের সব খবর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তৃতি এনে দিয়েছে ব্যক্তিক যোগাযোগের এক নতুন যুগ। দিনের যেকোনো সময় ইনবক্সে আসছে পরিচিত-অপরিচিতজনদের বার্তা। কিন্তু এই ইনবক্সই কখনো কখনো আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে হরহামেশাই হেনস্তার শিকার হচ্ছেন নারীরা। অনেক সময়ই বিষয়গুলো আর শুধু হেনস্তায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। একধরনের নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি করছে এটি। অনেকের জীবনই গেছে পাল্টে। ভেঙে গেছে কারও কারও সংসার। ছিন্ন হয়ে গেছে পারিবারিক বন্ধন। আর মানসিক সংকট তো রয়েছেই। এই মানসিক পীড়া কখনো কখনো এতটাই বড় আকার নিচ্ছে যে, কখনো কখনো আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে।
একটু পরিসংখ্যানে নজর দেওয়া যাক। নারীদের জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস নিশ্চিতে ২০২০ সালের নভেম্বরে যাত্রা করেছিল বাংলাদেশ পুলিশের সেবা ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’। তাদের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের ফেসবুক পেজে মোট ১৯ হাজার ৮৯৭টি মেসেজ, হটলাইন নম্বরে ৩৫ হাজার ৪০০টি ফোনকল ও ৪৭৭টি ই-মেইল অভিযোগ এসেছে।
শুরুতেই বলা হয়েছে ভুক্তভোগী বর্ণালির কথা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই নারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার। এ বিষয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘একদিন হঠাৎ আমার এক বান্ধবী ফোনে জানতে চাইল আমার কী হয়েছে। আমার ফেসবুকে নতুন আইডি কেন? ওর কথায় বুঝলাম, আমার নামে ফেসবুকে নতুন আইডি তৈরি করা হয়েছে। এই নতুন আইডি থেকে আমার পরিচিতজনদের বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠানো হচ্ছে।’
অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পান বর্ণালি। ভাবতে থাকেন কে এই কাজ করল? ক্ষোভ ও হতাশা গ্রাস করল তাঁকে। কিন্তু ঘটনা আরও বাকি ছিল। হঠাৎ করেই বর্ণালির ইনবক্সে উল্টোপাল্টা এসএমএস আসতে শুরু করল; সঙ্গে হুমকি। বর্ণালির ভাষ্য, ‘হুমকি দিয়ে বলে, ফোন নম্বর না দিলে আমার ছবি এডিট করে বাজে ছবি বানিয়ে ফেসবুকের নানা গ্রুপে পোস্ট দেবে। একপর্যায়ে আমি খুব ভয় পাই। বুঝতে পারছিলাম না কী করব। কার কাছে যাব। একপর্যায়ে আমি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডি-অ্যাকটিভ করে দিই। পরে আর কখনোই ওই আইডি চালু করিনি।’
নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে বর্ণালি বলেন, ‘আজকাল যেভাবে নতুন নতুন উপায়ে সাইবার ক্রাইম হচ্ছে, তাতে মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা কেউই নিরাপদ না। বিশেষ করে নারীরা। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু এ নিয়ে কতজনই-বা প্রতিবাদ করে? অনেকেই হয়তো আমার মতো চুপচাপ নিজেকে গুটিয়ে ফেলে।’
আবার অনেকে অপরিচিত নয়, পরিচিতজনদের কাছ থেকেই হেনস্তার শিকার হন। এমনই একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নীলা (ছদ্মনাম)। নারীদের নিয়ে সমাজসেবামূলক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। মতবিরোধের জেরে চাকরি বদলের পর ওই প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীরাই তাঁকে হেনস্তা করেন। নীলা জানান, ‘একপর্যায়ে আমার ননদকে ফোন দিয়ে আমার নামে আজেবাজে কথা বলতে শুরু করেন সাবেক সহকর্মীরা। পারিবারিক অশান্তি চরম পর্যায়ে চলে যায়।’ বিষয়টিতে এখনো বেশ ক্ষুব্ধ নীলা বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো, এটি কোনো পুরুষের কাজ ছিল না। এটা ছিল ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কিছু নারীর কাজ।’
নীলা ও বর্ণালি দুজনই নিজেকে গুটিয়ে ফেলে সংকটের আপাত সমাধান খুঁজেছেন। কিন্তু এই গুটিয়ে ফেলাই কি সমাধান? নিশ্চিতভাবেই না। এমন অনেকে আছেন, যাঁরা এমন হেনস্তার প্রতিবাদ করেন বেশ সোচ্চারে। নিজের হাতে থাকা বিকল্পগুলো ব্যবহার করে হেনস্তাকারীর বিরুদ্ধে দরকারি পদক্ষেপও নেন। এমনই একজন শিউলি (ছদ্মনাম)। পেশায় সাংবাদিক শিউলি এক অদ্ভুত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। ফেসবুকের একটি গ্রুপে তাঁর বিয়ের ছবি ব্যবহার করে ট্রল শুরু হয়। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় এ ঘটনা ঘটে। এক শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছ থেকে বিষয়টি জেনে শিউলি ওই গ্রুপে ঢুকে দেখেন, বিয়ের দিন খাবারের টেবিলের একটি ছবি ব্যবহার করে ট্রল করা হচ্ছে। ওই পোস্টের মন্তব্যের ঘর আজেবাজে মন্তব্যে ভরা। শিউলি তাঁর বরকে জানান। বিয়েতে নিজেদের কাছের বন্ধু ও পরিবারের লোকজন ছাড়া আর কেউ না থাকায় তাঁরা ভেবে পাচ্ছিলেন না, কে করল এ কাজ। গ্রুপের অ্যাডমিনের কাছে জানতে চাইলে তারা বলল—এটা আমাদের গ্রুপ, আমরা যা খুশি তাই করব। পরে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর ছবিটি তারা সরিয়ে ফেলে।
শিউলি বলেন, ‘কেন অনুমতি ছাড়া আমাদের বিয়ের ছবি এভাবে ট্রল করল? দেশে কি আইন বলতে কিছুই নেই?’ এটাই একমাত্র অভিজ্ঞতা নয়। বর্ণালির মতো তাঁর ছবি ব্যবহার করেও অন্য কেউ অ্যাকাউন্ট খুলেছিল ফেসবুকে। বন্ধুদের মাধ্যমে জেনে পরে রিপোর্ট করে সেই ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেন তিনি।
পেশাজীবীরাই যেখানে এমন হেনস্তার শিকার হন, সেখানে কিশোরী বা তরুণীদের কথা না বললেও চলে। কম বয়সী মেয়েদের ইনবক্সে এমন হেনস্তা নিয়মিত ঘটনা বলা যায়। এ থেকে বড় বড় অপরাধের ঘটনাও ঘটে। অনেক সময়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় ও ইনবক্সে আলাপের সূত্র ধরে কিশোরী বা তরুণীরা ঘর ছাড়ে এবং পড়ে বড় বিপদে। কারও কারও প্রাণও চলে যায় এতে। এমনই একজন সিদ্ধেশ্বরী কলেজের শিক্ষার্থী রুপা (ছদ্মনাম)। বেশ সচেতন রুপা বললেন, ‘সাইবার বুলিংয়ের কবলে প্রায়ই পড়তে হয়। সমস্যা হচ্ছে, এদের ধরা যায় না। এই ধরতে না পারার যন্ত্রণাও কম না।’ অবশ্য রুপাও নিজের আইডি পাল্টাতে বাধ্য হয়েছিলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়রানির শিকার নারীরা প্রায়ই সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এতে নারীদের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে পরিবর্তন ঘটে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেক সময় আত্মহত্যা করারও সিদ্ধান্ত নেন অনেকে। হয়রানির শিকার নারীদের মানসিক উত্তরণের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরাসরি ইভটিজিং বা যৌন হয়রানির মতোই অনলাইনে হয়রানি সমানভাবে ক্ষতিকর এবং অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এর প্রতিকারের জন্য আইনি ব্যবস্থা রয়েছে। যারা অনলাইনে নারীদের কটূক্তি বা অবমানকর মন্তব্য করে। তাদের সুস্থ সামাজিক ও মানসিক বিকাশে ঘাটতি রয়েছে। নিজেদের দীনতা ঢাকতে বিকারগ্রস্ত মনমানসিকতায় তারা অন্যের অপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।’
নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে এই সংকট ভয়াবহ। নিজের ব্যবসার স্বার্থেই ফেসবুক পেজে নিজের বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ফোন নম্বর দিতে হয়। নিয়মিত ইনবক্স চেক করতে হয়। অপরিচিত ব্যক্তির বার্তা বলে কোনো কিছু এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এরই সুযোগ নেয় হেনস্তাকারীরা। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে বিভিন্ন লেখায় নানাজন এই অভিযোগ করেছেন। এটা নতুন কিছু নয়।
নারী উদ্যোক্তা পদ্মাবতীর সঙ্গে কথা হয় এ বিষয়ে। বললেন, ‘অনলাইনে হয়রানি অতি সাধারণ ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যে কত বড় অসামাজিক আচরণ করে, সেটা উদ্যোক্তা না হলে বুঝতে পারতাম না। নিজের অভিজ্ঞতাটা বলি। মেয়েদের পোশাক ও আনুষঙ্গিক জিনিস নিয়ে আমার অনলাইন উদ্যোগ। ব্যবসার প্রয়োজনে ছবি, ফোন নম্বর ইত্যাদি দিতে হয়। কিছু মানুষ একে পাবলিক সম্পত্তি ভেবে নেয়। অপ্রয়োজনীয় ফোন, মেসেজের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় যোগাযোগ নষ্ট হয়। ইনবক্সে আসতে থাকে অতি নোংরা মেসেজ। ক্রেতা সেজে প্রথমে কথা শুরু করে। প্রথম প্রথম খুব হতাশ লাগত। এখন অবশ্য ক্রেতা ও ছদ্মবেশীর তফাত বুঝতে পারি। চোখে পড়লে রিপোর্ট করি। কাজ কতটা হয় জানি না। ফেসবুক পেজ, আইডি, ইনস্টাগ্রাম—সব প্ল্যাটফর্মেই এক অবস্থা। যাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ, তারাও সামাজিক মাধ্যমে অন্যরকম হয়ে যায়।’
নিজের বাবার অসুস্থতার সময়ে হওয়া কিছু অভিজ্ঞতাকে সবচেয়ে বাজে বললেন পদ্মাবতী। বললেন, ‘বাবার চিকিৎসার জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে হতো নিয়মিত। তখন অনেকগুলো গ্রুপে আমার নম্বর দিতে হয়েছিল। মানুষের অমানবিকতা দেখে তখন অবাক হতাম। নীরবে চোখের জল ফেলা ছাড়া কোনো উপায় থাকত না। গভীর রাতে ফোন দিয়ে একেকজন একেক কথা বলতে শুরু করত। প্রথমেই রক্ত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিত। তাই কল কাটতেও পারতাম না। এ রকম কত শতবার হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। একটা পর্যায়ে মরিয়া হয়ে সবকিছু এড়িয়ে যেতে শুরু করলাম।’
এমন উদাহরণ হাজারটা দেওয়া যাবে। এই হেনস্তার ধরনেও আছে ভিন্নতা। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের তথ্যমতে, গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত জমা পড়া অভিযোগের মধ্যে ভুক্তভোগীর ছবি বা পরিচিতি ব্যবহার করে বেনামে আইডি খুলে বা ভুয়া আইডি সংশ্লিষ্ট অভিযোগ ৬ হাজার ৩৭৫টি বা ৪৩ শতাংশ, আইডি হ্যাক ১ হাজার ৫৫৪টি বা ১১ শতাংশ, পূর্বপরিচয় বা সম্পর্কের জেরে বা অন্য কোনোভাবে প্রাপ্ত ছবি, ভিডিও বা তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো বা ব্ল্যাকমেলের অভিযোগ ২ হাজার ২৩৫টি বা ১৫ শতাংশ। আর মোবাইল ফোনে হেনস্তা, লেখা, ছবি বা ভিডিও পাঠিয়ে হয়রানির ১ হাজার ৬৬৬টি বা ১১ শতাংশ, বিভিন্ন মাধ্যমে অশ্লীল শব্দ, লেখা, ছবি বা ভিডিও পাঠিয়ে হয়রানির ১ হাজার ২১৯টি বা ৮ শতাংশ অভিযোগ রয়েছে। এর বাইরে অন্য ধরনের অপরাধের অভিযোগ রয়েছে ১ হাজার ৬৬৪ টি, যা মোট অভিযোগ সংখ্যার ১২ শতাংশ।
এই অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তিন্নি (ছদ্মনাম) যা বললেন, তা অন্তত আশ্বস্ত করছে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হওয়া হেনস্তা ব্যক্তিগত ফোনেও শুরু হলে আর অপেক্ষা না করে তিনি পুলিশকে জানান। পুলিশ তাঁকে হেনস্তাকারীর নম্বর ব্লক করার পরামর্শ দেয় এবং এড়িয়ে যেতে বলে। তিন্নি বলেন, ‘দুঃখজনক বিষয় হলো, এদের শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবেনি পুলিশ। আমার পরিচিত এক আত্মীয় র্যাবে ছিলেন। তাঁর মাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে শায়েস্তা করা হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে আমি কোনো আইনি সহায়তা পাইনি।’
তবে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক মীর আবু তৌহিদ জানালেন, সংস্থাটির তালিকাভুক্ত সেবাপ্রত্যাশীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৮৯৭ জন। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৭১৩ জন নারী সাইবার স্পেসে হয়রানির শিকার হয়ে যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৪১৬ জন পরে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সর্বমোট ৯ হাজার ৬৫৩ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৬৪৪ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। অভিযোগগুলো তদন্তাধীন।
নিজেদের সেবা সম্পর্কে মীর আবু তৌহিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের পক্ষ থেকে আমরা সব সময় ভুক্তভোগীর সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থাকি। এই ধরনের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা শুরুতে থানায় যেতে চান না। অভিযোগ জানার পর আমরা ধরন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিই। প্রয়োজন অনুযায়ী মামলা, জিডি বা উপযুক্ত আইনি পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিই। ভুক্তভোগীর সঙ্গে থেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। এমনকি আসামি অন্য কোনো জেলায় অবস্থান করলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আসামিকে আটকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রয়োজনে সেখানেও জিডি বা মামলার বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করি।’ তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগ আসেন সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়রানির শিকার হয়ে। কারও হয়তো আইডি হ্যাক হয়েছে, কারও নামে হয়তো নতুন আইডি খোলা হয়েছে, আবার কারও নামে হয়তো অনলাইনে ছড়াচ্ছে বাজে কোনো ছবি। এ ক্ষেত্রে আমরা টেকনিক্যাল সহযোগিতা করি।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের হেনস্তা করা আইনত অপরাধ। হয়রানির শিকার নারীদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘অনলাইনে নারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে বা ভুয়া আইডিতে ছবি আপলোড করে হয়রানি করা হয়। এটি আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। ফেসবুক, টুইটার বা অন্য কোনো মাধ্যমে কারও নামে মানহানিকর বা অপমানজনক কিছু লেখা বা প্রকাশ করা বা মন্তব্য করা যেমন অপরাধ, তেমন নিতান্ত বিরক্ত করা, সেটাও অপরাধ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ (১) (ক) ধারায় এই ধরনের কাজকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথম অপরাধের জন্য তিন বছর পর্যন্ত জেল ও ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। আর একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে শাস্তির মাত্রাও বাড়বে। এ ছাড়া টেলিফোনে বিরক্ত করলেও তা টেলিযোগাযোগ আইনের ৭০ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য উল্লেখ করে ইমতিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের পুলিশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আছে এ ধরনের অপরাধ তদন্ত করার। কিন্তু থানাগুলোর পরিবেশ নারীদের জন্য সৌহার্দ্যপূর্ণ না হওয়ায় মেয়েরা পুলিশের কাছে যেতে চায় না। আবার আমাদের দেশের নারীরা সাধারণত হয়রানির বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেন না, যেহেতু সমাজের সব স্তরে নারীকে দোষারোপের একটা প্রবণতা আছে। এটা ঠিক নয়। হয়রানির শিকার নারীদের সচেতন হওয়া জরুরি। হয়রানির শিকার নারীটি ভুক্তভোগী। ভুক্তভোগীর তো কোনো দোষ নাই, লজ্জারও কোনো কারণ নাই। এই কথাটা ভুক্তভোগীদের মধ্যে প্রচার করতে হবে। আর সচেতনতা তৈরি করতে হবে নারী-পুরুষ সবার মধ্যে।’

ফেসবুক মেসেঞ্জারের ইনবক্সে একের পর এক কুরুচিকর এসএমএস, ফোন নম্বর চেয়ে বার্তা, জবাব না দিলে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা ছবিগুলো এডিট করে বাজে ছবি বানিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি—এমন সব ঘটনায় ভয় পেয়ে নিজের পুরোনো অ্যাকাউন্টটি ডি-অ্যাকটিভ করেন বর্ণালি (ছদ্মনাম)। এমন ঘটনার শিকার বর্ণালি একা নন। প্রায় সব নারীকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন হেনস্তার শিকার হতে হয় কম-বেশি। এ কারণে অনেক নারীর কাছেই ইনবক্স এক আতঙ্কের নাম।
তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের জীবনে এসেছে যুগান্তকারী কিছু পরিবর্তন। বিশেষত যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে নিমেষেই অন্য প্রান্তের মানুষের সঙ্গে যেকোনো সময় যোগাযোগ করা যাচ্ছে। ছোট একটি ডিভাইসের মাধ্যমে ঘরে বসে অনায়াসেই পাওয়া যাচ্ছে গোটা বিশ্বের সব খবর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তৃতি এনে দিয়েছে ব্যক্তিক যোগাযোগের এক নতুন যুগ। দিনের যেকোনো সময় ইনবক্সে আসছে পরিচিত-অপরিচিতজনদের বার্তা। কিন্তু এই ইনবক্সই কখনো কখনো আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে হরহামেশাই হেনস্তার শিকার হচ্ছেন নারীরা। অনেক সময়ই বিষয়গুলো আর শুধু হেনস্তায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। একধরনের নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি করছে এটি। অনেকের জীবনই গেছে পাল্টে। ভেঙে গেছে কারও কারও সংসার। ছিন্ন হয়ে গেছে পারিবারিক বন্ধন। আর মানসিক সংকট তো রয়েছেই। এই মানসিক পীড়া কখনো কখনো এতটাই বড় আকার নিচ্ছে যে, কখনো কখনো আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে।
একটু পরিসংখ্যানে নজর দেওয়া যাক। নারীদের জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস নিশ্চিতে ২০২০ সালের নভেম্বরে যাত্রা করেছিল বাংলাদেশ পুলিশের সেবা ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’। তাদের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের ফেসবুক পেজে মোট ১৯ হাজার ৮৯৭টি মেসেজ, হটলাইন নম্বরে ৩৫ হাজার ৪০০টি ফোনকল ও ৪৭৭টি ই-মেইল অভিযোগ এসেছে।
শুরুতেই বলা হয়েছে ভুক্তভোগী বর্ণালির কথা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই নারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার। এ বিষয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘একদিন হঠাৎ আমার এক বান্ধবী ফোনে জানতে চাইল আমার কী হয়েছে। আমার ফেসবুকে নতুন আইডি কেন? ওর কথায় বুঝলাম, আমার নামে ফেসবুকে নতুন আইডি তৈরি করা হয়েছে। এই নতুন আইডি থেকে আমার পরিচিতজনদের বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠানো হচ্ছে।’
অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পান বর্ণালি। ভাবতে থাকেন কে এই কাজ করল? ক্ষোভ ও হতাশা গ্রাস করল তাঁকে। কিন্তু ঘটনা আরও বাকি ছিল। হঠাৎ করেই বর্ণালির ইনবক্সে উল্টোপাল্টা এসএমএস আসতে শুরু করল; সঙ্গে হুমকি। বর্ণালির ভাষ্য, ‘হুমকি দিয়ে বলে, ফোন নম্বর না দিলে আমার ছবি এডিট করে বাজে ছবি বানিয়ে ফেসবুকের নানা গ্রুপে পোস্ট দেবে। একপর্যায়ে আমি খুব ভয় পাই। বুঝতে পারছিলাম না কী করব। কার কাছে যাব। একপর্যায়ে আমি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডি-অ্যাকটিভ করে দিই। পরে আর কখনোই ওই আইডি চালু করিনি।’
নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে বর্ণালি বলেন, ‘আজকাল যেভাবে নতুন নতুন উপায়ে সাইবার ক্রাইম হচ্ছে, তাতে মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা কেউই নিরাপদ না। বিশেষ করে নারীরা। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু এ নিয়ে কতজনই-বা প্রতিবাদ করে? অনেকেই হয়তো আমার মতো চুপচাপ নিজেকে গুটিয়ে ফেলে।’
আবার অনেকে অপরিচিত নয়, পরিচিতজনদের কাছ থেকেই হেনস্তার শিকার হন। এমনই একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নীলা (ছদ্মনাম)। নারীদের নিয়ে সমাজসেবামূলক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। মতবিরোধের জেরে চাকরি বদলের পর ওই প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীরাই তাঁকে হেনস্তা করেন। নীলা জানান, ‘একপর্যায়ে আমার ননদকে ফোন দিয়ে আমার নামে আজেবাজে কথা বলতে শুরু করেন সাবেক সহকর্মীরা। পারিবারিক অশান্তি চরম পর্যায়ে চলে যায়।’ বিষয়টিতে এখনো বেশ ক্ষুব্ধ নীলা বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো, এটি কোনো পুরুষের কাজ ছিল না। এটা ছিল ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কিছু নারীর কাজ।’
নীলা ও বর্ণালি দুজনই নিজেকে গুটিয়ে ফেলে সংকটের আপাত সমাধান খুঁজেছেন। কিন্তু এই গুটিয়ে ফেলাই কি সমাধান? নিশ্চিতভাবেই না। এমন অনেকে আছেন, যাঁরা এমন হেনস্তার প্রতিবাদ করেন বেশ সোচ্চারে। নিজের হাতে থাকা বিকল্পগুলো ব্যবহার করে হেনস্তাকারীর বিরুদ্ধে দরকারি পদক্ষেপও নেন। এমনই একজন শিউলি (ছদ্মনাম)। পেশায় সাংবাদিক শিউলি এক অদ্ভুত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। ফেসবুকের একটি গ্রুপে তাঁর বিয়ের ছবি ব্যবহার করে ট্রল শুরু হয়। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় এ ঘটনা ঘটে। এক শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছ থেকে বিষয়টি জেনে শিউলি ওই গ্রুপে ঢুকে দেখেন, বিয়ের দিন খাবারের টেবিলের একটি ছবি ব্যবহার করে ট্রল করা হচ্ছে। ওই পোস্টের মন্তব্যের ঘর আজেবাজে মন্তব্যে ভরা। শিউলি তাঁর বরকে জানান। বিয়েতে নিজেদের কাছের বন্ধু ও পরিবারের লোকজন ছাড়া আর কেউ না থাকায় তাঁরা ভেবে পাচ্ছিলেন না, কে করল এ কাজ। গ্রুপের অ্যাডমিনের কাছে জানতে চাইলে তারা বলল—এটা আমাদের গ্রুপ, আমরা যা খুশি তাই করব। পরে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর ছবিটি তারা সরিয়ে ফেলে।
শিউলি বলেন, ‘কেন অনুমতি ছাড়া আমাদের বিয়ের ছবি এভাবে ট্রল করল? দেশে কি আইন বলতে কিছুই নেই?’ এটাই একমাত্র অভিজ্ঞতা নয়। বর্ণালির মতো তাঁর ছবি ব্যবহার করেও অন্য কেউ অ্যাকাউন্ট খুলেছিল ফেসবুকে। বন্ধুদের মাধ্যমে জেনে পরে রিপোর্ট করে সেই ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেন তিনি।
পেশাজীবীরাই যেখানে এমন হেনস্তার শিকার হন, সেখানে কিশোরী বা তরুণীদের কথা না বললেও চলে। কম বয়সী মেয়েদের ইনবক্সে এমন হেনস্তা নিয়মিত ঘটনা বলা যায়। এ থেকে বড় বড় অপরাধের ঘটনাও ঘটে। অনেক সময়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় ও ইনবক্সে আলাপের সূত্র ধরে কিশোরী বা তরুণীরা ঘর ছাড়ে এবং পড়ে বড় বিপদে। কারও কারও প্রাণও চলে যায় এতে। এমনই একজন সিদ্ধেশ্বরী কলেজের শিক্ষার্থী রুপা (ছদ্মনাম)। বেশ সচেতন রুপা বললেন, ‘সাইবার বুলিংয়ের কবলে প্রায়ই পড়তে হয়। সমস্যা হচ্ছে, এদের ধরা যায় না। এই ধরতে না পারার যন্ত্রণাও কম না।’ অবশ্য রুপাও নিজের আইডি পাল্টাতে বাধ্য হয়েছিলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়রানির শিকার নারীরা প্রায়ই সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এতে নারীদের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে পরিবর্তন ঘটে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেক সময় আত্মহত্যা করারও সিদ্ধান্ত নেন অনেকে। হয়রানির শিকার নারীদের মানসিক উত্তরণের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরাসরি ইভটিজিং বা যৌন হয়রানির মতোই অনলাইনে হয়রানি সমানভাবে ক্ষতিকর এবং অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এর প্রতিকারের জন্য আইনি ব্যবস্থা রয়েছে। যারা অনলাইনে নারীদের কটূক্তি বা অবমানকর মন্তব্য করে। তাদের সুস্থ সামাজিক ও মানসিক বিকাশে ঘাটতি রয়েছে। নিজেদের দীনতা ঢাকতে বিকারগ্রস্ত মনমানসিকতায় তারা অন্যের অপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।’
নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে এই সংকট ভয়াবহ। নিজের ব্যবসার স্বার্থেই ফেসবুক পেজে নিজের বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ফোন নম্বর দিতে হয়। নিয়মিত ইনবক্স চেক করতে হয়। অপরিচিত ব্যক্তির বার্তা বলে কোনো কিছু এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এরই সুযোগ নেয় হেনস্তাকারীরা। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে বিভিন্ন লেখায় নানাজন এই অভিযোগ করেছেন। এটা নতুন কিছু নয়।
নারী উদ্যোক্তা পদ্মাবতীর সঙ্গে কথা হয় এ বিষয়ে। বললেন, ‘অনলাইনে হয়রানি অতি সাধারণ ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যে কত বড় অসামাজিক আচরণ করে, সেটা উদ্যোক্তা না হলে বুঝতে পারতাম না। নিজের অভিজ্ঞতাটা বলি। মেয়েদের পোশাক ও আনুষঙ্গিক জিনিস নিয়ে আমার অনলাইন উদ্যোগ। ব্যবসার প্রয়োজনে ছবি, ফোন নম্বর ইত্যাদি দিতে হয়। কিছু মানুষ একে পাবলিক সম্পত্তি ভেবে নেয়। অপ্রয়োজনীয় ফোন, মেসেজের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় যোগাযোগ নষ্ট হয়। ইনবক্সে আসতে থাকে অতি নোংরা মেসেজ। ক্রেতা সেজে প্রথমে কথা শুরু করে। প্রথম প্রথম খুব হতাশ লাগত। এখন অবশ্য ক্রেতা ও ছদ্মবেশীর তফাত বুঝতে পারি। চোখে পড়লে রিপোর্ট করি। কাজ কতটা হয় জানি না। ফেসবুক পেজ, আইডি, ইনস্টাগ্রাম—সব প্ল্যাটফর্মেই এক অবস্থা। যাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ, তারাও সামাজিক মাধ্যমে অন্যরকম হয়ে যায়।’
নিজের বাবার অসুস্থতার সময়ে হওয়া কিছু অভিজ্ঞতাকে সবচেয়ে বাজে বললেন পদ্মাবতী। বললেন, ‘বাবার চিকিৎসার জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে হতো নিয়মিত। তখন অনেকগুলো গ্রুপে আমার নম্বর দিতে হয়েছিল। মানুষের অমানবিকতা দেখে তখন অবাক হতাম। নীরবে চোখের জল ফেলা ছাড়া কোনো উপায় থাকত না। গভীর রাতে ফোন দিয়ে একেকজন একেক কথা বলতে শুরু করত। প্রথমেই রক্ত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিত। তাই কল কাটতেও পারতাম না। এ রকম কত শতবার হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। একটা পর্যায়ে মরিয়া হয়ে সবকিছু এড়িয়ে যেতে শুরু করলাম।’
এমন উদাহরণ হাজারটা দেওয়া যাবে। এই হেনস্তার ধরনেও আছে ভিন্নতা। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের তথ্যমতে, গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত জমা পড়া অভিযোগের মধ্যে ভুক্তভোগীর ছবি বা পরিচিতি ব্যবহার করে বেনামে আইডি খুলে বা ভুয়া আইডি সংশ্লিষ্ট অভিযোগ ৬ হাজার ৩৭৫টি বা ৪৩ শতাংশ, আইডি হ্যাক ১ হাজার ৫৫৪টি বা ১১ শতাংশ, পূর্বপরিচয় বা সম্পর্কের জেরে বা অন্য কোনোভাবে প্রাপ্ত ছবি, ভিডিও বা তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো বা ব্ল্যাকমেলের অভিযোগ ২ হাজার ২৩৫টি বা ১৫ শতাংশ। আর মোবাইল ফোনে হেনস্তা, লেখা, ছবি বা ভিডিও পাঠিয়ে হয়রানির ১ হাজার ৬৬৬টি বা ১১ শতাংশ, বিভিন্ন মাধ্যমে অশ্লীল শব্দ, লেখা, ছবি বা ভিডিও পাঠিয়ে হয়রানির ১ হাজার ২১৯টি বা ৮ শতাংশ অভিযোগ রয়েছে। এর বাইরে অন্য ধরনের অপরাধের অভিযোগ রয়েছে ১ হাজার ৬৬৪ টি, যা মোট অভিযোগ সংখ্যার ১২ শতাংশ।
এই অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তিন্নি (ছদ্মনাম) যা বললেন, তা অন্তত আশ্বস্ত করছে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হওয়া হেনস্তা ব্যক্তিগত ফোনেও শুরু হলে আর অপেক্ষা না করে তিনি পুলিশকে জানান। পুলিশ তাঁকে হেনস্তাকারীর নম্বর ব্লক করার পরামর্শ দেয় এবং এড়িয়ে যেতে বলে। তিন্নি বলেন, ‘দুঃখজনক বিষয় হলো, এদের শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবেনি পুলিশ। আমার পরিচিত এক আত্মীয় র্যাবে ছিলেন। তাঁর মাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে শায়েস্তা করা হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে আমি কোনো আইনি সহায়তা পাইনি।’
তবে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক মীর আবু তৌহিদ জানালেন, সংস্থাটির তালিকাভুক্ত সেবাপ্রত্যাশীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৮৯৭ জন। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৭১৩ জন নারী সাইবার স্পেসে হয়রানির শিকার হয়ে যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৪১৬ জন পরে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সর্বমোট ৯ হাজার ৬৫৩ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৬৪৪ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। অভিযোগগুলো তদন্তাধীন।
নিজেদের সেবা সম্পর্কে মীর আবু তৌহিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের পক্ষ থেকে আমরা সব সময় ভুক্তভোগীর সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থাকি। এই ধরনের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা শুরুতে থানায় যেতে চান না। অভিযোগ জানার পর আমরা ধরন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিই। প্রয়োজন অনুযায়ী মামলা, জিডি বা উপযুক্ত আইনি পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিই। ভুক্তভোগীর সঙ্গে থেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। এমনকি আসামি অন্য কোনো জেলায় অবস্থান করলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আসামিকে আটকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রয়োজনে সেখানেও জিডি বা মামলার বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করি।’ তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগ আসেন সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়রানির শিকার হয়ে। কারও হয়তো আইডি হ্যাক হয়েছে, কারও নামে হয়তো নতুন আইডি খোলা হয়েছে, আবার কারও নামে হয়তো অনলাইনে ছড়াচ্ছে বাজে কোনো ছবি। এ ক্ষেত্রে আমরা টেকনিক্যাল সহযোগিতা করি।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের হেনস্তা করা আইনত অপরাধ। হয়রানির শিকার নারীদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘অনলাইনে নারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে বা ভুয়া আইডিতে ছবি আপলোড করে হয়রানি করা হয়। এটি আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। ফেসবুক, টুইটার বা অন্য কোনো মাধ্যমে কারও নামে মানহানিকর বা অপমানজনক কিছু লেখা বা প্রকাশ করা বা মন্তব্য করা যেমন অপরাধ, তেমন নিতান্ত বিরক্ত করা, সেটাও অপরাধ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ (১) (ক) ধারায় এই ধরনের কাজকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথম অপরাধের জন্য তিন বছর পর্যন্ত জেল ও ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। আর একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে শাস্তির মাত্রাও বাড়বে। এ ছাড়া টেলিফোনে বিরক্ত করলেও তা টেলিযোগাযোগ আইনের ৭০ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য উল্লেখ করে ইমতিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের পুলিশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আছে এ ধরনের অপরাধ তদন্ত করার। কিন্তু থানাগুলোর পরিবেশ নারীদের জন্য সৌহার্দ্যপূর্ণ না হওয়ায় মেয়েরা পুলিশের কাছে যেতে চায় না। আবার আমাদের দেশের নারীরা সাধারণত হয়রানির বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেন না, যেহেতু সমাজের সব স্তরে নারীকে দোষারোপের একটা প্রবণতা আছে। এটা ঠিক নয়। হয়রানির শিকার নারীদের সচেতন হওয়া জরুরি। হয়রানির শিকার নারীটি ভুক্তভোগী। ভুক্তভোগীর তো কোনো দোষ নাই, লজ্জারও কোনো কারণ নাই। এই কথাটা ভুক্তভোগীদের মধ্যে প্রচার করতে হবে। আর সচেতনতা তৈরি করতে হবে নারী-পুরুষ সবার মধ্যে।’

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদের তীর দখল করে কারখানা গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ কবির মোস্তাক আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গ্রামটির সেতুর পাশে কংস নদের জায়গায় মাটি ভরাট, দেয়াল ও পিলার স্থাপন করে শিল্পকারখানা নির্মাণ করছেন তিনি।
১৭ মিনিট আগে
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভার এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাত্র তিনজন চিকিৎসকের ওপর। চিকিৎসক ও জনবল স্বল্পতায় বেহাল অবস্থায় চলছে ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
২০ মিনিট আগে
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও ইলিশ শিকারে নেমেছেন জেলেরা। গত শনিবার রাত থেকে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও হাতিয়ার ঘাটগুলোতে শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। দীর্ঘ বিরতির পর নদীতে নেমে আশানুরূপ মাছ পেয়ে খুশি অনেকে। আবার কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ কেউ কেউ। দাম কোথাও আগের মতোই, আবার কোথাও কিছুটা কমেছে।
২৫ মিনিট আগে
পুরান ঢাকার বংশালের আগামসিহ লেনে মো. সজীব হোসেনকে (২০) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্বজনেরা। সজীবের মায়ের অভিযোগ, মেয়েবন্ধুর মামা ১৫ দিন আগে সজীবকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁর ছেলেকে তাঁরাই খুন করেছেন।
২৯ মিনিট আগেসাইফুল আরিফ জুয়েল, নেত্রকোনা

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদের তীর দখল করে কারখানা গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ কবির মোস্তাক আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গ্রামটির সেতুর পাশে কংস নদের জায়গায় মাটি ভরাট, দেয়াল ও পিলার স্থাপন করে শিল্পকারখানা নির্মাণ করছেন তিনি। এতে নদের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোস্তাক আহম্মেদ একজন শিল্পপতি। তিনি মল্লিকপুর গ্রামের মৃত রেহান উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। বর্তমানে সপরিবারে ঢাকায় থাকেন।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের (দক্ষিণ পাড়া) সেতুর পাশে নদের পাড়ঘেঁষে প্রায় দুই একরের বেশি জায়গাজুড়ে কারখানা স্থাপন করছেন কবির মোস্তাক আহমেদ। কয়েক মাস আগে নিজের জায়গার পাশে নদের ৫৫ শতাংশ জায়গা দখল করে দেয়াল তোলেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ জানালেও মোস্তাকের অনুসারীরা তাদের হুমকিধমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, এ নদী শুধু কৃষির জন্যই নয়, বরং হাজারো মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কেউ মাছ ধরে, কেউ গোসল বা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করে নদের পানি। পানির এই প্রবাহ রুদ্ধ হলে কংস একদিন মরে যাবে—এমন আশঙ্কা স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দা রিপন মিয়া বলেন, ‘এ নদ ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনা করা যায় না। এখন দেয়াল তুলছে, পিলার (প্রাচীর) বসাচ্ছে; আমরা ভয় পাচ্ছি, আর কিছুদিন পর হয়তো নদটাই থাকবে না। বিষয়টি নিয়ে কথা বললেও কবির মোস্তাকের অনুসারীরা হুমকিধমকি দেন। আমরা চাই প্রশাসন যেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়।’ আরেক বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, কারখানা করবে ভালো কথা, সেটা নিজের জায়গায় করুক। নদের অর্ধেক অংশ দখল করে দেয়াল তোলা হয়েছে। এতে চিরকালের জন্য কংস নদ হারিয়ে যাবে।
শফিক মিয়া বলেন, ‘দখল বন্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে কংস নদ হারিয়ে যাবে’এ বিষয়ে কথা বলতে পরপর তিন দিন একাধিকবার কল করা হলেও মোস্তাক আহম্মেদ রিসিভ করেননি।
অভিযোগ রয়েছে, চার মাস আগে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীমা আফরোজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এত দিনেও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।
সিংধা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা উজ্জ্বল দত্ত বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীমা আফরোজ মহোদয়। সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যাচাই করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই জায়গার নকশাসহ প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জায়গাটি পরিমাপ করে নিশ্চিত হতে হবে। পরে উচ্ছেদ নোটিশ পাঠানো হবে। কাগজপত্র দেখে যতটুকু জেনেছি নদের বেশ অনেকটা অংশ ওই দেয়ালের ভেতর পড়েছে। ওখানে ৫৫ শতক জায়গা রয়েছে। সম্প্রতি সহকারী কমিশনার (ভূমি) বদলি হয়েছেন। নতুন একজন যোগদান করলে আবার এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে।’
বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খবিরুল আহসান বলেন, কংস নদের জায়গা দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ নথি তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। যেকোনো সময় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে।

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদের তীর দখল করে কারখানা গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ কবির মোস্তাক আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গ্রামটির সেতুর পাশে কংস নদের জায়গায় মাটি ভরাট, দেয়াল ও পিলার স্থাপন করে শিল্পকারখানা নির্মাণ করছেন তিনি। এতে নদের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোস্তাক আহম্মেদ একজন শিল্পপতি। তিনি মল্লিকপুর গ্রামের মৃত রেহান উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। বর্তমানে সপরিবারে ঢাকায় থাকেন।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের (দক্ষিণ পাড়া) সেতুর পাশে নদের পাড়ঘেঁষে প্রায় দুই একরের বেশি জায়গাজুড়ে কারখানা স্থাপন করছেন কবির মোস্তাক আহমেদ। কয়েক মাস আগে নিজের জায়গার পাশে নদের ৫৫ শতাংশ জায়গা দখল করে দেয়াল তোলেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ জানালেও মোস্তাকের অনুসারীরা তাদের হুমকিধমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, এ নদী শুধু কৃষির জন্যই নয়, বরং হাজারো মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কেউ মাছ ধরে, কেউ গোসল বা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করে নদের পানি। পানির এই প্রবাহ রুদ্ধ হলে কংস একদিন মরে যাবে—এমন আশঙ্কা স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দা রিপন মিয়া বলেন, ‘এ নদ ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনা করা যায় না। এখন দেয়াল তুলছে, পিলার (প্রাচীর) বসাচ্ছে; আমরা ভয় পাচ্ছি, আর কিছুদিন পর হয়তো নদটাই থাকবে না। বিষয়টি নিয়ে কথা বললেও কবির মোস্তাকের অনুসারীরা হুমকিধমকি দেন। আমরা চাই প্রশাসন যেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়।’ আরেক বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, কারখানা করবে ভালো কথা, সেটা নিজের জায়গায় করুক। নদের অর্ধেক অংশ দখল করে দেয়াল তোলা হয়েছে। এতে চিরকালের জন্য কংস নদ হারিয়ে যাবে।
শফিক মিয়া বলেন, ‘দখল বন্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে কংস নদ হারিয়ে যাবে’এ বিষয়ে কথা বলতে পরপর তিন দিন একাধিকবার কল করা হলেও মোস্তাক আহম্মেদ রিসিভ করেননি।
অভিযোগ রয়েছে, চার মাস আগে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীমা আফরোজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এত দিনেও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।
সিংধা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা উজ্জ্বল দত্ত বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীমা আফরোজ মহোদয়। সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যাচাই করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই জায়গার নকশাসহ প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জায়গাটি পরিমাপ করে নিশ্চিত হতে হবে। পরে উচ্ছেদ নোটিশ পাঠানো হবে। কাগজপত্র দেখে যতটুকু জেনেছি নদের বেশ অনেকটা অংশ ওই দেয়ালের ভেতর পড়েছে। ওখানে ৫৫ শতক জায়গা রয়েছে। সম্প্রতি সহকারী কমিশনার (ভূমি) বদলি হয়েছেন। নতুন একজন যোগদান করলে আবার এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে।’
বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খবিরুল আহসান বলেন, কংস নদের জায়গা দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ নথি তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। যেকোনো সময় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে।

ফেসবুক মেসেঞ্জারের ইনবক্সে একের পর এক কুরুচিকর এসএমএস, ফোন নম্বর চেয়ে বার্তা, জবাব না দিলে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা ছবিগুলো এডিট করে বাজে ছবি বানিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি—এমন সব ঘটনায় ভয় পেয়ে নিজের পুরোনো অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাকটিভ করেন বর্ণালি (ছদ্মনাম)। এমন ঘটনার শিকার বর্ণালি একা নন। প্র
০৫ মার্চ ২০২২
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভার এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাত্র তিনজন চিকিৎসকের ওপর। চিকিৎসক ও জনবল স্বল্পতায় বেহাল অবস্থায় চলছে ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
২০ মিনিট আগে
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও ইলিশ শিকারে নেমেছেন জেলেরা। গত শনিবার রাত থেকে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও হাতিয়ার ঘাটগুলোতে শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। দীর্ঘ বিরতির পর নদীতে নেমে আশানুরূপ মাছ পেয়ে খুশি অনেকে। আবার কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ কেউ কেউ। দাম কোথাও আগের মতোই, আবার কোথাও কিছুটা কমেছে।
২৫ মিনিট আগে
পুরান ঢাকার বংশালের আগামসিহ লেনে মো. সজীব হোসেনকে (২০) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্বজনেরা। সজীবের মায়ের অভিযোগ, মেয়েবন্ধুর মামা ১৫ দিন আগে সজীবকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁর ছেলেকে তাঁরাই খুন করেছেন।
২৯ মিনিট আগেমো. মাহমুদুল হক মানিক

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভার এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাত্র তিনজন চিকিৎসকের ওপর। চিকিৎসক ও জনবল স্বল্পতায় বেহাল অবস্থায় চলছে ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
জানা গেছে, জেলার বিরামপুর উপজেলাটি পার্শ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলার কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিবেচিত। ভালো যোগাযোগব্যবস্থার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিরামপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ ও হাকিমপুর উপজেলার অসংখ্য রোগী প্রতিনিয়ত চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক ও জনবলসংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে, ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে মেডিকেল কর্মকর্তা, কনসালট্যান্ট, সহকারী সার্জনসহ মোট ২৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়া মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোরে প্রতিদিন রোগীদের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম কর্তব্যরতরা।
এ দিকে গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে সিজারিয়ান অপারেশন। এ ছাড়া হাসপাতালের নার্স, ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কয়েকটি পদও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।
চিকিৎসা নিতে আসা আতিকুর রহমানসহ কয়েকজন রোগী বলেন, সামর্থ্যবানরা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা করালেও গরিব রোগীদের ভরসা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় ৫৬ কিলোমিটার দূরে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের পাঠানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) শাহরিয়ার পারভেজ বলেন, ‘চিকিৎসক ও জনবলসংকটে দিনরাত রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিরামপুর উপজেলার একটি পৌরসভা, সাতটি ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার ৫০০-৬০০ রোগীকে প্রতিদিন আউটডোরে এবং প্রায় ৬০ জন ভর্তি রোগীকে ইনডোরে চিকিৎসা দিতে হয়। মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে এত রোগীকে সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
মেডিকেল কর্মকর্তা আরও বলেন, চিকিৎসক ও জনবলসংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল সংযুক্ত করা হলে রোগীরা ভোগান্তিহীনভাবে চিকিৎসাসেবা পাবেন।

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভার এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাত্র তিনজন চিকিৎসকের ওপর। চিকিৎসক ও জনবল স্বল্পতায় বেহাল অবস্থায় চলছে ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
জানা গেছে, জেলার বিরামপুর উপজেলাটি পার্শ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলার কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিবেচিত। ভালো যোগাযোগব্যবস্থার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিরামপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ ও হাকিমপুর উপজেলার অসংখ্য রোগী প্রতিনিয়ত চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক ও জনবলসংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে, ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে মেডিকেল কর্মকর্তা, কনসালট্যান্ট, সহকারী সার্জনসহ মোট ২৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়া মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোরে প্রতিদিন রোগীদের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম কর্তব্যরতরা।
এ দিকে গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে সিজারিয়ান অপারেশন। এ ছাড়া হাসপাতালের নার্স, ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কয়েকটি পদও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।
চিকিৎসা নিতে আসা আতিকুর রহমানসহ কয়েকজন রোগী বলেন, সামর্থ্যবানরা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা করালেও গরিব রোগীদের ভরসা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় ৫৬ কিলোমিটার দূরে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের পাঠানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) শাহরিয়ার পারভেজ বলেন, ‘চিকিৎসক ও জনবলসংকটে দিনরাত রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিরামপুর উপজেলার একটি পৌরসভা, সাতটি ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার ৫০০-৬০০ রোগীকে প্রতিদিন আউটডোরে এবং প্রায় ৬০ জন ভর্তি রোগীকে ইনডোরে চিকিৎসা দিতে হয়। মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে এত রোগীকে সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
মেডিকেল কর্মকর্তা আরও বলেন, চিকিৎসক ও জনবলসংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল সংযুক্ত করা হলে রোগীরা ভোগান্তিহীনভাবে চিকিৎসাসেবা পাবেন।

ফেসবুক মেসেঞ্জারের ইনবক্সে একের পর এক কুরুচিকর এসএমএস, ফোন নম্বর চেয়ে বার্তা, জবাব না দিলে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা ছবিগুলো এডিট করে বাজে ছবি বানিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি—এমন সব ঘটনায় ভয় পেয়ে নিজের পুরোনো অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাকটিভ করেন বর্ণালি (ছদ্মনাম)। এমন ঘটনার শিকার বর্ণালি একা নন। প্র
০৫ মার্চ ২০২২
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদের তীর দখল করে কারখানা গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ কবির মোস্তাক আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গ্রামটির সেতুর পাশে কংস নদের জায়গায় মাটি ভরাট, দেয়াল ও পিলার স্থাপন করে শিল্পকারখানা নির্মাণ করছেন তিনি।
১৭ মিনিট আগে
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও ইলিশ শিকারে নেমেছেন জেলেরা। গত শনিবার রাত থেকে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও হাতিয়ার ঘাটগুলোতে শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। দীর্ঘ বিরতির পর নদীতে নেমে আশানুরূপ মাছ পেয়ে খুশি অনেকে। আবার কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ কেউ কেউ। দাম কোথাও আগের মতোই, আবার কোথাও কিছুটা কমেছে।
২৫ মিনিট আগে
পুরান ঢাকার বংশালের আগামসিহ লেনে মো. সজীব হোসেনকে (২০) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্বজনেরা। সজীবের মায়ের অভিযোগ, মেয়েবন্ধুর মামা ১৫ দিন আগে সজীবকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁর ছেলেকে তাঁরাই খুন করেছেন।
২৯ মিনিট আগেপ্রাণ ফিরছে ঘাটের
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও ইলিশ শিকারে নেমেছেন জেলেরা। গত শনিবার রাত থেকে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও হাতিয়ার ঘাটগুলোতে শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। দীর্ঘ বিরতির পর নদীতে নেমে আশানুরূপ মাছ পেয়ে খুশি অনেকে। আবার কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ কেউ কেউ। দাম কোথাও আগের মতোই, আবার কোথাও কিছুটা কমেছে।
নোয়াখালীর হাতিয়ায় মধ্যরাতেই সাগরে নেমে পড়েন জেলেরা। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় অনেক মাছ পেয়েছেন কেউ কেউ। বুড়িরচর সূর্যমুখী ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ঘাটজুড়ে তীব্র ব্যস্ততা। শ্রমিকেরা টুকরিভর্তি মাছ মাথায় করে তুলছেন বাজারে, আর পাইকারেরা হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করছেন। মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন বলেন, ‘খুব ভোর থেকে বাজারে মাছ বেচাকেনা শুরু হয়েছে। জেলেরা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নদী থেকে আশানুরূপ মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরছেন। তাঁদের জালে ভালো মাছ ধরা পড়ছে।’
জেলে আবদুল কাদের বলেন, রাত ১২টার পর নদীতে গিয়ে সকালে ৩ মণ ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরেছেন। আকারে ছোট হলেও দাম ভালো। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ যদি এমন মাছ পাই, আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।’
চাঁদপুর সদরের হরিণা মাছঘাটে গতকাল সকাল থেকে শুরু হয় হাঁকডাক। কেউ নদী থেকে সদ্য ধরা ইলিশ নিয়ে ফিরছেন, কেউ আবার টাটকা মাছ কেনার অপেক্ষায়। ঘাটজুড়ে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়। জেলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘পেশা ইলিশ ধরা। ধার করে হলেও নদীতে নামতে হয়। কিন্তু যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে, তাতে খরচ বাদে তেমন থাকে না।’ একই ঘাটের জেলে হুমায়ুন ঢালি জানান, রাতভর জাল ফেলেও তেমন মাছ মেলেনি।
ঘাট থেকে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ কিনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন খুচরা মাছ ব্যবসায়ী আবদুর রহমান। তিনি বলেন, মাছের দাম কমেনি বা বাড়েনি। ওজনে এক কেজিতে ৪টা, এমন প্রতি হালি কিনেছেন ৮০০ টাকা দরে। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। বড় সাইজের পাঙাশ কিনেছেন প্রতি কেজি সাড়ে ৮০০ টাকা দরে।
মাছ ব্যবসায়ী আবুল কাশেম কালু হাওলাদার বলেন, ‘জেলেরা রাত থেকে নদীতে নামলেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মেলেনি। কয়েক দিন পর বোঝা যাবে নদীতে মাছ আছে কি না।’
লক্ষ্মীপুরে গতকাল সকাল থেকেই সরগরম ছিল মজু চৌধুরীর হাট, মতিরহাট, লুধুয়া ও চর আলেকজান্ডার ঘাট। আকারের ওপর নির্ভর করে কেজিপ্রতি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। গড়পড়তা দাম নিষেধাজ্ঞার আগের সময়ের তুলনায় কিছুটা কম।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এবার অভিযান সফল হয়েছে। মা ইলিশ নির্ভয়ে ডিম ছাড়তে পেরেছে, ফলে উৎপাদন বাড়ার আশা করা হচ্ছে। জেলার নিবন্ধিত জেলেদের প্রত্যেকে ভিজিএফের চাল পেয়েছেন। অভিযানকালে দুই শতাধিক মোবাইল কোর্টে অর্ধশতাধিক জেলেকে জেল-জরিমানা করেছে। এ ছাড়া ১৬ লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে।

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও ইলিশ শিকারে নেমেছেন জেলেরা। গত শনিবার রাত থেকে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও হাতিয়ার ঘাটগুলোতে শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। দীর্ঘ বিরতির পর নদীতে নেমে আশানুরূপ মাছ পেয়ে খুশি অনেকে। আবার কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ কেউ কেউ। দাম কোথাও আগের মতোই, আবার কোথাও কিছুটা কমেছে।
নোয়াখালীর হাতিয়ায় মধ্যরাতেই সাগরে নেমে পড়েন জেলেরা। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় অনেক মাছ পেয়েছেন কেউ কেউ। বুড়িরচর সূর্যমুখী ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ঘাটজুড়ে তীব্র ব্যস্ততা। শ্রমিকেরা টুকরিভর্তি মাছ মাথায় করে তুলছেন বাজারে, আর পাইকারেরা হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করছেন। মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন বলেন, ‘খুব ভোর থেকে বাজারে মাছ বেচাকেনা শুরু হয়েছে। জেলেরা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নদী থেকে আশানুরূপ মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরছেন। তাঁদের জালে ভালো মাছ ধরা পড়ছে।’
জেলে আবদুল কাদের বলেন, রাত ১২টার পর নদীতে গিয়ে সকালে ৩ মণ ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরেছেন। আকারে ছোট হলেও দাম ভালো। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ যদি এমন মাছ পাই, আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।’
চাঁদপুর সদরের হরিণা মাছঘাটে গতকাল সকাল থেকে শুরু হয় হাঁকডাক। কেউ নদী থেকে সদ্য ধরা ইলিশ নিয়ে ফিরছেন, কেউ আবার টাটকা মাছ কেনার অপেক্ষায়। ঘাটজুড়ে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়। জেলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘পেশা ইলিশ ধরা। ধার করে হলেও নদীতে নামতে হয়। কিন্তু যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে, তাতে খরচ বাদে তেমন থাকে না।’ একই ঘাটের জেলে হুমায়ুন ঢালি জানান, রাতভর জাল ফেলেও তেমন মাছ মেলেনি।
ঘাট থেকে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ কিনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন খুচরা মাছ ব্যবসায়ী আবদুর রহমান। তিনি বলেন, মাছের দাম কমেনি বা বাড়েনি। ওজনে এক কেজিতে ৪টা, এমন প্রতি হালি কিনেছেন ৮০০ টাকা দরে। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। বড় সাইজের পাঙাশ কিনেছেন প্রতি কেজি সাড়ে ৮০০ টাকা দরে।
মাছ ব্যবসায়ী আবুল কাশেম কালু হাওলাদার বলেন, ‘জেলেরা রাত থেকে নদীতে নামলেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মেলেনি। কয়েক দিন পর বোঝা যাবে নদীতে মাছ আছে কি না।’
লক্ষ্মীপুরে গতকাল সকাল থেকেই সরগরম ছিল মজু চৌধুরীর হাট, মতিরহাট, লুধুয়া ও চর আলেকজান্ডার ঘাট। আকারের ওপর নির্ভর করে কেজিপ্রতি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। গড়পড়তা দাম নিষেধাজ্ঞার আগের সময়ের তুলনায় কিছুটা কম।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এবার অভিযান সফল হয়েছে। মা ইলিশ নির্ভয়ে ডিম ছাড়তে পেরেছে, ফলে উৎপাদন বাড়ার আশা করা হচ্ছে। জেলার নিবন্ধিত জেলেদের প্রত্যেকে ভিজিএফের চাল পেয়েছেন। অভিযানকালে দুই শতাধিক মোবাইল কোর্টে অর্ধশতাধিক জেলেকে জেল-জরিমানা করেছে। এ ছাড়া ১৬ লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে।

ফেসবুক মেসেঞ্জারের ইনবক্সে একের পর এক কুরুচিকর এসএমএস, ফোন নম্বর চেয়ে বার্তা, জবাব না দিলে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা ছবিগুলো এডিট করে বাজে ছবি বানিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি—এমন সব ঘটনায় ভয় পেয়ে নিজের পুরোনো অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাকটিভ করেন বর্ণালি (ছদ্মনাম)। এমন ঘটনার শিকার বর্ণালি একা নন। প্র
০৫ মার্চ ২০২২
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদের তীর দখল করে কারখানা গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ কবির মোস্তাক আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গ্রামটির সেতুর পাশে কংস নদের জায়গায় মাটি ভরাট, দেয়াল ও পিলার স্থাপন করে শিল্পকারখানা নির্মাণ করছেন তিনি।
১৭ মিনিট আগে
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভার এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাত্র তিনজন চিকিৎসকের ওপর। চিকিৎসক ও জনবল স্বল্পতায় বেহাল অবস্থায় চলছে ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
২০ মিনিট আগে
পুরান ঢাকার বংশালের আগামসিহ লেনে মো. সজীব হোসেনকে (২০) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্বজনেরা। সজীবের মায়ের অভিযোগ, মেয়েবন্ধুর মামা ১৫ দিন আগে সজীবকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁর ছেলেকে তাঁরাই খুন করেছেন।
২৯ মিনিট আগেপুরান ঢাকায় তরুণ খুন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

পুরান ঢাকার বংশালের আগামসিহ লেনে মো. সজীব হোসেনকে (২০) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্বজনেরা। সজীবের মায়ের অভিযোগ, মেয়েবন্ধুর মামা ১৫ দিন আগে সজীবকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁর ছেলেকে তাঁরাই খুন করেছেন।
এ ঘটনায় রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। কাউকে গ্রেপ্তারও করতে পারেনি পুলিশ।
রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে নিহত সজীবের বড় বোন শান্তা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৫ বছর ধরে খাদিজা নামের এক মেয়ের সঙ্গে সজীবের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের দুই-তিন বছর পরে মেয়েটি অন্য একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। কিন্তু তাতেও সজীব তার চেষ্টা চালিয়ে যায়। শনিবার ওই মেয়ের বাসায় সজীবের মরদেহ পাওয়া যায়। নির্মমভাবে মেরে তার গলায়, পায়ে জিআই তার দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা হয়।’
শান্তা আক্তার আরও বলেন, ‘শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে সজীব বাসা থেকে বের হয়। শুরুতে ফোনে কয়েকবার কথা হয়। এর পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বারবার ফোন দিলেও আর ধরে না। পরে শুনতে পাই, যেই মেয়েকে সজীব পছন্দ করত, সেই মেয়ের বাসায় তার মরদেহ পাওয়া গেছে।’
সজীবদের বাসাও বংশালের আগামসিহ লেনে। তিনি এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তবে কৃতকার্য হতে পারেননি।
রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, বংশালের আগামসিহ লেনের হক বেকারি গলিতে চারতলা একটি ভবন। ভবনটির নিচতলায় দোকান ও কারখানা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় জুতার গুদাম ও অফিস। বাবা-মা, এক ভাইসহ চারতলার বাসায় থাকেন খাদিজা।
বিকেলে বাসাটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় তলার অফিস ও তৃতীয় তলার জুতার গুদামও তালাবদ্ধ ছিল।
ভবনটির এক ব্যক্তি জানান, নিহতের খবর সন্ধ্যায় জানতে পারেন। তার আগে কোনো ধরনের শব্দ বা গন্ডগোলের শব্দ বাসার ভেতর থেকে শোনা যায়নি। সন্ধ্যায় পুলিশ আসার পর ঘটনা জানতে পারেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, বাড়িটিতে কেউ একজন নিহত হয়েছে তা কেউ বুঝতে পারেননি। পুলিশ আসার পর ঘটনা জানাজানি হয়।
নিহত সজীবের মা নুরুন্নাহার বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শনিবার দুপুরে সজীব বাসা থেকে বের হয়। এরপর এক ঘণ্টার মধ্যে তিনবার তার সঙ্গে কথা হয়। পরে আর ফোন ধরে না, সন্ধ্যায় তার মৃত্যুর খবর দেয় পুলিশ।’
নুরুন্নাহার বলেন, ‘সজীব ঘটনার ১৫ দিন আগে খাদিজার বাসায় যায়। সে সময় সজীবের বাবাকে ফোন দেন খাদিজার মামা কামাল। তখন ফোনে সজীবের বাবাকে বলা হয়, “আপনার ছেলে এসে আমার ভাগনিকে বিরক্ত করতেছে। আপনার ছেলে এগুলো বন্ধ না করলে, তাকে বিরক্ত করলে মেরে ফেলে দিব।’”
নুরুন্নাহার আরও বলেন, ‘আমার ছেলে মনে হয় মেয়ের বাসায় গিয়েছিল। তখন তারা মিলে মেরে ফেলছে। আমার ছেলে সুস্থ ছিল।’
রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে সজীব হোসেনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে রাতে জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এর আগে পুলিশ জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা মরদেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত না হলেও পরিবারের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ ঘটনায় রোববার নিহতের মামা মোরশেদ আহমেদ বলেন, ‘বংশাল থানার পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করতে বলে। তবে এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা হত্যা মামলা করব। তারা না নিলে কোর্টে মামলা করব।’
নিহত সজীবের পরিবারের অভিযোগ ও মামলার বিষয়ে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামের সঙ্গে বহুবার ফোন করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

পুরান ঢাকার বংশালের আগামসিহ লেনে মো. সজীব হোসেনকে (২০) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্বজনেরা। সজীবের মায়ের অভিযোগ, মেয়েবন্ধুর মামা ১৫ দিন আগে সজীবকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁর ছেলেকে তাঁরাই খুন করেছেন।
এ ঘটনায় রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। কাউকে গ্রেপ্তারও করতে পারেনি পুলিশ।
রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে নিহত সজীবের বড় বোন শান্তা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৫ বছর ধরে খাদিজা নামের এক মেয়ের সঙ্গে সজীবের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের দুই-তিন বছর পরে মেয়েটি অন্য একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। কিন্তু তাতেও সজীব তার চেষ্টা চালিয়ে যায়। শনিবার ওই মেয়ের বাসায় সজীবের মরদেহ পাওয়া যায়। নির্মমভাবে মেরে তার গলায়, পায়ে জিআই তার দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা হয়।’
শান্তা আক্তার আরও বলেন, ‘শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে সজীব বাসা থেকে বের হয়। শুরুতে ফোনে কয়েকবার কথা হয়। এর পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বারবার ফোন দিলেও আর ধরে না। পরে শুনতে পাই, যেই মেয়েকে সজীব পছন্দ করত, সেই মেয়ের বাসায় তার মরদেহ পাওয়া গেছে।’
সজীবদের বাসাও বংশালের আগামসিহ লেনে। তিনি এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তবে কৃতকার্য হতে পারেননি।
রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, বংশালের আগামসিহ লেনের হক বেকারি গলিতে চারতলা একটি ভবন। ভবনটির নিচতলায় দোকান ও কারখানা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় জুতার গুদাম ও অফিস। বাবা-মা, এক ভাইসহ চারতলার বাসায় থাকেন খাদিজা।
বিকেলে বাসাটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় তলার অফিস ও তৃতীয় তলার জুতার গুদামও তালাবদ্ধ ছিল।
ভবনটির এক ব্যক্তি জানান, নিহতের খবর সন্ধ্যায় জানতে পারেন। তার আগে কোনো ধরনের শব্দ বা গন্ডগোলের শব্দ বাসার ভেতর থেকে শোনা যায়নি। সন্ধ্যায় পুলিশ আসার পর ঘটনা জানতে পারেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, বাড়িটিতে কেউ একজন নিহত হয়েছে তা কেউ বুঝতে পারেননি। পুলিশ আসার পর ঘটনা জানাজানি হয়।
নিহত সজীবের মা নুরুন্নাহার বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শনিবার দুপুরে সজীব বাসা থেকে বের হয়। এরপর এক ঘণ্টার মধ্যে তিনবার তার সঙ্গে কথা হয়। পরে আর ফোন ধরে না, সন্ধ্যায় তার মৃত্যুর খবর দেয় পুলিশ।’
নুরুন্নাহার বলেন, ‘সজীব ঘটনার ১৫ দিন আগে খাদিজার বাসায় যায়। সে সময় সজীবের বাবাকে ফোন দেন খাদিজার মামা কামাল। তখন ফোনে সজীবের বাবাকে বলা হয়, “আপনার ছেলে এসে আমার ভাগনিকে বিরক্ত করতেছে। আপনার ছেলে এগুলো বন্ধ না করলে, তাকে বিরক্ত করলে মেরে ফেলে দিব।’”
নুরুন্নাহার আরও বলেন, ‘আমার ছেলে মনে হয় মেয়ের বাসায় গিয়েছিল। তখন তারা মিলে মেরে ফেলছে। আমার ছেলে সুস্থ ছিল।’
রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে সজীব হোসেনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে রাতে জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এর আগে পুলিশ জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা মরদেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত না হলেও পরিবারের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ ঘটনায় রোববার নিহতের মামা মোরশেদ আহমেদ বলেন, ‘বংশাল থানার পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করতে বলে। তবে এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা হত্যা মামলা করব। তারা না নিলে কোর্টে মামলা করব।’
নিহত সজীবের পরিবারের অভিযোগ ও মামলার বিষয়ে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামের সঙ্গে বহুবার ফোন করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ফেসবুক মেসেঞ্জারের ইনবক্সে একের পর এক কুরুচিকর এসএমএস, ফোন নম্বর চেয়ে বার্তা, জবাব না দিলে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা ছবিগুলো এডিট করে বাজে ছবি বানিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি—এমন সব ঘটনায় ভয় পেয়ে নিজের পুরোনো অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাকটিভ করেন বর্ণালি (ছদ্মনাম)। এমন ঘটনার শিকার বর্ণালি একা নন। প্র
০৫ মার্চ ২০২২
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদের তীর দখল করে কারখানা গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ কবির মোস্তাক আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গ্রামটির সেতুর পাশে কংস নদের জায়গায় মাটি ভরাট, দেয়াল ও পিলার স্থাপন করে শিল্পকারখানা নির্মাণ করছেন তিনি।
১৭ মিনিট আগে
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভার এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাত্র তিনজন চিকিৎসকের ওপর। চিকিৎসক ও জনবল স্বল্পতায় বেহাল অবস্থায় চলছে ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
২০ মিনিট আগে
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও ইলিশ শিকারে নেমেছেন জেলেরা। গত শনিবার রাত থেকে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও হাতিয়ার ঘাটগুলোতে শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। দীর্ঘ বিরতির পর নদীতে নেমে আশানুরূপ মাছ পেয়ে খুশি অনেকে। আবার কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ কেউ কেউ। দাম কোথাও আগের মতোই, আবার কোথাও কিছুটা কমেছে।
২৫ মিনিট আগে