Ajker Patrika

খুলনা-বেনাপোলের ট্রেন প্রথম দিনই বিলম্বের খাঁড়ায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা­যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪: ২৪
Thumbnail image
খুলনা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকায় এসেছে ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ ট্রেন। সেই ট্রেনটিই নাম পরিবর্তন করে ‘রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস’ নামে বেনাপোলের উদ্দেশে ছেড়ে যেতে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে। মুহূর্তটিকে ধরে রাখতে শিশুসন্তানসহ সেলফি তোলেন এক যাত্রী। গতকাল রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে। ছবি: আজকের পত্রিকা

পদ্মা রেলসেতু উদ্বোধন করা হয়েছে ১৪ মাস আগে। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সরাসরি পদ্মা রেলসংযোগ পথ পাড়ি দিয়ে খুলনা ও বেনাপোল থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এই রেলপথে সময় ও দূরত্ব দুটোই কমে প্রায় অর্ধেক হয়েছে। গতকাল সকাল ৬টায় খুলনা থেকে ছেড়ে আসে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস। সকাল পৌনে ১০টায় রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছার কথা থাকলেও ট্রেনটি পৌঁছায় ১০টা ৩৫ মিনিটে।

এরপর ট্রেনটি রূপসী বাংলা নামে বেনাপোলের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বিকেলে যশোরে ‘বিক্ষোভ আর কালো পতাকায়’ বরণ করা হয় এই ট্রেনকে। মাত্র একটি ট্রেন দিয়ে যশোর ও খুলনাবাসীকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বৃহত্তর যশোর জেলা রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি।

জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন গতকাল সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছার পর পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পে পুরোপুরি ট্রেন চলাচল উদ্বোধন ঘোষণা করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ইয়েন উপস্থিত ছিলেন।

রেলপথ উপদেষ্টা বলেন, রেলের যাত্রীরা সবাই নিজেদের বাড়ির কাছে স্টেশন চায়। এতে করে বিগত সময়ে সংকটকে গুরুত্ব না দিয়ে যেখানে-সেখানে রেলস্টেশন করা হয়েছে।

সাধারণ যাত্রীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, ‘সবাই আশা করেন যে রেলগাড়িটি তাঁদের বাড়ির পাশে থামবে। আবার তাঁরা এটাও চান, তাঁরা দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাবেন। এটা সম্ভব নয়। আপনি যতই স্টপেজের সংখ্যা বাড়াবেন, ততই যাতায়াতের সময় বাড়বে। এখন এমন একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে প্রতিটি জায়গায়ই রেলস্টেশন করতে হবে। প্রতিটি স্টেশনেই রেলগাড়ি থামাতে হবে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। যেখানে যাত্রী বেশি হবে, সেখানেই গাড়ি থামবে। যেখানেই রাজস্ব পাওয়া যাবে, সেখানে রেলগাড়ি থামবে।’

রেল নিয়ে মানুষের অসন্তোষ আছে এটা উল্লেখ করে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমাদের লোকোমোটিভ সংকট আছে, কোচ সংকট আছে, লোকবলের সংকট আছে। রেল সীমিত লোকবল দিয়ে কাজ করছে। তবে কেউ তাদের কথা বলে না। আমি বলব, তারা রেলের আনসাং হিরো।’ তিনি বলেন, ‘রেলের আজকের যে অবস্থা, এই অবস্থার একটি কারণ অপব্যয়। যত্রতত্র রেলস্টেশন বানানো হয়েছে, লাইন বিস্তার করা হয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিন, কোচ, জনবল আছে কি না—সেগুলো না দেখে, এসব করা হয়েছে।’

রেল একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘রেলের আয় দিয়ে ব্যয় নির্বাহ করতে হবে। সব খাতেই ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এটা কত দেওয়া যায়? আমাদের ব্যয়সাশ্রয়ী হতে হবে। আমাদের ব্যয় ভারত ও আশপাশের দেশ থেকে অনেক বেশি। সবাইকে অনুরোধ জানাব, কীভাবে খরচ কমানো যায়, তা করতে। এটা হলে সেবা দিতে সক্ষম হব।’

যশোরে বিক্ষোভ

মাত্র একটি ট্রেন দিয়ে যশোর ও খুলনাবাসীকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টার প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভ করেছে বৃহত্তর যশোর জেলা রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকা-বেনাপোল রুটের রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন দুপুরে যশোর জংশন স্টেশনে পৌঁছায়। এর কিছু পর থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ সন্ধ্যায় ঢাকাগামী রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনে কালো পতাকা বেঁধে শেষ হয়। এ সময় লোকোমাস্টারকে ফুল দেন বিক্ষোভকারীরা। কমিটির আহ্বায়ক জাতীয় হকি দলের ম্যানেজার কাওসার আলী কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছেড়ে দুপুরে যশোর হয়ে বেনাপোলে পৌঁছায়। বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে বেনাপোল থেকে ছেড়ে যশোর স্টেশনে পৌঁছায় ৫টা ৪০ মিনিটে। এরপর ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বেলা সাড়ে ৩টায় যশোর রেলওয়ে জংশনে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।

সমাবেশে সংগ্রাম কমিটির নেতারা বলেন, ‘পদ্মা সেতু লিংক প্রজেক্ট উদ্বোধনের ঘোষণায় যশোরবাসী আনন্দিত হতে পারছে না। মাত্র একটি ট্রেন এবং ঘোষিত সময়সূচি যশোরবাসীর মাঝে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে উদ্বোধনী দিন বিক্ষোভ কর্মসূচি, কালো পতাকা প্রদর্শন ও ট্রেনে কালো পতাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে ঢাকা-বেনাপোল রুটে দুটি ট্রেনসহ পূর্বঘোষিত ছয় দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত